বিশ্বের সেরা তিরিশে বাংলাদেশ হকি দল!
পোস্টটি ৩৭৯৭ বার পঠিত হয়েছে
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশন তাদের র্যাঙ্কিং হালনাগাদ করেছে এবং সেখানে বিশ্বের সেরা ৩০টি দলের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ!
বর্তমান প্রকাশিত র্যাঙ্কিং অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বে ৩০তম স্থানে রয়েছে। এশিয়াতে বাংলাদেশ ৭ম স্থানে অবস্থান করছে।
র্যাঙ্কিং-এ আগেও তিরিশের ভিতরে থাকলেও বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টে হারের পরিমাণ বেশি হওয়ায় পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। র্যাঙ্কিং-এ ৩৪ নম্বরে চলে যায় জাতীয় দল।
সাম্প্রতিক টুর্ণামেন্টগুলোয় বাংলাদেশের ক্রমাগত হার এবং ওমানের বাংলাদেশকে র্যাঙ্কিং-এ টপকে এগিয়ে যাওয়া – এসব বাংলাদেশের হকি আবার সেই কালো যুগে ফিরে যাচ্ছে কিনা এমন একটি ইঙ্গিত দিচ্ছিল।
কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে বাংলাদেশের ছেলেরা আবার বিশ্বের সেরা তিরিশটি দলের একটি হবার গৌরব অর্জন করে!
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া এশিয়া কাপের আগে ক্রমাগত কোচ বদল, মাঠে খেলা না থাকা, ফেডারেশনে অন্তর্কোন্দল সেই সাথে বাংলাদেশের ক্রমাগত হতাশাজনক পারফরমেন্স দেশের মানুষকে ব্যাপক হতাশায় জড়িয়েছে। এক পর্যায়ে সবাই ভেবেছিল, 'এই বুঝি আবার গেল হকি'।
নাভিদ আলম, পিটার গেরহার্ড হয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা পর আনা হয় বিতর্কিত কোচ অলিভার কার্টজকে যিনি খেলোয়াড় জীবনে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন কোকেইন সেবনের কারণে। ওয়ার্ল্ড হকি লীগে আশানুরুপ ফল এনে দিতে না পারায় ছেঁটে ফেলা হয় তাকেও।
অনেকদিন ধরেই গুঞ্জন উঠছিল দেশীয় পরীক্ষিত কোচ মাহবুব হারুনকে কেন দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে না, যিনি বাংলাদেশকে হকি ওয়ার্ল্ড লীগের প্রথম আসরে রাউন্ড ওয়ানে বাংলাদেশকে করেছিলেন চ্যাম্পিয়ন এবং পরবর্তিতেও তার অধীনে বাংলাদেশ পেয়েছিল সাফল্য। সাম্প্রতিক এশিয়া কাপ সহ পূর্বে ২০১৩ সালে ওয়ার্ল্ড হকি লীগ রাউন্ড ২-তে শক্তিশালী দল চায়নাকে হারিয়ে তার অধীনে বাংলাদেশক দল চলে এসেছিল লাইমলাইটে।
অবশেষে তিনিই পেলেন কোচের দায়িত্ব। তার অধীনে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে যে টার্গেট করেছিল তা অর্জন করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশ টার্গেট করেছিল পঞ্চম নাহয় ষষ্ঠ স্থান। তাহলে আগামী বছর এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাছাইপর্ব খেলতে হবে না। সরাসরি খেলার সুযোগ মিলবে মূল পর্বে।
সেই সাথে র্যাঙ্কিং ও আগাবে। লক্ষ্য মাহবুব হারুনের অধীনে সফলভাবেই অর্জিত হয়েছে এশিয়া কাপে ষষ্ঠ স্থান অর্জনের মাধ্যমে।
এশিয়া কাপে প্রতিপক্ষ দলগুলোর শক্তি বিচারে বেশ বাস্তবসম্মতই লক্ষ্য ঠিক করেছিল বাংলাদেশ। ভারত (বর্তমান র্যাঙ্কিং ৬), মালেয়শিয়া (১২), পাকিস্তান (১৩), চায়না (১৭) এর মত দলগুলোকে পিছনে ফেলে পোডিয়াম ফিনিশ দেওয়া ছিল খুবই কষ্টসাধ্য কাজ। বাংলাদেশ এশিয়া কাপে র্যাঙ্কিং-এ ছিল তিরিশেরও বাইরে।
