এবার গায়ানাতে বাংলাদেশের ৩ রানের দুঃখ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৯.৩ ওভারে ২৭১ (হেটমায়ার ১২৫; রুবেল ৩/৬১)
বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ২৬৮/৬ (মুশফিক ৬৮, সাকিব ৫৬, তামিম ৫৪; বিশু ১/৩৯)
ফলঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ রানে জয়ী
আরও একবার শেষ ওভারের হতাশা, আরও একবার তীরে এসে তরী ডুবে যাওয়া, আরও একবার মুঠোয় থাকা ম্যাচটা গলে বেরয়ে যাওয়া।
শেষ দুই ওভারে ১৪ রান দরকার, ক্রিজে মুশফিকুর রহিম আর সাব্বির রহমান। হাতে আছে তখনও ৬ উইকেট, বাংলাদেশ এমন পরিস্থিতি থেকেও হেরেছে আগে। হেরেছে আসলে এর চেয়েও ভালো অবস্থা থাকে। কিন্তু আজও আবার সেরকম হবে?
শুরুটা হলো ৪৯তম ওভারের শেষ বল থেকে। কিমু পলের ফুলটস মারতে গিয়ে আউট হলেন সাব্বির রহমান। শেষ ওভারে দরকার ৮ রান, জেসন হোল্ডারের ফুলটস মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন মুশফিক। ৬৭ বলে ৬৮ রান করে আউট হয়ে গেলেন, ম্যাচটাও যেন বেরিয়ে গেল হাত থেকে। পরের চার বলে মোসাদ্দেক নিতে পারলেন তিন রান, শেষ বলে জয়ের জন্য দরকার ৫ রান। মাশরাফি নিতে পারলেন ১ রান, বাংলাদেশ ম্যাচটা হেরে গেল ৩ রানে। সিরিজ জেতা হলো না, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সমতা ফেরাল ১-১ ব্যবধানে।
অথচ ম্যাচটা মুশফিকই হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছিলেন। তামিম ও সাকিবের আউটের পর যখন বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচটা ফস্কে যাচ্ছিল, মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে মিলে পথ দেখিয়েছেন মুশফিকই। দুজনের ৮৭ রানের জুটিটা যখন জমে উঠেছে, তখনই ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ। তারপরও রান রেট বাংলাদেশের নাগালেই ছিল। শেষ তিন ওভারে যখন দরকার ২৭ রান, হোল্ডারের এক ওভার থেকে মুশফিক ১৩ রান নিয়ে তরীটা তীরে ভিড়িয়েই ফেলেছিলেন। কিন্তু বেঙ্গালুরু বা মিরপুরের মতো পারলেন না এবারও।
বাংলাদেশ যেভাবে শুরু করেছিল, তাতে লক্ষ্যটা জয় করে ফেলার কথা আরও আগেই। এনামুল হক শুরুতে ৯ বলে করলেন ২৩, এরপরেই আউট হয়ে গেলেন বাজেভাবে। বাংলাদেশ পেল ওয়ানডেতে নিজেদের দ্রুততম ফিফটি, সাকিব-তামিম করেছিলেন দারুণ শুরু। কিন্তু এরপরেই দুজনে খোলসে ঢুকে গেলেন। চাপটা বেড়ে যাওয়াতেই তামিম ডাউন দ্য উইকেটে এসে স্টাম্পড হয়ে গেলেন, আর সাকিব অলস এক শটে উইকেট উপহার দিয়ে এলেন নার্সকে। নায়কটা মুশফিকই হবেন বলে মনে হচ্ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিমরন হেটমায়ারই সবার চেয়ে উজ্জ্বল।
শুরুতে বল নিয়ে আজও সবকিছু চলছিল বাংলাদেশ ছক অনুযায়ী। স্পিনের ফাঁদে হিমশিম খাচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, গেইল-লুইসও ফিরে গিয়েছিলেন আগেই। কিন্তু শিমরন হেটমায়ার নামের ২০ বছর বয়সী এক ব্যাটসম্যাণ ঠিক করলেন, এবার মঞ্চটা নিজের করে নেবেন। দুই বছর আগে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে আলো ছড়িয়েছিলেন। তবে সম্ভবত ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সি গায়ে সেরা ইনিংসটা খেললেন আজ।
