টেনিস! কথাটা বললেই সুন্দর হাসিমাখা দুটো মুখ ভেসে উঠে। সুইস তারকা রজার ফেদেরার আর স্প্যানিশ রাফায়েল নাদাল। এই দেশে টেনিসের জনপ্রিয়তা ক্রিকেট, ফুটবলের পরেই। টেনিসে বছরে মোট মূল খেলা চারটি। গ্র্যান্ডস্লাম আরকি। টেনিসে বছরের প্রথম তিনটি গ্র্যান্ডস্লাম ট্রফি নিয়ে বলার কিছু নেই। দুই রাজার রাজ্যে অসহায় সবাই। ফেদাল ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার গ্র্যান্ডস্লামটা পেয়েছিলেন ফেদেরার। তবে ফ্রেঞ্চে আধিপত্য ছিলো নাদালের। তবে গ্রাসে আবারো সেই ফেদেরার লীলা। তিনটাই ভাগাভাগি করে নিয়েছেন ফেদাল জুটি। বছরের শেষ গ্র্যান্ডস্লাম এই ইউএস ওপেন। কার ভাগ্যে যাবে তা সময়ই বলে দিবে, তবে একটু ভাবলে ক্ষতি কি?
ইঞ্জুরির কবলে থেকেই শুরু হতে চলেছে ইউএস ওপেন তা বলাই যায়। যেভাবে চলছে তাতে আস্তে আস্তে সবাই ঝরে যাচ্ছে। নাদাল সিনাটি ওপেনে বাদ পরেছেন। ইঞ্জুরির ভয় থাকলেও তা আঘাত হানেনি। রজার তো ফাইনালেই কুপোকাত হলেন এক বাচ্চা ছেলের কাছে। নতুন ইয়াংস্টার আলেজেন্দ্রে জ্ভেরেভের কাছে। সাথে ইঞ্জুরি। তবে ইউএস খেলবেন তা নিশ্চিত। বিগ ফোরের মাঝে অ্যান্ডি মারেও ইঞ্জুরিতে ছিলেন। তবে ইঞ্জুরি কাটিয়ে এসেছেন তিনি। দ্বিতীয় বাছাই হয়ে খেলার কথা ছিলো শেষ গ্র্যান্ডস্লামে। সারা বছর সেরা থেকে শেষ মুহূর্তে পিছলিয়ে রাফা নাদালের কাছে হারিয়েছেন প্রথম স্থান এই ৩ বার গ্র্যান্ডস্লাম জয়ী ব্রিটিশ তারকা। তবে ইঞ্জুরিতে মাত্র দুইদিন আগে নাম সরাতে হলো তাকে। ১২ টা গ্র্যান্ডস্লামের মালিক নোভাক জকোভিচ ফ্যানদের জানাতে হচ্ছে যে তিনি থাকতে পারছেন না। ইঞ্জুরির করাল গ্রাসে তিনি জর্জরিত। এখনো সুস্থ নন। তাই কার্পেটে তাকে দেখাও যাবে না। শুধু তাই না। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন স্তানিলাস ভাভারিঙ্কাও হাটুর ইঞ্জুরিতে ছন্নছাড়া। বাতিল হয়ে গিয়েছেন। এশিয়া থেকে আশা করা কেই নিশিকুরিও বাদ হয়ে গিয়েছেন। প্রিয় ডান হাতেই সমস্যা। হাতের ইঞ্জুরিতে বর্তমান নাম্বার ১১ রাওনিককেও কেড়ে নিয়েছে ইউএস ওপেন থেকে। ফলাফলে মোটমাট ৫ জন। টপ ১১ তে স্থান করে নেয়া সর্বশেষ র্যান্কিংয়ের ৫ জনই নিজেদের নাম প্রত্যাহার করেছেন ইঞ্জুরির কারনে।