তারপরও ছেলেরা র্যাঙ্কিং-এ এগিয়ে থাকা দুই দল চায়না এবং ওমানকে হারায়। বর্তমানে র্যাঙ্কিং-এ ওমানকে পিছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। প্রস্তুতি ম্যাচে জাপানকে (১৬) হারিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করলেও মূল টুর্নামেন্টে জাপানকে আর হারাতে পারেনি লাল-সবুজের ছেলেরা।
এশিয়া কাপের মতো একটি হাই প্রোফাইল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ থেকে চমৎকার কিছু আশা করা ছিল ক্লাসের শেষ বেঞ্চের স্টুডেন্টের কাছে "এ" প্লাস আশা করার মতো।
কিন্তু নানান প্রতিকূলতার পরেও লাস্ট বেঞ্চের স্টুডেন্ট ফাইনাল পরীক্ষায় অন্তত "এ" গ্রেড এনেছে, এতেই খুশি সবাই।
র্যাঙ্কিং ধরে রাখতে পারবে বাংলাদেশ নাকি আবার পেছাবে?
নতুন র্যাঙ্কিং প্রকাশ হওয়ার পর থেকে শুধু আমার নয়, সবার মনেই এই প্রশ্ন।
জাতীয় হকি দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনূর রশিদ এক টিভি চ্যানেলের টকশোতে বলেন, 'বাংলাদেশের হকির উন্নতির একমাত্র উপায় ফেডারেশনের অভ্যন্তরীণ কাঠামো ঠিক করা। হকির জন্য কাজ করতে আগ্রহী এবং মনোযোগী এমন মানুষ ফেডারেশনে থাকলেই ফেডারেশন সুষ্ঠুভাবে দেশের হকিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে'।
সেইসাথে তিনি আরো জোর দেন সঠিকভাবে সকলের দায়িত্ব বন্টন ও একের কাজে অন্যের নাক না গলানোতে।
ফেডারেশনের প্রত্যেকটি কমিটিকে শুধু দায়িত্বই নয়, সেই অনুযায়ী যথাযথ ক্ষমতাও দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
কমিটিগুলোকে যথাযথ ক্ষমতা দিয়ে এক জবাবদিহিতার পরিবেশ সৃষ্টি করলে ফেডারেশনে সকল কাজ সুন্দর ভাবে হবে এবং দেশের হকিকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ পুরোদমে চলবে।
আমার মতে ফেডারেশনের অভ্যন্তরীণ কাঠামোর উন্নয়নে আমাদের পাশের দেশ ভারতকে অনুসরণ করা উচিত। তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বাইরে থেকে প্রফেশনাল কর্মী নিয়োগ দিয়েছে।
এলেনা নরম্যান, একজন অস্ট্রেলিয়ান মার্কেটিং এক্সপার্ট, বর্তমানে হকি ইন্ডিয়ার সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি গত ওয়ার্ল্ড কাপে আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশনে মার্কেটিং কনসালটেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন। ভারতে হকির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে তার দক্ষতার জন্য সম্প্রতি এশিয়ান হকি ফেডারেশন তাকে "ডিপ্লোমা অফ মেরিট" পুরস্কার দেয়।
এছাড়াও আমরা আমাদের বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে উদাহরণ হিসেবে নিতে পারি। বিসিবি'র প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত সকলেই একেকজন প্রফেশনাল। বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন ঢাকা ভার্সিটির আইবিএ থেকে পাস করা গ্রাজুয়েট।
এরকম শক্ত এবং দক্ষ প্রশাসনের কারণেই আজ জাতীয় ক্রিকেট দল এত ভালো করছে।
আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশ র্যাঙ্কিং-এ আরো এগিয়ে যেতে পারবে? ফেডারেশনের কি কি বাঁধার কারণে বাংলাদেশের হকি এগোতে পারছে না? বাঁধাগুলোর সমাধান কি?
- 0 মন্তব্য