২১ অক্টোবর, ১৯৩৩। ট্রাক ড্রাইভারের ঘরে জন্ম এক ছেলের। বাচ্চা বয়সে কতই না স্বপ্ন থাকে। স্বপ্ন দেখার মতো লাক্সারি তার ছিলো না। পেটের দায়ে খাবারের খোজে চলতে হতো। কিন্তু যত যাই হোক, ছেলেকে তো মানুষ করতে হবে। সেই পড়াশোনায় ছেদ পরলো চোদ্দ বছর বয়সে। খাবারের জন্য গরুর খামারে কাজ নিলেন তিনি। ছুটে যাওয়া গরুর পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে ভাবেননি যে একদিন গরুর পিছন নয়, বলের পিছনে ছুটবেন। গরুটাকে ধরতে পেরে আনন্দে ভাবেননি একদিন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ট্রফি হাতে আনন্দ করবেন তিনি। এটা একজন লিজেন্ডের ছোটোবেলার গল্প, একটি যুদ্ধ জয়ের গল্প। লিজেন্ডের নাম, ফ্রান্সিস্কো প্যাকো জেন্তো।
রাখালের কাজ করলে কি হবে? শরীরটাকে ফিট রাখতে হবে না? তাই তো পাশের নিউ মাউন্টেন মাঠে গিয়ে শরীরচর্চা করতেন। চোখে পরে গেলে রায়ো কান্ট্রাব্রার ইয়ুথ কোচের। সিজন প্রতি তিন হাজার প্রেসেটাস দিয়ে সাইন করান। আর ১৯৫৩ সিজনেই রেসিং স্যান্তেনদারের হয়ে অভিষেক হলো। সেই সিজনের অসাধারন পার্ফর্মেন্স মাথায় চিন্তাঋ ভাজ করে দিলো রেসিং স্যান্তেনদারের। পরবে তো ধরে রাখতে ট্যালেন্টটাকে?
১৯৫৩ এর গ্রীষ্মে রিয়াল মাদ্রিদের মিটিংয়ে মাদ্রিদের সহসভাপতি বলেন যে, জেন্তো একজন অসাধারন ট্যালেন্ট, এই ট্যালেন্টকে মাদ্রিদে যত তারাতারি পারা যায় আনা উচিত। সিজন প্রতি ২৪০০০ প্রেসেটেস এবং মাসপ্রতি ৪ হাজার প্রেসেটেস দিয়ে তাকা সাইন করেন। লেফট সাইড দিয়ে দ্রুত চলার কারনে কেও তাকে ধরতে পারতো না। তাকে দেয়া হয়েছিলো ১১ নম্বর জার্সি। মাত্র ১১ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড়ে চমকে দেন সবাইকে। প্রথম সিজনেই সবাইকে চমকে দিয়ে সবাইকে নিয়ে জিতেন লালিগা। এরপর আস্তে আস্তে আসে ১৯৫৬-৫৭ সিজন। এর মধ্যেই জিতে নেন ৩ টি লালিগা। টানা ৫ সিজনে জিতেন ইউরোপিয়ান ট্রফি। ছয় বছর গ্যাপ দিয়ে আরেকটি। ছয় টী ইউরোপিয়ান ট্রফি। যা বিশ্বের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মাদ্রিদের হয়ে কি জিতেননি তিনি। ১২ বার লালিগা, যাও একটা রেকর্ড। শুধু কি তাই, ২ টা কোপা দেল রে, ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জিতেছেনও একবার। ইনডিভিজুয়াল ট্রফি হিসেবে জিতেছেন গোল্ডেন ফুট এ্যায়ার্ড। ওয়ার্ল্ড সকার ১০০ লিজেন্ডসের তালিকা। টানা তিন বছর ছিলেন ওয়ার্ল্ড সকার একাদশে।
১৯৫৩ থেকে ১৯৭১ টানা ১৮ সিজন মাদ্রিদে খেলেছেন তিনি। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৯, এই সময়ের মধ্যে ডি স্টেফানো, এ্যারাকুয়েস্টিন, প্যাচিন, ম্যানুয়েল সানচেজ সবাই মিলে গরে তুলেন এক ýeýe জেনারেশন। দ্যা বেটলিসয়ের সি লাভস ইউ গানের yeah, yeah, yeah, yeah কোরাস থেকে এই জেনারেশনের তুলনা করা হয়। ১৮ সিজন ৬০১ ম্যাচে করে ১৮২ গোল।
১৯৭১ সালেই শেষ করেন খেলোয়ারি জীবন। শেষ হয় এক লিজেন্ডের খেলোয়ারি জীবন। নিজে চলে গিয়েছেন, তাতে কি? মাদ্রিদকে ছাড়েননি। নিজের ছেলেকে বানিয়েছেন মাদ্রিদিস্তা, কিন্তু হয়নি তার সেই পরিকল্পনা সফল। হয়েছেন লা রোজা ফ্যান। কিন্তু নাতি হয়েছেন পার ভক্ত। মাদ্রিদের জন্য জান কুরবান করতে রাজি সে। ট্রাক ড্রাইভারের ছেলে হিসেবে যার জন্ম হয়েছিলো, সেই ছেলেটা আজ রিয়ালের বিশ্বখ্যাত প্রজন্মের একজন। আছেন এমন একজন যেখানে আর কেও নেই। শুধু তিনি একাই সেখানে।