বিপিএলের বিদঘুটে চেহারা !
পোস্টটি ৩৫০৪৮ বার পঠিত হয়েছেবিপিএলের বিদঘুটে চেহারা !
একে একে পঞ্চম আসরে পদার্পণ করছে আইপিএলের অনুকরণে শুরু হওয়া বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমকালো আসর, ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম আলোচিত ফ্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি ২০ ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। কিন্তু এতোদিনে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি সমানতালে বিপিএল কুড়িয়েছে দুর্নামও। বিসিবি ও বিপিএল গভর্ণিং কমিটির অদূরদর্শিতা, অব্যবস্থাপনা, ফিক্সিং কেলেঙ্কারি, টস কেলেঙ্কারি, দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়দের বকেয়া পারিশ্রমিক, লাগাতার বিতর্কিত আম্পায়ারিং, বাজে পিচ, অতিরিক্ত লো স্কোরিং ম্যাচ, এনওসি জটিলতায় টস হবার পরেও যথাসময়ে ম্যাচ শুরু হতে বিলম্ব হওয়া, নিম্নমানের সম্প্রচার ব্যবস্থা, প্রতি মৌসুমে ফ্যাঞ্চাইজি পরিবর্তন ও ফ্যাঞ্চাইজি বহিষ্কারসহ কোন দুর্ণামটি জুটে নি বিপিএলের কপালে ? উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় রুলস এন্ড রেজ্যুলেশন্সের অভাব, বিসিবি ও বিপিএল কমিটির লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনা বিপিএলকে যাচ্ছেতাই টুর্ণামেন্টের তকমা এনে দিয়েছে।
এছাড়াও বাজে সম্প্রচার ব্যবস্থা, আধুনিক প্রযুক্তির অপ্রতুলতা, আইকন নির্ধারণে স্বজন-প্রীতির অভিযোগ, বিশৃঙ্খল প্লেয়ার ড্রাফট, নিম্ন মানের বিদেশি রিক্রুট, বকেয়া পাওনাসহ সর্বক্ষেত্রে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলার কারণে বিপিএল দর্শক জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে পড়েছে বিপিএলের পরে শুরু হওয়া বিগ ব্যাশ, পিএসএল, সিপিএলের চেয়েও। অনিয়ম, দুর্বল ব্যবস্থাপনা, ইমেজ সংকটে বিপিএল ছাড়িয়ে গেছে অন্যান্য সকল ফ্যাঞ্চাইজি লীগকে।
বিগত আসরগুলোর ন্যায় বিতর্ক আর অনিয়ম পিছু ছাড়ছে না বিপিএলের আসন্ন ৫ম আসরকে ঘিরেও। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে তা যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছে বিগত আসর গুলোকেও। চলুন এক নজরে দেখে নেই বিপিএলের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো-
ফিক্সিং কেলেঙ্কারী
এ তালিকায় প্রথমেই আসতে বাধ্য ফিক্সিং কেলেঙ্কারীর ঘটনা। দুই বছর যেতে না যেতেই ম্যাচ ফিক্সিং বা স্পট ফিক্সিংয়ের কালো ছায়া পড়ে বিপিএলের ঊপর। তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল, ফ্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষসহ দেশি-বিদেশি মোট নয় জন ক্রিকেটার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ম্যাচ ফিক্সিং বা স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত করে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ও নিরাপত্তা ইউনিট (আকসু)। এই ফিক্সিং কেলেঙ্কারীর জের ধরে দুই মৌসুম পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিপিএল। ফিক্সিং যেন বিপিএলকে তাড়িয়েই বেড়াচ্ছে। বিপিএলের ৪র্থ আসরে আবারো ফিক্সিং ইস্যুতে নিষিদ্ধ হয়েছেন রংপুর রাইডার্সের ম্যানেজার সানোয়ার হোসেন ও খেলোয়াড় জুপিটার ঘোষ।
