গ্ল্যামারলেস টুর্নামেন্টের গল্প
পোস্টটি ২৪৪৯ বার পঠিত হয়েছেআজ ডিপিএলের ষষ্ঠ রাউন্ড শেষ হলো । ষষ্ঠ রাউন্ড শেষে প্রত্যেক দলেরই ছয়টি করে ম্যাচ হয়ে গেছে । ছয় ম্যাচ শেষে পাঁচটি জয়ে দশ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে আছে মুশফিকুর রহীমের মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব । চার জয় আর এক 'অবিশ্বাস্য টাই'য়ে নয় পয়েন্ট করে নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও লিজেন্ড অব রুপগঞ্জ । আট পয়েন্টে আছে তিনটি দল । ৪র্থ, ৫ম ও ষষ্ঠ স্থানে আছে যথাক্রমে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স, প্রাইম দোলেশ্বর ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব । ছয় পয়েন্টেও আছে তিনটি দল । আবাহনী, প্রাইম ব্যাংক ও ব্রাদার্স আছে যথাক্রমে সাত, আট ও নয় নম্বরে । আজ দ্বিতীয় জয় তুলে নেওয়া, মাশরাফির কলাবাগান ক্রীড়া চক্র চার (অবশ্য ক্রিকইনফোতে এখনো দুই পয়েন্টই দেখাচ্ছে, পরে ঠিক করবে হয়তো) পয়েন্ট নিয়ে আছে দশম স্থানে । ছয়টিতেই পরাজয় নিয়ে এগারো ও বারো তে আছে কলাবাগান ক্রিকেট এ্যাকাডেমী ও ক্রিকেট কোচিং স্কুল ।
ব্যাটে-বলে আলো ছড়াচ্ছেন দেশের মোটামুটি শীর্ষ সারির সব প্লেয়াররাই । মাশরাফি তো টানা হারের বৃত্ত থেকে বেরোতে আজ নিজ কাঁধেই তুলে নিয়েছিলেন পুরো দায়িত্ব । ১১ ছক্কায় ৫১ বলে ১০৪ রানের টর্নেডো ইনিংসের পর বল হাতে প্রতিপক্ষের 'মারকুটে ব্যাটসম্যান' মাহবুবুল করিম কে ফিরিয়ে দিয়েছেন প্রথম ওভারেই । যার ফলশ্রুতিতে দল পেয়েছে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় জয়ের দেখা । শামসুর রহমানও আজ ৯৫ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলেছেন । শাহরিয়ার নাফিসও খেলেছেন টুর্নামেন্ট-সর্বোচ্চ ১৩৪ রানের অনবদ্য এক ইনিংস ।
এর আগে মাহমুদুল্লাহ, মুশফিকুর, সাব্বির, মুমিনুল, আনামুল, সোহরাওয়ার্দী, মাহবুবুল করিম, মার্শালদের পাশাপাশি সালমান, সাইফ, ইমতিয়াজ, আল আমিন, মেহেদী হাসানদের মতো তরুণেরাও পেয়েছেন সেঞ্চুরী । একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ইমতিয়াজ হোসাইন তো দুটি সেঞ্চুরীও করলেন । মিরাজ, শান্ত, আসিফদের মতো উঠতি তরুণরাও খেলছেন চোখে পড়ার মতো । মোসাদ্দেক তো ৭৩ গড়ে রান করেছেন ২২১ ।
তামিম-নাসির অবশ্য সেঞ্চুরী পাননি, কারণ কাঁটা পড়েছিলেন নার্ভাস নাইন্টিজে । একমাত্র সৌম্য সরকার খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি । ৮৪ রানের একটা ইনিংস ছাড়া বলার মতো আর কিছুই নেই তাঁর । রকিবুল, মিথুন আলীরা অবশ্য ভালই খেলছেন । শামসুর রহমান সেঞ্চুরী না পেলেও ছয় ম্যাচে চার ফিফটিতে ৬৫ গড়ে ৩২৬ রান নিয়ে রান তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছেন । আল আমিন তো ৯৩ গড়ে ৩৭২ (৪টি অর্ধশতক ও একটি শতক) করে দ্বিতীয় স্থানে থাকার পাশাপাশি, পাল্লা দিচ্ছেন প্রথম স্থানে থাকা উপল থারাঙ্গার (৩৭৬) সাথে । আনামুল হকও ৬৬ গড়ে ৩৩১ রান করেছেন, আছেন তৃতীয় স্থানে ।
এবার আসি বোলিংয়ে । মাহমুদুল্লাহ ব্যাটে বলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ জামালকে । সেঞ্চুরীর পাশাপাশি পাঁচ উইকেটও পেয়েছেন একবার । মোট দশ উইকেট নিয়ে বোলিংয়ে নয় নম্বরে আছেন তিনি । শীর্ষে অবশ্য আরেক শ্রীলংকান । ব্যাটিংয়ের থারাঙ্গার মতো বোলিংয়েও শীর্ষ স্থানটি, ১৫ উইকেট নেয়া এক শ্রীলংকান পিসি ডি সিলভার দখলে । ১৩ উইকেট নিয়ে নাইম জুনিঃ 'একা' দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও, ১২ উইকেট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন ছয়-ছয়জন ! মাশরাফি, এনামুল জুনিঃ, কাপালীদের মতো অভিজ্ঞদের সাথে আছেন লেগি জুবায়ের লিখন ও বিপিএল-তারকা আবু হায়দারের মতো তরুণেরা । আছেন হাবিবুর রহমানের মতো আনকোরাও ।
মাহমুদুল্লাহর মতো দশ উইকেট নিয়েছেন, আঃ রাজ্জাক ও আল আমিন হোসাইনও । এছাড়া রুবেল হোসেন সাতটি, তাসকিন আহমেদ আটটি, কামরুল ও শুভাশীষ নয়টি করে উইকেট পেয়েছেন ।
সবমিলিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরনো এই আসর দারুণভাবে জমে উঠেছে । ম্যাচগুলোতে রান হচ্ছে, জুটি হচ্ছে, দারুণ ফিনিশের পাশাপাশি ঘটছে অভাবনীয় কিছু ঘটনাও । তাইজুল-মুক্তাররা দেখাচ্ছেন শেষ বলের সেই ক্রিকেটীয় গৌরবময় অনিশ্চয়তার নান্দনিক সৌন্দর্য্য !
দেখাচ্ছেন ? আসলেই কি তাই ? আমরা কি দেখতে পারছি ?
থাক, সেসব পুরনো কাসুন্দি আর না ঘাঁটি । আইপিএলে মজে যাওয়া এই সন্ধ্যা-রাত গুলোতে, এইসব ঘরোয়া ক্রিকেটের হাহাকার আপনাদের আর নাইবা শোনালাম । আমরা তো ভালই 'এডজাষ্ট' করে নিতে পারদর্শী । ক্রিকইনফোতেই না-হয় অভ্যস্ত হয়ে নিলাম ।
______
- 0 মন্তব্য