পর্তুগাল, ইউরো এবং অন্যান্য
পোস্টটি ২৯৭৬ বার পঠিত হয়েছে১.
পর্তুগালকে নিয়ে আমি খুব বেশী আশাবাদী ছিলাম না কখনোই। খুব বড়জোর সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়া যাবে হয়তো। এমন এক সহজ গ্রুপে পড়েছিল যেখান থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন না হয়ে পরের রাউন্ডে ওঠাটা রীতিমত অন্যায় পর্তুগালের জন্য। কিন্তু গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন তো অনেক পরের ব্যাপার, দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে হল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। আইসল্যান্ডের সাথে ড্র, অস্ট্রিয়ার সাথে ড্র, বোনাস হিসেবে ক্রিসের পেনাল্টি মিস। হাঙ্গেরির সাথেও ড্র। গোল ব্যবধানে তুরস্ক আর আলবেনিয়াকে পিছনে ফেলে পরের রাউন্ডে যাওয়া। কিন্তু এখন মনে হয়, যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। আমরা অনেক সময়ই অনেক বিষয় নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকি। মনে হয় এটা হল না কেন কিংবা ওটা না হয়ে এটা হলে কি এমন হতো?
অস্ট্রিয়ার সাথে পেনাল্টিটা যদি ক্রিস মিস না করত তাহলে পর্তুগাল হত গ্রুপ রানার্স আপ। রানার্স আপ মানেই দ্বিতীয় রাউন্ডে ইংল্যান্ড, তারপর ফ্রান্স। ফ্রান্স পার করতে পারলে জার্মানি। তারপর ব্লা ব্লা ব্লা।
কিন্তু কি হল? হাঙ্গেরির সাথে ড্র করে যখন গ্রুপ রানার্স আপ হওয়া প্রায় নিশ্চিত তখনই অস্ট্রিয়ার জালে আইসল্যান্ডের গোল। পর্তুগাল চলে গেলো ৩ এ। আইসল্যান্ড উঠে এল ২ এ। এর আগের দিন স্পেন বনাম ক্রোয়েশিয়ার খেলায় জিতল ক্রোয়েশিয়া। অথচ ওই ম্যাচ ড্র হলেও পর্তুগালের খেলা পড়ে স্পেনের সাথে। পেরিসিচ ওই গোলটা না দিলে দ্বিতীয় রাউন্ডেই স্পেনের সাথে পর্তুগালের বিদায় ঘন্টা বেজে যেতো। কিন্তু আল্লাহ্ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন। তিনি পরিকল্পনা করেই রেখেছিলেন এবার ক্রিসের হাতেই উঠবে কাপ।
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মহাপরিকল্পনাকারী।
২.
ইউরো ফাইনালের আগ পর্যন্ত আমার দেখা সেরা সাবস্টিটিউট খেলোয়াড় ছিল টিম ক্রাল। কোস্টারিকার সাথে নেদারল্যান্ডের কোয়ার্টার ফাইনালের সেই বিখ্যাত সাব। নিয়মিত গোলকিপার সিলেসেনকে উঠিয়ে টিম ক্রালকে নামিয়েছিলেন লুই ভ্যান গাল। কিন্তু ইউরো ফাইনালে রেনাটো সানচেজকে তুলে এডারকে নামানো সেই সাবকেও পিছনে ফেলে দিলো। টিম ক্রাল কোস্টারিকার দুটো শট ঠেকিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। আর এডার সুপারসাব হিসেবে গোল করলো ফাইনালে। যে খেলোয়াড় ক্লাবের হয়ে আগের ১৫ ম্যাচে গোলমুখে শট নিতে পেরেছিল মাত্র ৪টি, সেই মানুষটিই কিনা হয়ে গেলো পর্তুগালের জয়ের নায়ক?
বিশ্বকাপের সেই কোয়ার্টার ফাইনালের পর আমি লিখেছিলাম কখনো যদি জুয়া খেলি, সঙ্গী হিসেবে লুই ভ্যান গালকে চাই। লুই ভ্যান গাল আপাতত থাকুন তার মত। আমি ফার্নান্দো সান্তোসের পাশ ছেড়ে নড়ছি না।
৩.
তিন সপ্তাহ হয়ে গেলো ইউরো জেতার। অথচ আমি চোখ বন্ধ করলেও এখনও দেখতে পাই পায়েটের সেই ট্যাকল, খেলতে না পেরে রোনালদোর চোখে পানি নিয়ে মাঠ ছাড়া। রুই প্যাট্রিসিওর অতিমানবীয় সব সেভ, রক্ষণভাগকে নিশ্ছিদ্রদুর্গ বানিয়ে রাখা পেপেকে। শেষমুহূর্তের বারে লেগে ফেরা জিনিয়াকের সেই শট, বদলী হিসেবে নেমে পুরা টুর্নামেন্টে এক গোল করেই হিরো হয়ে যাওয়া এডারের বুনো উল্লাস।
আর কোমরে পতাকা জড়িয়ে ইউরো শিরোপা উঁচিয়ে ধরা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে।
ওহ পর্তুগাল! মাই পর্তুগাল!!!
৪.
কয়েকদিন আগে পর্তুগালের জার্সি পরে ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করছি। মনে বড়ই আনন্দ। আমার বউ জিজ্ঞেস করলো, “কি,তোমার আনন্দ এখনও শেষ হয়নি?”
আমি বললাম, “১৬ বছর পরে একটা শিরোপা জিতলাম। সেই আনন্দ কি এতো তাড়াতাড়ি শেষ হবে? তাছাড়া আবার কবে জিতবো কে জানে। আদৌ জিতবো কিনা তারও তো ঠিক নেই।”
আল্লাহ্র অশেষ দয়া। নিজের প্রিয় ফুটবলারকে নিজের প্রিয় দলের হয়ে কোন বৈশ্বিক শিরোপা জিততে দেখেছি।
হুমায়ূন আহমেদ তাঁর বইয়ে একটা লাইন প্রায়ই ব্যবহার করতেন। “আমি অকৃতী অধম জেনেও তো কম দাওনি মোরে।” এই কথাটা এখন আমারও বলতে ইচ্ছে করছে। সাথে বলতে ইচ্ছে করছে আরেকটা কথাও।
হে দয়াময়, ২০১৭ সালের ১৮ই জুন ওভালে মাশরাফির হাতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপাটা তুলে দাও।
- 0 মন্তব্য