বাংলাদেশের টেনিস ফ্যান ক্লাবে অবশ্য রাফা-রজার ঝগড়াটা তেমনভাবে লাগে না। ফেদাল ফাইনাল ইউএস ওপেনে আগে দেখবার সুযোগ না হলেও এবার হবে। এবং খুব ভালোভাবেই হবে। টপ সিডে ১ ও ২ নম্বর স্থানে থাকা রাফা রজার যদি সর্বোচ্চ দিয়ে এগোয়, তবে ফাইনালেই মিলতে হবে। তাদের বছরে তাদের ফাইনাল দেখার ইচ্ছেটা সবারই। আশার কথা হলো ড্রটাকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে টপ ৮ বাছাইয়ের একজনও কোয়াটারের আগে মুখোমুখি না হয়। টপ ৮ জনের মাঝে রাফা, রজারকে একটু ভালো অবস্থানে রাখতেই হয়; যদিও রজারের ইঞ্জুরি রেকর্ডটা শঙ্কাজনক। তরুণরক্ত জেভেরেভ খুব তারাতারি টপ ৪ বাছাইয়ে প্রবেশ করলেও তাকে কোয়াটার পৌঁছুতে বেশ বেগ পেতে হবে। বেগ পেতে পবে ২৮ বছরের ক্রোয়েট একবারের ইউএস জেতা ম্যারিন কিলিচকেও। তবে থিয়েম, দিমিত্রভ কোয়াটারে যেতে পারলেও জো-উইলফ্রেড সঙ্গাকে নিয়ে আশাবাদী নই। টপ ৮ জন থেকে এদেরই বাদ যাওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। টপ ৮ এর বাইরে নিক কিরিয়স, বার্ডিচ, নিজের মাটিতে স্যাম কুরেকেও নজরে রাখতে হবে।
জিলস মুলার, ডেভিড ফেরার আর হুয়ান দেল পত্রোকেও চোখে রাখতে হবে। তবে সবকিছুর বাইরে কয়েকজন কালো ঘোড়াকে তো চোখে রাখতেই হয়, তাদের একজন ডেনিস শ্যাপোভালোভ। মন্টেরিয়াল খেলার পর সবাই সমীহ করছে তাকে। ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার কথা থাকলেও না পেয়ে কোয়ালিফাই করেই এসেছেন তিনি। সাথে ফ্রান্সেস টিফয়কে। তবে রজারের সাথে রাউন্ড ওয়ানে খেলাটাই কাল করেছে। ভ্যারদাস্কো আর মেদভেদেভ যে কারো জন্য থ্রেড হতেই পারে।
দিনশেষে খেলাটা টেনিস, গিভেন ডেতে যে ভিত কাঁপাতে পারবে সেই জয়ী। যেভাবে টপ ফর্মের সাম্প্রাসকে হারিয়ে উত্থান হয়েছিলো ফেদেরারের। সেই টপ ফর্মের ফেদেরারকে হারিয়েই উত্থান হয়েছিলো নাদালের, সেভাবেই হয়তো তাদের কাউকে হারিয়ে নতুন করে শুরু হবে আরেক উত্থানের। কে জানে সেই উত্থানের শুরুটা হয়তো এই নীল কোর্টে, আমাদের চোখের সামনেই সেরা কাউকে হারতে দেখে শুরু হবে। দিনশেষে সেই ৭৮ ফুট বাই ২৭ ফুটের কোর্ট, নীল কার্পেটে মোড়ানো মাঠ, সর্বোচ্চ ৫ সেট, এরপর যে সবার আগে ট্রাইব্রেকে উইন করতে পারে। এখানে ট্রাইব্রেকটা সংঘঠিত। ঘন্টার পর ঘন্টা চলবে না। পরাক্রমশালী নাদাল ফেদেরারও হারতে পারেন ছোট্ট কারো কাছে, কথাটা ভেবেই মাঠে নামছে ১২৮ জন। যেখানে পিছিয়ে পরার ভয়টা নেই। নীল হার্ড কোর্ট, ইউএস ওপেন, আর ট্রফি, ১৩ দিনের মহাযজ্ঞে সবাইকে স্বাগতম।