• ক্রিকেট

নারী ক্রিকেটের 'ডন ব্র্যাডম্যান'

পোস্টটি ২৪০০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট পাওয়ার বিরল এক নজির আছে আমাদের সাকিব আল হাসানের। কিন্তু সর্বপ্রথম টেস্টে ম্যাচে এই কীর্তি কে গড়েছিলেন? কিথ মিলার, স্যার গ্যারি সোবার্স, ইমরান খান, কপিল দেব, রিচার্ড হ্যাডলি, ইয়ান বোথাম নাকি অন্য কেউ? এদের মধ্যে উত্তর খুঁজতে গেলে হতাশ হয়েই ফিরতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটে সর্বপ্রথম এই 'ডাবল' এর রেকর্ড যে এক নারী ক্রিকেটারের দখলে! ক্রিকেটারের নাম, বেটি উইলসন। 

টেস্ট খেলেছেন মোটে ১১ টি, কিন্তু তাতেই এত কীর্তির সমাহার, উইলসনের নামই হয়ে গিয়েছে 'লেডি ডন'। সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান ডন ব্র্যাডম্যানের সাথে তুলনা করা হয় যার, তিনি ক্রিকেটার হিসেবে কেমন সেটা নিশ্চয়ই না বলে দিলেও চলবে!

বেটির সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারের শেষ সিরিজ ছিল সেটি। ১৭৫৭-৫৮ সালে সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড দল তখন অস্ট্রেলিয়ায়। মেলবোর্নে ২য় টেস্টে বৃষ্টিভেজা উইকেটে আগে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ৩৮ রানে অলআউট, ১২ রান নিয়ে সর্বোচ্চ স্কোরার বেটি। ইংল্যান্ড তখন খুব নির্ভার, এই রান তো চোখের পলকেই ছাড়িয়ে যাবে তারা। কিন্তু বেটির বোলিং তোপে পড়ে ইংল্যান্ড ১ম ইনিংসে অলআউট হল ৩৫ রানে, বেটি নিলেন ৭ রানে ৭ উইকেট। ২য় ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমে করলেন সেঞ্চুরি, আবার বল হাতে নিলেন ৪ উইকেট। ব্যাস, হয়ে গেল একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট পাওয়ার বিরল কীর্তির প্রথম নজির স্থাপন! 

adf57ebdbb824688fb4e08ef410c50b0

এই একই টেস্টে বেটি গড়েছিলেন আরেকটি দুর্দান্ত রেকর্ড, যেটিও কিনা নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে চিরকাল। ২য় ইনিংসে ৭ উইকেট নেয়ার পথে পরপর ৩ বলে উইকেট নিয়েছিলেন তিনি, যা কিনা নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রিকের কীর্তি! বেটির বয়স কত ছিল তখন জানেন? ৩৭ বছর!

ওই সময়ের অন্য অনেক ক্রিকেটারের মত বেটির ক্যারিয়ারেও খলনায়ক হয়ে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এমনিতেই তখন নারী ক্রিকেটে দল ছিল মাত্র ৩টি, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড, তার উপর ২য় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৫১ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত কোন টেস্টই খেলতে পারেননি বেটি! যে কারণে তার ক্যারিয়ারও আটকে গেছে মাত্র ১১ টেস্টেই। 

কিন্তু বেটির অমরত্ব লাভের জন্য ওই ১১ টেস্টই ছিল যথেষ্ট। এমন সব কীর্তির জন্ম দিয়ে গেছেন তিনি, যা তাকে ইতিহাসে অমর করে রাখতে বাধ্য। নিজের মাত্র ২য় টেস্টেই প্রথম অস্ট্রেলিয়ান নারী ক্রিকেটার হিসেবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরির কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান স্পোর্টসের হল অফ ফেমেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন বেটি। সে সময় তার দেখা হয়েছিল কিংবদন্তি ব্র্যাডম্যানের সাথে। বেটির খেলা সম্পর্কে নিজের মুগ্ধতার কথা খোলাখুলিই জানিয়েছিলেন স্যার ডন। 

Betty-Wilson-women-cricketer

এই ব্র্যাডম্যানেরি প্রিয় মাঠ হেডিংলিতে বেটি গড়েছিলেন আরেক কীর্তি। দিনের শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে দলকে জিতিয়েছিলেন তিনি, উপরি পাওনা হিসেবে করেছিলেন মাত্র ৭৫ মিনিটে সেঞ্চুরি! নারী ক্রিকেটে এত কম সময়ে সেঞ্চুরির নজির আর ছিলনা তখন। 

বর্ণাঢ্য এই ক্যারিয়ারে একটাই আফসোস ছিল বেটির, ব্যাগি গ্রিন মাথায় চাপিয়ে কখনো খেলা হয়নি তার। তখনকার সময়ে ব্যাগি গ্রিন দেয়ার রীতি প্রচলিত হয়নি। তবে ২০০৫ সালে এসে ঠিকই ব্যাগি গ্রিন তুলে দেয়া হয় বেটি উইলসনের হাতে। 'লেডি ডন' এর হাতে ব্যাগি গ্রিন না থাকলে সেটা যে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটেরই অপমান!