দেশি ও বিদেশি খেলোয়াড়দের বকেয়া পাওনা
বিপিএলের প্রতিটি আসর জুড়েই দেশে ও বিদেশে বারবার আলোচিত হয়েছে খেলোয়াড়দের বকেয়া পাওনার বিষয়টি। বকেয়া পাওনার এই বিষয়টি শিরোনাম হয়েছে দেশে-বিদেশের শীর্ষ গনমাধ্যম গুলোতে। দফায় দফায় সংবাদ আর রিপোর্ট হয়েছে দেশের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলোতেও। ইয়ান পন্ট থেকে শহীদ আফ্রিদি অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সরব ছিলেন টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুলোতে। বিসিবির মধ্যস্থতায় কয়েক দফায় বিদেশিদের বকেয়া পাওনার বিষয়টি কমবেশি নিষ্পত্তি হলেও দেশিয় ক্রিকেটারদের পাওনা অপরিশোধিত প্রায় সবকটি আসরেই। মালিকানা বদল, ফ্যাঞ্চাইজি বাতিলসহ নানা জটিলতায় অপরিশোধিত রয়ে গেছে দেশিয় অনেক খেলোয়াড়ের বকেয়া পারিশ্রমিক।
বিতর্কিত আম্পায়ারিং
বিতর্কিত আম্পায়ারিং যেন বিপিএলের নিত্য সঙ্গী। প্রতিটি আসরেই দেখা গেছে ভুল ডিসিশনের ছড়াছড়ি। যার জন্য কখনো দেখা গেছে খেলোয়াড়দেরকে আম্পায়ারদের দিকে তেড়ে যেতে। কখনো পাওয়া গেছে ফ্যাঞ্চাইজি মালিকদের পক্ষ থেকে প্রকাশ্য অভিযোগ। মাত্রাতিরিক্ত বিতর্কিত আম্পায়ারিং ও ভুল ডিসিশন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বিপিএলের আন্তর্জাতিক মানকেও। এ নিয়ে গনমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ সাইটে দর্শকদের সমালোচনা ছিল চোখে পড়ার মতো। এই জন্য ভালো মানের বিদেশী আম্পায়ার আনতে বিপিএল গভর্ণিং বডির অনীহাকেই দায়ী করছেন সাবেক ক্রিকেটাররা।
নিম্নমানের সম্প্রচার ব্যবস্থা
নিম্ন মানের সম্প্রচার, চ্যানেল নাইনের সেচ্ছাচারিতা ও অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন নিয়ে আসরগুলো জুড়েই দর্শকরা চরম আপত্তি জানিয়ে এসেছে। যেখানে অন্যান্য ফ্যাঞ্চাইজি লীগ গুলোতে আধুনিক ও সর্বশেষ প্রযুক্তি, এলইডি স্ট্যাম্প, ড্রোন ক্যামেরা, হক আই, আল্ট্রা মোশন, হেলমেট ক্যামেরা, মাঠের ও ড্রেসিংরুমের খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলার ওয়্যারলেস মাইক্রোফোনসহ আকর্ষণীয় প্রযুক্তির ছড়াছড়ি সেখানে বিপিএলে তার ছিটেফোঁটাও লক্ষ্য করা যায় নি। দেখা যায় নি চোখ ধাঁধানো আতশবাজি, জায়ান্টস্ক্রিন রসিকতা, দেখানো হত না ছক্কার দৈর্ঘ্য, গননা করা হতো না ছক্কার সংখ্যা। গত বছর মাঠের ও ড্রেসিংরুমের খেলোয়াড়দের ধারাভাষ্যে যোগ দেয়ার জন্য ওয়্যারলেস মাইক্রোফোন থাকলেও কখনো দেখা গেছে মাইক্রোফোন কাজ করছে না, কখনো বা খেলোয়াড়দেরকে সেটা কানের সাথে চেপে ধরা লাগতেছে। কোনরকম দায়সারাভাবেই চালানো হয়েছে সম্প্রচারের কাজ। ছিল না বিদেশী কোনো ম্যাচ অফিসিয়াল। তেমনি এক ড্যানি মরিসন ছাড়া ছিল না ভালো মানের বিদেশী ধারাভাষ্যকারও। অন্যান্য লিগগুলো যেখানে হাই প্রোফাইল সাবেক বিদেশি তারকা ক্রিকেটারদের দিয়ে আকর্ষনীয় করে তুলছে ধারাভাষ্যকে বিপিএল সেখানে উদাসীনতাই দেখিয়েছে।
