ভুল সময়ে জন্ম নেওয়া এক ডেডলি ফিনিশারের গল্প
পোস্টটি ১০২৮০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
ব্লগের নীতিমালা
ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
নিজ দেশের জার্সিতে বিশ্ব শাসনের স্বপ্ন সব ব্রাজিলিয়ানেরই থাকে কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণের জন্য শুধু প্রতিভাই যথেষ্ট নয়, ভাগ্যও অনেক বড় একটা নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। আজ আপনাদের এমন একজন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের গল্প শুনাবো যার ক্ষেত্রে জাতীয় দলে সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে এই ভাগ্যটাই সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ যার গল্প শুনাবো তার নাম মারিও জারদেল যিনি তার ফ্যানদের কাছে “সুপার মারিও” নামেই সমধিক পরিচিত।
মারিও জারদেলের পুরো নাম মারিও জারদেল ডি আলমেইডা রিবেরিও। মারিও জারদেল ব্রাজিলের ফোর্তালেজায় ১৯৭৩ সালের ১৮ ই সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। স্ট্রাইকার হিসেবে খেললেও ব্রাজিলের অন্যান্য বিখ্যাত স্ট্রাইকারদের মতো ড্রিবলিং স্কিল তার ছিল না, সে ছিল অনেকটা ইউরোপিয়ান ধাচের স্ট্রাইকারদের মতো। তার পজিশনিং সেন্স ছিল অসাধারণ, হেডিং এর জন্য সে সবচেয়ে বেশি নামডাক পেয়েছিলেন। হেডিং এর ক্ষেত্রে তার ৬ ফুট ২ ইঞ্চির দানবীয় উচ্চতাও বেশ সুবিধা দিয়েছিলো। জারদেলের ফুটবলের হাতেখড়ি ঘটে ১৬ বছর বয়সে ফেরোভিয়ারিওর হয়ে। তবে ফেরোভিয়ারিওতে তার বেশিদিন থাকা হয় নি, একবছর পরেই তিনি জয়েন করেন ভাস্কো দা গামায়, ১৯৯২ সালে ভাস্কোর হয়ে তার প্রফেশনাল ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয়। ভাস্কোর হয়েই জারদেল জিতেন ব্রাজিলিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৯৯৩ সালেই জারদেল বেলো হরিজান্তে কাপ অফ জুনিয়ার্সে ১১ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। একই বছর সাও পাওলো ডি জুনিয়ার্সেও ৯ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। জারদেলের প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে প্রথম শিরোপা ক্যারিওকা চ্যাম্পিয়নশিপ।ফ্লুমিনেন্সের বিরুদ্ধে ফাইনালে জোড়া গোল করে ভাস্কোকে এই শিরোপা জয়ের ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখেন জারদেল। মূলত ওই ফাইনালের পরেই গ্রেমিওর নজরে পড়ে যান জারদেল, ১৯৯৫ সালে জারদেল যোগ দেন গ্রেমিওতে আর গ্রেমিওর হয়ে সেই বছরেই তিনি জিতেন কোপা লিবার্তোদেসের শিরোপা। ওই টুর্নামেন্টে ১২ গোল করে জারদেল হন সর্বোচ্চ গোলদাতা গ্রেমিওর হয়ে ৬৭ ম্যাচে জারদেল করেন ৭৩ গোল অর্থাৎ গোল পার ম্যাচ ছিল ১ এর চেয়েও বেশি!!!! গ্রেমিওর হয়ে অসাধারণ একবছর কাটানোর পরেই জারদেলের উপরে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর নজর পড়ে যায়, শেষপর্যন্ত ১৯৯৬ সালে পোর্তোতে জয়েন করেন জারদেল, এখানেই জারদেল তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সময় পার করেন।
