• ক্রিকেট

জহির আব্বাস : চেয়েছিলেন কিংবদন্তী হতে, পেয়ে গেছেন অমরত্ব-ই!

পোস্টটি ৫০৯৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বিলেত সফরে যাওয়ার আগে বাবাকে বললেন, ‘এবার এসপার-ওসপার করেই ছাড়বো। হয় অনেক বড় ক্রিকেটার হয়ে ফিরবো, নয়তো চিরতরে ক্রিকেটই ছেড়ে দেবো।’

পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই তাঁর। তাঁর ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে রঙ ধরিয়েছে পরিবারই, সবসময়ই উদার সহযোগিতা পেয়েছেন পরিবার থেকে। তাঁর বাবা গোলাম সাব্বিরের প্রার্থনা ছিল- ‘যেদিন আমার ছেলে এই মাঠে (লর্ডসে) খেলতে পারবে, সেদিনই এখানে বসে খেলা দেখবো আমি।’ বলাই বাহুল্য তাঁর পুত্রধন সেই মাঠে খেলেছেন, এবং গ্যালারীতে বসে গর্বিত পিতা হয়ে তিনি তা দেখেছেনও।

এমন এক ক্রিকেট পরিবার ছিল বলে, ক্রিকেটার হতে খুব বেশী বেগ পেতে হয়নি তাঁর। বাইরের দলগুলো যখন পাকিস্তানে সফর করতো, উৎসবের বান বয়ে যেতে পরিবারে। তাঁর মা কিমা, আলু ভাজি, পরোটা তৈরী করে দিতেন, তাঁর বাবা-চাচারা সেসব নিয়ে করাচীর মাঠে ছুটতেন। তিনি দেখেছেন ক্রিকেটটা কেমন পরিবার ও জাতীয় পর্যায়ে উৎসবের আবহ তৈরী করে, তাই তিনি শৈশব থেকে ক্রিকেটারই হতে চেয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে পথচলাটাও ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু বছর দুয়েক আগের অভিষেকের দুঃসহ স্মৃতিটা কিছুটা হলেও তাঁকে বিচলিত করে দেয়!

 

জন্ম তাঁর শিয়ালকোটে হলেও, শৈশব, বেড়ে উঠা আর ক্রিকেটে হাতেখড়ি সব করাচীতেই। এই করাচীর জল, আলো, বায়ু গায়ে লাগিয়েই তরতর করে বেড়ে উঠেছে তাঁর ক্রিকেটার হওয়ার রঙিন স্বপ্ন। অথচ কি-না সেই করাচীর জল-হাওয়া তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলো! নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে গোটা দুই ইনিংসে সুযোগ পেয়েও ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্বার গতিতে ঘূর্ণায়মান রানের চাকাটাকে ঘুরাতে পারেননি সেভাবে।

দল থেকে বাদ পড়ে দমে যাননি সত্যি, তবে ওইটুকু বয়সে একটু তো ধাক্কা দিয়েছিল সেটা। যন্ত্রণার ফল্গুধারাকে চেপে রেখে, রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে দুই বছর পর দলে সুযোগ করে নিলেন আবার। এবার আর কিছুতেই বাদ পড়তে চান না তিনি! দাঁতে দাঁত চাপা প্রতিজ্ঞায় সেই প্রত্যয়ই যেনো জানিয়ে যাচ্ছিলেন বাবাকে।

 

“আমি যবে থেকে পেশাদারী ক্রিকেট খেলতে শুরু করি, তবে থেকেই ভেবে রেখেছিলাম- আমি কখনোই মাঝারী মানের কোনো খেলোয়াড় হবো না। আমি নিজস্ব একটা পরিচয় সৃষ্টি করতে চেয়েছিলাম, এটা ছাড়া আর কিছুই আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারত না।”

বাবাকে করা প্রতিজ্ঞা আর নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষী মনোভাব প্রকাশের মঞ্চ বেছে নিলেন, বার্মিংহামের এজবাস্টন। সাড়ে নয় ঘন্টার দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ী ইনিংসে বিনির্মাণ করলেন ২৭৪ রানের দৃষ্টিনন্দন এক ইনিংস। যা এখনো কোনো সফরকারী ব্যাটসম্যানের বিলেত-অভিষেকে সর্বোচ্চ ইনিংস হিসেবে টিকে আছে। বিশ্বক্রিকেট প্রথমবারের মতো চিনলো তাঁকে, জানলো তাঁর সক্ষমতা ও শক্তি সম্পর্কে, সম্বোধন করতে শুরু করলো তাঁকে ‘জেড’ নামে।

হ্যাঁ পাঠক, এতক্ষণ গল্প হচ্ছিল ‘জেড’ আদ্যক্ষরের, পাকিস্তানি ব্যাটিং-কিংবদন্তি ‘দ্য গ্রেট’ জহির আব্বাসকে নিয়েই।

পরের দেড় দশকে ক্লান্তিহীন রান ফোয়ারা ছুটিয়ে যিনি ভূষিত হয়েছিলেন ‘এশিয়ার ব্র্যাডম্যান’ অভিধায়।

তিনি স্বকীয় একটা পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, এবং ইতিহাস সাক্ষী- তিনি যেটুক করেছেন তাতে তাঁর অমরত্ব-ই নিশ্চিত হয়ে গেছে!

