• ক্রিকেট

ক্রিকেটীয় কাকতাল

পোস্টটি ৫৫৩৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বাংলা ভাষায় একটি শব্দ আছে কাকতালীয়। রসিকতা করে বলা হয় একটি কাক তালগাছে বসলো অমনি একটি তাল মাটিতে পড়ল। কাক না বসলে তাল পড়ত না তাও ঠিক না আবার তাল না পড়লে কাক বসত না এমনটিও না। দৈবাৎ দুটি ঘটনা একসাথে ঘটে গেল তাই কাকতালীয়। আজ এমন কিছু কাকতালীয় ক্রিকেটীয় গল্প শোনাবো আপনাদের।

 

  • টেস্ট ক্রিকেটের জন্ম মেলবোর্নে ১৮৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের একটি ম্যাচ দিয়ে। সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডকে ৪৫ রানে পরাজিত করে। ১৯৭৭ সালে টেস্টের ১০০ বছর উদযাপনে মেলবোর্নেই ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার মাঝে একটি টেস্ট আয়োজন করা হয়। প্রতিপক্ষ এক, মাঠ এক আর ফলাফল সেও একই, ৪৫ রানে জয়ী অস্ট্রেলিয়া!!

 

 

  • ২০১১ সালের নভেম্বরের ৯ তারিখে কেপটাউনে শুরু হলো দক্ষিণ আফ্রিকা আর অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ম্যাচ। ম্যাচের তৃতীয়দিন ১১ তারিখ সকালে দেখা গেল এক অবিশ্বাস্য কাকতালীয় দৃশ্য। ১১-১১-১১ তারিখে সকাল ১১ টা ১১ মিনিটে দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ জেতার জন্য চাই আরও ১১১ রান।

 

 

  • আলেক স্টুয়ারট ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। টেস্ট ওয়ানডে মিলিয়ে করেছেন ১০ হাজারের বেশী রান, ১৯টি সেঞ্চুরী। তার জন্ম তারিখ ৮-৪-৬৩, আর টেস্টে মোট রানও ৮,৪৬৩!!

 

  • ১৯৫৬ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এক ইনিংসে ১০ উইকেট নিলেন জিম লেকার। সেদিন গ্যালারিতে বাবার সাথে ছিলেন ১০ বছরের রিচারড স্টোকস। ৪৩ বছর পর দিল্লিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ইনিংসে ১০ উইকেট নিলেন কুম্বলে। সেদিনও মাঠে হাজির ৫৩ বছর বয়সী স্টোকস!!! জার্মান ব্যবসায়ী স্টোকস ব্যবসায়িক কাজে সেদিনই দিল্লি পৌঁছেছিলেন। একমাত্র তিনিই সাক্ষী দুটি ১০ উইকেটের। আরও কাকতালীয় বিষয় এই দুটি টেস্টের বাইরে আর কোনও টেস্টই মাঠে বসে দেখেন নি তিনি!!

 

 

  • ১৯৮৬ সালের এপ্রিলে শারজায় অস্ট্রাল-এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তান ভারতকে পরাজিত করে ১ উইকেটে। ২৮ বছর পর ঢাকায় এশিয়া কাপে মুখোমুখি ভারত পাকিস্তান, আবারো পাকিস্তানের ১ উইকেটে জয়। এই দুই ম্যাচের কাকতালীয় ঘটনাবলি দিয়ে হয় একটি ছোটখাট তালিকা।
অস্ট্রাল- এশিয়া কাপ ১৯৮৫ এশিয়া কাপ ২০১৪
খেলা ভারত বা পাকিস্তানে না হয়েছে নিরপেক্ষ মাঠে খেলা ভারত বা পাকিস্তানে না হয়েছে নিরপেক্ষ মাঠে
পাকিস্তান টসে জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত  নেয় পাকিস্তান টসে জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত  নেয়
প্রথমে ব্যাট করে ভারত করে ২৪৫ প্রথমে ব্যাট করে ভারত করে ২৪৫
শ্রীকান্ত (ওপেনার)দুটি ছক্কা হাকান রোহিত শর্মা (ওপেনার)দুটি ছক্কা হাকান
তিন ভারতীয় অর্ধশত রান করেন তিন ভারতীয় অর্ধশত রান করেন
পাকিস্তানের ২ ব্যাটসম্যান রান আউট হন পাকিস্তানের ২ ব্যাটসম্যান রান আউট হন
পাকিস্তানের ১০ম ব্যাটসম্যান জুলকারনাইন প্রথম বলেই চেতন শর্মার বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান পাকিস্তানের ১০ম ব্যাটসম্যান আজমল প্রথম বলেই অশ্বিনের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান
১১ নম্বর ব্যাটি তৌসিফ প্রথম বলেই গুরুত্বপূর্ণ সিঙ্গেল নিয়ে মিয়াদাদকে স্ট্রাইক ফিরিয়ে দেন ১১ নম্বর ব্যাটি জুনাইদ প্রথম বলেই গুরুত্বপূর্ণ সিঙ্গেল নিয়ে আফ্রিদিকে স্ট্রাইক ফিরিয়ে দেন
ম্যাচের শেষ ওভার বল করতে এসে চেতন শর্মা ৩টি উইকেট নেন ম্যাচের শেষ ওভার বল করতে এসে অশ্বিন ৩টি উইকেট নেন
মিয়াদাদ ছক্কা মেরে ম্যাচ জেতান (ওই ইনিংসে মোট ৩টি ছক্কা মারেন) আফ্রিদি ছক্কা মেরে ম্যাচ জেতান (ওই ইনিংসে মোট ৩টি ছক্কা মারেন)
ম্যাচের ফলাফল আসে শেষ ওভারে ম্যাচের ফলাফল আসে শেষ ওভারে
পাকিস্তান এক উইকেটে জয়লাভ করে পাকিস্তান এক উইকেটে জয়লাভ করে

 


এখন পর্যন্ত ভারত লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছে দুটি টেস্ট, ২৮ বছরের ব্যবধানে জেতা দুই টেস্টের সাদৃশ্য নিয়েও করা যায় একটি তালিকা।

  • দুই অধিনায়কই দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন (ধোনি ও কপিল দেব)।
  • একজন শর্মা ৫ বা তার বেশী উইকেট নিয়েছেন (চেতন ও ইশান্ত)
  • একজন বিনি প্রথম ইনিংসে ১৯ বলে ৯ রান করেছেন (রজার ও স্টুয়ার্ট বিনি)
  • মুম্বাইয়ের একজন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেছেন (ভেংসারকার ও রাহানে)
  • ১৯৮৬ ও ২০১৪ দুই বছরই ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ছিল জার্মানি ও আর্জেন্টিনা
  • দুটি জয়ই এসেছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের ঠিক তিন বছর পরে

  

ভারতের হয়ে এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন দুই রবিন সিং। নব্বইয়ের দশকে ওয়ানডে স্পেশালিষ্ট অলরাউন্ডার রবিন সিং ১৯৯৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অভিষেকের পর টেস্টে আর সুযোগ পাননি। পরে ফাস্ট বোলার আরেক রবিন সিং তার একমাত্র টেস্টটা খেলেন ১৯৯৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। 

 

 

অনেক কাকতালের গল্প বললাম,  এগুলোকে দৈবাৎ নাকি ঈশ্বরের রসিকতা বলবেন সে সিদ্ধান্ত আপনাদের। আজ এটুকুই থাক, বাকি গল্পগুলো অন্যদিন হবে।