পোর্তোর হয়ে প্রথম সিজনেই করেন ৩৭ ম্যাচে ৩৩ গোল, সেই সিজনেই জারদেল দলের হয়ে জিতেন সুপার কাপ ও পর্তুগিজ লীগের শিরোপা। পোর্তোর হয়ে টানা চার সিজনে জারদেল পর্তুগিজ চ্যাম্পিয়নশিপের টপ স্কোরার হন। পোর্তোর হয়ে এই অসাধারণ গোলস্কোরিং ফর্মের জন্য ১৯৯৯ সালে জারদেল জিতেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট।
জারদেলের পারফর্মেন্সে মুগ্ধ হয়ে ২০০০ সালে তৎকালীন উয়েফা কাপ চ্যাম্পিয়ন গ্যালাতাসারে জারদেলের রিলিজ ক্লজের ২৮ মিলিয়ন ডলার দিয়ে তাকে কিনে নেয়। গ্যালাতাসারের হয়ে প্রথম ম্যাচেই পাঁচগোল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন জারদেল, এরপর উয়েফা সুপার কাপে জারদেলের গোল্ডেন গোলেই রিয়াল মাদ্রিদকে ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় গ্যালাতাসারে, একই সিজনে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ছয় গোল করে গ্যালাতাসারেকে কোয়ার্টারে তুলতে বড় অবদান রাখেন জারদেল। ওই সিজনে গ্যালাতাসারের হয়ে ২৫ ম্যাচে করেন ২৩ গোল।
কিন্তু সিজনের শেষের দিকে ইনজুরি আর ক্লাব কর্তৃপক্ষের সাথে ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে মাত্র এক সিজন খেলেই গ্যালাতাসারে ছেড়ে চলে যান জারদেল। ২০০১ এ জারদেল আবার পর্তুগালে ফিরে আসেন তবে এবার আর পোর্তোর হয়ে না, মাঠ মাতাতে আসেন স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে। ২০০১ এর ট্রান্সফার মৌসুমের একদম শেষদিনে তাকে ৩০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে গ্যালাতাসারে থেকে নিয়ে আসে স্পোর্টিং ক্লাব। স্পোর্টিং এ যোগ দেওয়ার পর প্রথম সিজনেই বাজিমাত করেন জারদেল, ২০০১-০২ মৌসুমে জারদেল করেন ৩০ ম্যাচে ৪২ গোল!!!!!
তার অসাধারণ পারফর্মেন্সের উপরে ভর করে স্পোর্টিং জিতে নেয় ডোমেস্টিক ডাবলের শিরোপা আর জারদেলও ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতোন জিতেন নেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এমন অগ্নিঝরা ফর্ম সত্ত্বেও জারদেল সেই বছরেই অনুষ্ঠিত কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলে ছিলেন উপেক্ষিত!!! সবার মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতা কেনো ব্রাজিল দলে জায়গা পেলো না, এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদের দেখতে হবে সেলেসাও জার্সিতে জারদেলের আগের পারফর্মেন্সের হিস্টোরি।
ব্রাজিল যুব দলের হয়ে জারদেল ১৯৯৩ সালের যুব বিশ্বকাপ খেলেছিলেন যেই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো ব্রাজিল। কিন্তু আগেই বলেছি জারদেলের প্লেয়িং স্টাইল অন্যান্য ব্রাজিল স্ট্রাইকারদের মতন ছিল না, রোনালদো রোমারিওর মতো তার মূলশক্তি ড্রিবলিং ছিল না, তার মূলশক্তি ছিল অসাধারণ পজিশনিং সেন্স আর ক্লিনিক্যাল ফিনিশিং। মূলত সেকারণেই ব্রাজিল জাতীয় দলের কাছে বরাবরই জারদেল ছিলেন উপেক্ষিত, জারদেল প্রথম উপেক্ষার স্বীকার হয় ১৯৯৬ সালের অলিম্পিকে। অবশ্য শুধুমাত্র প্লেয়িং স্টাইলের জন্যই বারবার উপেক্ষিত হয়েছেন এই কথাটাও পুরোপুরি সত্য না, উপেক্ষিত হওয়ার আরেকটা বড় কারণ ছিল তখনকার ব্রাজিলের গোল্ডেন জেনারেশন।
