হকি ওমেন্স ওয়ার্ল্ড কাপ লন্ডন ২০১৮ঃ স্পটলাইট
পোস্টটি ৩০৩৩ বার পঠিত হয়েছে
ওমেন্স হকির সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট ওমেন্স ওয়ার্ল্ড কাপ ব্রিটিশদের মাটিতে স্থান নিতে যাচ্ছে এই ২১শে জুলাই।
বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে ১৬টি দলই নতুন মাঠের সাথে মানসিক ও শারীরিক উভয়ভাবেই খাপ খাইয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু যে নতুন মাঠ তা কিন্তু নয়, খাপ খাইয়ে নিতে হবে বিপুল দর্শক ও তাদের হৈচৈ এর সাথে।
লন্ডনের আকাশ থেকে দেখলে খুবই সুদৃশ্য একটি স্থাপনা হিসেবে দেখায় নতুন বানানো ওয়েস্ট স্ট্যান্ড স্টেডিয়ামকে। সেই সাথে নজড়কাড়া নীল টার্ফ পুরোপুরি প্রস্তুত রোমাঞ্চকর এই টুর্নামেন্টকে বরণ করে নেওয়ার জন্য।
ষোলটি দলের প্রত্যেকেই প্রস্তুত আগাম দিনগুলোয় নিজেদের প্রমাণ করতে।
গতবারের চ্যাম্পিয়ন নেদারল্যান্ডসের ক্যাম্পে বেশ শান্তশিষ্ট ভাব কিন্তু আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে। দেখা যাবেই বা না কেন?এফআইএইচ বিশ্ব র্যাঙ্কিং এ দম্ভের সাথে প্রথম স্থানে বসে আছে তারা। বিশ্বকাপে বেশ মসৃণ পথ পাড়ি দিয়েই এসেছে তারা। এবং তাদের অস্ট্রেলিয়ান কোচ অ্যালিসন আন্নান জানেন কিভাবে ওয়ার্ল্ড কাপ জিততে হয়। যে কোচ তার খেলোয়াড় জীবনে একবার কমনওয়েলথ্ গেমস্, চারবার চ্যাম্পিয়নস্ ট্রফি, দুইবার বিশ্বকাপ এবং দুইবার অলিম্পিক গেমসে্ স্বর্ণপদক পেয়েছে, সে নিশ্চয়ই জানে কিভাবে তার দলের তরী ঘাটে ভেরাতে হয়।
কিন্তু বাকি ১৫টি দলও ছেড়ে কথা বলবে না। র্যাঙ্কিং এর সারির দল যেমন ইতালি (বিশ্ব র্যাঙ্কিংঃ ১৭) এবং আয়ারল্যান্ড (বিশ্ব র্যাঙ্কিংঃ ১৬) প্রত্যেকটি ম্যাচ ফাইনাল ম্যাচ হিসেবেই দেখে। অন্যদিকে স্বাগতিক ইংল্যান্ড (বিশ্ব র্যাঙ্কিংঃ ২) এবং নিউজিল্যান্ড (বিশ্ব র্যাঙ্কিংঃ ৪) এবারের সুযোগকে সবচেয়ে মোক্ষম সময় হিসেবে দেখছে বিশ্বকাপ ঘরে আনার।
ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড উভয় দলই তাদের সাম্প্রতিক সাফল্যে উজ্জীবিত থাকবে। বর্তমান ইংল্যান্ড দলের অনেকেই ২০১৬ রিও অলিম্পিক গেমসে্ স্বর্ণপদক জয়ী সদস্য ছিলেন। সেই স্মৃতি নিশ্চয়ই তাদের ক্ষিদে আরও বাড়িয়ে দেবে।
নিউজিল্যান্ডও গত কয়েক মাস দারুণ হকি খেলে এসেছে। হকি ওয়ার্ল্ড লীগ ফাইনালে রৌপ্র ও কমনওয়েলথ গেমস্ ২০১৮-তে স্বর্ণ তাদের কোনো অংশেই ইংল্যান্ডের চেয়ে কম প্রেরণা যোগাবে না। তারাও ইংল্যান্ডের মত বিশ্বাস করে সাফল্যই সাফল্য এনে দেয়।
আর্জেন্টিনা (বিশ্ব র্যাঙ্কিংঃ ৩) এবং অস্ট্রেলিয়া (বিশ্ব র্যাঙ্কিংঃ ৫) উভয়ই যেন লন্ডনের লি ভ্যালি হকি এন্ড টেনিস সেন্টারকে তাদের দ্বিতীয় ঘর বানিয়ে রেখেছে। কিন্তু ল্যাস লিওনাস এবং হকিরুস উভয় দলের মাঝেই কেমন যেন আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার হেড কোচ পল গডইন দলের স্পৃহা দেখে বেশ খুশি।অন্যদিকে নাচ-গানের মাধ্যমে ল্যাস লিওনাসরা ভেন্যুতে এনে দিচ্ছে একটু দক্ষিণ আমেরিকান ম্যাজিক।
দক্ষিণ আফ্রিকা (বিশ্ব র্যাঙ্কিংঃ ১৪) এক অপরিচিত দল হিসেবেই লন্ডনে আসে। বেশিরভাগ ইউরোপিয়ান এবং এশিয়ান দলগুলোর মত তারা বাইরে প্রস্তুতি নেয়নি। তাদের সিংহভাগ প্রস্তুতিই সম্পন্ন হয়েছে ঘরের মাটিতে। কিন্তু বরাবরের মতই দক্ষিণ আফ্রিকা বড় মঞ্চে দ্রুত এবং ক্ষিপ্ত গতির হকির প্রদর্শন করে আসছে।
বেলজিয়াম এবং স্পেন কিন্তু তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই বিশ্বকাপের এই মঞ্চে এসেছে। উভয় দলই ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত হকি ওয়ার্ল্ড লীগ সেমি ফাইনাল ইভেন্ট থেকে কোয়ালিফাই করে বিশ্বকাপে এসেছে। কিন্তু কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে বড় দলগুলোর সাথে পার্থক্য কমিয়ে আনার ব্যাপারে মনোযোগী তারা।
বেলজিয়ামের ইউরো হকি চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় স্থান অর্জন অন্তত তাদের কঠিন খাটুনির কথাই বলে।
টোকিও অলিম্পিকের আর মাত্র দুই বছর বাকি। তাই জাপানের চেরি ব্লসমরা এখন থেকেই উদগ্রীব তাদের আগমনী বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। জাপান বরাবরের মতই বিশ্বকাপে মাঝামাঝি পারফর্ম করে এসেছে। কিন্তু এবারে কোচ এ্যান্থনি ফেরির নেতৃত্বে কিছু চমক দেখিয়ে নিজেদের জন্মভূমি জাপানে হকির গুঞ্জন শুরু করতে চায় তারা।
চীন এবারের বিশ্বকাপে নতুনই বলা যায়। তাদের কোচ জামিলন মুলদার্স এই দলকে তৈরি করার জন্য মাত্র নয় মাস সময় হাতে পেয়েছেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে চীনের কঠোর পরিশ্রমী এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ দলের মাঝে এনে দিতে চেয়েছেন ইউরোপিয়ান ধাঁচ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পর্যাপ্ত সময় কি তিনি পেয়েছেন এই দলকে বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রস্তুত করার?
এক ইন্টারভিউতে ভারতের কোচ শ্যুর্ড ম্যাগাইনের কন্ঠে ভরপুর উদ্যমের দেখা পাওয়া যায়। খেলোয়াড়রা ইতিহাস বানানোর লক্ষেই বিশ্বকাপে হাজির হয়েছে। বিশ্ব র্যাঙ্কিং এ ১০ নম্বরে থাকা সত্বেও ভারত অনায়াসেই হারিয়ে দিতে পারে তাদের চেয়ে উপরের সারির কোনো দলকে।
তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার মিশেলে তৈরি ভারতের এই দলে দারুণ স্কিলসম্পন্ন কিছু খেলোয়াড় রয়েছে। এখন ভারত টুর্নামেন্টে একটা ভালো শুরু করে গতিবেগটা বাকি টুর্নামেন্ট জুড়ে বজায় রাখতে পারে কিনা সেটাই হচ্ছে দেখার বিষয়।
সব দলের প্রস্তুতির কথাই তো বলমাম। কিন্তু দুটো দলের প্রস্তুতির খবর এখনও বলিনি।
যুক্তরাষ্ট্র ছিল ২০১৪ বিশ্বকাপের সারপ্রাইজ প্যাকেজ। গতি ও বিচক্ষণতা দিয়ে সবাইকে চমকে দিয়ে চতুর্থ স্থানে শেষ করে সেবারের আসর। যদিও এসব ইতোমধ্যে অন্যান্য দলের জানা হয়ে গিয়েছে কিন্তু কোচ ইয়ানেকে স্কোপম্যান একটু ইউরোপিয়ান ধাঁচ আনার চেষ্টা করছেন। তিনি আশা করছেন যুক্তরাষ্ট্র তার নতুন কলাকৌশল দিয়ে এবারও কোনো মেডেল জয়ের আশা করতে পারে।
ইনডোর হকি বিশ্বকাপ একটুর জন্য মিস হলেও জার্মানি এইবার আউটডোর হকি বিশ্বকাপ কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চাইবে না। নিজেদের মাটিতে এই বছরের ফেব্রুয়ারীতে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ইনডোর বিশ্বকাপ দলের অনেকেই আউটডোর বিশ্বকাপ স্কোয়াডে আছে। জাভিয়ের রেকিংগার এক প্রকার আশীর্বাদপুষ্টই বলা যায়। এবারে তার দলে পেয়েছেন অভিজ্ঞতা এবং ট্যালেন্টের এক মারাত্মক সব খেলোয়াড়।
উদ্বোধনী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা লড়বে জার্মানির বিপক্ষে। এরপরেই লন্ডন বিশ্বকাপের উত্তাপ আঁচ করতে পারবে যখন তারা মাঠে নামবে ভারতের বিপক্ষে।
কোন দলকে এবার সবচেয়ে শক্তিশালী মনে হচ্ছে আপনার?
[পোস্টটি শেয়ার করুন]
- 0 মন্তব্য