• ক্রিকেট

স্বপ্নচূড়ায় উনিশ

পোস্টটি ২৬৩৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

১৪ ই জুলাই, ২০১৯। ভোররাত সাড়ে চারটা।

ইংল্যান্ডের বিলাসবহুল এই হোটেলেও সস্ত্রীক ঘুম আসছে না লোকটার। বারবার বিছানার এপাশ ওপাশ করছেন। মাঝরাত ১২ টা থেকেই এপাশ ওপাশ করতে আর কারই বা ভাল লাগে বলুন? লাগেনি ওরও! দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলেন, মাথায় প্রবল চাপ- ১১ ঘন্টা পর যে মহাযজ্ঞ!
'ময়না তুই?' পেছন থেকে পরিচিত ডাক শুনে পেছন ফিরলেন সাকিব।আরেহ, এ যে তামিম!
'ঘুম হচ্ছে না?' স্বভাবসুলভ মুচকি হাসিতে জিজ্ঞেস করলেন সাকিব।
দুপাশে মাথা নাড়ালেন তামিম। হেসে বললেন 'চোখ বুজলেই ডাউন দ্যা ট্রাক দেখতে পাচ্ছি...'
করিডোর দিয়ে এরপর হেটে চলা সাকিব তামিম কি জানেন 'ম্যাচের আগের দিন ঘুম' নীতিকে অগ্রাহ্য করে সেরাত জেগে আছেন আরো তিনজন !
কৌশিক নামের ছেলেটা মহাব্যাস্ত। তাকে যে একজন দুজন নয়, চিন্তা করতে হয় পুরো ১১ জনকে নিয়েই। কোচের সাথে কথা বলে একাদশ চূড়ান্ত তখনও করতে পারেননি কৌশিক। ৭ নং পজিশনটাই তাকে বড্ড ভাবাচ্ছে। পিচের কন্ডিশন দেখে সিদ্ধান্ত নেয়াটা শ্রেয় মনে করলেন তিনি- পেস বোলিং অলরাউন্ডার খেলাবেন নাকি স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার?

এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সবথেকে কন্সিসটেন্ট ব্যাটসম্যান তিনি। তবু ফাইনাল নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না মুশি। অন্তত এবার আর তিনি ফাইনাল-ফ্লপ হতে চান না। মুশির পাশের রুমে যে লোকটা আছেন, অন্যান্য ৪ জনের চেয়ে 'নেম এন্ড ফেম' এই লোকটার 'টেন্ডস টু জিরো' পরিমাণ কম। তবুও নিজের দায়িত্ব সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল তিনি। বড় মঞ্চে তুলির শেষ আঁচড় যে দিতে হবে রিয়াদকেই।

সকাল ১১ টা....

নাস্তার টেবিলে মিরাজ, সৈকত, সাব্বির । নীরবে খেতে খেতে কথা বলাই ভুলে গেছে ওরা। একটু দূরে একটা টেবিল ঘিরে বসা মাশরাফি, মুস্তাফিজ, রুবেল, তাসকিন আর সাইফুদ্দিন অবশ্য চুপচাপ নেই। কি এক আলোচনায় মগ্ন তাঁরা। তবে আলোচনা যে পেস বোলিং লাইন আপ নিয়ে, বুঝতে কষ্ট হয়না মিরাজের। একটু পর তাঁর চোখ খুজছে সাকিবকে। কিন্তু এ কী! এখানে সবাই আছেন, কিন্তু সাকিব ভাই কোথায়?

উঠে এদিক ওদিক ঘুরে হোটেলের পেছনের লনে পাওয়া গেল সাকিবকে। প্লেয়িং ইলেভেনের একমাত্র বাঁহাতি স্পিনার সেখানে একা একা কি করছেন দেখার লোভ সামলাতে পারলেন না মিরাজ!
'সাকিব্বাই '
'আরে মিরাজ! খাওয়া দাওয়া শেষ?'
উপর নিচে আলতো করে মাথা নাড়লেন মিরাজ।
'শোন... তোর কথাই ভাবছিলাম। আমি আর মাশরাফি ভাই চিন্তা করেছি তোকে দিয়ে নতুন বল ওপেন করাব।'

মিরাজ কিছুটা হকচকিয়ে গেলেন। ইংলিশ কন্ডিশন, বাতাসের সুবিধা, পেসারদের স্বর্গ, নতুন বলে পেস বোলিং জমে- এমন কিছুই শুনে এসেছে মিরাজ। স্পিনার হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে শুধু সাকিবই একবার বোলিং ওপেন করেছিলেন তবু মাশরাফি তাকে দিয়ে লম্বা কোন স্পেল করাননি। সেখানে মিরাজ নতুন বলে বোলিং ওপেন করবে!
'কিন্তু... সাকিব ভাই.... আমি তো স্পিনার...'
'স্পিনার হওয়াটা পাপ নাকি? শেন ওয়ার্ন যে এতগুলো উইকেট পেলেন, তাঁর হোম গ্রাউন্ড তো অস্ট্রেলিয়াই ছিল। '
চুপ করে আছেন মিরাজ।সামনের মানুষটা তাঁর ভেতরে রাখা সাহস মিরাজের ভেতরও দিয়ে দিচ্ছেন।
বলে চললেন সাকিব, 'আমরা এটা গ্যাম্বলিং করতে চাই, ম্যাচের শুরুতেই স্পিন আশা করবে না ওরা। সেই সুযোগে জেসন রয় কে যদি তুলে নিতে পারিস, ওদের স্টার্ট টা হবে সব থেকে খারাপ '
চোখ জ্বলজ্বল করছে মিরাজ। ক্লিয়ার অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে রয় এর আউট হওয়া যেন দেখতে পাচ্ছেন তিনি। সামনের সাহসী মানুষটা তাকেও পুরোপুরি সাহসী বানিয়ে দিল। এই মানুষটার মধ্যে অদৃশ্য এক শক্তি আছে। মানুষটা জটিল জটিল কোন চিন্তা করে না, চিন্তাগুলো হয় খুব সরল। ব্যাটসম্যান কে কিভাবে আউট করা যায় এই চিন্তার চেয়ে ব্যাটসম্যান কে আউট করতে হবে চিন্তা করেন তিনি।
'আমি পারব সাকিব ভাই... ' জ্বলজ্বলে চোখ মিরাজের....!