বিখ্যাতদের অনাকাঙ্খিত কীর্তি
পোস্টটি ৩৭৯৩ বার পঠিত হয়েছেতারকা ক্রিকেটাররা দারুণ সব কীর্তিতে জয় করেন দর্শকদের হৃদয়। কিন্তু অনেক সময় তাঁরা এমন কিছু অনাকাঙ্খিত কীর্তি করে বসেন, ভুলে যেতে চাইলেও যা লেখা থাকে তাদের নামের পাশেই। এমন কিছু কীর্তি নিয়ে আজকে আমাদের আয়োজন।
টেস্টে সবচেয়ে বেশি বোল্ড আউট
নিজের সময়ে শুদ্ধতম টেকনিকের ব্যাটসম্যানের তালিকায় রাহুল দ্রাবিড় থাকবেন শীর্ষ তিনের মধ্যে, টেস্টে করেছেন ১৩ হাজারের উপর রান। টেস্টে চারটি বিশ্ব রেকর্ডের মালিক তিনি। সবচেয়ে বেশি বল মোকাবিলা করেছেন, সবচেয়ে বেশি ক্যাচ ধরেছেন, সবচেয়ে বেশি জুটিতেও তার নাম। অবিশ্বাস্য হলেও তিনি এই রেকর্ডটির মালিক। দ্যা ওয়াল টেস্টে বোল্ড হয়েছেন ৫৪ বার। তালিকায় ৩ নম্বর নামটিও চমক জাগানিয়া। ব্রাডম্যান যার মধ্যে নিজের ছায়া দেখেছিলেন সেই সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করা টেন্ডুলকার ৪৮ বার বোল্ড হয়ে ৩ নম্বরে।
টেস্টে দীর্ঘতম ওভার
৯০’র দশকে ভয়ঙ্কর ফাস্ট বোলারদের তালিকা করলে অনেকে কার্টলি অ্যামব্রোসকে প্রথমেই রাখবেন। ৯৮ টেস্টে ৪০৫ উইকেট নেওয়া ৬ ফুট ৭ ইঞ্চির এই পেসারের বাউন্সের সাথে ছিল অবিশ্বাস্য গতি আর নিয়ন্ত্রণ। ১৯৯৩ সালে পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করলেন এক অবিস্মরণীয় স্পেল ৬.২-৫-১-৭। সেই পার্থেই ১৯৯৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এক ওভারে করলেন রেকর্ড নয়টি নো বল। ওভার শেষ হল ১৫ বলে যা এখনও টেস্টে সবচেয়ে বড় ওভারের রেকর্ড। যদিও প্রথম ইনিংসে এই ঘটনার পরও ৫ উইকেট নেন এবং ম্যাচ জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ম্যান অব দ্যা ম্যাচও কার্টলি অ্যামব্রোস।
ওয়ানডে ক্রিকেটে দীর্ঘতম ওভার
ওয়াসিম আকরামের পর একমাত্র বোলার পাকিস্তানের মোহাম্মদ সামি যিনি টেস্ট ও ওয়ানডেতে হ্যাট্রিক করেছেন। এমনকি টি টোয়েন্টিতে বিপিএলের হ্যাট্রিকটি ধরলে তিন সংস্করণে হ্যাট্রিক করা একমাত্র বোলার তিনি। দারুণ শুরুর পর ক্যারিয়ার প্রত্যাশিত মাত্রায় নিতে পারেন নি। ২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কায় এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ওভারে কোন রান না দিয়ে নিলেন মোহাম্মদ আশরাফুলের উইকেট। দ্বিতীয় ওভারে প্রথম বলটি করলেন ওয়াইড, দ্বিতীয় বলটি হাবিবুল বাশার পাঠিয়ে দিলেন সীমানার বাইরে। এরপরের বলে বাশার ২ রান নিলেন, তারপরে দুটি বল নো আর ওয়াইড। এরপর একটি লিগাল বল করে টানা ৮টি নো আর ওয়াইড। শেষ বলটি রাজিন সালেহ পাঠালেন সীমানার বাইরে। ওই ভূতুড়ে ওভারের বোলিং পরিসংখ্যান ও-৪-২-নো-ও-১-নো-ও-ও-নো-০-নো-ও-ও-নো-৪। ১৬ বলে শেষ হল ওভার।
ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি শুন্য
