নাগিনটা দেখলো লঙ্কাই!
পোস্টটি ৮৩২০ বার পঠিত হয়েছেবাংলাদেশ তুমি দূর্বার, তুমি দুরন্ত! ক্রিকেটের কত রং,কত রূপ, কিন্তু বাংলার ক্রিকেট আজ দেখলো এক মধুর রূপ, নীল-হলুদের সমুদ্রকে ছাড়িয়ে প্রেমাদাসার উৎসবের রংটা লাল আর সবুজ! কত দিনের অপেক্ষা এমন এক মুহুর্তের জন্য, বাংলাদেশের টিটোয়েন্টি ইতিহাসের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ছক্কা, যেই ছক্কায় শাপমোচন মাহমুদুল্লাহর! এমন এক শটেই তো জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘মারাকানাজো’র, সেই লফটেড ফ্লিকটা আজ মিড উইকেট দিয়ে খুঁজে নিল নীলের সমুদ্র হয়ে যাওয়া এক গ্যালারিতে, মুহুর্তেই বদলে গেল উৎসবের রঙটা!
একটা ম্যাচ, কিন্তু চল্লিশ ওভারে ওভারে যেভাবে ম্যাচের রঙ বদলালো ক্ষণে ক্ষণে, তাতে অনেকেই এটাকে চিত্রনাট্য ভেবে ভুল করতে পারেন! ম্যাচের শুরুতেই স্ট্রাইক সাকিবের, দুই মাস কোন ম্যাচ না খেলে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট, সাকিব তো সুপারম্যানই! মিরাজের উপর আস্থা রেখেছিল দল, কি দারুনভাবেই না সেটার প্রতিদান দিলেন। অতীতের এলোমেলো মিরাজ সাকিবের সংস্পর্শে এসে যেন হয়ে উঠলেন খাঁটি সোনা, দারুন লাইন লেংথ আর টার্নে নাভিশ্বাস উঠিয়েছেন ব্যাটসম্যানদের। জীবন মেন্ডিসকে যখন ফিরিয়ে দিলেন, তখন লঙ্কা রীতিমত কাঁপছে, তখন ৪১রের মাথায় ৫ উইকেট হারিয়ে নিস্তব্ধ প্রেমাদাসার গ্যালারি। ম্যাচের রঙটা যেন হঠাত বদলে গেল তারপর, দুই পেরেরা মিলে টেনে নিলেন ১৬০ পর্যন্ত! প্রথম দশ ওভারের দুর্দান্ত বাংলাদেশ খেই হারালো আবারো সেই স্লগে, দুই বাঁহাতির বিপক্ষে পুরো পরিকল্পনাটাই যেন ভেস্তে গিয়েছিলো বাংলাদেশের। এখানেও ত্রাতা মাহমুদুল্লাহ, ৪ ওভার দারুন ইকোনমিতে বল করে পেরেরাদের আটকে রেখেছিলেন অনেকটা সময়। মুস্তাফিজ নিজের প্রথম দুই ওভারে ছিলেন ভয়ংকর সুন্দর, কিন্তু শেষ দুই ওভারে শর্ট আর ফুলটস বলে সেই ফিজই অনেকটাই কুৎসিত! সাকিব নিজেকে হয়ত আনতে পারতেন, কিন্তু দুই পেরেরার স্ট্রং মাসলের বিরুদ্ধে সেটা অনেকটাই আত্নঘাতী হয়ে যায়। অপুকে বোলিং না দেয়া, সৌম্যকে নিয়ে আসা- এগুলো নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলবে, কিন্তু মাইন্ড দ্যাট এই সাকিবের ক্যাপ্টেন্সিতেই শ্রীলঙ্কাকে এই উইকেটে ১৬০ এ আটকে রাখা গিয়েছে।