আইকন জটিলতা
বিপিএলে দলগুলোর আইকন নির্ধারণ নিয়ে জল কম গোলা করা হয় নি। দুই এক মৌসুম লটারি করা হলেও গত বছর আইকন ক্রিকেটারদের লটারি প্রথা বাতিল করে বিপিএল গভর্নিং বডি। জানা যায় বিশেষ একটি ফ্যাঞ্চাইজিকে সুবিধা দিতেই আইকন খেলোয়াড়দের লটারি প্রথা বাতিল করা হয়। যার জন্য আইকন নিয়ে সমঝোতার গল্প বানাতে হয়েছিল বিপিএল গভর্নিং কমিটিকে। সর্বশেষ আসন্ন ৫ম আসরকে ঘিরে আরো প্রকট হয়ে দাড়িয়েছে আইকন সমস্যা। আগের আইকনদের সাথে কিছু ফ্যাঞ্চাইজি মালিক পক্ষের বনিবনা না হওয়া, প্রথম দিকে একটি ফ্যাঞ্চাইজি বৃদ্ধি পাওয়া, সৌম্যের ফর্ম খারাপ হওয়া, ইনফর্ম ইমরুল কায়েস আর বিগত দুই মৌসুমে রংপুর আর ঢাকার আইকন হিসেবে খেলা নাসির হোসেনকে নিজ নিজ দল না ছাড়তে চাওয়া সব মিলিয়ে আইকন নিয়ে তৈরি হয়েছিল গোলমেলে পরিস্থিতি। শেষতক মোস্তাফিজকে আইকন ঘোষণার কয়েক দিনের মাথায় বরিশাল বুলসের মালিকানা বাতিল হওয়ায় দলবিহীন হয়ে পড়েন আইকন মোস্তাফিজ। বিপিএল গভর্ণিং বডির অনিয়ম আর পক্ষপাতিত্বের কারণে স্থায়ী সমাধান মিলছে না বিপিএলের আইকন নির্ধারণের।
বিদেশি ৪ জন নাকি ৫ জন ?
বিপিএলের আসন্ন ৫ম আসরকে ঘিরে তুমুল বিতির্ক উঠেছে বিদেশি খেলোয়াড়দের সংখ্যা নিয়ে। একাদশে কয়জন বিদেশি খেলবেন ? ৪ জন নাকি ৫ জন ? দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে ৫ জন বিদেশি খেলুক চাচ্ছেন না ক্রিকেটার থেকে শুরু করে দর্শক-শ্রোতাদের কেউই। কিন্তু ফ্যাঞ্চাইজি সংখ্যা বৃদ্ধি ও বেশির ভাগ ফ্যাঞ্চাইজির অনুরোধের নামে ৫ জন বিদেশি খেলানোর সিদ্ধান্তে অটল বিপিএল গভর্ণিং বডি। যদিও কুমিল্লা প্রথমদিকে লিখিতভাবে, রংপুর ও রাজশাহী তাদের আইকন পরিচিতি সভায় ৪ জন বিদেশী খেলানোর পক্ষে মত দিয়েছে। সিলেট সুরমা সিক্সার্সের প্রধান সমন্বয়ক শফিউল আলম নাদেলও টিভি সাক্ষাৎকারে ৪ জনের পক্ষে মত দিয়েছেন, আরেকটি ফ্যাঞ্চাইজি মত দেয়নি। তাহলে প্রশ্ন জাগছে অধিকাংশ ফ্যাঞ্চাইজি কোথায় ৫জন বিদেশি খেলানোর পক্ষে মত দিয়েছে ? শোনা যাচ্ছে এই ক্ষেত্রেও একটি বিশেষ ফ্যাঞ্চাইজির আবদারের কারণেই ম্যাচপ্রতি ৫ জন বিদেশি খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শোনা যাচ্ছে একটি ফ্যাঞ্চাইজি বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে নেয়া ৫ জন বিদেশি খেলানোর সিদ্ধান্তকে একটি ফ্যাঞ্চাইজি বাতিল হবার পরেও বহাল রাখাকে মেনে নিতে পারছেন না দেশীয় খেলোয়াড়রা। এ নিয়ে সকলের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিসিবির খড়গহস্ত হওয়া ও শাস্তির ভয়ে মুখ খেলছে না কেউ। গত বছর যেখানে ৭ দলে ৭ জন করে ৪৯ জন দেশি খেলোয়াড় একাদশে জায়গা পেয়েছেন এবার ৫ জন বিদেশি খেলানোর কারণে সেটা নেমে আসবে ৪২ এ। ফলে দল না পাওয়া ও পর্যাপ্ত ম্যাচে সুযোগ না পাওয়ার শংকায় ভুগছেন দেশীয় ক্রিকেটাররা। যদিও একাদশে কমপক্ষে ৩ জন বিদেশি খেলানোর সুযোগ আছে, তাতেও আশ্বস্ত হতে পারছে না দেশীয় ক্রিকেটাররা। এ ক্ষেত্রে বিদেশি খেলোয়াড়দেরকে বসিয়ে দেশীয় তরুণ ও উঠতি খেলোয়াড়দের একাদশে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করছেন সাবেক ক্রিকেটাররা। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক ও বর্তমান ওয়ানডে দলের ওধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফিস ও শাহাদত হোসেন বিপিএলে ৫ জন বিদেশী খেলানোর সিদ্ধান্তকে দেশের ক্রিকেটের জন্য ক্ষতিকর হিসেবেই দেখছেন।
