• ক্রিকেট

বিপিএল- বিদেশী প্রিমিয়ার লিগ?

পোস্টটি ৩৫৫৯৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

দেখতে দেখতে পাঁচ নাম্বার বিপিএলটাও মাঠে গড়ালো, ২০১২ থেকে ২০১৭- বাংলার ক্রিকেটে কতটা পরিবর্তন এনেছে বিপিএল? শুধু অর্থের দিক থেকে ধরলে হয়ত বিসিবির কোষাগার যথেষ্ট স্ফীত হয়েছে, কিন্তু সেগুলো আমাদের ক্রিকেটের উন্নতিতে সত্যিকার অর্থে কতটুকু কাজে লেগেছে? বিপিএল আয়োজনের একমাত্র লক্ষ্য যদি হয় পকেট ভারি করা, তাহলে ক্রিকেটকে গিনিপিগ না বানিয়ে তাঁরা ব্যবসা করলেই পারেন! দুনিয়াজুড়েই এই লিগগুলোর আয়োজন করা হচ্ছে ফাইনান্সিয়ালি লাভবান হয়ে সেই অর্থটাকে ডমেস্টিক ক্রিকেটে কাজে লাগানোর জন্য, আর আমরা নিজেদের পকেট ভারি করার জন্যই চালাচ্ছি বিপিএল!

গত চারবারের তুলনায় এবারের অবস্থা রীতিমতো ভয়াবহ! মাঠের বাইরে প্রত্যেকবারই অব্যাবস্থাপনার ছাপ থাকলেও মাঠে দেশি ক্রিকেটাররা নিয়মিতই পারফর্ম করেছেন। কিন্তু এবার একাদশে পাঁচ বিদেশি খেলানোর অনুমতি দিয়ে বিসিবি বিপিএলকে সত্যিকার অর্থেই বিদেশি প্রিমিয়ার লিগে পরিণত করেছে। নিজেদের টিটোয়েন্টি ক্রিকেটের দূর্দশা কাটিয়ে ওঠার সবচেয়ে বড় টোটকা হয়ে উঠতে পারত যেই বিপিএল, সেখানে আমাদের ক্রিকেটাররাই ঠিকমত সুযোগ পাচ্ছেন না। সুযোগই যেখানে পাচ্ছেন না, সেখানে পারফর্ম করার প্রশ্নই আসেনা! নিজেদের দেশের লিগেই আমরা ঠিকমত সুযোগ পাচ্ছিনা বিদেশিদের জন্য, এই বিপিএল আদৌ কতটুকু এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে আমাদের ক্রিকেটকে।

প্রত্যেক দলে ৫ জন করে বিদেশি খেলানোটা যদি পরের আসরগুলোতেও দেখা যায়, তবে সেটার থেকে বড় আত্মবিদ্ধংসী সিদ্ধান্ত আর হবেনা। ৭ দলে ৬ দল লোকাল প্লেয়ার খেললে মাত্র ৪২ জন ক্রিকেটারের সুযোগ হচ্ছে এখানে খেলার। একাদশে অদল বদল করলে হয়ত সংখ্যাটা ৫০-৫৫তে গিয়ে ঠেকবে। এর মধ্যে আমাদের জাতীয় দলের পুলেই আছেন ৩০ জন ক্রিকেটার, যারা পরিক্ষিত। শরীফ, অলক কাপালিদের মত ক্রিকেটার আছেন হয়ত জনা দশেক। যেখানে ৪৫ জনের মত ক্রিকেটারই চেনাজানা, পরিক্ষিত- সেখানে নতুন কারোর উঠে আসার সুযোগটা কতটুকু? অনূর্ধ্ব ১৯, কিংবা রুকি ক্রিকেটারদের কতটাই বা সুযোগ আছে এই মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করার। দুইজন ক্রিকেটার যদি একই মানের হন, একজন দেশি, আরেকজন বিদেশি- সেখানে আমাদের ফ্যাঞ্চাইজিগুলো বোধহয় সেই বিদেশিটিকেই প্রাধান্য দিবে! কারন বাজে মানসিকতা।

