একজন ফুটবল জাদুকর; এবং তার অবিসংবাদিত ক্যারিয়ার।
পোস্টটি ১০৮৪৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
ব্লগের নীতিমালা
ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
পায়ে ফুটবল, মুখে কার্পণ্যহীন হাসি; প্রচণ্ড ক্ষিপ্রগতিতে মাঠে ছুটে চলা- গোল করা আর গোল বানিয়ে দেয়াটা যেন ডাল-ভাত ব্যাপার তার কাছে! এসেছেন, খেলেছেন; জয় করেছেন- রাজত্ব করেছেন দাপুটে, হিংস্রভাবে। ট্রেডমার্ক সেলিব্রেশনে শত সহস্র'বার আনন্দে ভাসিয়েছেন সমর্থকদের! উল্লাসধ্বনি সমর্থক ছড়িয়ে রাইভালদের কানেও পৌঁছাত। যেখানেই খেলেছেন, সাফল্য পেয়েছেন। ফুটবলের হাতেম তায়ী হয়ে দু'হাত উজাড় করে দিয়েছেন দলকে। সহজভাবে বলতে গেলে, জয় করার জন্যই যেন তার জন্ম! বিংশ শতাব্দীর কিংবদন্তীতুল্য এ ফুটবলারের গৌরবগাঁথা লিখে শেষ করার মতো নয়; তাকে নিয়ে লিখতে বসলে পরিসংখ্যানরা পিছনের দরজা দিয়ে দৌড়ে পালায়। পরিংখ্যান দিয়ে তাকে বিচার করা যে বড্ড বেমানান!
আচ্ছা, আমি কার কথা বলছি তা অনুমান করতে কি প্রিয় পাঠক স্রোতাদের একটু কষ্ট হচ্ছে? তবে একটু নড়েচড়ে বসুন না। আর শুনুন, আমি বলছি লম্বা ঝাঁকড়া চুলের সহাস্যমুখ এক ফুটবলারের কথা; বার্সার স্বর্ণযুগের কারিগর তিনি। তার পায়ের জাদুতে বিমোহিত হয়েছে পুরো ফুটবল বিশ্ব। ভয়ংক এক শিকারি ছিলেন, ছিলেন ডিফেন্স দুর্গের জন্য ত্রাস! অথচ মানুষটা সহজসরল। ভুবনজয়ী হাসি ছাড়া যেন কিছুই জানেন না ভদ্রলোকটি। ফুটবলের ১২০ গজের গজে তার পার্ফমেন্সকে ফুটবল বোদ্ধারা 'দ্যা ওয়ান ম্যান শো' বিশেষণে বিশেষিত করেছেন। ম্যাজিশিয়ান হওয়ার গল্পটা তবে একটু পিছন থেকেই বলি।
২১শে মার্চ, ১৯৮০। ব্রাজিলের সমুদ্র তীরবর্তী শহর পোর্তো আলেগ্রে। সেখানটায় ফুটবল অন্তপ্রাণ এক পরিবারে জন্ম নেয় এক শিশু। যার নিকনেম হলো ‘গাউচো’। ( ব্রাজিলের দক্ষিণের এই অংশে এই গোত্রটির নামের সাথে এটি লাগানো থাকে ) । যে দেশে ফুটবল হলো ‘পূজা’ আর প্রতিটা মানুষ তার পূজারী ...সেখানে প্রতিটা পরিবারই ফুটবল অন্তঃপ্রাণ । বাবা জোসে মোরেইরা একজন প্রফেশনাল ফুটবলার ছিলেন, পাশাপাশি একটি শিপইয়ার্ডে ওয়েল্ডিং এর কাজ করতেন । তার মা প্রথম জীবনে কসমেটিকস্ পণ্য বিক্রয় করলেও পরে নার্সের কাজ জুটিয়ে নেন । বড় ভাই রবার্তোও একজন প্রফেশনাল ফুটবলার হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছিলেন । ব্রাজিলে গড়পড়তা সব পরিবারেই এমন ফুটবলার আছে তবে বিশ্বমানের হয়ে ওঠে অল্প ক’জনই ।
সেরা সময়ে ফুটবল ইতিহাসের খুব কম সংখ্যক খেলোয়াড় রয়েছে যারা রোনালদিনহোর সমকক্ষ দাবি করতে পারেন। তার কৌশল ও আলতো পায়ে বলের নিয়ন্ত্রণ দর্শকদের বিমোহিত করে। পায়ের কারুকাজে সফল সামাপ্তিতে তিনি সামর্থ্যরে চেয়েও বেশি পারঙ্গম। ২০০২ সালে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের প্রধান নায়ক ছিলেন তিনি। চার বছর পর ফের দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌছে দিলেও সফল সমাপ্তি ঘটাতে পারেননি। ক্লাব পর্যায়ে বার্সেলোনায় খেলার সময় তিনি ছিলেন নিখুঁত এক বিশ্বসেরা ফুটবলার।