একটি বিশেষ ফ্যাঞ্চাইজিকে অতিরিক্ত সুবিধা দেয়ার অভিযোগ
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৬ এর বিপিএলে, একটি বিশেষ ফ্যাঞ্চাইজিকে অতিরিক্ত সুবিধা দিতে গিয়ে ম্যাচের টস পরবর্তী কয়েন উল্টিয়ে টসের রেজাল্ট পরিবর্তন করে ফেলেন বিসিবির ম্যাচ রেফারি রকিবুল হাসান। বেসরকারী টেলিভিশন একাত্তর টিভি’র রিপোর্টে ঘটনাটি উঠে এসেছে। সেই ফ্যাঞ্চাইজিটির কারণেই নাকি আইকন ক্রিকেটারদের লটারি প্রথা উঠে গেছে বিপিএল থেকে অভিযোগ অন্যান্য ফ্যাঞ্চাইজি গুলোর। ২০১৬ এর বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স যখন বিদেশি প্লেয়ার নেয়া ও দল ঘুচানোর জন্য বিপিএল কমিটির ঘোষণা ও দিক নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছিল তার মধ্যে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে আগের মৌসুমে খেলা এক মারকুটে ব্যাটসম্যানকে দলে ভিড়ায়ে নেয় সেই ফ্যাঞ্চাইজিটি। পরে বিপিএল কমিটির কাছে জানিয়েও লাভ হয় নি বলে অভিযোগ করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কর্ণধার নাফিসা কামাল। আসন্ন বিপিএলের ৫ম আসরেও এর ব্যত্যয় ঘটছে না । এবারের আসরকে ঘিরেও অন্য দলগুলো যখন কিছুই জানে না বিপিএলের ৫ মাস আগে থেকেই একাদশে ৫ জন বিদেশী খেলানোর লক্ষ্যে ১২ জন বিদেশী ক্রিকেটারকে চুক্তিবদ্ধ করে নেয় ফ্যাঞ্চাইজিটি। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ের কারণে দেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোতে উঠে এসেছে এমন মন্তব্য যে, বিপিএল গভর্ণিং বডি বা বিসিবি কার্যালয় নয় বিপিএলের বিভিন্ন ঘোষণা আসছে বিশেষ একটি ফ্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন কোম্পানির অফিস থেকে। বিসিবি ও বিপিএল কমিটির কর্তাব্যক্তিদের কেউ কেউ সেই ফ্যাঞ্চাইজি মালিকের কোম্পানিতে চাকরি করেন যার সুবাদে সেই ফ্যাঞ্চাইজিটি অতিরিক্ত সুবিধা পাচ্ছে বলে মনে করছে সাধারণ দর্শকরা।
এ ছাড়াও চোখে পড়ার মত বিষয় ছিল প্রতি আসরে দলসংখ্যার উঠানামা, একই জায়গার ফ্যাঞ্চাইজি বিভিন্ন আসরে বিভিন্ন নাম নিয়ে অংশগ্রহন যে কারণে বিপিএল ও ফ্যাঞ্চাইজি গুলোর ব্র্যান্ড ভ্যালু হ্রাস পেয়েছে। যেখানে আইপিএল ও অন্যান্য ফ্যাঞ্চাইজি লীগ গুলো শুরু থেকেই আট দল, ছয় দল নিয়ে খেলছে সেখানে বিপিএলে প্রতি বছরই উঠানামা করছে দলসংখ্যা। এবারের আসরেও শুরুতে আট দলের কথা থাকলেও বাতিল হয়েছে বরিশাল বুলসের ফ্যাঞ্চাইজি। বরিশাল থেকে নতুন কোনো দল নেয়ার ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না বিপিএল কমিটির।