সেই ইনিংসও বলতে গেলে বিরুদ্ধ কন্ডিশনে। রোভমান পাওয়েলকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে শুরুতে যোগ করলেন ১০৩ রান। পাওয়েল খুব একটা স্বচ্ছন্দ ছিলেন না, ৬৭ বলে ৪৪ রান করে শেষ পর্যন্ত বোল্ড হলেন রুবেলের বলে। তবে অন্য প্রান্তে হেটমায়ার তখন দারুণ সপ্রতিভ। ৫০ বলে পেয়েছিলেন ফিফটি, তখনও একটি ছয়ের সঙ্গে চার মাত্র দুইটি। সিঙ্গেল আর ডাবল দিয়ে চাপে রাখছিলেন বাংলাদেশের বোলারদের। তবে হেটমায়ার হাত খুলে খেলতে থাকেন পাওয়েলের আউটের পর
অথচ সেখানে তাঁকে কেউ খুব একটা সঙ্গই দিতে পারেননি। অধিনায়ক হোল্ডার, কিমু পল, অ্যাশলি নার্সদের কেউই পারেননি দুই অঙ্ক ছুঁতে। এর মধ্যে বাংলাদেশের বোলাররা একের পর এক মিসফিল্ডিং করে এমনিতেই বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন সাহায্যের হাত। তবে সত্যিকারের লাইফলাইনটা দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। ৪৩তম ওভারে পাওয়েলের আউটের পরেই ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন হেটমায়ার। সাকিব তো ক্যাচটা রাখতে পারেনইনি, বরং ছয় বানিয়ে দিয়েছেন।
তারপরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ২৭১পর্যন্ত যায় না। সেটা গেল রুবেল হোসেনের আরও একবার ডেথ ওভারে এলোমেলো হয়ে যাওয়ায়। ৪৯তম ওভারে এসে রুবেলকে তিন বলের মধ্যে দুইটি ছয় মারলেন হেটমায়ার। ওই ওভারে শেষ পর্যন্ত এলো ২২ রান, তার আগেই হেটমায়ার সেঞ্চুরি করেছেন ঠিক ৮৪ বলে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কারও এটি দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। শেষ ওভারে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন হেটমায়ার রান আউট হলেন, নামের পাশে ৯৩ বলে ১২৫ রানের ইনিংস। শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়ে গেছে জয়ের জনয যথেষ্ট।
তার আগে ২৯, ২৬, ২২, ২৫- রানসংখ্যার এমন ব্যবধানে প্রথম চারটি উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগের ম্যাচের মতো এবারও এভিন লুইসকে আউট করে প্রথম ব্রেকথ্রুটা দিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার আড়াআড়ি ঢোকা লেংথ বলে এলবিডব্লিউ হয়েছেন এই বাঁহাতি, রিভিউটাই নষ্ট করেছেন শুধু। মিরাজের সোজা বলগুলোতে বিপত্তি ঘটেনি ক্রিস গেইলের, তবে রিটার্ন ক্রিজ ঘেঁষে তার অ্যাঙ্গেল করা বলে সুইপ করতে গিয়ে মিস করে গেছেন সেটা, লুইসের পরিণতি মেনে নিতে হয়েছে তাকেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের 'বিগ-ম্যান' এর উইকেটটা শুধু উল্লাসেই ভাসিয়েছে বাংলাদেশের 'লিটল-ম্যান'কে।
সাকিবের অফস্টাম্পের বাইরের দিকে পড়ে টার্ন করা বলে পাঞ্চ করতে গিয়েছিলেন শেই হোপ, শর্ট এক্সট্রা কাভারে সাব্বিরের হাতে বন্দী হয়ে ‘সফট ডিসমিসাল’-টা আটকাতে পারেননি তিনি। রুবেল প্রথম ওভারেই পেয়েছেন সাফল্য, তার ভেতরের দিকে ঢোকা বলে বড্ড দেরি করে শট খেলার মাশুল গুণেছেন জ্যাসন মোহাম্মেদ, উইকেটের পেছনে ক্যাচ গেছে তার গ্লাভস ছুঁয়ে। কিন্তু দিন শেষে সবকিছুই বৃথা গেছে শেষের ওই বিপর্যয়ে।
বাংলাদেশ একাদশ
তামিম ইকবাল, এনামুল হক, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ, মাশরাফি বিন মুর্তজা, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ
ক্রিস গেইল, এভিন লুইস, শেই হোপ, জ্যাসন মোহাম্মেদ, শিমরন হেটমায়ার, জ্যাসন হোল্ডার, রোভমান পাওয়েল, দেবেন্দ্র বিশু, কিমো পল, অ্যাশলি নার্স, আলজারি জোসেফ