তামিম-সাকিব-মাশরাফিতে গায়ানায় বাংলাদেশের উল্লাস
প্রথম ওয়ানডে, গায়ানা
বাংলাদেশ ২৭৯/৪, ৫০ ওভার
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৩১/৯, ৫০ ওভার
বাংলাদেশ ৪৮ রানে জয়ী
৪৩। এই সংখ্যাটাই ওলট-পালট করে দিয়েছিল সব। অ্যান্টিগার সেই সকালের ভূতটাই যেন তাড়া করে ফিরেছে বাংলাদেশকে, পুরো টেস্ট সিরিজ জুড়েই। পোশাক, বল বদলে গেল, বদলে গেল বাংলাদেশও। অ্যান্টিগার ভূতটা পালাল গায়ানায় এসে। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানের পর মাশরাফি বিন মুর্তজা- তিন ‘সিনিয়র সিটিজেন’ মিলেই দায়িত্ব নিলেন ওঝার। তামিমের অপরাজিত সেঞ্চুরি, সাকিবের ৯৭, মুশফিকের ক্যামিও, মাশরাফির চার উইকেট মিলিয়ে প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শেষ পর্যন্ত অনায়াসেই হারিয়েছে বাংলাদেশ।
২৮০ রানের লক্ষ্যটা এই উইকেটে সহজ ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। শুরুতে ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছিলেন মাশরাফি, তাকে তুলে মারতে গিয়ে মিড-অফে ক্যাচ দিয়েছেন এভিন লুইস। চাপটা আরও বাড়াতে পারতো বাংলাদেশ, ক্রিস গেইলের বিপক্ষে রিভিউটা নিলে। মিরাজের বলে প্যাডের পেছনে ব্যাট রেখে ফাঁদে পড়েছিলেন গেইল, মুশফিক বা মিরাজের অনাপত্তিতে রিভিউটা নেননি মাশরাফি, যেটা হতে পারতো আউট। অবশ্য একই ভুল করেছেন শেই হোপও, রুবেলের বলে এলবিডব্লিউর রিভিউটা নিলে বেঁচে যেতেন তিনি।
গেইল ও হেটমায়ারের জুটিটা জমছিল ভালই, গেইলের রান-আউটই বদলে দিয়েছে সব। শর্ট থার্ডম্যানে খেললেও রানের জন্য কোনও আগ্রহই দেখাননি হেটমায়ার, একা একা দৌড়িয়ে মাশুল গুণতে হয়েছে গেইলকে। মোমেন্টামটা বাংলাদেশের দিকে ঝোঁকা শুরু করেছে এরপর থেকেই।
মিরাজের ফ্লাইটে ধোঁকা খেয়ে স্টাম্পড জ্যাসন মোহাম্মেদ, হেটমায়ারের সঙ্গে তার জুটি ৩০ রানের। গায়ানার ঘরের ছেলে হেটমায়ার পেয়েছেন ওয়ানডেতে প্রথম ফিফটি, স্পিনে পায়ের ব্যবহারে বেশ ছন্দময় ছিল তার ইনিংস। মুস্তাফিজকে থ্রু দ্য লাইনে খেলতে গিয়ে এক্সট্রা কাভারে সাকিবকে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি, ৭৮ বলে ৫২ রান করে। রোভমান পাওয়েল টিকেছেন এক বল, বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। হ্যাটট্রিক বলটা অবশ্য সামলেছেন অ্যাশলি নার্স।
এরপরও বিপদ ছিল হোল্ডার-রাসেলদের ব্যাটে। শুধু ইঙ্গিত দিতে পেরেছেন তারা, মাশরাফির বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে দুজনকেই। ছয় মারার পর মাশরাফি পেস বদলে ফেলেছেন, হোল্ডার তুলেছেন ক্যাচ। মুস্তাফিজকে ছয়-চার মারার পরের ওভারে মাশরাফির বোলিংয়ে চাপে পড়েছেন রাসেল, তিনিও তুলে মারতে গিয়ে অনেক আকাশ পাড়ি দিয়ে লং-অনে জমা পড়েছেন মাহমুদউল্লাহর হাতে। বোলিংয়ে লাইন-লেংথ-পেসের বৈচিত্র ছিল মাশরাফির। সেটাতেই ধরা পড়েছেন নার্সও, তিনিও খেলতে চেয়েছিলেন বড় শটই। হোল্ডার-রাসেল-নার্সরা যেটা করতে পারেননি, সেটাই করেছেন আলজারি জোসেফ ও দেবেন্দ্র বিশু। শেষ উইকেটে দুজন মিলে যোগ করেছেন ৫৯ রান। মোসাদ্দেক সহজ একটা সুযোগ না ছাড়লে অবশ্য সে জুটি থামে আগেই। তবে শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হয়নি সে জুটিও।