বিসিবি ও বিপিএল কমিটি সবচেয়ে বেশি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সারা দেশের ক্রিকেট পাগল দর্শকদের মাঠে এসে খেলা দেখার সুযোগ করে দিতে না পেরে। আসর শুরুর ৫ বছর অতিক্রম হওয়ার পরও আবাসন ও নিরাপত্তার অযুহাতে বিপিএল্কে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিপিএল কমিটি। যেখানে বিশ্বের সবগুলো লীগে দর্শকদের কথা মাথায় রেখে হোম এন্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে খেলা হয় বিপিএলে সেখানে একটি সিজন খুলনায় কিছু ম্যাচ আয়োজন বাদে ঢাকা আর চট্টগ্রামে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে বিপিএল। অথচ চট্টগ্রাম ও খুলনায় দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়ও আমরা দেখছি। সেই জন্য ঢাকা, চট্টগ্রামের পাশাপাশি ফতুল্লা, খুলনা, বগুড়া ও সিলেটেও আয়োজন করা যেত বিপিএলের ম্যাচ। এতে করে একই মাঠে বেশি ম্যাচ খেলার ফলে পিচের খারাপ আচরণের অপবাদ ও ঘুচত।
বিপিএলে এত সব অনিয়মের পিছনে বিসিবি পরিচালকদের বিভিন্ন ফ্যাঞ্চাইজিতে সম্পৃক্ততাকে দায়ী করছেন ক্রিকেটবোদ্ধারা। এবারের আসন্ন বিপিএল ও মুক্ত হতে পারছে না পরিচালকদের সম্পৃক্ততা থেকে। বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন কোচ হিসেবে আছেন ঢাকা ডাইনামাইটসে, খুলনা টাইটান্সের মালিক বিসিবির আরেক পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদ, সিলেট সুরমা সিক্সার্সের প্রধান সমন্বয়কের ভুমিকায় আছেন আরেক পরিচালক শফিউল আলম নাদেল, চিটাগাং ভাইকিংসের সাথে আছেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান। এখানেও নাকি চলে পেশী শক্তির লড়াই।
আসন্ন বিপিএলের ৫ম আসরে চিটাগাং ভাইকিংসের মালিকানা নিয়েও দ্বন্দ দেখা দিয়েছিল বলে শোনা গেছে। বিসিবির সহ-সভাপতি, চট্টগ্রামের মেয়র ও চট্টগ্রাম আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাসির ও বিসিবি কর্তা আকরাম খান নাকি জোরপূর্বক নিতে চেয়েছিলেন চিটাগাং ভাইকিংসের মালিকানা। যার জের ধরে বর্তমান মালিক দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে ফ্যাঞ্চাইজিটির আইকন ও বিদেশী খেলোয়াড়রা চুক্তিবদ্ধ হয়ে যায় অন্য দল গুলোর সাথে। এমন গুঞ্জন উঠছে যে বরিশাল বুলসের পরিণতি হতে পারে চিটাগাং ভাইকিংসেরও।
আরো একটি স্পর্শকাতর বিষয় হলো সারা বিশ্বের ক্রিকেট ভক্তরা বিভিন্ন ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট, ক্রিকেট ক্লাব ও পছন্দের খেলোয়াড়দের খোজ-খবর রাখছে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে। বিপিএলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সারা বছর জুড়ে বেসরকারি টেলিভিশন ‘জিটিভি’ ও ইউটিউব চ্যানেল Rabbitholebd entertainment এর বিভিন্ন নাটক ও সিরিয়ালের বিজ্ঞাপন দেখা গেছে। যেটা বিপিএলের জন্য ছিল অত্যন্ত লজ্জাকর। সেই সাথে সারা পৃথিবী থেকে যারা বিপিএলের খোজ-খবর পেতে বিপিএলের ফেসবুক পেজ ভিজিট করছে তাদের কাছে ছিল বিরক্তিকর।
এসকল অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, বিতর্কের কারণে বিপিএলের সাফল্য, সুখ্যাতি আর সুনামকে ছাপিয়ে বেশির ভাগ সময় আলোচনায় ছিল বিপিএলের ব্যর্থতা আর অপকীর্তিগুলো।
হাসান মারুফ
- 0 মন্তব্য