• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    টটেনহামের সামনে অনেক প্রশ্ন

    টটেনহামের সামনে অনেক প্রশ্ন    

    তার আসার আগে ইংল্যান্ডের ‘বিগ ফোর’-এর বিপক্ষে তেমন একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারত না টটেনহাম হটস্পার্স। কিন্তু ২০১৪-১৫ মৌসুমে স্পার্সের কোচ হয়ে এসে দলটিকে খোলনলচে বদলে দিয়েছেন মরিসিও পচেত্তিনো। প্রথম মৌসুমে হয়েছিলেন ৫ম, কিন্তু পরের দুই মৌসুমে যথাক্রমে ২য় এবং ৩য় হয়ে দলকে সরাসরি নিয়ে গেলেন ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্বে। তবে এই মৌসুমে কাউকে দলে না নেওয়ায় বেশ হতাশ স্পার্স সমর্থকেরা। তবে পচেত্তিনো বিশ্বাস করেন, এই স্কোয়াড দিয়েই আবারও দারুণ কিছু উপহার দেওয়ার সামর্থ্য রাখে স্পার্স।

     

    যেখানে অনবদ্য লরিস

    লিওঁ থেকে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমানোর পর থেকেই স্পার্সের মূল গোলরক্ষক তিনিই। পচেতত্তিনোর দলের গোলবার সামলানো এবং অধিনায়কত্ব- দুই দায়িত্বেই আছেন হুগো লরিস। এবারের বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলার সুখস্মৃতি নিয়েই স্পার্সে ফেরত আসলেন লরিস। এবারও পচেত্তিনোর দলের গোলবার সামলাবেন তিনি। বিকল্প হিসেবে থাকবেন মিচেল ভর্ম।

     

    ভার্টনহেন, সানচেজদের সঙ্গী কে?

    গত মৌসুমে ইপিএল-এ স্পার্সের চেয়ে ভাল রক্ষণভাগ ছিল কেবল দুই ম্যানচেস্টার ক্লাবের। কৃতিত্বটা শুরুতেই পচেত্তিনোর, তবে রক্ষণে খেলা দুই বেলজিয়ান টবি অল্ডারওয়েরেল্ড এং ইয়ান ভার্টনহেনের কৃতিত্বও ভুলে যাওয়ার নয়। গত মৌসুমের পর ‘থ্রি মেন ডিফেন্স’ খেলালে লরিসের সামনে দুই বেলজিয়ানের সাথে খেলবেন তরুণ কলম্বিয়ান সেন্টারব্যাক ডাভিনসন সানচেজ। গতির সাথে খেলা বুঝে উঠার ক্ষমতা, সেই সাথে প্রতিপক্ষের পা থকে বল কেড়ে নেওয়া- সব মিলিয়ে কোনো জায়গাতেই কম নয় স্পার্সের ডিফেন্ডাররা।

    পচেত্তিনো রক্ষণে তিনজন খেলালে দুই উইংব্যাক হিসেবে খেলবেন কিয়েরন ট্রিপিয়ের এবং বেন ডেভিস। ডিফেন্ডার হলেও ক্রসিং, পাসিং, ভিশনের জন্য আক্রম্নভাগেও সমান পারদর্শী ডেভিস-ট্রিপিয়ের। উপরে উঠে কেইন-আলিদের অনেক সাহায্য করেছিলেন গত মৌসুমে। সেই সাথে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকাতেও দক্ষ তারা। আর সেটপিসেও বেশ কার্যকর দুজন। তাদের বিকল্প হিসেবে থাকছেন কাইল ওয়াকার-পিটার্স এবং সার্জ অরিয়ের।

     