ওয়ানডে ক্রিকেটে সব চেয়ে বেশি শুন্যের অনাকাঙ্কিত রেকর্ডটি সনাত জয়সুরিয়ার দখলে। ৪৪৫ ওয়ানডেতে রান করেছেন ১৩ হাজারের উপরে, করেছেন ২৮ টি শতক। ২০১৫ সালে এবি ডি ভিলিয়ারস কেড়ে নেওয়ার আগে ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম অর্ধশত রানের রেকর্ড (১৭ বলে) ছিল তার। তার সময়ে বিশ্বের অন্যতম বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ছিলেন কিন্তু এতসব দারুণ কীর্তির মাঝে এ এক অনাকাঙ্ক্ষিত অর্জন। ৩৪টি শুন্য নিয়ে তালিকায় সবার উপরে তিনি। ৩০ টি শুন্য নিয়ে দুই নম্বরে আছেন আরেক মারকুটে ব্যাটসম্যান শহিদ আফ্রিদি।
টেস্টে এক ওভারে সবচেয়ে বেশি রান
জেমস অ্যান্ডারসন টেস্টে ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম বোলার হিসাবে নিয়েছেন ৪০০ উইকেট, ভেঙ্গেছেন ইয়ান বোথামের ৩৮৩ উইকেটের রেকর্ড। এখন পর্যন্ত নেওয়া ৪৩৩ উইকেট আরও অনেকদূর যাবে সেটা বলাই যায়। কিন্তু এতসব দারুণ কীর্তির মধ্যে রয়েছে একটি অনাকাঙ্খিত রেকর্ড। ২০১৩ সালে পার্থে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া চেষ্টা করছে দ্রুত রান তুলে ইনিংস ঘোষণার। ইনিংসের ৮৭তম ওভারে বল করতে এসে দেন ২৮ রান। তার করা প্রথম বলে চার, দ্বিতীয় বলে ছক্কা আর তৃতীয় বলে ২ রান নেন জর্জ বেইলি। পরের তিনটি বলই সীমানার বাইরে, একটি চার দুটি ছক্কা। এতেই এক ওভারে সব চেয়ে বেশি রানের রেকর্ডে বোলার হিসাবে লেখা হল তার নাম। অবশ্য এই রেকর্ডে তার একজন সঙ্গী আছেন । দক্ষিণ আফ্রিকার রবিন পিটারসেনও এক ওভারে একবার ২৮ দিয়েছেন।
শততম টেস্টে গোল্ডেন ডাক
টেস্টে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বেশি রান আর সেঞ্চুরী অ্যালিস্টার কুকের। বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে টেস্টে শচীন টেন্ডুলকারের রেকর্ড ভাঙ্গার সম্ভাবনা রয়েছে একমাত্র তার। ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর সকালে পার্থে মাইকেল ক্লার্কের সাথে টস করতে নেমেই করলেন দারুণ এক রেকর্ড। ১৩৯ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার দুই অধিনায়ক একসাথে ব্যক্তিগত শততম টেস্ট খেলছেন এবং শততম টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু পাঁচদিন পর সকালে দুজনের অনুভূতি হল ঠিক বিপরীত। শততম টেস্ট জিতে অ্যাসেজ পুনরদ্ধার করলেন ক্লার্ক। আর কুক অ্যাসেজ খোয়ানোর যন্ত্রণার সাথে নিজে করলেন এক অনাকাঙ্খিত রেকর্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫০৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে রায়ান হ্যারিসের করা ইনিংসের প্রথম বলেই বোল্ড ক্যাপ্টেন কুক। শততম টেস্টে গোল্ডেন ডাক করা একমাত্র নজির এটাই।
- 0 মন্তব্য