• ফুটবল

বিশ্বকাপ আপনাকে মিস করবে স্যার...

পোস্টটি ২৪৮১২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সেই ১৯৯০ সাল থেকে মাঠে এসে প্রিয় দলের খেলা দেখা শুরু, সেইসময় আমাদের অনেকের জন্মই হয়নি! স্টেডিয়ামে গিয়ে প্রিয় দলের খেলা দেখার প্যাশন'টা শুরু মূলত তখন থেকেই। ব্যাপারটা নেশার মতো। প্রিয় দলের হলুদ জার্সি'টা গায়ে দেয়াতেই যেন মহাসুখ! জার্সির প্রতি সম্মানের ব্যাপার'টা তীব্রভাবে বাড়তে থাকে যখন ১৯৯০ পরবর্তী ব্রাজিল দল আশানুরুপ ভালো পার্ফমেন্স করতে থাকলো। ইতিমধ্যেই ৩ টা বিশ্বকাপ জেতা ব্রাজিল দলের সমর্থক হিসেবে তিনি হয়তো অনেক সুখী একজন ফুটবল ফ্যান ছিলেন।

১৯৯০ বিশ্বকাপ আসলো। ব্রাজিল দল হিসেবে ভালো খেললেও সেরাটা দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলোনা। সেই সময় সাপোর্টে ছিলেন তিনি। স্টেডিয়ামে বসে দেখেছেন প্রিয় দলের বিশ্বকাপ বিদায়ের উপাখ্যান! দেখেছেন কিভাবে একটা দল বিশ্বকাপ খরায় ভোগে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে!

৪ বছর পর আবার বসলো বিশ্বকাপের আসর। আবারোও অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে স্টেডিয়ামে দর্শকের সারিতে আছেন মানুষটি! তবে, বিশ্বকাপ এবার থাকে মোটেই হতাশ করলোনা। কার্লোস দুংগার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২৪ বছর পর আবারো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো ব্রাজিল। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সাপোর্ট দিতে পেরে তিনি ভীষন খুশি। সাপোর্ট করা দল যখন বিশ্ব মঞ্চে শিরোপা লাভ করে, তখন ব্যাপারটা অন্যরকম ভালোলাগার হয়।

১৯৯৮ বিশ্বকাপ। চারবার বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিল দল আবারোও প্রস্তুতি নিচ্ছিলো বিশ্বকাপ জয়ের। মানুষটা হয়তো এবারও ভীষন খুশি হতেন! কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ব্রাজিল ফাইনালে হেরে গেলো! স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখা ওই মানুষটা কি কষ্টই না পেয়েছিলেন সেদিন! তবুও মনোবল একটুও ভাঙ্গেনি তার।

২০০২ সালে আবারো যখন বিশ্বকাপের উন্মাদনায় গা ভাসালো পুরো বিশ্ব; তখন
এই মানুষটা চারবছর আগের পুরোনো স্মৃতি ভুলে স্বপ্ন বুনতে চেষ্টা করছেন প্রিয় দলের বিশ্বকাপ জয়ের। নিরাশ হলেন না তিনি। 'এল ফেনমেনন' এর অতিমানবীয় পার্ফমেন্সে স্যার লুই ফেলিপে স্কলারির হাত ধরে এলো ৫ম বিশ্বকাপ। যথারীতি সাপোর্টে আছেন তিনি। এই কি শেষ?

নাহ! এর পরে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে শিরোপা হীন ব্রাজিল। তাও তিনি ছিলেন সাপোর্টে! অবশ্য ততদিনে তিনি লোকাল মিডিয়া হিরো। বিশ্বকাপ এলেই ছুটে যান খেলা উপভোগ করতে। স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের রেপ্লিকা ট্রফি হাতে হলুদ জার্সি পরা মানুষটার ব্রাজিল ফুটবল দলের প্রতি আছে প্রগাঢ় ভালোবাসা। যার কোনোই স্বার্থ নেই।

২০১৪ বিশ্বকাপের কথা। চোখের সামনেই তো নেইমার নামক প্লেয়ারের বিশ্বকাপ সুচনা দেখলেন সেবার, দেখলেন কিভাবে সে ব্রাজিলকে হেক্সা শিরোপা এনে দিতে চাইছে। হ্যা, তিনি এটাও দেখলেন যে হায়নার মতো কোমরে লাত্তি মেরে সেই প্লেয়ারটির বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ হয়ে যাওয়ার দৃশ্যেও! তারপর? নিজে উপস্থিত থেকে দেখলেন ব্রাজিলের ৭ গোল খাওয়ার করুন দৃশ্য। সেদিন প্লেয়ারদের চেয়েও বেশি কেদেছিলেন বোধহয় এই লোকটাই! বিশ্ব মিডিয়ায় ফলাও করে ছেপেছিলো তার বিশ্বকাপ ট্রপি জড়িয়ে ধরে করুণভাবে কান্নার দৃশ্য! বিশ্বকাপ ট্রফি'টা কি পরম ময়তায় -ই না আকড়ে ধরে আছেন তিনি! অথচ, হিটলার বাহিনী তার সাথে কি জঘন্য ব্যাপারটাই না করলো!

হাসি পরিমাপ করতে গিয়ে আমরা বলি- মিলিয়ন ডলার মূল্যের হাসি। আচ্ছা, সেদিন উনার কান্নার মূল্যে কত ছিলো? মিলিয়ন? বিলিয়ন? নাকি ট্রিলিয়ন? নাহ, সে কান্নার মূল্যে ছিলো প্রাইসলেস!

বলছিলাম, ব্রাজিল ফুটবল ফ্যানদের আদর্শ; সর্বকালের সেরা ব্রাজিল ফ্যান 'ক্লোভিস্ট একোষ্টা ফার্নান্দেজে'র কথা।

হঠ্যাৎ ই একদিন শুনলাম দাদু আর আমাদের মাঝে নেই! ভীষন দুখিত হয়েছিলাম মনে মনে। ভাবছিলাম, তাহলে কি তিনি আর ব্রাজিল বিশ্বকাপ জয়ের মহানান্দোৎসবের আয়োজনে সামিল হবেন না কখনো? নাকি স্বর্গে থেকে দেখবেন আমাদের আগামির স্বপ্নগাঁথার সব মহাকাব্যে?

১০ দিন পরই ২০১৮ রাশিয়া ফুটবল বিশ্বকাপ। আজ এই লোকটা আমাদের মাঝে নেই। দেখা যাবে না আর স্টেডিয়ামে বসে থাকা মানুষটার উজ্জল মুখখানি। ব্রাজিল জিতলে তিনি হাসবেন না; কাদঁবেন না হারলে! তবু রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিল দল মিস করবে তার সমর্থন। ধন্যবাদ, স্যার একোষ্টা ফার্নান্দেজ। ধন্যবাদ আপনার সমর্থনের জন্যে। ধন্যবাদ সবকিছুর জন্যে।