    প্রতিপক্ষের ঈর্ষার নাম স্পার্সের মাঝমাঠ

    প্রিমিয়ার লিগের সেরা মিডফিল্ডের বিচারে স্পার্সের নাম আসবে শুরুর দিকেই। ডেনিশ জাদুকর ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের সাথে ইংলিশ তরুণ ত্রয়ী হ্যারি উইঙ্কস, ড্যালে আলি এবং এরিক ডায়ার, সাথে বেলজিয়ান মিডফিল্ড জেনারেল মুসা ডেম্বেলে। সাথে ভিক্টর ওয়ানইয়ামা তো আছেনই। সব মিলিয়ে স্পার্সের মাঝমাঠে ‘ট্যাকলার’ বা ‘ক্রিয়েটর’- অভাব নেই কারোই। ডিফেন্সে তিনজন খেলালে মাঝমাঠে দুই ফুলব্যাক পজিশনে থাকবেন ট্রিপিয়ের-ডেভিস। আর মাঝমাঠে থাকবেন ডেম্বেলে-ডায়ার। রক্ষণের সামনে ‘শিল্ডিং মিডফিল্ডার’ হিসেবে এই দুজনের চেয়ে দক্ষ খুব কমই ফুটবলারই আছেন ইপিএল-এ। তাদের একটু সামনে ‘ফ্রি রোল’-এ থাকবেন এরিকসেন। স্পার্সের আক্রমণভাগের ‘নিউক্লিয়াস’ তিনিই। কেইন-আলি-সনদের পাস যোগানো বা মাঝমাঠ থেকে দূরপাল্লার শটে গোল- কোনোদিক দিয়েই পিছিয়ে নেই এরিকসেন। গত মৌসুমেও ছিলেন দুর্দান্ত। গোল তৈরি বা করা- দুটির জন্য কেইনের সাথে তার দিকেও তাকিয়ে থাকবে স্পার্স সমর্থকেরা।

     

    ‘বিকল্প’ আক্রমণটাই ভোগাবে স্পার্সকে?

    কেইন, আলি, সন- প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা আক্রমণ ত্রয়ীও স্পার্সের। মূল একাদশে তাদের জায়গা সুনিশ্চিত। এরিকসেন-ডায়ার-ডেম্বেলেদের থেকে সার্ভিস পেলে গোল করতে দারুণ দক্ষ এই তিনজন। স্বভাবত কেইন ‘নাম্বার নাইন’ এবং সন খেলেন বাঁ-প্রান্তে। তবে আলির পজিশনটাও এরিকসেনের মতই। ট্রিপিয়ের ডানপ্রান্ত সামলানোর কারণে মাঝমধ্যে এরিকসেনের পাশেই নেমে আসেন আলি। তখন গোল করার চেয়ে করানোর দিকে বেশি মনযোগী হন তিনি। আবার মাঝেমধ্যে কেইনের পাশে দ্বিতীয় স্ট্রাইকার হিসেবেও খেলেন তিনি। স্পার্সের মূল আক্রমণভাগ দারুণ হলেও বদলি ফরোয়ার্ডদের নিয়ে আছে সংশয়। ভিনসেন্ট ইয়েনসেন, ফার্নান্দো ইয়োরেন্তে, জেফ্রি এন’কুদু- কেউই তেমন মেলে ধরতে পারেননি নিজেদের। এজন্য কেইনদের কেউ ইনজুরিতে পড়লে বা বিশ্রামে থাকলে গোল আদায়ে রীতিমত গলদঘর্মই হয়েছে স্পার্সের।

     

    ইংল্যান্ডের অন্যতম তরুণ এবং আকর্ষণীয় ফুটবল খেলা দল তারা। আছে ট্রিপিয়ের, আলির মত তরুণরা, আবার এরিকসেন, কেইনের মত অভিজ্ঞ এবং প্রমাণিত সেনানীরা। শিরোপাখরায় ভুগলেও পচেত্তিনোর দর্শনে দৃঢ়বিশ্বাস স্পার্সের। তবে পচেত্তিনো নিজেও জানেন, এই মৌসুমে অন্তত একটি শিরোপা না জিতলে হয়ত আগামী মৌসুমে স্পার্সে না-ও থাকতে পারেন কেইনদের মত অনেকে। মাঠের দৃষ্টিনন্দন ফুটবলের সাথে এবার চাই শিরোপাও

     

    প্রেডিকশনঃ ৬ষ্ঠ (নতুন কোনো সাইনিং না করায় এবার বেশ প্রেডিকটেবল হবে স্পার্স। তাদের আটকানোর ছকটা নতুন করে কষতে হবে না প্রতিপক্ষ ম্যানেজারদের। বড় দলগুলো হয়েছে আরও শক্তিশালী, আর স্পার্স রয়ে গেছে আগের জায়গায়। সব মিলিয়ে এবার হয়ত পচেত্তিনোর অধীনে সবচেয়ে খারাপ মৌসুমটাই যাবে স্পার্সের)।