শুধু বোলিং নয়, অধিনায়কত্বেও মাশরাফি ছিলেন সহজাত। মোসাদ্দেককে দিয়ে করিয়ে নিয়েছেন ৭ ওভার, মোসাদ্দেক দিয়েছেন মাত্র ২২ রান। মেঘলা আকাশের নিচে মাশরাফির টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্তটাও শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়েছে সঠিক হিসেবেই।
গায়ানার উইকেটটা ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ ছিল না, তামিম-সাকিব শুরুর দিকে সংগ্রাম করেছেন বেশ। ১ রানেই দলে ফেরা এনামুল হককে হারিয়েছে বাংলাদেশ, হোল্ডারের আউটসুইংয়ে পুশ করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে তিনি দিয়েছেন ক্যাচ।
এরপর সাকিব-তামিমের গল্প। ৫ম ওভারে গায়ানার আকাশের মেঘ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছিল, তবে শেষ পর্যন্ত ওভার কাটা যায়নি কোনও। সাকিব-তামিম এরপর থিতু হয়েছেন ধীরে ধীরে। সাকিব ইনসাইড-এজে বোল্ড হতে গিয়ে বেঁচেছেন অন্তত তিনবার, দুইবার কঠিন সুযোগ দিয়েছিলেন তামিম। শর্ট এক্সট্রা কাভারে নার্স বা স্লিপে গেইল সেসব জমাতে ব্যর্থ হয়েছেন। সাকিবও স্লিপে সুযোগ দিয়েছিলেন।
৯ম ওভারে টানা তিন চার মেরে শেকলটা ভাঙার প্রথম ধাপটা পেরিয়েছেন তামিম, এ জুটির প্রথম বাউন্ডারি সে ওভারেই। ২৪তম ওভারে তামিম মেরেছেন প্রথম ছয়। ৮৭ বলে ফিফটি পূরণ করেছেন তামিম, সাকিবের লেগেছিল ৬৮ বল। ৮৪ রানে দাঁড়িয়ে সাকিব পেয়েছেন আরেকটি সুযোগ। অবশ্য ভাগ্যের ছোঁয়া পেয়েছে উইন্ডিজও। চারে নামা সাব্বিরকে সরাসরি স্টাম্পড দিয়েছিলেন আম্পায়ার জোয়েল উইলসন, যদিও রিপ্লে দেখিয়েছে বেইলস পড়ার সময় ক্রিজের ভেতরেই ছিলেন সাব্বির।
তার আগেই সাকিব-তামিম দুজন মিলে খেলেছেন ৪৩ ওভার, দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেছেন রেকর্ড ২০৭ রান। দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের এটি সর্বোচ্চ জুটি, যে কোনও উইকেটে সব মিলিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সেঞ্চুরি থেকে তিন রান দূরে থেমেছেন সাকিব, বিশুকে অফস্টাম্প থেকে টেনে স্লগ করতে গিয়ে। ক্লান্তির ছাপ ছিল সে শটে, তবে তার আগেই করেছেন জয়ের ভিত গড়া ৯৭।
তামিম সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন ১৪৬ বলে, বাংলাদেশের হয়ে যা সবচেয়ে ধীরগতির সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ১৬০ বলে অপরাজিত ছিলেন ১৩০ রানে। সাকিব গিয়ার পরিবর্তন করেছেন আগেই, তামিম সেটা একটু সময় নিয়ে করেছেন।
শুরু থেকেই অবশ্য টপ-গিয়ারে ছিলেন মুশফিক। ২ ১ ১ ৬ ২ ০ ৪ ৬ ৪ ৪ আউট- মুশফিকের খেরোখাতা পড়ছিলে এমনই। নিজের শেষ ৫ বলে ২০ রান তুলেছেন তামিমও, শেষ ২ ওভারে ৪৩ রান তুলেছে বাংলাদেশ।