হোল্ডার বা হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারলো না বাংলাদেশ
কিংস্টন টেস্ট
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস ৩৫৪ অল-আউট (ব্র্যাথওয়েট ১১০, হেটমায়ার ৮৬, মিরাজ ৫/৯৩, আবু জায়েদ ৩/৩৮) ও ২য় ইনিংস ১২৯ অল-আউট
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ১৪৯ অল-আউট (তামিম ৪৭, সাকিব ৩২, হোল্ডার ৫/৪৪) ও ২য় ইনিংস ১৬৮ অল-আউট
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬৬ রানে জয়ী ও সিরিজ ২-০ তে জয়ী
সাকিব আল হাসান- ৮৬ রান, ৬ উইকেট। জ্যাসন হোল্ডার- ৩৪ রান, ১১ উইকেট। ম্যাচে দুই অধিনায়কের ব্যাটিং পারফরম্যান্সে এগিয়ে সাকিবই, তবে বোলিংয়ে হোল্ডার প্রায় দ্বিগুণ ব্যবধানে এগিয়ে তার চেয়ে। কিংস্টন টেস্টে শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দিল এটাই। সাকিব লড়ে গেলেন বোলিংয়ে, ব্যাটিংয়ে। কিন্তু ম্লান হয়ে গেলেন হোল্ডারের কাছে। অ্যান্টিগার মতো এখানেও তিন দিনেই হেরে গেল বাংলাদেশ, দুই ম্যাচের সিরিজে হয়ে গেল হোয়াইটওয়াশও। বোলিংয়ে উন্নতির লক্ষণ দেখা দিলেও ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ রয়ে গেছে সেই তিমিরেই। আর সামনে এনেছে অনেক অনেক প্রশ্ন।
৩৩৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিজেদের রেকর্ড ছাড়িয়ে অনেকদূর যেতে হতো বাংলাদেশকে। সেটা হয়নি, হোল্ডারের সিম মুভমেন্টে ভেতরের দিকে ঢোকা বলেরই তো জবাব দিতে পারেনি বাংলাদেশ! এর মাঝে সাকিব ফিফটি করেছেন, সিরিজে যা বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয়। মুশফিকের সঙ্গে ইনিংসে একমাত্র পঞ্চাশ পেরুনো জুটিও ছিল তার, তবে যথেষ্ট হয়নি কিছুই।
রানতাড়ায় ঠিক কোন লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ, সেটা অবশ্য নিশ্চিত নয়। আক্রমণাত্মক মানসিকতা কাল হয়েছে লিটন দাসের। কাট-পুল-ড্যাবে ছয়টি চার মারার পর কিমো পলের ফুললেংথের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি, সমানসংখ্যক বলে ৩৩ রান করে। তার আগেই হোল্ডারের কোণাকুণি বলে এলবিডব্লিউ তামিম, ক্যারিবীয়তে নিজের চতুর্থ ইনিংসে এসেও এমন বলের সুরাহা করা হয়ে ওঠেনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহকের।
ডেকে থাকলেও লড়াইয়ে কাউকেই সঙ্গে পাননি সাকিব/ক্রিকইনফো/এএফপি
মুমিনুল সিরিজে প্রথমবার থিতু হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তবে ৪৩ বল খেলেও রসটন চেজের ভেতরের দিকে ঢোকা বলের খেয়াল রাখতে পারলো না তার রক্ষণ। মাহমুদউল্লাহ উইন্ডিজ দলের স্পিনে ‘সবেধন নীলমণি’ রসটন চেজকে ঠিক কিভাবে খেলতে চেয়েছিলেন, সেটা তিনিই ভাল জানবেন। সীমিত ওভারের স্টাইলে হুট করেই ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে তুলে মারতে গিয়ে টাইমিং মিস করে গেছেন পুরোপুরি, মিড-উইকেটে ধরা পড়তে হয়েছে তাই।
মুশফিক হোল্ডারের ভেতরের দিকে ঢোকা বলে লাইনের বাইরে থেকে খেলতে গিয়ে হয়েছেন বোল্ড, এভাবে এই সিরিজে তিনবার আউট হলেন তিনি। সাকিবের সঙ্গে তার ৫৪ রানের জুটিটা শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে আরও ভঙ্গুর। প্রথম ইনিংসের ‘জোড়ায় জোড়ায় উইকেটের’ নিয়ম মেনে একইভাবে পরের বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে ‘কিং পেয়ার’ পেয়েছেন নুরুল। গ্যাব্রিয়েলের লাফিয়ে ওঠা বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন মিরাজ।
সাকিব বিরুদ্ধ স্রোতে দাঁড়িয়ে খেলে যাচ্ছিলেন, শটে ঝুঁকি থাকলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন করতে পারছিলেন ভালভাবেই। দশ চারে স্ট্রোকনির্ভর ইনিংস খেলেছেন তিনি, তবে মূল্যও দিতে হয়েছে সে কারণেই। তাকে হোল্ডার বোল্ড করেছেন সিম মুভমেন্টে কাবু করেই, স্টাম্প লক্ষ্য করে বোলিং করে গেছেন উইন্ডিজ অধিনায়ক, অন্য কোনও পরিকল্পনাও করতে হয়নি তাকে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের কাবু করতে। কামরুলকে এলবিডব্লিউ করে ইনিংসে পাঁচ ও ম্যাচে দশ উইকেট পূর্ণ করেছেন হোল্ডার, আবু জায়েদকে বোল্ড করে পেয়েছেন একাদশ উইকেট। একই রানে দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ হারিয়েছে শেষ দুই উইকেট, সেই ‘জোড়ায় জোড়ায়’ নিয়ম মেনেই।
এর আগে সাকিবের ছয় উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১১০ রান যোগ করতে দিয়েছিল বাংলাদেশ। আগের দিন নিজের প্রথম বলেই নিয়েছিলেন উইকেট, সাকিব আজ নিলেন আরও পাঁচটি। ক্যারিয়ারে ১৮তম বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেলেন তিনি।
শুরুর দুই উইকেট তিনি পেয়েছেন নুরুল হাসানের দারুণ উইকেটকিপিংয়ে। ডেভন স্মিথের পর নাইটওয়াচম্যান কিমো পল হয়েছেন স্টাম্পড। মিগুয়েল কামিন্স ও শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে বোল্ড করার আগে কাইরন পাওয়েলকে সাকিব করেছেন এলবিডব্লিউ। একপ্রান্তে টিকে থাকা রসটন চেজকে পায়ের পেছন দিয়ে বোল্ড করেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তাকে তেঁড়েফুঁড়ে মারতে এসে ইনিংসে নুরুলকে তৃতীয় স্টাম্পডের সুযোগ দিয়েছেন জ্যাসন হোল্ডার। শাই হোপকে এলবিডব্লিউ করেছিলেন তাইজুল ইসলাম, শিমরন হেটমায়ারকে আবু জায়েদ।