• ক্রিকেট

ইংল্যান্ড বধ ও আগুনের গোলা

পোস্টটি ১৩২৩৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

দেশের মাটিতে ২০১১ বিশ্বাকাপ তাই টাইগারদের প্রতি সবার একটু বেশিই প্রত্যাশা ছিল। বাংলাদেশ তখন এখনকার মত শক্তিশালী দল হয়ে উঠেনি। তারা যদি কোন বড় দলকে হারিয়ে দিত তা হত অঘটন।

২০১১ ওয়ার্ল্ড কাপ –বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড - এই ম্যাচটি আমার দেখা অন্যতম স্মরণীয় ম্যাচ। প্রথমে ইংল্যান্ড ব্যাট করে। প্রথম বিশ ওভার বাংলাদেশি বোলাররা টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানের উইকেট তুলে নেয়। রান রেট নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রাখতে সক্ষম হয়ে। কিন্তু ট্রট আর মরগান মিলে ১০০ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। এই দুইজন যখন ব্যাটিং করছিলেন মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ড বিরাট বড় টার্গেট দিবে।

আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি। টিপিকাল বাংলাদেশ সমর্থকদের মত উইকেট না পরার কারণে অস্থির হয়ে যাই। ইংল্যান্ড এর দুই ব্যাটসম্যান সমানে রান করে যাচ্ছে। খেলা দেখছি আর বোলার ফিল্ডারদের মৃদু ভর্ৎসনা করছি। মরগানকে আউট করে নাইম ইসলাম ব্রেকথ্রু এনে দিলেন এবং আমাদের তারস্বরে চিৎকার চেঁচামেচি করার সুযোগ দিলেন। আমি বাংলাদেশের প্রায় সব খেলা আমার ছোট ভাইয়ের সাথে দেখি। উইকেট পরলে যেমন মাঠে খেলোয়াড়রা  হাই- ফাইফ দেয়। আমরা ও হাই- ফাইফ দেই। চিল্লাচিল্লি করি। আশে পাশের মানুষ জন, প্রতিবেশিরা খুবিই বিরক্ত হয়ে।

মরগান আউট পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পরতে থাকে। আমাদের উল্লাস আর দেখে কে! এক একটা উইকেট পরে আর আমরা নতুন উদ্দামে চিৎকার চেচামেচি শুরু করি। এক উইকেটের উদযাপন শেষ হতে না হতে আরেক উইকেটের উদযাপন শুরু হয়ে যায়। ৬৭ রানে ইংল্যান্ড ৭ উইকেটের পতন ঘটে। কোন রকম টেনে টুনে তারা বাংলাদেশকে ২২৬ রানের টার্গেট দেয়।

স্কোর টা তুলনামূলক কম হওয়াতে মনে জয়ের চিন্তা আঁকিবুঁকি দেয়। হতেই পারে। অস্বাভাবিক তো কিছু না।কিন্তু ওয়েস্ট ইনডিস  এর সাথের খেলার কথা মনে পরে। বাংলাদেশ ৫৮ অল আউট। আজকে এমন কিছু না হলেই হয়ে।

বাংলাদেশ ব্যাটিং ওপেন করে তামিম ও ইমরুল। স্বভাবসুলভ ভাবে এক প্রান্তে তামিম রান করতে থাকে।ইমরুল অন প্রান্তে তাকে সঙ্গ দেয়। প্রত্যেক ওভারে চার। তামিমের এত ব্যাটিং দেখে আমি দিগুন আশাবাদি হয়ে যাই। আরে তামিম একাই ম্যাচ জিতায়ে ফেলবে এমন একটা ভাব। বাংলাদেশ জিতলে কি করব সেই পরিকল্পনাও শুরু করে দেই। মাত্র সাত ওভার খেলাতেই এত কিছু।

ক্রিকেট দেবতার ভিন্ন পরিকল্পনা ছিল। বাংলাদেশ এত সহজে জয় লাভ করবে তা কি হয়? উদ্বোধনী জুটি পঞ্চাশ রান পূরণ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই তামিম আউট। তারপর আরও দুই উইকেটের পতন। নো তামিম নো পার্টি। সব উৎসাহ প্রায়ে শেষ হয়ে গেল। ফীলিং অসহায়। এখন তো সবাই তামিমকে উদাহরণ হিসাবে নিয়ে একে একে ড্রেসিংরুমে ফেরত যাবে। তামিমের উপর খুবি মেজাজ খারাপ হয়। সে আরও অনেকক্ষণ ক্রিজে থাকলে কি অসুবিধা হত!

ম্যাচ একবার ইংল্যান্ডের দিকে হেলে যায়ে একবার বাংলাদেশের দিকে। সাকিব – ইমরুলের বড় জুটির কল্যাণে আবার জয়ের স্বপ্ন উঁকি দিতে লাগলো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। স্বস্তি বেশিক্ষণ স্তায়ী হল না। পনেরো রানের পাঁচ উইকেট পতন। আমাদের মাথায় হাত। দুই দুইবার আশাভঙ্গ। মাচের ভাগ্য পেনদুলামের মত দুলছে। এবার মেজাজ খারাপের কেন্দ্র ইমরুল আর সাকিব। একজন তো থাকতো।

যারা আট উইকেটে পতনের পর স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন বা বিরক্তিতে টেলিভিশন বন্ধ করে উঠে যান, তারা যে কি খেলা মিসটা করেছেন। এমন একটা পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ যে ম্যাচ জিতবে এটা একটা আশাতীত ব্যাপার। দুই বার আশা জাগিয়েও যে বাংলাদেশ এই খেলা হারচ্ছে এটা আমি মানতেই পারছিলাম না। অবশ্য বাংলাদেশ দলের সমর্থক হলে এসবে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়াই ভাল।

পরের কয়েক ওভার যেকি হল তা বর্ণনা করা কঠিন। এক একটা রান এত গুরুত্বপূর্ণ।একটা চার হলে যে কি উল্লাস। বেশি আশাও করতে পারচ্ছি না। কখন আউট হয়ে যায়ে তার নাই ঠিক। শফিউলের কাজ ছিল কোনভাবে এক রান নিয়ে রিয়াদকে ব্যাট করতে দেওয়া কিন্তু সে চার মেরে তার ব্যাটিং প্রতিভা দেখিয়ে দেয়। শফিউলের  খেলায়ে আমি মুগ্ধ। সাত বলে তিন লাগে এরকম যখন ম্যাচের অবস্থা তখন চার মেরে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে নিয়ে জান রিয়াদ। দুই উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয়।বাঁধভাঙা উল্লাসে মাতে দেশ।

খেলা শেষ হওার পর স্টেডিয়ামে শফিউলের জন্য বাজতে থাকে মমতাজের জনপ্রিয় গান ‘পোলা তো নয় একখান আগুনের গোলা’।  তখন এই গানটা অনেক মানানসই মনে হচ্ছিল। এখনও শফিউলকে দেখলে এই গানের কথা মনে হয়।