ছোটবেলায় তার আদর্শ ছিলেন তার বাবা । মাত্র ৮ বছর বয়সে বাবাকে হারাতে হলেও রোনালদিনহোর মধ্যে এক আদর্শিক ফুটবলার, একজন ভালো মানুষের বীজ তিনি বুনে দিতে পেরেছিলেন । বাবা সম্পর্কে দিনহো বলেন-
'তিনি আমার ‘ব্যাক্তিগত’ জীবনে এবং সমগ্র ক্যারিয়ারে একজন আদর্শিক ব্যাক্তিত্ব ছিলেন । তিনি আমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছিলেন। “মাঠের বাইরে—সঠিক কাজটি করো এবং একজন সৎ ও স্পষ্টবাদী হও । মাঠের মধ্যে---ফুটবলটা যতটা সম্ভব সহজভাবে খেলার চেষ্টা করো । তিনি সবসময় বলতেন, সবচেয়ে জটিল কোন কাজ যেটা তুমি করতে পারো সেটা হলো, ফুটবলটা কে সহজভাবে নাও।"
সেই বড় ভাইয়ের হাত ধরেই সে ফুটবল খেলা শুরু করলো। এমন একদিন মাত্র ৫ বছর বয়সে সে এলাকায় খেলতে যেয়ে পায়ে খুব ব্যাথা পেলো। বাসায় যেয়ে ভাইকে দেখিয়ে ভ্যা-ভ্যা করে কাঁদতে শুরু করলো। তখন তার ভাই তাকে বললো, "এই বোকা এইটুকু ব্যাথায় কেউ কাঁদে? জীবনে আরো অনেক বাধা আসবে, সেইগুলাকে পরোয়া না করে চলা এখনই শিখে নে "। এই বলে ভাইকে ধরে বসে ছিলো তার বড় ভাই রবার্টো। সেই ভাই তার বলা সেই কথাকে খুব ভালো ভাবে নিজের মনে গেঁথে নেয়।
একদিন সে এলাকায় খেলার সময় খুব বাজে ভাবে ফাউলের শিকার হয়, তাও সে খেলে যায়। পরে সারাদিন তার পা ব্যাথা ছিলো। সেই ব্যাথা পরের দিন আরো তীব্র হয়। তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেয়ে শুনা যায় যে তার পায়ে ফ্র্যাকচার হয়েছে। ডাক্তার তো শুনে অবাক যে এই পুচকে ছেলে কিভাবে এই পা নিয়ে খেললো?তাদের ফ্যামিলিতে হঠাৎ করে রবার্টো একটি প্রোফেশনাল দলে সূযোগ পায়।তারা একটি নতুন বাসা পায় এর মাধ্যমে। তবে এই খুশি বেশিদিন টিকেনা।এর কারন ছিলো একটি ইঞ্জুরি যা রবার্টোর ক্যারিয়ার নষ্ট করে দেয়। হঠাৎ সেই ছোট্ট ছেলেটি আশার আলো দেখায়।
মাত্র ৮ বছর বয়সে ছেলেটি গ্রেমিওর ইউথ একাডেমিতে ভর্তি হয়। ১৯৯৮ - ৯৯ সিজনে সে মেইন দলে ডাক পায়। সেই সিজনে সে মোটামোটি ভালোই খেলে। ১৯৯৯ -২০০০ সিজনে সে অনেক ভয়ংকর হয়ে উঠে।সেই সিজনে সে ২৩ টা গোল করে।সেই সিজনে রিও গ্র্যান্ডে ডো সুল স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ব্রাজিলিয়ান লিজেন্ড দুঙ্গাকে নিজের ফুটসাল স্কিলস দিয়ে বিরক্ত করে ফেলে সে। দুঙ্গা অনেক মাথা গরম করে থাকে। ফলে ছেলেটির দল শিরোপা পায়। ম্যাচ শেষে দুঙ্গা বলে, যে সে তার পুরো ক্যারিয়ারে এতো স্কিল দেখানো প্লেয়ার কখনো দেখেনি।