আমরা হার্ডহিটারের জন্য হাহাকার করি। নিজের হার্ড হিটিং সামর্থ্য দেখানোর জন্য এই বিপিএল খুব সম্ভবত উপযুক্ত মঞ্চ হতে পারত একটা তরুন ক্রিকেটারের কাছে। কিন্তু যেখানে এক ম্যাচ খারাপ খেললেই বাদ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, সেখানে কেন তিনি ঝুঁকি নিতে যাবেন। উপযুক্ত উদাহরন- মেহেদি মারুফ। গত বিপিএলে দারুন পারফর্ম করা ছেলেটা প্রথম ম্যাচে রান না পাওয়াতে বাদ, তাঁর জায়গায় আরেক বিদেশি ওপেনার! পারফর্ম করা পরীক্ষিতদের সাথেই যখন এমন হয়, তখন নতুনদের প্রতি সেটা ভাল কোন বার্তা দেয়না।

rajib-55-1

ঢাকা ডায়নামাইটসের কথা দিয়েই শুরু করা যাক, যেই দলে দেশি ক্রিকেটারের থেকে বিদেশি ক্রিকেটার বেশি! এটাকে ‘বাংলাদেশ’ প্রিমিয়ার লিগ কিভাবে ভাবতে পারবে মানুষ এতকিছুর পরে? মোসাদ্দেক, জহুরুলের মত ব্যাটসম্যানরাই সুযোগ পাচ্ছেন না ব্যাটিংয়ের, প্রথম পাঁচ- ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে একমাত্র লোকাল বয় সাকিব। কিছু মুনাফা বাড়ানো ছাড়া এই ব্যাপারগুলো আমাদের ক্রিকেটকে কতটুকু লাভবান করবে সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। চিটাগং ভাইকিংস মিসবাহর মত অচল ক্রিকেটারকে নিয়মিত খেলিয়ে যাচ্ছে, যেখানে ইরফান শুক্কুর, আল আমিনদের মত ইয়াংস্টাররা বেঞ্চে বসে থাকছেন ম্যাচের পর ম্যাচ। এগুলোর কারনে লং রানে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সাফার করতে হবে- পাপন কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের নয়। কুমিল্লায় মেহেদি হাসান রানা, ঢাকায় সাদমান ইসলাম, খুলনায় মুক্তার আলি, ইয়াসির রাব্বিদের মত ক্রিকেটার- যারা আমাদের ক্রিকেটের ফিউচার, তাঁরা ম্যাচের পর ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না। এই নামের তালিকাটা নিশ্চয়ই আরো বড় হবে অন্য দলগুলোর দিকে তাকালে।

এবারের আইপিএলেই যদি তাকাই, মোহাম্মদ সিরাজকে তাঁরা বের করে এনেছে। বিগ ব্যাশ কিংবা ন্যাটওয়েস্ট টিটোয়েন্টি ব্ল্যাস্টে বিদেশিদের জন্য সুযোগটা আরো অনেক কম। গ্ল্যামারের জন্য বিদেশি বাড়ানোর থেকে মানসম্মত বিদেশিই বেশি গুরুত্বপূর্ন, কিন্তু মানহীন কিছু বিদেশি এনে ফ্যাঞ্চাইজিগুলো বিপিএলের মানটাকেই নিচে নামিয়ে দিচ্ছে।

বিপিএলের উদ্দেশ্যটা হওয়া উচিৎ দেশীয় ক্রিকেটারদের বড় মঞ্চের জন্য প্রস্তুত করে তোলা, কিন্তু সেটার সুযোগই এবার মিলছেনা। বিপিএল দিয়ে অবশ্য সার্বিক উন্নতিটা সম্ভব নয়। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট যদি প্রপারলি আয়োজন না করা যায়, লং রানে ক্রিকেট ডেভেলপমেন্ট খুবই কঠিন।

বিপিএল থেকে যে মুনাফা আসে, সেটাই যথেষ্ট দেশের ক্রিকেট অবকাঠামোকে শক্ত করে তোলার জন্য। কিন্তু পাঁচ বিপিএল আগে যেই চিত্র ছিল ঘরোয়া ক্রিকেটের, সেটা বিপিএল আয়োজন করে কতটুকু পালটানো গিয়েছে। এখনো জাতীয় লিগটা সিরিয়াসলি আয়োজন করা হয়না, সামান্য বৃষ্টিতেই ভেন্যুগুলোতে খেলা ভেস্তে যায়। বিপিএলের রেভিন্যু দিয়ে এই চিত্রগুলো বদলানো গেলেই অনেক লাভবান হতো বাংলাদেশ।

এত চাপের মধ্যেও মুমিনুল, আবু জায়েদ রাহী, রনি কিংবা আরিফুলরা পারফর্ম করছেন, তবে সেটা ধারাবাহিক হতে হবে। বিপিএলের বিরুদ্ধের নই আমরা কেউই, কিন্তু চাওয়াটা বিপিএল যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য সত্যিকারের সুফলটা বয়ে আনতে পারে।