• ক্রিকেট

নতুন মাশরাফি; নাকি নতুন সাকিব?

পোস্টটি ৮৫১৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

তিনি নাকি মাশরাফির মত। সতীর্থদের আগলে রাখেন বুকের মধ্যে, অকাতরে নিজের ব্যাট-প্যাড বিলিয়ে দেন, অসচ্ছ্বল পরিবার থেকে উঠে আসা ক্রিকেটারদের নাকি গোপনে টাকা পয়সা দিয়েও সহায়তা করেন! তিনি অনূর্ধ্ব ১৯ দলের প্রাণ, দলের সবাই তার জন্যে প্রাণ বিলিয়ে দিতেও প্রস্তুত! কথাটা বলেছিলেন গেল অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের কোচ খোদ মিজানুর রহমান বাবু।

ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে হওয়া অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলারদের আঁটসাঁট বোলিং এর সামনে দিশেহারা বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে কোন রকমে ২২৬ রানের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিল তার ৬০ রানের উপর ভর করে। দলের আর কারো স্ট্রাইক রেট যেখানে ৭০ ও পেরুতে পারেনি সেখানে তিনি রান করলেন ৮১ এর উপর স্ট্রাইক রেটে। বাংলাদেশ যে ২৫০ পেরুতে পারেনি তার মূল কারণ বোধ হয় তার শেষ পর্যন্ত ক্রিজে না থাকতে পারাটাই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং এ এসেই চালিয়ে খেলতে শুরু করল গিরডন পোপের নেতৃত্বে, দুই ওপেনার ২২৭ রানের লক্ষ্যটাকে আরো মামুলি বানালেন মাত্র ৫ ওভারে ৪৪ রান তুলে। তখনি তিনি দৃশ্যপটে এলেন, দুই ওপেনারকেই দেখালেন সাজঘরের পথ। বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরালেন তার ঘূর্ণির জাদু দিয়ে।

বাংলাদেশ হয়তো ঐ ম্যাচটায় পারেনি, তবে যেকোন পর্যায়ের ক্রিকেট টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে তৃতীয় করতে তিনিই তো নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে, হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরা। আইসিসি ঐ টুর্নামেন্টের নির্বাচিত সেরা একাদশে তাকে অধিনায়ক করতে এজন্যেই একবারও ভাবে নি।

তিনি নাকি আবার সাকিবের মতোও। অফস্পিন করতে পারেন, নতুন বলে ঘূর্ণি তৈরিতেও পারদর্শী, আবার তিনি মিডল অর্ডারে ব্যাট হাতেও দলের অন্যতম ভরসার স্তম্ভ। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের রেকর্ডও তার হয়ে কথা বলবে- ১২ ম্যাচের ১৪ ইনিংসে করেছেন ৫২৪ রান, শতক হয়তো এখনো পাননি তবে তার গড় ৪০ এর উপরে। বল হাতে নিয়েছেন ৪১ উইকেট, এমনকি ম্যাচে তার ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তিও আছে একবার!

বাংলাদেশের আগামি দিনের বড় তারকা ভাবা হয় তাকে, নির্বাচকরা এজন্যেই তাকে জাতীয় দলে সুযোগ দিয়েছেন মাত্র ১৮ বছর বয়সে। সে আস্থার প্রতিদানটাও না তিনি কি অসাধারণভাবে দিলেন- নতুন বলে করালেন তীক্ষ্ণ টার্ন, স্বপ্নের মতো এক ডেলিভারিতে বোল্ড করলেন ডাকেটকে। স্কিড করে যাওয়া এক কুইকার ডেলিভারিতে ব্যালান্সকে ফেললেন এলবিডব্লিউ এর ফাঁদে। টানা ১০ ওভার বল করে ২ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি রানটাকেও আটকে রাখলেন অবিশ্বাস্যভাবে। 

মধ্যাহ্ন বিরতির পর মিরাজ নিলেন দিনের সবচাইতে বড় উইকেটটা। ওয়ানডে মেজাজে নিখুঁতভাবে চালিয়ে খেলতে থাকা রুটকে ফেরালেন স্লিপে সাব্বিরের হাতে বন্দী করে। এই সেশনেও বল করলেন টানা এগার ওভার। অভিষেকের দিনেই কি দারুণভাবেই না আস্থার প্রতিমূর্তি হয়ে উঠলেন অধিনায়কের কাছে। প্রচণ্ড গরম যেখানে মিরাজের ফিটনেসের কাছে হার মেনেছে সেখানে মঈন আর কিই বা করতে পারতেন? চারবার রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলেও মেহেদির টার্নের হাত থেকে বাঁচতে পারলেন না। চা বিরতির পর মঈনকে ফিরিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজই ভাংলেন দিনের সবচাইতে বড় জুটিটা। এরপর ফিরিয়েছেন সেট ব্যাটসম্যান বেয়ারস্টোকেও। হয়েছেন অভিষেকে ৫ উইকেট নেয়া বাংলাদেশের সপ্তম বোলার। 

মেহেদি হাসান মিরাজের আজ সবেমাত্র শুরু। অভিষেকটা তাড়াতাড়ি হল কিনা সেই প্রশ্ন উঠতে পারে, তাক লাগানো অভিষেকের পর বাংলাদেশে হারিয়ে যাওয়ার অজস্র উদাহরণ তিনি অনুসরণ করবেন কিনা এমন কুচিন্তাও মনে দানা বাঁধতে পারে। তবে তিনি যেভাবে এতদিন খেলেছেন, দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সংবাদমাধ্যমকে যেভাবে সামলেছেন তাতে আশা করতে তো দোষ নেই। মিরাজের মধ্যে মাশরাফির দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব দেখা যাবে কিনা সেটা সময়ই বলবে, তবে আপাতত তার মধ্যে সাকিবের ছাপটুকু প্রস্ফূটিত হোক না! একপাশে আসল সাকিব, আরেকপাশে মিরাজের দ্বিমুখী স্পিন আক্রমণে প্রতিপক্ষকে খাবি খেতে দেখলে অবশ্যই খারাপ লাগবে না!

মাশরাফি-সাকিবের যুগলবন্দীতে উদ্ভাসিত হোন আগামীর মিরাজ, প্রথম দিনের এই পারফরম্যান্স মঞ্চস্থ হোক আরো অজস্রবার এটাই তো এদেশের কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর কামনা।