‘ব্রুটাল’ ব্রড
এই ট্রেন্টব্রিজেই। অ্যাশটন অ্যাগারের বলে ‘এজড’ হয়েও দাঁড়িয়ে রয়েছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। তা তো কত ব্যাটসম্যানই করেন। ‘ওয়াক’ করা ব্যাটসম্যানের সংখ্যাই এখন হাতেগোনা। তবুও অস্ট্রেলিয়ানরা তাঁকে ক্ষমা করতে পারে না। পারে নি। ২০১৩ সালের সেই অ্যাশেজের পর, নটিংহ্যামের সেই টেস্টের পর থেকে তাদের সবচেয়ে বড় দুয়োটা প্রাপ্য ওই ব্রডেরই।
ইংলিশদের কাছে তিনি কেমন? অস্ট্রেলিয়ানদের মত ‘দুয়ো’ পাননা, তবে জিমি অ্যান্ডারসনের মত ‘জনপ্রিয়’ও তিনি নন। ক্যারিয়ারের প্রায় শুরু থেকেই জিমির ‘ছায়া’ হয়ে আছেন তিনি, বলাই যায়। যদি ইংল্যান্ডের সেরা পাঁচ পেসারের তালিকা করতে বলা হয়, কজন ব্রডের নামটা নেবেন? অথচ ইংল্যান্ডের ইতিহাসের পঞ্চম বোলার হিসেবে আজ ‘৩০০’ উইকেট ছুঁলেন ব্রড।
আর ইয়ান বোথামের পর দ্বিতীয় ইংলিশ ক্রিকেটার হিসেবে ২০০০ রান ও ৩০০ উইকেটের ডাবল হলো তাঁর। হ্যাঁ, ব্রড ব্যাটিংও পারেন। এজবাস্টনেই মঈন আলীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ন জুটির অংশ ছিলেন, মঈনকে যোগ্য সঙ্গও দিয়েছেন। তবে আসল কাজটা বল হাতেই। এজবাস্টনে অ্যান্ডারসন চোট পেলেন। ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণের দায়িত্ব তাই চলে এলো তাঁর কাঁধেই। কাঁধটা কী চওড়া করেই না এগিয়ে গেলেন স্টুয়ার্ট ক্রিস্টোফার জন ব্রড!
অধিনায়ক অ্যালেস্টার কুকের টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্তটা যথার্থ প্রমাণ করতে একে একে তুলে নিলেন আটটি উইকেট। মাত্র ১৫ রান খরচায়! অস্ট্রেলিয়ানদের ‘দুয়োর’ কী যথার্থ জবাব!
এলবিডাব্লিউয়ের আবেদনেই তাঁর ‘উদযাপন’ মিশে থাকে, যেন প্রতি বলেই উইকেট নেবেন, এমন একটা মনোভাব। আবার ব্যাটিংয়ে নামলে রিভিউ করার ইচ্ছা থাকে যেন প্রতিবার আউট হওয়ার পরেই! হ্যাঁ, ব্রড পেশাদার। হয়তো একটু বেশীই। যুবরাজ সিংয়ের হাতে এক ওভারে ছয় ছক্কার শিকার হওয়ার পরেও তিনি সেই ফরম্যাটেই দেশের অধিনায়ক হতে পারেন তাই হয়তো!
তবে এই পেশাদার মানুষটির আবরণেও একটা কোমল দিক আছে ব্রডের। ‘মোটর নিউরন ডিজিজ (এমএনডি)’ নামক জটিল ব্যাধি তাঁর মাকে ঠেলে দিয়েছিল আত্মহত্যার পথে। এরপর বাবা ক্রিস আর বোন জেমার সঙ্গে গড়ে তোলেন ‘দি ব্রড অ্যাপিল’ নামক ফাউন্ডেশন, দুনিয়াজুড়ে ‘এমএনডি’তে আক্রান্তদের সহায়তায়। চলমান টেস্টের দ্বিতীয় দিনেও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আলাদা প্রচারণা করা হবে। এর আগেই শুরু হয়ে গেছে ‘ব্রডঅ্যাপিলসেলফি’ হ্যাশট্যাগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা। যাতে অংশ নিয়েছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালেস্টার কুকসহ অনেকেই।
ছোটবেলা থেকেই বড় হয়েছেন ‘ক্রীড়া-আবহে’। মা ছিলেন গলফ টুর্নামেন্টের আয়োজক, বোন জেমা কাজ করেন ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের বিশ্লেষক হিসেবে। আর বাবা ক্রিস ব্রড তো আইসিসির ম্যাচ রেফারি, ইংল্যান্ডের হয়ে ২৫টি টেস্ট খেলা সাবেক এই ব্যাটসম্যানের মতোই স্টুয়ার্টও ব্যাটসম্যান হতে চাইতেন শুরুর দিকেই। তারপর মনোভাব বদলে ফেলেন, শুরু করেন মিডিয়াম পেস বোলিং। তারপর?
ইয়ান বোথাম-বব উইলিসের বোলিং জুটির সঙ্গেই হয়তো এখন উচ্চারিত হবে জিমি অ্যান্ডারসন-স্টুয়ার্ট ব্রড জুটির নাম। আর আলাদা করে ব্রড কি হবেন? বয়স ২৯, ইংল্যান্ডের হয়ে ক্যারিয়ারটা আরও কয়েক বছর দীর্ঘ হওয়ার কথা। ক্যারিয়ার শেষের কথা সময়ই বলবে।
তবে ট্রেন্টব্রিজে ব্রডের বোলিং তাঁর হয়ে কথা বলবে অনেকদিন।
‘নতুন ইংল্যান্ডের’ জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ এক সিরিজের গতিপথই কি এঁকে দিলেন স্টুয়ার্ট? ঘরের মাটিতে, নিজের পরিবার আর বন্ধু-বান্ধবদের সামনে?
ব্রড ৬ আগস্টের ট্রেন্টব্রিজকে মনে রাখবেন অনেকদিন। এমন কোনো দিনের জন্যই তো ব্রডের মতো ক্রিকেটাররা খেলে যান! ট্রেন্টব্রিজের জন্য, ট্রেন্টব্রিজের ব্রডকেও কি মনে রাখতে হবে না!
হবে। স্টুয়ার্ট ব্রডের যে শুধুই ‘দুয়ো’ প্রাপ্য নয়!