বৃষ্টি বা বাংলাদেশ আটকাতে পারল না ওয়েস্ট ইন্ডিজকে
১ম টি-টোয়েন্টি, সেন্ট কিটস
বাংলাদেশ ১৪৩/৯, ২০ ওভার
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯৩/৩, ৯.১ ওভার (লক্ষ্য ১১ ওভারে ৯১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ডি-এল পদ্ধতিতে ৭ উইকেটে জয়ী
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ১১ ওভারে ৯১ রানের লক্ষ্য তাড়া করায় একটু “কৌশলি” হতে হয়। শুরুতে জোড়া-উইকেট মেডেন দিলে তো ব্যাটিং দলের জন্য আরও বেশি সমস্যা হয়ে যাওয়ার কথা। তবে ‘কৌশল’ যখন আক্রমণ, আক্রমণের অগ্রভাগে যখন ক্রিকেট বলকে ছাতুপেটা করতে পারার ক্ষমতাবান ব্যাটসম্যান, তখন ১১ ওভারে ৯১ রানের লক্ষ্যটা টি-টোয়েন্টিতে মূলত সহজই, বিশেষত ওয়ার্নার পার্কের এই ব্যাটিং উইকেটে। আন্দ্রে রাসেলের দুর্দান্ত হিটিংয়ে প্রায় দুই ওভার বাকি থাকতেই কমে আসা লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বোলিংয়ে সুখস্মৃতি হয়ে বাংলাদেশের জন্য আছে তাই শুধু দ্বিতীয় বাংলাদেশী বোলার হিসেবে জোড়া-উইকেট মেডেনের মুস্তাফিজের ওভারটিই। স্যামুয়েলসও আউট হয়েছেন, তবে তার আগে ১২ বলে ২৬ রান করেই মূলত মিলিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের যা একটু হাসি!
রাসেল বা তার আগে মারলন স্যামুয়েলস বা এরপর রোভম্যান পাওয়েলের ব্যাটিং-ই বলে দিচ্ছিল, বেশ অনেক্ষণ বৃষ্টির পরও এ উইকেটে ব্যাটিংটা উপভোগ করারই কথা ব্যাটসম্যানদের। অবশ্য সেক্ষেত্রে আক্রমণে শক্তিমত্তা থাকতে হবে দারুণ। আর কাজে লাগাতে হবে সুযোগ। যেসব সুযোগ হেলায় হারিয়ে, একের পর এক আত্মহত্যা করে এসেছেন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা।
ক্রিকেটে উইকেটের মূল্য অনেক- সেটা নতুন করে বলার কিছুই নেই, টি-টোয়েন্টিতেও নেই। তবে বাংলাদেশের ইনিংস মনে করিয়ে দিল সেটাই। প্রথম ওভারেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে অতি-প্রতি-আক্রমণে ইনিংস গড়ার কাজে ফেরানোর চেষ্টা করা লিটন-সাকিব-মুশফিক বা শেষে মাহমুদউল্লাহরা মূল্য দিয়েছেন নিজেদের উইকেট হারিয়ে, ইনিংসের শেষদিকে বড় রকমের এক শূন্যতা রেখেই। ১১ ওভারেই ১০০-তে পৌঁছানো বাংলাদেশ তাই পরের ৯ ওভারে তুলতে পেরেছে মাত্র ৪৩ রান। উইকেট পেয়ে বদলে গেছে ক্যারিবীয় বোলিং-ও, বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শূন্যস্থানগুলোও তাই দেখা দিয়েছে অনেক বড় হয়ে।
প্রথম বলেই স্টাম্পড- রেকর্ডই গড়ে ফেললেন তামিম!
নিজেদের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই আউট হয়ে রেকর্ড গড়েছেন দুই বাংলাদেশী ওপেনার- তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। অ্যাশলি নার্সকে ইনিংসের প্রথম বলেই ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড তামিম, সে ওভারেই ফ্রন্টফুটের বল ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে বোল্ড সৌম্য। ইতিহাসে এর আগে কোনও ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টিতে ইনিংসের প্রথম বলেই স্টাম্পড হননি, এর আগে কোনও ওপেনিং জুটির দুজনই পাননি ‘গোল্ডেন ডাক’। এই দুর্দশা বাড়তে পারতো আরও, সাকিবের সহজ ক্যাচটা কাভারে নিতে পারেননি মারলন স্যামুয়েলস, আন্দ্রে রাসেলের বলে।
সেটা না হয়ে সাকিব-লিটনের একটা জুটি হয়েছে, ৩৮ রানের। এরপর তারা আত্মসমর্পণ করেছেন শর্ট বলে, উচ্চাভিলাষী শট খেলতে গিয়ে। লিটন, সাকিব, মুশফিক- শর্ট বলের শিকার তিনজনই। প্রথমজন পুল করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন ডীপ মিডউইকেটে, বাকি দুজন আপার-কাট করতে গিয়ে থার্ডম্যানে। এর মাঝে সাকিবের ক্যাচটা দারুণভাবে নিয়েছেন কেসরিক উইলিয়ামস, প্রথমবার বল ধরে ছুঁড়ে দিয়ে বাউন্ডারির ওপর থেকে সংগ্রহ করেছেন সেটা। মুশফিক শিকার সেই উইলিয়ামসের বলেরই।
এরপর আরও তিনটি উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেছেন উইলিয়ামস। ফুললেংথের স্লোয়ারে বোকা বানিয়েছেন ২৭ বলে ৩৫ রান করা মাহমুদউল্লাহকে। সেই মাহমুদউল্লাহর ব্যাটেই ৭ম ওভারে গিয়ে প্রথম ছয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। মুশফিকের সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি, পরে লোয়ার অর্ডারকে নিয়েও টানতে চেয়েছিলেন। পারেননি।
মাঝে নাটকীয়ভাবে বোল্ড হয়েছেন আরিফুল হক। রাসেলের বল তার স্টাম্প ছুঁয়ে যাওয়ার আগে ফেলে দিয়েছিল বেইলস, সেটা বুঝতে পারেননি মাঠের কেউই। স্ট্রাইক-প্রান্তে রামদিন লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি, যেটা করতে পেরেছেন নন-স্ট্রাইক প্রান্তে, মাহমুদউল্লাহ তখন সিঙ্গেল চুরি করতে ক্রিজের বাইরে! শেষ পর্যন্ত টেলিভিশন রিপ্লেতে পরিষ্কার হয়েছে সব।
শুধু বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা কী করতে চাইলেন এদিন- পরিষ্কার হলো না সেটাই। দিনশেষে, অথবা বলা যায়, সেন্ট কিটসের রাতের শেষভাগে পরিষ্কার হয়ে উঠল দুদলের মাঝে পার্থক্যটাই।