তামিম-মাহমুদউল্লাহর পর বোলাররা সিরিজ জেতালেন বাংলাদেশকে
তৃতীয় ওয়ানডে, সেন্ট কিটস
বাংলাদেশ ৩০১/৬, ৫০ ওভার
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৮৩/৬, ৫০ ওভার
বাংলাদেশ ১৮ রানে জয়ী
তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি, মাহমুদউল্লাহর ফিফটি, ক্রিস গেইলের ভীতিজাগানিয়া বা শেই হোপের মন্থর ফিফটি তখন আলোচনায় নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মিরাকলের আশা জুগিয়ে টিকে আছেন রোভম্যান পাওয়েল। আগের ম্যাচটা হাতের মুঠো থেকে ব্যাটসম্যানরা ফেলে দেওয়ার পর এবার সেটা শক্ত করে ধরে রাখার দায়িত্ব বাংলাদেশী বোলারদের। মাশরাফির, সাকিবের, রুবেলের, মুস্তাফিজের। তারা ধরে রাখলেন সেটা। পাওয়েল-শঙ্কা কাটিয়ে, গায়ানার ভূত তাড়িয়ে বাংলাদেশ সিরিজ জিতল ২-১ ব্যবধানে।
ইতিহাসটা পক্ষে ছিল বাংলাদেশের, ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে ৩০০ বা এর বেশি রান তাড়া করে জিতেছে ইতিহাসে একবারই। হেরেছে ৩৪টি এমন ম্যাচে। তবে ব্রেকথ্রু পেতে বেশ অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে, গুডলেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বলে ভড়কে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন এভিন লুইস, এ নিয়ে তিন ওয়ানডেতেই তিনি আউট হলেন মাশরাফির বলে। এর আগেই সিরিজে ওপেনিংয়ের সর্বোচ্চ রানের জুটিটা গড়া হয়ে গেছে তাদের।
এরপর বাংলাদেশের জন্য কাঁটা হয়ে ছিলেন ক্রিস গেইল। আয়েসী ভঙিমায়, একটু পর পর বল পাঠাচ্ছেন মাঠের বাইরে! তাকে আউট করতে মরিয়া একটা ব্যর্থ রিভিউও নিল, তবে বিগম্যানের ফিফটি আটকানো গেল না তাতেও।
এরপর প্রয়োজন পড়লো দারুণ কিছু বোলিংয়ের। গেইল থাকতেই একদিক থেকে চাপ তৈরি করে গেছেন মুস্তাফিজ, তবে বাঁহাতি গেইলকে ভেবে বোলিংয়ে আনা ডানহাতি মোসাদ্দেক-মাহমুদউল্লাহ সেসব আলগাই করছিলেন শুধু।
৬ চার, ৫ ছয় মারার পর তিনি ধরা পড়লেন রুবেলের ফুললেংথের বলে তুলে মারতে গিয়ে, মেহেদির হাতে লং-অনে। মুশফিকদের উদযাপনটাই বলে দিচ্ছিল, ম্যাচের অনেকখানি তখনোই জিতে গেছে বাংলাদেশ!