রোনালদো,রোমারিও,বেবেতোদের মত তিন তিনজন ওয়ার্ল্ড ক্লাস স্ট্রাইকার তখন ব্রাজিল দলে ছিল তাই সেই মহাতারকাদের টপকে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা তৎকালীন যেকোনো স্ট্রাইকারের জন্যই দুঃসাধ্য হতো। তবে জাতীয় দলের হয়ে জারদেলের অভিষেক হয় ১৯৯৬ তেই, রাশিয়ার বিপক্ষে এক অ্যাওয়ে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে রোনালদোর সাবস্টিটিউট হিসেবে মাঠে নামেন জারদেল কিন্তু জারদেল যখন মাঠে নামেন তখন ম্যাচের বাকি আছে মাত্র দুই মিনিট!!!! ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়। তিনদিন পর হল্যান্ডের বিপক্ষে আরেক অ্যাওয়ে ফ্রেন্ডলি ম্যাচেও সুযোগ পান জারদেল, এবারো জারদেল মাঠে নামেন রোনালদোর সাবস্টিটিউট হয়ে আর তখন ম্যাচের বাকি মাত্র চার মিনিট!!!! এই ম্যাচেরও স্কোরলাইন ছিল ২-২। শুধু এই দুইম্যাচ না, পুরো ক্যারিয়ারজুড়েই রোনালদোর ছায়ার নিচে থাকতে হয়েছে জারদেলেক। যদিও ১৯৯৬ সালে জারদেলের গোলসংখ্যাই ছিল বেশি কিন্তু আমরা যারা ফেনোমেননকে চিনি তারা তো সবাই জানি শুধুমাত্র গোলের সংখ্যা দিয়ে একজন ফেনোমেননকে কখনোই জাজ করা যাবে না আর একারণেই কোচেরাও রোনালদোকেই প্রিফার করে গেছেন। হেডলাইনের শুরুতেই বলেছি ভুল সময়ে জন্ম নেওয়া এক খেলোয়াড়ের গল্প আজ বলবো, জারদেলের সেলসাও জার্সিতে ক্যারিয়ার দেখলেই বুঝা যায় যদি রোনালদোর সময়ে জন্ম না নিয়ে অন্যকোনো সময়ে জন্ম নিতেন তাহলে হয়তোবা হলুদ জার্সিতে তার ক্যারিয়ার অন্যরকম হতো।
১৯৯৬ এর পর আবারো হলুদ জার্সি গায়ে তোলার জন্য জারদেলকে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ তিন বছর!!! এই তিনবছরে ব্রাজিল কোপা আমেরিকা,কনফেডারেন্স কাপ, বিশ্বকাপের মত বড় তিনটি টুর্নামেন্ট খেলে যার সবগুলোই মিস করেন জারদেল। অবশেষে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট জেতার পর সে আবারো জাতীয় দলের নির্বাচকদের নজরে আসতে সক্ষম হন। ১৯৯৯ সালেই ব্রাজিলের হয়ে প্রথম কোনো ম্যাচে স্টার্টিং লাইনাপে সুযোগ পান জারদেল,কিন্তু কোরিয়ার বিপক্ষে ওই ম্যাচে খেলার ৬৫ মিনিটেই কোচ তাকে তুলে নেন। ব্রাজিলও সেইম্যাচে কোরিয়ার কাছে ১-০ গোলের এক লজ্জাজনক হারের স্বাদ নেয়। পরের ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে আরেক প্রীতিম্যাচে ৬৫ মিনিটে সনি এন্ডারসনের সাবস্টিটিউট হয়ে মাঠে নামেন জারদেল কিন্তু সেইম্যাচেই দলের হয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে ব্যর্থ হন জারদেল। ওই ম্যাচের স্কোরলাইন ছিল ০-০। ২১ শে নভেম্বর,১৯৯৯ ব্রাজিলের ফুটবল হিস্টোরিতে অন্যতম শোকাবহ একটা দিন, ওইদিনে ক্যারিয়ার ধ্বংসাত্মক এক হাঁটুর ইনজুরিতে পড়েন রোনালদো তবে এই ইনজুরির কারণেই জাতীয় দলের হয়ে জারদেলের দরজা খুলে যায়। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে থাইল্যান্ডের কিংস কাপে খেলার আমন্ত্রণ পায় ব্রাজিল আর সেই টুর্নামেণ্টেই থাইল্যান্ডের বিপক্ষে গোল করা মাধ্যমে সেলেসাও জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পান জারদেল। ৭-০ গোলে জয় পাওয়া ওই ম্যাচে জারদেল করেন দলের হয়ে সপ্তম গোল, একই টুর্নামেন্টে আবারো থাইল্যান্ডের মুখোমুখি হয় ব্রাজিল,সেবারো স্কোরলাইন ৭-০ আর সেবা দলের হয়ে ষষ্ঠ গোলটি করেন জারদেল। এরপর কলম্বিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে স্টার্টার হিসেবে সুযোগ পান জারদেল কিন্তু সেই ম্যাচে জারদেল তেমনকিছু করতে পারেন নি, ম্যাচটি ০-০ স্কোরলাইনে শেষ হয়। এরপর আবারো সেলেসাও জার্সিতে সুযোগ পেতে জারদেলকে অপেক্ষা করতে হয় একবছর, গ্রেমিওতে খেলাকালীন জারদেলের কোচ স্কলারি ব্রাজিল দলের কোচের হটসিটে বসলে আবারো জারদেলের জন্য জাতীয় দলের দরজা খুলে যায়। স্কলারি উরুরগুয়ের বিপক্ষে জারদেলকে স্টার্টিং লাইনআপে সুযোগ দেন কিন্তু সেইম্যাচেও আশানুরূপ পারফর্ম না করতে পারায় জারদেলকে সেকেন্ড হাফে উঠিয়ে নেওয়া হয়। এরপরেও পুরাতন শিষ্যের উপরে আস্থা হারান নি ফেলিপাও, ২০০১ কোপা আমেরিকার দলে তিনি জারদেলকে সুযোগ দেন। কোপা আমেরিকায় গ্রুপ বির ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে স্টার্ট করেন জারদেল কিন্তু এইম্যাচেও দ্বিতীয়ার্ধেই তাকে তুলে নেওয়া হয়। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল মুখোমুখি হয় হন্ডুরাসের, সবাইকে অবাক করে হন্ডুরাসের বিপক্ষে হেরে যায় ব্রাজিল আর এই ম্যাচে ৬৫ মিনিটে সাবস্টিটিউট হিসেবে নেমেছিলেন জারদেল। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে ব্রাজিলের এই লজ্জাজনক হারের জন্য বলির পাঁঠা করা হয় জারদেলকে আর একারণেই ওই কোপা আমেরিকার পর আর কখনোই জারদেলকে জাতীয় দলের হয়ে বিবেচনা করা হয় নি। একারণেই ২০০২ বিশ্বকাপের আগে অসাধারণ ফর্মে থাকা ঐ সিজনের গোল্ডেন বুটজয়ী প্লেয়ারকে বিশ্বকাপের দলে বিবেচনাই করেন নি বিগ ফিল যা জারদেলের জন্য ছিল প্রচণ্ড হতাশাজনক একটা ব্যাপার। মূলত পিক ফর্মে থেকেও ২০০২ বিশ্বকাপে উপেক্ষিত থাকাটা জারদেল মেনে নিতে পারেন নি আর একারণেই ২০০২ এর পরে জারদেলের ক্যারিয়ায়ের গ্রাফ হুট করে নিম্নগামী হয়ে যায়। অথচ কিছুটা ভিন্ন স্টাইলের এই স্ট্রাইকারের যে জাতীয় দলে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় প্রয়োজন এই ব্যাপারটা কেউই বুঝার চেষ্টা করে নি আর একারণেই জাতীয় দলের হয়ে ১০ ম্যাচে মাত্র দুই গোলের পরিসংখ্যান নিয়ে তার জাতীয় দলের ক্যারিয়ার শেষ করে দেওয়া হয়।
২০০২-০৩ সিজনের অধিকাংশ সময়েই ইনজুরির কারণে বেঞ্চে বসেই কাটে জারদেলের,ক্রিসমাস ব্রেকে ফোর্তালেজায় নিজ বাসায় ছুটি কাটাতে গেলে সেখানে সুইমিং পুলে দুর্ঘটটিনার স্বীকার হন জারদেল, ঐ সিজনে সুপার মারিও মাত্র নয়টি গোল করেন ২০০৩ সালে জারদেল স্পোর্টিং ছেড়ে যোগ দেন বোল্টনে,বোল্টনের হয়ে লীগম্যাচে কোনো গোল করতে না পারলেও লীগ কাপে করেন তিনগোল।