 

প্রথম বিলেত সফরে প্রথম ম্যাচটা ছিল উরচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে, উরচেস্টারে। সেই ম্যাচেই স্বল্প সময়ে সেঞ্চুরী করে নিজের অন্তর্ভুক্তির স্বপক্ষে জোরালো আওয়াজ তুলেছিলেন; পরে সিরিজের প্রথম ম্যাচে এজবাস্টনে তো ইতিহাসই গড়ে বসলেন। হ্যাঁ, অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ইংলিশ বোলিং আক্রমণ আহামরি কিছু ছিল না। জহির আব্বাসকে সামলানোর মতো পেসারও অনুপস্থিত ছিল দলটাতে, আবার এজবাস্টনের উইকেটও ছিল খানিক ব্যাটিং-বান্ধব। তারপরও ২৩ বছরের আনকোরা ছোকরার কীর্তিকে যে খাটো করে দেখবেন, সে উপায় নেই কিন্তু!

 

“আমি রান-ক্ষুধায় আক্রান্ত ছিলাম। রানের পর রান করে যেতে চাইতাম শুধু- নিজের জন্য, দেশের জন্য এবং রেকর্ড বইকে নতুন করে লেখার জন্য। প্রত্যেকটা চার মারার পর, আমি অধীর আগ্রহে পরের হাফ ভলির অপেক্ষা করতাম!”

তাঁর রান ক্ষুধা কেমন ছিল সে সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায় তাঁর অটোবায়গ্রাফিতে। সেখানে তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী নাজমা আব্বাস বলছিলেন- “সে প্রতিরাতে ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখে, সে সেঞ্চুরী করছে। সে সকালে জেগে উঠেও সেঞ্চুরীর কথা ভাবে।”

 

ব্যাটিং-একাগ্রতা, মনোসংযোগ আর নিশ্ছিদ্র ব্যাটিং শৈলীতে দর্শকদের এতটাই বুঁদ করে ফেলতেন যে, কেউ ভাবতেই পারত না, এই ব্যাটসম্যান আউট হবেন বা হতে পারেন! তাঁর ব্যাকফুট ড্রাইভ দেখার জন্য হয়তো অপেক্ষা করা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। আর ফ্রন্টফুট ড্রাইভ? নমনীয় কব্জীর সুবাদে ওটাও অনায়াসে করতে পারতেন তিনি। তাঁর ব্যাটিংয়ে অলস সৌন্দর্য্য আর আভিজাত্য মিলেমিশে এমন এক ধাঁধা তৈরী করতে যে, দর্শককে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করতো তা!

তাঁর ব্যাটিংয়ের সময় এমনও ধাঁধা তৈরী হতো- মনে হতো, মাঠে যেনো একজন যুবরাজ বিচরণ করছেন- বল, বোলার, ফিল্ডার সবাই বুঝি তাঁর প্রজা। তাঁর হুকুম তামিল করতেই খাটছে সবাই, সব্বাইকে যেনো এদিক-সেদিক ছুটিয়ে ব্যতিব্যস্ত করছেন তিনি!

 

বব উইলস তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন- শর্ট বল, রাইজিং ডেলিভারীতে সে খানিক বিপর্যস্ত হয়ে পড়ত। তাঁকে বল করার জায়গা হলো, ঠিক তাঁর নাক বরাবর। কিন্তু তুমি যদি সেই বলটাই তাঁর অফস্ট্যাম্পের খানিক বাইরে ফেলেছো তো মরেছো! সে তোমাকে আচ্ছামতো ধোলাই দেবে।”

 

তাঁর প্রথম সফরের ক্ল্যাসিক ২৭৪ যে কোনো ফ্লুক ছিল না, সেই প্রমাণ দিতেই বুঝি তিন বছর পরের ইংলিশ-গ্রীষ্মে ‘দ্য ওভাল’ এর মঞ্চে উপহার দিলেন ২৪০ রানের আরো একটি মাস্টারক্লাস। ওদিকে গ্লুচেস্টারশায়ার রত্ন চিনতে ভুল করেনি মোটেই। প্রথম দেখাতেই তাঁরা জহির আব্বাসের সাথে চুক্তি করে বসে। পরের ১৩টি বিলেতি গ্রীষ্মকে ঝলমলে স্ট্রোকছটায় রাঙিয়ে, ৪৯টি সেঞ্চুরী সহ ষোলো হাজার রান করেন জহির; এর মধ্যে আছে চার টেস্টে আটবার উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরীর অবিশ্বাস্য কীর্তিও! এই ১৩ মৌসুমের ১১ মৌসুমেই হাজারের বেশী রান করেছেন আব্বাস। প্রথম ইনিংসে দ্বিশতক ও পরের ইনিংসে শতক, চারবার ঘটেছে এই ঘটনা; আরো বিস্ময়কর যে এই আটবার-ই অপরাজিত ছিলেন জহির!

যে কীর্তি তিনি চারবার করেছেন, সে কীর্তি দুইবারের বেশী নেই আর কারও।

 

কাউন্টি ক্রিকেটকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখতেন তিনি। “কাউন্টি ক্রিকেট সবসময় খুব কার্যকর। আমি তো তরুণ ক্রিকেটারদের প্রায়ই বলি- যদি তুই সুযোগ পাস, তাহলে অবশ্যই কাউন্টি খেলবি। এখানে এত এত ম্যাচ হয় যে, যদি তুমি কিছু শিখতে চাও অথবা নিজেকে আরো নির্ভুল-নিশ্ছিদ্র করতে চাও, তাহলে এর চেয়ে উত্তম জায়গা তুমি আর পাবে না।

একবার এক মৌসুমেই আমি ৫২টা ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। ভাবো অবস্থা! এখন তো ক্রিকেটাররা অনেক কিছু খেলে, ওডিয়াই, টি-টুয়েন্টি। সেখানে কখনোই ক্রিকেট থেমে থাকে না। যদি ম্যাচ না খেলো, তাহলে তুমি অনুশীলন করছো। আর যদি বৃষ্টি পড়ে, তাহলে ভেতরেই ব্যবস্থা আছে অনুশীলনের। এই জায়গাটা আসলে প্রতিনিয়ত তোমাকে ক্রিকেট শেখায়।”

 

তরুণ বা উঠতি ক্রিকেটারের জন্য প্রণিধানযোগ্য হতে পারে তাঁর কাউন্টি অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণার এই অংশ- “অনেককাল আগে আমি বিভীষিকার মতো কিছু সময় পার করেছিলাম। ফর্ম হারিয়ে বীভৎস আর ভয়ংকর সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। এই সময় আমি অনুশীলনে গ্লুচেস্টারশায়ারের বোলারদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললাম, যদি তাঁরা আমাকে পরাস্ত করতে পারে তবে বাজি ওদের। কিন্তু এই বাজিটা আমাকে খুব বেশী ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারেনি। সামান্য কিছু পাউন্ড হারিয়েছিলাম মাত্র! কারণ, তাঁরা আমাকে খুব বেশী পরাস্ত করতে পারেনি। তবে এই চ্যালেঞ্জটা আমাকে সাহস ও আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছিল, আমি মাঝ উইকেটেও তাহলে কিছু সময় কাটাতে পারবো।” যেনো দুঃসময় থেকে বেরোনোর মন্ত্র আওড়ে যাচ্ছিলেন জহির আব্বাস।

 

ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে নির্দয় হয়ে উঠত তাঁর ব্যাট। ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে তো ভারতের বিপক্ষে নয় ম্যাচে একশ’র বেশী গড়ে করেছিলেন ৮০৬ রান! তবে তাঁর রান করার ধরণ ছিল, অনেকটা শিল্পীর তুলির আঁচড় টানার মতো। অথবা গভীর কোনো সুরের সাধক হয়ে সংগীতের সুর তুলতেন বুঝি!

আমুল বাটার নামে এক ভারতীয় কোম্পানী তো ‘জহির, আব বাস কর (ওরে জহির, থাম এবার)!’ বিজ্ঞাপণ করে বেশ দু’পয়সা কামিয়েও নিয়েছিল।

তাঁর ১২টি সেঞ্চুরীর ছয়টিই পেয়েছিলেন প্রতিবেশীর বিপক্ষে। টানা পাঁচ ম্যাচে সেঞ্চুরীর কীর্তিটাও ভারতের বিপক্ষেই গড়া। তিন টেস্ট সেঞ্চুরীর মাঝে ছিল দু-দুটো ওডিয়াই শতক।

 

সেই সত্তর-আশির দশকে তাঁর ওডিয়াই স্ট্রাইক ছিল ৮৪! প্রায় সাড়ে তিন দশক পরও আজকের আধুনিক ক্রিকেটে এর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেট রাখতে পারলেই বর্তে যান অনেকেই। কুমার সাঙাকারা গত বিশ্বকাপেই টানা চার সেঞ্চুরী করে তাঁকে দ্বিতীয় স্থানে ঠেলে দিয়েছেন, নইলে ওডিয়াইতে টানা তিন সেঞ্চুরীর প্রথম ঘটনার ঘটক ছিলেন তিনিই। সেই কীর্তির প্রতিপক্ষও ছিল ভারত।