ওয়েস্ট ইন্ডিজ এরপর খেই হারিয়েছে রান-তাড়ায়, বল-রানের ব্যবধান বাড়িয়ে দিয়েছে শেই হোপের ৯৪ বলে ৬৪ রানের ইনিংসও। তার সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতেই রান-আউট হয়েছেন কাইরন পাওয়েল, এক বল আগেই বেঁচে গিয়েছিলেন এমন অবস্থা থেকে, মাশরাফির থ্রোটা সরাসরি ভাঙতে পারেনি উইকেট। এবার থ্রো করেছিলেন মিরাজের হাতে। মাশরাফির কাটারে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন হোপ। তার আগেই মিরাজকে সব জোর দিয়ে মারতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং নায়ক শিমরন হেটমায়ার।
এরপর তাদের প্রয়োজন ছিল মিরাকলের। শেষ ১০ ওভারে ৯৬ রান তুলেছিল বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল ১০৯ রান, তারা তুলতে পারল ৯০ রান। রোভম্যান পাওয়েল চেষ্টা করে গেলেন, তবে তার ৫ চার ও ৪ ছয়ে ৪১ বলে ৭৪ রানের ইনিংসও যথেষ্ট হয়নি। মাঝে ফিরেছেন শুধু জ্যাসন হোল্ডার, মুস্তাফিজের বলে ক্যাচ দিয়ে।
এর আগে সিরিজে দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের ১১তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেছেন তামিম ইকবাল। সিরিজে তার রান হলো ২৮৭, তিন ম্যাচের সিরিজে উইন্ডিজের বিপক্ষে তাদের মাটিতে যা সর্বোচ্চ।
এনামুলকে যখন হারায় বাংলাদেশ, তখন রান-রেট ছিল চারেরও নিচে। প্রথমে সাকিবের সঙ্গে জুটি গড়ে সেটা সচল করেছেন তামিম, এরপর তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। তামিমের উইকেটের পর সাব্বির-মোসাদ্দেকের আগে নিজেকে এনেছেন মাশরাফি, ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো এসেছেন ছয়ে ব্যাটিং করতে। ৪২তম ওভারে হোল্ডারকে টানা তিন চারে বাংলাদেশকে তিনশর দিকে বড় ধাক্কা দিয়েছিলেন অধিনায়ক নিজেই। আউট হওয়ার আগে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তার জুটি ছিল ৪২ বলে ৫৩ রানের।
ক্যারিয়ারে ১৯তম ফিফটিটা ছয় মেরে পূর্ণ করেছেন মাহমুদউল্লাহ, তাকে মাশরাফির পর সঙ্গ দিয়েছেন সাব্বির, মোসাদ্দেকও। মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ছিলেন ৪৯ বলে ৬৭ রানে। ২৫ বলে ৩৬ রান মাশরাফির।
ওয়ার্নার পার্কের ব্যাটিং উইকেটে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন মাশরাফি। তবে এনামুল কাজে লাগাতে পারেননি সুযোগটা। জ্যাসন হোল্ডারের শর্ট বলে আগে থেকে ঠিক করে রাখা হুক ব্যর্থ হওয়ার আগে বেশ ধীরগতির ছিলেন এনামুল হক, ৩১ বলে করেছেন ১০ রান। ওয়ানডেতে এ বছর ৭ ম্যাচে ১২.৫৭ গড়ে ৮৮ রান করলেন তিনি, সঙ্গে বিশ্বকাপের আগে ওয়ানডেতে ওপেনিংয়েও রাখলেন বড় রকমের এক শূন্যতা।
প্রথম ওয়ানডের মতো এনামুলের উইকেটের ক্ষতিটা পুষিয়ে দিচ্ছিলেন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। অ্যাশলি নার্সের বলে ধৈর্য্যচূতি ঘটেছে সাকিবের, স্লগ করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়েছেন, ভেঙেছে ২য় উইকেটে ৮১ রানের জুটি।
উদ্ভাবনী শট খেলতে গিয়েই বিপদ ডেকেছেন মুশফিকুর রহিম, অফস্টাম্পের বাইরে গিয়ে মিডলে পড়া বলে স্কুপ করতে গিয়ে লেগস্টাম্প হারিয়েছেন নার্সের বলেই। সেঞ্চুরির পরপরই স্লগ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন তামিম ইকবাল।
মাশরাফির ইনিংস শেষ হয়েছে হোল্ডারের শর্ট বলে লেগস্টাম্পের বাইরে সরে এসে আপার কাটের চেষ্টায়, শর্ট থার্ডম্যানে ধরা পড়ে। আর সাব্বির ক্যাচ দিয়েছেন পয়েন্টের ওপর বল তুলে।