উইন্টার ব্রেকে জারদেল যোগ দেন ইতালিয়ান ক্লাব এঙ্কোনায় কিন্তু তখন জাদরেলের শারীরিক অবস্থা আর আগেরমত নেই,অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাওয়ায় ক্লাবেওর মেডিকেল টিম তাকে ফিজিক্যালি আনফিট ঘোষণা করে, ক্লাবের সমর্থকরা তার স্থুলাকার শরির নিয়ে তাকে ব্যঙ্গ করে। মূলত এর মাধ্যমেই ইউরোপে জারদেলের বর্ণিল ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটে। এরপর নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজ,গোইয়াস,বেইরা মার,ফ্যামাগুস্তা,সেন্ট মিরেন,নিউক্যাসেল জেটসের মত ছোটছোত ক্লাবের হয়ে খেলে চার বছর পার করেন। এরপর জারদেল ফিরে আসেন ব্রাজিলে, সিরি বি সাইড ক্রিসিউমার হয়ে খেলেন এক সিজন এরপর ২০০৯ এ ফিরে যান নিজের শৈশবের ক্লাব ফেরোভিয়ারিওতে ,এরপর ফোর্তালাজার হয়েও খেলেন মাস তিনেকের মতন। এরপর বুলগেরিয়ান ক্লাস চেরনো মোরের হয়েও খেলেন কিছুদিন,২০১০ এ এটলেটিকো রিও নেগ্রো ক্লাবে যোগদান করেন। এরপর কিছুদিন সৌদি ক্লাব আল তাওউনের হয়েও খেলেন। অবশেষে ২০১১ সালে মারিও জারদেল তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টানেন।
বটগাছের বিশাল হওয়ার সাথেসাথে যেভাবে তার ছায়ার নিচে চারাগাছের অকাল মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায় ঠিক সেভাবে একজন লিজেন্ড তৈরি হওয়ার সময়ে অনেক ভালো খেলোয়াড় পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে অকালে হারিয়ে যায়। মারিও জারদেল ছিল ঠিক এমনই এক প্রতিভাবান যেকিনা রোনালদোর মত মহানায়কের ছায়াতলে পরে আর নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পায় নি, সাথে দুর্ভাগ্য হিসেবে যুক্ত হয় নন লাতিন প্লেয়িং স্টাইল আর কোচদের আস্থাহীনতা। জারদেলের মত দুর্ভাগ্যবান প্লেয়ার ব্রাজিলের ইতিহাসে আরো অনেকে আছে কারণ ওইযে আগেই বলেছি লিজেন্ডের সংখ্যা যত বাড়বে এমন দুর্ভাগ্যবান প্লেয়ারের সংখ্যাও বাড়বে আর লিজেন্ড তৈরিতে ব্রাজিল সবার চেয়ে এগিয়ে থাকায় এমন দুর্ভাগ্যবান প্লেয়ারও ব্রাজিলেই বেশি। কিন্তু দুই দুইটা ইউরোপিয়ান বুট জিতেও জাতীয় দলের হয়ে যথেষ্ট সুযোগ না পাওয়াটা হয়তো দুর্ভাগ্যের চেয়েও বেশি। তবে জারদেলের থেকে একটা ব্যাপার এই জেনারেশনের শেখার আছে আর সেটা হলো দেশপ্রেম। জারদেল ইচ্ছা করলেই পর্তুগালের নাগরিকত্ব নিয়ে জাতীয় দলে নিজের জায়গা পাকা করতে পারতেন কিন্তু তা সে করে নি, নিজ দলের হয়ে সুযোগ পাওয়ার অতি অল্প সম্ভাবনাকে পুঁজি করেই এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন হয়তোবা তিনি সফল হন নি কিন্তু তাই বলে তার দেশপ্রেম তো আর মিথ্যা হয়ে যায় না। দুঃখজনক ব্যাপার আমরা অনেকেই এই অসাধারণ প্রতিভাবান স্ট্রাইকারের ব্যাপারে জানি না,আমার এই ফিচার পড়ে দশজন মানুষ যদি মারিও জারদেলের ব্যাপারে জানে তবে সেটাই আমার পোস্টের সার্থকতা। এই সেপ্টেম্বর মাসেই মারিও জারদেলের জন্মদিন, এমন একজন আন্ডাররেটেড লিজেন্ডকে জন্মদিনের আগাম শুভেচ্ছাও জানিয়ে দিলাম এই ফিচারের মাধ্যমে।
- 0 মন্তব্য