২০০১-০২ সিজনের ওপেনিং ট্রান্সফারে ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল ছেলেটিকে নিজেদের দলে নিতে চায়। তবে আইনি কিছু সমস্যার কারনে ডিলটা আর বাস্তবে পরিনত হয় না। তবে পরে সে প্যারিস সেইন্ট জার্মানে যোগ দেয়। তাকে ৫ বছরের কন্ট্রাক্টে ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে পায় এই ফ্রেঞ্চ জায়েন্ট। তাকে ২১ নম্বর জার্সি দেওয়া হয়। ৪ আগস্ট আয়াক্সেরের বিপক্ষে সাব হিসেবে নেমে ডেবিউ করে সে।১৩ অক্টবর লিয়নের বিপক্ষে সে ক্লাবের হয়ে নিজের প্রথম গোল করে। ১৬ মার্চ পিএসজির হয়ে নিজের প্রথম ডাবল গোল করে এক ম্যাচে। সেই সিজনে তার পার্ফরমেন্স সবার নজড় কাড়ে। সেইথেকে সে বিশ্বকাপ দলে জায়গা পায়। নিজের প্রথম বিশ্বকাপেই সে দলকে শিরোপা এনে দেয়। এর মাধ্যমে ব্রাজিলের জার্সিতে ৫টি স্টার বসে।
২০০২-০৩ সিজনে তাকে ১০ নম্বর জার্সি দেওয়া হয়। সেই সিজনে সে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠে তবে তার ক্লাবের ফর্ম নাই হয়ে যায়। এক ম্যাচে একজন পঙ্গু রোগী তার খেলা দেখতে আসে। খেলা শেষে সে তার জার্সি সে রোগীকে দিয়ে দেয়। তার দলের ব্যার্থতার জন্য এবং ইউরোপিয়ান ট্রুনামেন্ট মিস করার জন্য সে দল ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। সেই থেকে ২০০৩-০৪ সিজনে সে মোর দেন আ ক্লাব বার্সায় যোগ দেয়।তাকে পেতে বার্সা ৩০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে। এসি মিলানের সঙ্গে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে সে তার ডেবিউ করে। সেভিয়ার বিপক্ষে সে বার্সার হয়ে নিজের প্রথম গোল করে।
২০০৪-০৫ সিজনে সে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠে। সে নিজের প্রথম লালীগা জিতে এবং ফিফা প্লেয়ার অফ দা ইয়ার হয়।তার দুর্দান্ত পার্ফমেন্সের জন্য বার্সা তাকে ২০১৪ পর্যন্ত লংলাস্টিং কন্ট্রাক্ট অফার করে। তবে রোনালদিনহো তা রিজেক্ট করে এবং ২বছরের কন্ট্রাক্টে রাজি হয়। ২০০৫-০৬ সে ফিফপ্রো ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দা ইয়ার, ফিফপ্রো, ফিফপ্রো ওয়ার্ল্ড XI, ইউরোপিয়ান প্লেয়ার অফ দা ইয়ার সহ আরো অনেক ইন্ডিভিজুয়াল এওয়ার্ড জিতে। সে টানা ২য় বারের মত ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দা ইয়ার হয়। সে বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়নস লীগ জিতে। এই সিজনকে সে তার ক্যারিয়ারের সেরা সিজন বলে মনে করে। তবে ২০০৬ বিশ্বকাপে যেয়ে সে খারাপ পারফর্ম করে।
২০০৬-০৭ সিজনে রোনালদিনহো তার ফর্ম আবার ফিরে পায়। সে ক্যারিয়ারের ৫০তম লীগ গোল করে ২৫ নভেম্বর ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে। একই ম্যাচে সে বাইসাইকেল কিক করে গোল করে। ম্যাচ শেষে সে বলে যে এইটা তার বাল্যকালের স্বপ্ন ছিলো।সেই সিজনে রোনালদিনহো ফিফা প্লেয়ার অফ দা ইয়ারে থার্ড হয়। ২০০৭-০৮ সিজনে সে বার্সার হয়ে ২০০তম ম্যাচ খেলে। ১৯ নভেম্বর ক্লাসিকোর প্রথম লেগে বার্নাব্যুতে রিয়ালের সাথে ৩-০ গোলের জয়ে রোনি করেন ২ গোল । তার দ্বিতীয় গোলের পর রিয়াল সমর্থকরাসহ মাঠের সবাই দাড়িয়ে সম্মান জানায়! এটা এতোটাই রেয়ার ছিল যে, ম্যারাডোনার পর রোনালদিনহোকেই রিয়ালের মাঠে এই সম্মান পেলেন । সেদিনের স্মৃতি রোমান্থন করতে গিয়ে রোনি বলেন-
“আমি কখনোই এটা ভুলবোনা কারণ প্রতিপক্ষ সমর্থকেরা যখন এভাবে সম্মান জানায়, এটা যে কোন ফুটবলারের জন্যই বিষ্ময়ের”।
ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডের অধীনে ইতো, মেসি এবং রোনালদিনহো এক নতুন বার্সাকে তুলে ধরে ২০০৫-০৬ সিজনে । এই সিজনটাকে রোনালদিনহোর ক্যারিয়ারের বেস্ট সিজন ধরা হয় । ১৪ বছর পর বার্সা চ্যাম্পিয়নস লীগ জেতে (১৭মে, ২০০৬—বিপক্ষ আর্সেনাল ) । তার ঠিক দু’সপ্তাহ আগেই জেতে লা-লিগা । ২৬ গোল করে লা-লিগা শেষ করে (৭গোল চ্যাম্পিয়নস লীগে ) । ২০০৮-০৯ সিজনে রোনালদিনহো এসি মিলানে যোগ দেয়। সেইখানে সে খুবই উদ্ভট একটা জার্সি নম্বর নেয়। নম্বরটা ছিলো ৮০!
ইন্টার ন্যাজিওনালের বিপক্ষে সে মিলানের হয়ে নিজের প্রথম গোল করে। সেই সিজনে সে মোট ১০টি গোল করে। ২০০৯-১০ সিজনে সে খুব একটা ভালো স্টার্ট পায়না তবে সে আস্তে আস্তে মানিয়ে নেয়।১৭ জানুয়ারি সিয়েনার বিপক্ষে সে এসিমিলানের হয়ে প্রথম হ্যাট্রিক করে।সে সিরিয়ায় এসিস্ট লিডার হিসেবে সিজন শেষ করে। ২০১০ - ১১ সিজনে সে ফ্ল্যামেঙ্গোতে চলে যায়। ৬ ফেব্রুয়ারি সে ফ্ল্যামিঙ্গোর হয়ে নিজের প্রথম গোল করে। ২০১১-১২ সিজনে সে এথলেটিকো মিনেইরোতে একটা সারপ্রাইজ মুভ করে সেইখান থেকে সে মেক্সিকান ক্লাব কুইয়েরেটারো তে যায় ।
★ রোনালদিনহোর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার-
রোনি ব্রাজিলের সেই অল্প ক’জন খেলোয়াড়ের একজন ছিলেন যারা দেশের হয়ে সব বয়সের- সব ধরণের টুর্নামেন্টেই খেলেছেন । ১৯৯৭ সালের অনূর্ধ-১৭ দলের অংশ হয়ে তিনি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন । রোনি তাতে ২ গোল করেন এবং ব্রোঞ্চ বল পান ।
দিনহোর ধারাবাহিতা তাকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেলো। ২৬ জুন,১৯৯৯ সালে লাটভিয়ার সাথে এক খেলায় ব্রাজিলের সিনিয়র টিমে মাত্র ১৯ বছর বয়সে রোনালদিনহোর অভিষেক হয়। ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী হলুদ জার্সি গায়ে জড়ালেন রোনালদিনহো। লাটভিয়াকে সেদিন ৩-০ গোলে হারালো ব্রাজিল। দিনহো একাই করলেন ২ গোল। ১৯৯৯ এর কোপা আমেরিকার ব্রাজিল দলে ডাক পেয়ে গেলেন তিনি। ১৯৯৯ সালের কোপা আমেরিকায় করলেন ১ গোল। ব্রাজিল হলো চ্যাম্পিয়ান। কোপা আমেরিকা কাপে চুমু এঁকে দেয়ার সুযোগ পেলেন রোনালদিনহো।
১৯৯৯ ফিফা কনফেডেরেশান কাপ। শুধুমাত্র ফাইনাল বাদে সব ম্যাচে একের পর এক গোল করলেন রোনালদিনহো। সৌদি আরবের সাথে ৮-২ গোলে জেতা ম্যাচে করলেন হ্যাট্রিক। ফাইনালে গোল পেলেন না রোনালদিনহো। মেক্সিকোর কাছে হেরে গেলো ব্রাজিল। রোনালদিনহো জিতলেন টুর্নামেন্ট সেরার গোল্ডেন বলের পুরস্কার। সবচেয়ে বেশি গোল করে গোল্ডেন বুটও নিজের করে নিলেন।
২০০২ সাল, বিশ্বকাপের বছর। রোনির প্রথম বিশ্বকাপও। রোনালদো এবং রিভালদোর সাথে রোনির ত্রয়ী’র নামকরণ হয় “Three R’s” । রোনি ৫ ম্যাচে ২ গোল করেন ...অনেকগুলো অ্যাসিস্ট করেও গোলে সাহায্য করেন ।
রোনালদিনহোর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আলোচিত ম্যাচটি ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের সাথে ... যাতে ব্রাজিল ২-১ গোলে জেতে । ওয়েনের গোলে ব্রাজিল তখন ১-০ গোলে পিছিয়ে! প্রায় মাঝমাঠে বল পেয়ে একাই কোল’সহ আরও দুজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডিবক্সে রিভালদোকে বল দেন...গোল । ম্যাচের ৫০ মিনিটে প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে বাঁকানো ফ্রি- কিকে দলের পক্ষে দ্বিতীয় গোলটি করেন যা দর্শক-খেলোয়াড় সবাইকে হতবম্ভ করে দেয় !! এই রকম একটি গোলের স্বপ্ন সব খেলোয়াড়ই দেখে থাকেন । পরে সমালোচিত একটি ফাউলের সিদ্ধান্তে লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়েন এবং সেমিফাইনালে মাঠে বসে থাকতে হয় । জার্মানিকে ২-০ গোলে হারিয়ে ব্রাজিল পঞ্চম বারের মতো শিরোপা জেতে ।
২০১০ বিশ্বকাপের দলে দুঙ্গার সুদৃষ্টি পেতে ব্যার্থ হন । পাতো, আদ্রিয়ানো, রোনালদোকেও বাদ দেয়া হয় । ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যায় । ২০১১ সালে কোচ মেনজেস এর অধীনে দুটি প্রীতি ম্যাচে দলে ফেরেন এবং কোচের আস্থা অর্জন করেন ভালো খেলে । ২০১৩ সালে স্কোলারীর অধীনে ইংল্যান্ডের সাথে প্রীতি ম্যাচে দেশের হয়ে ১০০তম ম্যাচটি খেলেন (আন অফিশিয়াল ম্যাচ সহ ) । সেই ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যার্থ হন এবং ব্রাজিল ১-২ গোলে হেরে যায় । পরে ২০১৩ কনফেডারেশন কাপ এবং ২০১৪ বিশ্বকাপ দলে জায়গা হারিয়ে একপ্রকার আড়ালেই চলে যান!
দীর্ঘ ১৮ বছরের ফুটবলকে এবার বিদায় জানাবেন ম্যাজিশিয়ান। কথাগুলো টাইপ করতে কি একটুও কষ্ট হচ্চিলো না? ব্যাকস্পেসে হারিয়ে ফেলেছি অনেকগুলো পরিসংখ্যান। হলুদ জার্সি গায়ে দিয়ে তার করা গোলগুলো শুধুই স্মৃতি, কিংবা বিশ্বের নামিদামি অনেকগুলো ক্লাবে খেলার যে রেকর্ড গড়েছেন তা সহজে ভুলার নয়। ফুটবল বিধাতা এ ভদ্রলোকটিকে ফুটবলের অসীম প্রতিভা দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। হেসেখেলে কাটিয়ে দিয়েছেন দেড়যুগ সময়। অথচ নিঃসন্দেহে বলা যায়, 'দিনহো ইজ আ ম্যান উইথ জিরো হেটার্স'। ফুটবল দেখেন, বুঝেন; অথচ দিনহো'কে শ্রদ্ধা করেন না তা হতেই পারেনা।
© আহমদ আতিকুজ্জামান।
- 0 মন্তব্য