ম্যাচের আসল গল্পটা বাংলাদেশ ইনিংসে, এ এমন এক গল্প যা হাজার বছর ধরে শুনলেও বারবার শুনতে চাইবে কোটি বাংলাদেশি। এখানেও অনেক উত্থান আর পতনের গল্প, কিন্তু মাহমুদুল্লাহর হাতে কখনোই পথ হারায়না লাল সবুজ পতাকাটা। তামিম আর মুশফিক মিলে মঞ্চটা তৈরি করেছিলেন, কিন্তু হুট করেই যেন একের পর এক আঘাতে পথভ্রষ্ট বাংলাদেশ। তামিম খেলে গিয়েছেন নিজের ইন্টারন্যাশনাল টিটোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মার্ট ইনিংসটা, ডাউন দ্যা উইকেটের ছক্কাগুলো সাহসটা ছড়িয়ে দিয়েছে পুরো ড্রেসিংরুমেই। মুশফিকের সাথে তামিমের পার্টনারশিপটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন ছিল, কিন্তু তারপরের গল্পটায় মাহমুদুল্লাহ সাজিয়ে বসলেন সব রোমাঞ্চের পসরা। সাকিব ঠিকমত প্লেসমেন্ট না করতে পেরে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে আউট, তখন মনে হচ্ছিল এবার শ্রীলঙ্কানরাই নাগিন ড্যান্সের বদলাটা দিবে। মিরাজও রানটা নিতে পারেননা ঠিকঠাক, কিন্তু আসল নাটকটা দেখল শেষ ওভারেই।
তাঁর আগে জীবন মেন্ডিসকে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে সাইটস্ক্রিনে আছড়ে ফেলে মাহমুদুল্লাহ জানান দিয়েছে ভয় নেই বাংলাদেশ। বিশ্বাসের পালে আরো জোর হাওয়া লাগিয়ে দেন মাহমুদুল্লাহ থিসারাকে দারুন এক স্কুপে ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে! কিন্তু উনিশতম ওভারে যা হল, সেটা যেন উপন্যাসের চরম রোমাঞ্চকর থ্রিলার গল্পকেও ছাড়িয়ে যায়।
৬ বলে ১২, স্ট্রাইকে মুস্তাফিজ। প্রথম বলটা বাউন্সার, যেটা সেই ওভারে ওয়ান এন্ড ওয়ানলি পারমিটেড ফর উদানা! কিন্তু তিনি পরের বলটাও বাউন্সার দিলেন, এখানেই আম্পায়ার দেখালেন আসল খেলটা! মার্জিনাল কলের দোহাই দিয়ে লিগ্যাল ডেলিভারি হিসেবে ধরলেন বলটাকে, সেটায় রান নিতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন মুস্তাফিজ, কিন্তু কাজের কাজটা ঠিকই করেছেন, স্ট্রাইকে পাঠিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। ঠিক সেসময় সত্যিকারের নেতার মত সামনে এগিয়ে আসলেন সাকিব, আম্পায়ারের খামখেয়ালিতে ম্যাচ বর্জনের হুমকিও দেয়া হল।
প্রথম দুই বল ডট, ফাইনালে যেতে ৪ বলে ১২, পুরো ষোল কোটি মানুষের চাপটা যেন তখন রিয়াদের উপর। পরের বলটায় সেই চাপটাকেই তুড়ি মেরেই উড়িয়ে দিলেন দ্যা ডার্ক নাইট, ওয়াইড ইয়র্কারটার ঠিকানা হল এক্সট্রা কাভার দিয়ে মাঠের বাইরে! পরের বলে দুই, সমীকরনটা তখন রোমাঞ্চ ছাড়াচ্ছে চারদিকে! ২ বলে ৬, পারবেন মাহমুদুল্লাহ?
উদানা ফুল লেংথে ফেললেন রিয়াদের পায়ের উপর,
তারপর সেই অমর শটে রিয়াদ নিয়ে গেলেন ফাইনালে।
পুরো প্রেমাদাসা দেখল বাংলাদেশের নাগিন ড্যান্স, এবার পালা ভারতকে দেখানোর!!!
- 0 মন্তব্য