প্রেমাদাসায় স্বপ্নের রজনী
পোস্টটি ৭০১৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
ব্লগের নীতিমালা
ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
অবিশ্বাস্য বাংলাদেশ!!!!
এ যেনো কল্পলোকের কোন রূপকথার এক গল্প, যেখানে নায়ক মুশফিকুর রহিম নামের এক বঙ্গবীর!
এই ম্যাচ হেরে গেলে বলতাম ‘ম্যাচ টা জেতা গেলে হয়ত সিরিজটাই আমাদের ঘরে যেতো!’ অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচটা জিতে গিয়েছে বাংলাদেশ, আমার গাট ফিলিংস বলছে এই টূর্নামেন্টে বাংলাদেশই চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছে! এইটা একান্তই ব্যাক্তিগত বিশ্বাস, কোন ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের ব্যাপার নেই এখানে, এইরকম ফিলিংস প্রকাশ করে দেয়াও রিস্কি টাস্ক! আফটার অল, বুমেরাং হয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনাও কম নয়! কুসংস্কারও কাজ করে মনের ভিতরে......
তবে প্রেমাদাসায় মুশফিক যেটা করে দেখালেন শনিবারের সন্ধ্যায়, সেটা অবিশ্বাস্য, অতিমানবীয়!শ্রীলঙ্কা ২১৪ করার পর আমাদের ব্যাটিংটা তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ার জোরালো সম্ভাবনা ছিল, গত কয়েকদিনের বাজে সময়টাযে জন্ম দিয়েছে অনেক অবিশ্বাসের। আমাদের ব্যাটিং লাইন আপের হয়ত সামর্থ্য খুব বেশি নেই, কিন্তু বিশ্বাস নামের জিনিষটা অনেক অসম্ভবকেও সম্ভব করে তোলে। তামিম আর লিটন সেই বিশ্বাসের রেণুটাই ছড়িয়ে দিয়েছেন পুরো দলের ভেতরে, আর মুশফিকের ব্যাটে সেই সম্ভাবনা রূপ নিল বাস্তবে। বিশ্বাস রাখাটা খুব জরুরী ছিল, দল আজকে বিশ্বাস করেছে সম্ভব, এবং দিনশেষে সম্ভবই হয়েছে!একটা জয় খুব গুরুত্বপূর্ন ছিল, আর এমন একটা জয় পালটে দিতে পারে অনেক কিছু!
মুশফিক ব্যাংগালুরু থেকে শিক্ষা নিয়েছেন, মাহমুদুল্লাহ সেই চিন্নাস্বামী কান্ডের পুনরাবৃত্তি করার পর শঙ্কার যথেষ্ট কারন ছিল। তারপর সাব্বিরও প্যাভিলিয়নে, শেষ ওভারে ৯ রানের ইতিহাসও আমাদের পক্ষে নয়। এতসব পীড়াদায়ক ইতিহাস ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথার মধ্যে, তবে মুশফিক এবার অনেক বেশি স্থিতধী, অনেক বেশি পরিণত! দলের প্রয়োজনের সময় দাঁড়াতে পারছিলেন না বলে তাঁর প্রতি একটা চাপা ক্ষোভ ছিল, কিন্তু সব আজকে ধুয়েমুছে একাকার!টিটোয়েন্টিতে এমন এক ইনিংসের অপেক্ষায়ইতো বাংলাদেশের ক্রিকেট!
৩৫ বলে ৭২, ইনিংসটার সারমর্ম- এলাম, দেখলাম,জয় করলাম!১৮ তম ওভারের শেষ বলে নুয়ান প্রদীপকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কাটা মনে করিয়ে দিয়েছিল সেই এক রানের কান্ডকে, এইরকম একটা শটেই সেবার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল! এবার আর হতাশা নয়, সেই শটেই ইতিহাসে প্রথমবারের মত টিটোয়েন্টিতে ২০০ পার বাংলাদেশের! যেন ভাগ্যর এক মধুর প্রতিদান!
এবার মুশফিক ছিলেন যথেষ্ট সেন্সেবল, উইনিং রান নেয়ার আগে এতটুকু বাড়তি উদযাপনও করেননি। কুল,ক্যাম থাকাটা গুরুত্বপূর্ন ছিল, সেটা বেশ ভালভাবেই করে দেখিয়েছেন তিনি। ৭২ রানের কাব্যিক ইনিংসে পাঁচটা চার আর চারটা ছয়, প্রিয় স্লগ সুইপেও দারুন স্বচ্ছন্দ ছিলেন এদিন, জীবন মেন্ডিসকে মারা ছক্কাটাতো নান্দনিক, অসাধারণ ছিল ধানুশকাকে মারা ছক্কাটাও!মুশফিক আজকে বাংলার রূপকথার নায়ক!
নায়ক থাকেন, থাকেন পার্শ্বনায়কও!মুশফিকের রাজত্বের প্রবল পরাক্রমশালী দুই সেনাপতি তামিম আর লিটন!বিশ্বাসের ভিতটা গড়ে দিয়ে গিয়েছেন দুইজন, পাওয়ারপ্লেতে যা করে দেখিয়েছেন সেটাই পার্থক্যটা গড়ে দিয়ে গিয়েছে। লিটনকে ওপেনিংয়ে তুলে আনাটা ছিল আউট অফ দ্যা বক্স থিংকিং, এইধরনের ম্যাচ জিততে যা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন। দুইজন ইনিংসটাকে খুব বেশি বড় করতে পারেননি, তবে যেভাবে কাউন্টার এটাক করেছেন প্রতিপক্ষকে সেটা বোধহয় তাঁরা ভাবতেও পারেনি। তামিমের কাছ থেকে টিটোয়েন্টিতে কখনোই প্রত্যাশা মেটানো ইনিংস পাইনি, পুরোপুরি মেটাতে না পারলেও আজকে দলের জন্য যেভাবে খেলেছেন, সেটা অবশ্যই তৃপ্তিদায়ক।
আজকের জয়টাকে ২০১৯ বিশ্বকাপের জন্য একটা বড় একটা অনুপ্রেরনা হিসেবেই দেখতে চাই, হোক তা আলাদা ফর্ম্যাট। সেখানে ম্যাচ জিততে হলে ৩৫০ চেইজ করার সামর্থ্যটা থাকা জরুরি, আজকে ২০ ওভারে সাকিবকে ছাড়া ২১৪ চেজ করে ফেলাটা সেই সামর্থ্য অর্জনের পথে অনেক বড় একটা পদক্ষেপ। বিশ্বাসটা তৈরি হবে, সেই সাথে সামর্থ্যটাও।
জয়ের ধারায় ফেরাটা গুরুত্বপূর্ন ছিল, একটা মোমেন্টাম খুবই দরকার ছিল।দারুন এক জয় এতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু এখনো টূর্নামেন্টের দুটো ম্যাচ বাকি আমাদের। এক্সাইটমেন্টটাকে এখনই কন্ট্রোল করতে হবে, মোমেন্টামটাকে ধরে নিয়ে যেতে হবে বাকি ম্যাচগুলোতেও। অতি আনন্দে বুঁদ হয়ে থাকাটা হবে নিতান্তই ছেলেমানুষী, পার্টিটা হোক ট্রফি হাতে নিয়েই!
চলো বাংলাদেশ!!!!
পুনশ্চঃ
আমাদের বোর্ড কর্তারা এখনই ব্যাস্ত হয়ে পরেছেন ক্রেডিটটা নেয়ার জন্য, কিন্তু তাঁদের মনে রাখা উচিৎ বাস্তবতাটা। এটা নিছকই একটা টিটোয়েন্টি ম্যাচ জয়, গত কয়েকদিনের বাজে ক্রিকেট এতে আড়াল হয়ে যাচ্ছেনা।মুশফিকের একটা মিরাকল ইনিংস ম্যাচ জিতিয়েছে আমাদের, কিন্তু এতেই যদি সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকি তাহলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার!প্রয়োজন ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলার, সামনের ম্যাচগুলোতেই ফোকাসটা রাখা উচিৎ।
- 0 মন্তব্য