তাঁর শততম প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরীর প্রতিপক্ষও ছিল ভারত। তিনি ও জিওফ্রে বয়কটই কেবল শততম প্রথম শ্রেণির শতকটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে করতে পেরেছেন। জহির আব্বাসের অসাধারণত্ব বুঝতে এই দুটো তথ্য আপনাকে হয়তো সাহায্য করবে।

একমাত্র এশিয়ান হিসেবে এই কীর্তির কৃতিত্ব তাঁর।

আর ১৪১ বছরের টেস্ট ইতিহাসে কেবলমাত্র ২৫ জন ক্রিকেটার শতাধিক প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরী করতে পেরেছেন। তার মধ্যে ২১ জনই ইংলিশ, চারজন মাত্র ইংলিশ ক্রিকেটার নন। স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, কিউই কিংবদন্তী গ্লেন টার্নার, উইন্ডিজ ক্রিকেটের সূর্যসন্তান স্যার আইজ্যাক ভিভিয়ান রিচার্ডস ও পাকিস্তান ব্যাটিং-গ্রেট জহির আব্বাস।

 

তাঁর দিনে লিলি-থমসনও অসহায় হয়ে পড়তেন। ক্লাইভ লয়েডের দ্রুত বলের শিষ্য, রবার্টস-হোল্ডিং-ক্রফটরাও সুবিধে করতে পারতেন না খুব একটা। তিনি এমনই কালজয়ী প্রতিভা যে, যে কোনো আক্রমণকে, যে কোনো কন্ডিশনে নির্বিকার চিত্তে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখতেন! আগেই বলেছি, তিনি ধ্বংস করলেও তাতে থাকতো সৃষ্টিশীলতার এক অদ্ভুত আনন্দ। সুনিপুণ কৌশল আর দক্ষতার সর্বোচ্চ মিশিয়ে প্রতিপক্ষকে স্রেফ দর্শক বানিয়ে রাখার অসাধারণ এক ক্ষমতা ছিল তাঁর!

 

জন উডকক, দ্য টাইমস এর ক্রিকেট লেখক ও উইজডেন আলমানাকের সাবেক সম্পাদক ছিলেন। জহির আব্বাসকে নিয়ে তাঁর মন্তব্যটা বাংলা অনুবাদের চেয়ে সরাসরি দিলেই আশা করছি পাঠক ঠিকঠাক অনুধাবন করতে পারবেন।

“The most ruthlessly mechanical of them must have been the legendary Sir Donald Bradman, the most enduring was Sir Jack Hobbs with 197 first-class centuries, the most calculating may well have been Geoffrey Boycott, but none of them could have played with more ease and elegance than Zaheer Abbas whose batting gave as much pleasure in England when he was with Gloucestershire, as it must have done in Pakistan.” 

 

গড়, সেঞ্চুরী বা পরিসংখ্যান আসলে কতটুকুই বা বোঝাতে পারে? কিংবা জানাতে পারে? কালে কালে এমন গুটিকয় প্রতিভা আসেন, যারা কালকে জয় করে কালজয়ী প্রতিভা হয়ে দর্শকের হৃদয়-সিংহাসনে চিরস্থায়ী আসন গাড়েন।

 

কালে কালে ক্রিকেটার বহু জন্ম নেয়। মহান ক্রিকেটারও কম নেই ইতিহাসের পাতায়। তবে সুনিপুণ শিল্পী হতে পারেন কয়জন? যারা দর্শকের মনে ঘোরের জন্ম দেন, দর্শককে করেন মোহাবিষ্ট; যারা মহান সব শিল্পীর ন্যায় দর্শক-মনে বেঁচে থাকেন অনন্তকাল।

যারা সত্যিকার ক্রিকেট সমর্থক তাদের জন্য, জহির আব্বাস একজন অভুলনীয় চরিত্র। যারা স্বচক্ষে দেখেছেন তাঁর ধীর-স্থির পদক্ষেপে ২২ গজে হেঁটে যাওয়া, তাঁর রাজকীয় নড়াচড়া, তাঁর পেলব কব্জীর ড্রাইভ- তাদের কাছে তিনি বেঁচে থাকবেন একজন শিল্পী হিসেবে; ক্রিকেট মাঠের শিল্পী। আর যারা তাঁর জাঁকালো ব্যাকফুট ড্রাইভ চাক্ষুষ করেছেন তাদের জন্য হয়তো তিনি অমরই রয়ে যাবেন।

 

জহির আব্বাস! চেয়েছিলেন কিংবদন্তী হতে, কিন্তু পেয়ে গেছেন অমরত্ব-ই!  

ব্যাটিং মায়েস্ত্রো! আপনাকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা।