ব্রডে বর্ণিল ট্রেন্ট ব্রিজ
অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ডঃ ইনভেস্টেক অ্যাশেজ, চতুর্থ টেস্ট, প্রথম দিন; ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহ্যাম
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ৬০/১০ (জনসন ১৩, অতিরিক্ত ১৪; ব্রড ৮/১৫); ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ২৭৪/৪ (রুট ১২৪, বেয়ারস্টো ৭৪, কুক ৪৩; স্টার্ক ৩/৭৩)
ট্রেন্ট ব্রিজের অজি শিবিরে কি আজ ১৯৩৬ সালের ৯ ডিসেম্বরটা ফিরে ফিরে আসছিল? সেদিনের ব্রিসবেনে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের দলের ওপর দিয়ে যে ঝড়টা চালিয়েছিলেন স্যার গাবি অ্যালেন আর বিল ভোস, প্রায় অনুরূপ এক ঝড় আজ মাইকেল ক্লার্কদের ওপর দিয়ে চালালেন স্টুয়ার্ট ব্রড। তবে ‘সীমাহীন’ সময়ের টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের সাথে সীমিত সময়ের টেস্টের প্রথম ইনিংসের কি তুলনা চলে? জবাবটা যদি ‘না’ হয় তবে আজকের নটিংহ্যাম অজিদের জন্য ‘লজ্জা’র ইতিহাসে ছাড়িয়ে গেছে ২০১১ সালের কেপটাউনকেও।
টেনে আনা দুটো অতীত টেস্টে অস্ট্রেলিয়া দল অলআউট হয়েছিল যথাক্রমে ৫৮ ও ৪৭ রানে। তবে সে দুটোই ছিল ২য় ইনিংসে। আর এ যাত্রায় নটিংহ্যামে চলতি অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্টের প্রথম দিনে প্রথম ইনিংসেই ৬০ রানে গুটিয়ে গেলো অজিরা। ক্যারিয়াসেরা বোলিং করে আট আটটি উইকেট দখলে নিয়ে ক্লার্কবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন ইংলিশ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড। আর তারপর? জো রুট, জনি বেয়ারস্টোদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ভর করে দিনশেষে ইংল্যান্ডের লিড ২১৪ রানের! উল্লেখ করা প্রয়োজন, রুট একাই অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন ৬৪ রানে!
দিনটা বুঝি অসম্ভব রকম ‘শুভ’ কারও মুখ দেখে শুরু করেছিলেন ব্রড। দিনের প্রথম ওভারেই দুর্দান্ত দুটি ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দেন দু’জন অজি ব্যাটসম্যানকে। ৪৬তম টেস্ট ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ক্রিস রজার্সকে প্রথমবারের মতো শূন্য রানে সাজঘরের পথ দেখিয়ে ব্রড তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৩০০তম টেস্ট উইকেটটি। ওই ওভারেরই শেষ বলে স্মিথকেও ফিরিয়ে ইংল্যান্ডের বুধবার সকালটা রাঙিয়ে দেয়ার ইঙ্গিত দেন। তারপরের সময়টুকু কেবলই ইতিহাস। আটকে যাওয়া টেপ ফিতের বারবার ‘রিওয়াইন্ড’ হওয়ার সাথেও মেলাতে পারেন চাইলে! অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা একে একে এলেন আর ব্রডের বলে উইকেটের পিছনে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন!
ভাবতে পারেন? ব্রডের আট আটজন শিকারের প্রত্যেকেই ফিরে গেছেন স্লিপে ক্যাচ দিয়ে! অজিদের অবস্থা বেগতিক দেখে ইংলিশ কাপ্তান একে একে স্লিপার বাড়িয়েছেন আর অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা প্রথম, দ্বিতীয় থেকে শুরু করে পঞ্চম, ষষ্ঠ স্লিপেও ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন! বাকি দু’ উইকেটের মধ্যে ডেভিড ওয়ার্নার ফেরেন উডের বলে উইকেটরক্ষক বাটলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে। অজি শিবিরের যে একমাত্র ব্যাটসম্যানটি আজ উইকেটের পিছনে ধরা দেন নি তিনি পিটার নেভিল। নিজে উইকেটরক্ষক বলেই কিনা ফিনের বলে বোল্ড হয়েই ‘আত্মসম্মান’ বাঁচালেন!
অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ রান মিচেল জনসনের, ১৩। তবে তারচেয়েও ১ রান বেশী নিয়ে ক্লার্কদের স্কোরবোর্ডে ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোরারটির নাম ‘অতিরিক্ত রান’! উল্লেখ করা প্রয়োজন, অ্যাশেজের ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম! অজিদের আর কোন ব্যাটসম্যান রানের খাতায় দশের কোঠাই পেরোতে পারেন নি।
মাত্র ১৫ রানের বিনিময়ে আট উইকেট দখলে নিয়ে স্টুয়ার্ট ব্রড করেছেন অ্যাশেজের আরও একটি নতুন রেকর্ড। এর আগে এই সিরিজের কোন টেস্টে উদ্বোধনী ইনিংসে সেরা বোলিং ফিগারটি ছিল গ্লেন ম্যাকগ্রার। ১৯৯৭ সালে লর্ডস টেস্টে সাবেক এই অজি পেসারও আট উইকেটই নিয়েছিলেন, তবে ৩৮ রানের বিনিময়ে।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ডের সতর্ক সূচনার মাঝেও বল হাতে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন মিচেল স্টার্ক। পরপর দু’ ওভারে লিথ আর বেলকে ফিরিয়ে ইংলিশদেরও পতনের আভাস দিচ্ছিলেন এই অজি পেসার। তবে এমন স্বপ্ন যারা দেখতে শুরু করেছিলেন তাঁদের অচিরেই বাস্তবে ফিরিয়ে আনেন জো রুট। অ্যালিস্টার কুকের পর জনি বেয়ারস্টোকে সঙ্গী করে রানের বানে জোয়ার তোলেন রুট। কুক ৪৩ আর বেয়ারস্টো ৭৪ রানে ফিরে গেলেও দিনশেষে রুট অপরাজিতই থেকে গেছেন ব্যাক্তিগত ১২৪ রান নিয়ে। এখনও পর্যন্ত ১৫৮ বল মোকাবেলায় গড়ে তোলা ইনিংসটিতে রয়েছে ১৯টি চার আর ১টি ছয়ের মার। আর এসবে ভর করেই দিনশেষে ইংল্যান্ডের দলীয় সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৭৪ রান। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে মিচেল স্টার্ক ৭৩ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট।