• ক্রিকেট

'বেঙ্গল টাইগার নাকি সিংহল সিংহ?'

পোস্টটি ৯৯৯৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।


এশিয়া কাপ ক্রিকেট মাথায় আসলে শুরুতেই চোখের সামনে দিয়ে ভেসে যায় ২০১২! ২০১২ যেতে না যেতেই এসে পড়ে ২০১৬! সহজ ব্যাখ্যাতে এসে পড়ে একটি ফাইনাল, একটি কান্না, একটি 'ইশ'!

তবে পুরোনো দিনের সেসব ক্যানভাসে ধুলো জমেছে, বরাবরের মত সেসব ধুলো ঝেড়ে 'দু:খবিলাস' করার সময় ফুরিয়েছে, ভক্তদের এখন তাকাতে হবে সামনে, সবুজে ঘেরা বাংলা ছাড়িয়ে উষর মরুর দুবাইয়ে! নতুন এশিয়া কাপ যে শুরু হচ্ছে, ২০১৮ এশিয়া কাপ!

উদ্বোধনী দিনে মুখোমুখি বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কা! এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের এই লড়াইয়ে দুই দলই নামবে দুই ভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে। বাংলাদেশ খেলবে ক্রমাগত উন্নতি করার একটি 'পরিচিতি' পেতে, শ্রীলঙ্কা 'পূর্ব পরিচিতি' ফিরিয়ে আনতে! দুই দলই আবার সমর্থকদের কাছে যোগসদৃশ দুই নামে পরিচিত। বাংলাদেশের সাকিব তামিম মিরাজ রা যেমন 'বেঙ্গল টাইগার', শ্রীলঙ্কার পেরেরা, ম্যাথিউস, মালিঙ্গারা তেমনি 'সিংহল সিংহ'! নিদাহাস ট্রফি চিন্তা করলে ম্যাচটি হতে পারে মর্যাদার, প্রতিশোধের, বাকিদের জন্যে মোহের!

কালকের ম্যাচের একাদশ কেমন হওয়া উচিত? চটজলদি একটা ব্যাপার দেখে ফেলা যাক,

১/ তামিম
২/ লিটন
৩/ সাকিব
৪/ মুশফিক
৫/ সৈকত
৬/রিয়াদ
৭/
৮/
৯/ মাশরাফি
১০/ মুস্তাফিজ
১১/ রুবেল

খুব বেশি পরিবর্তনের পক্ষে না থাকা ক্যাপ্টেন মাশরাফি এরকম একটি স্কোয়াডের ছক কষেছেন বলে মিডিয়াতে চাউর হয়েছে। ওপেনিং এ তামিম নিশ্চিত! নন-স্ট্রাইক প্রান্তে অপশন লিটন নাহয় শান্ত। শান্তর এখনও ডেব্যু হয়নি, এমন বড় মঞ্চে হওয়ার সম্ভাবনাও নেই! নন স্ট্রাইক প্রান্তে তাই লিটন কুমার দাস!

৩ নং পজিশনে খুব বেশি পরিবর্তনে যাবার প্রশ্নই ওঠে না! বাংলাদেশ তাদের ইতিহাসের সেরা ৩ নং ব্যাটসম্যান দেখে ফেলেছে গত ৭ মাসেই! সাকিব আল হাসান তাই মিডল ছেড়ে টপেই থেকে যাবেন এতে সন্দেহ নাই!

৪ নং পজিশন টা স্থায়ীভাবে মুশি সামলাচ্ছেন ২০১৭ এর শ্রীলঙ্কা সফর থেকে। খুব বেশি খারাপ করেছেন বলা যাবে না। টিম ম্যানেজমেন্ট ও মুশিকে ৪ নং থেকে সরাতে একদমই ইচ্ছুক নয়! ৪ নং এ তাই মুশি থাকছেন!

৫ নং পজিশনে কাল চমক থাকতে পারে! ২০১৬ তে অভিষেকের সময় থেকে লোয়ার অর্ডারে খেলে আসছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। টেকনিক্যালি সলিড, দারুণ সম্ভাবনাময় এই ব্যাটসম্যান মূলত লোয়ার অর্ডারের নয়, আগামীর বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের ভরসা হতে পারেন। এমনকি, লোয়ার অর্ডারের স্লগ ওভারের ব্যাটিং ও তার আয়ত্তে নেই! টিম ম্যানেজমেন্ট এই চিন্তাতে কাল সৈকতকে উঠিয়ে আনতে পারে ৫ নং এ!

বাংলাদেশের সেরা হিটার কে? কোন রকম দ্বিরুক্তি না করে এই মুহুর্তে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ! অসম্ভব ঠান্ডা স্নায়ুর এই ব্যাটসম্যান তাঁর মস্তিষ্ককে 'কুল এন্ড কাম' রাখতে পারেন যেকোন সময়েই। আবার বাংলাদেশের ফিনিশিং দুর্বলতা বহুদিনের! স্টিভ রোডসের বাজির ঘোড়া তাই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ! ওয়ার্ল্ড কাপে ৪ এ ব্যাট করা রিয়াদ তাই এই এশিয়া কাপে তুলির শেষ আঁচড়ের শিল্পী! খেলতে পারেন ৬ নং এ!

একাদশে থাকবে ৩ পেসার! আবু ধাবীর স্লো উইকেটে এর বেশি নেয়ার চিন্তা করাটা বাড়াবাড়িই নয়, বিলাসীও! মাশরাফি মুস্তাফিজ অটো চয়েজ! সাথে থাকবেন বহুদিনের পুরোনো সেনানী রুবেল হোসেন! মাশরাফি সাকিবের ভোট যে রুবেলের দিকেই বেশি! আপাতত তাই আবু হায়দার রনির কোন সম্ভাবনা নেই!

গোলটা বাঁধবে ৭ আর ৮ নং পজিশন নিয়ে! ৭ নং এ মিথুন নাকি আরিফুল আর ৮ নং এ মিরাজ নাকি অপু এমন একটা দ্বিঘাত সমীকরণ থেকেই যাচ্ছে! দ্বিঘাত সমীকরণ কেন বলছি? কারণ ৭ নং আর ৮ নং পজিশন একে অপরের সাথে লিংকড হতে পারে! ধরুন ৭ এ যদি মিথুন খেলে তবে ৮ এ খেলতে পারেন অপু। কেননা মিথুন খেলাতে দলের ব্যাটিং স্ট্রেন্থ টা বাড়বে। এতে একজন পুরোদস্তুর স্পিনার খেলানোর সাহসকে আর ঝুঁকি মনে হবে না! আর ৭ এ যদি আরিফুল কে নেওয়া হয়, তবে ৮ এ খেলতে পারেন মিরাজ! আরিফুল আর মিরাজ দুজনেই অলরাউন্ডার কিন্তু প্রুভড ব্যাটসম্যান নন! আর তাই ১+১=১ (!) হিসেবে দুজন ব্যাটসম্যান কাম বোলার খেলিয়ে দিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট! আবার ব্যাটিং গভীরতা আরো বেশি বাড়াতে মিথুন আর মিরাজ দুজনকেই খেলানো হতে পারে! এখানে একটু পুনশ্চ যোগ করি, ক্রিকবাজ আর ক্রিকইনফো বলছে কালকের ম্যাচে থাকছেন মেহেদি হাসান মিরাজ!

মিথুনকে তো টপ অর্ডার থেকে লোয়ার অর্ডারে নামিয়ে দেওয়া হল! তিনি কি পারবেন? উত্তর হল হ্যা তিনি পারবেন! কেননা তাকে মূলত এর জন্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে! এখন যদি আয়ারল্যান্ড সফরের দিকে তাকাই, মিথুন দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ওয়ানডেতে ব্যাট করেছেন ৪ নম্বরে, পঞ্চমটিতে ৫ নম্বরে ! শেষ দুই ম্যাচে করেছেন ৫১ বলে ৮৭, ৭৩ বলে ৭৩! অর্থাৎ বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তোলার কাজটা তিনি ভালই পারেন! স্কিল ট্রেনিং এ তাই মিথুনকে বলা হয়েছে স্লগ ওভারের প্রস্তুতি নিতে!

ঘর ছাড়িয়ে পরে ফেরা যাক। দলটার নাম শ্রীলঙ্কা, হেডকোচ চন্ডিকা হাতুরুসিংহা! বর্তমানে শ্রীলঙ্কা খুব বেশি ভাল অবস্থায় নেই। এশিয়া কাপে ইঞ্জুরির হানায় হারিয়ে গেছে দলের সেরা ব্যাটসম্যান দীনেশ চান্ডিমাল, পিঞ্চ হিটিং ওপেনার গুনাথিলাকা! সন্তান সম্ভবা স্ত্রী কে সময় দিতে দলে নেই অকিলা ধনঞ্জায়াও! স্পিনের সেরা অস্ত্রটি আমিরাতের মাটিতে না পাওয়াটা আগামীকাল কাল হবে শ্রীলঙ্কার জন্যে!

অকিলার বদলে দলে খেলতে পারেন অভিজ্ঞ দিলরুয়ান পেরেরা! লাসিথ মালিঙ্গা থাকবেন কিনা নিশ্চিত নয়। তবে দুশমান্থ চামিরা আর লাসিথ মালিঙ্গা, প্লেয়িং ইলেভেনে দেখা যাবে এই দুজনের মধ্যে একজনকে! দিনের চান্ডিমালের উপস্থিতিতে উইকেটের পেছনে দাঁড়াবেন নিরোশান ডিকভেলা! উপুল থারাঙ্গা, কুশল মেন্ডিস, কুশল পেরেরা, এঞ্জেলো ম্যাথিউস, থিসারা পেরেরা দলে অটো চয়েজ! ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, সুরঙ্গ লাকমাল, দাশুন শানাকার একাদশে থাকাও নিশ্চিত! এত কিছুর মধ্যে গোল পাকাচ্ছে তিনটে নাম। প্রথমত নিরোশান ডিকভেলা আসলেই একাদশে থাকবেন কিনা, শেষ ঘরোয়া টুর্নামেন্টে চূড়ান্তভাবে ফ্লপ নিরোশান ডিকভেলা কে চন্ডিকা দলে রাখবেন কিনা!

যদি না রাখেন তবে উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে পড়তে হবে কুশল পেরেরাকে। তবে নিরোশানের জায়গায় কে খেলবেন? শ্রীলঙ্কান মিডিয়া আর ক্রিকবাজ বলছে এখানে খেলতে পারেন শেহান জয়াসুরিয়া আর অকিলা আপোনসোর যেকোন একজন! শেহান ব্যাটিং অলরাউন্ডার, পারেন অফ স্পিন টাও! অকিলা আপোনসো পুরোদস্তুর লেফট আর্ম অর্থোডক্স! উইকেট বিবেচনায় খেলানো হবে যেকোন একজন!

আবারও ঘরে ফেরা যাক! বাংলাদেশের সম্ভাবনা কতটুকু? ব্যাক্তিগত মত দিলে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশই! চান্ডিমাল, অকিলার অনুপস্থিতিতে এই শ্রীলঙ্কাকে হারাতে টিম বাংলাদেশের খুব বেশি বেগ পাবার কথা নয়! তবুও মাস্টার ম্যাচ রিডার হাতুরুকে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। কালকের কি-রোলটা তাই সত্যি বলতে নিতে হতে পারে লিটন কুমার দাসকেই! সাকিব তামিম লম্বা সময় ধরে ধারাবাহিক ফর্মে আছেন। প্রতিপক্ষ কোচের তাই সাকিব তামিম কে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এদিকে ১ বছর পর ওয়ানডে দলে ফেরা লিটনকে নিয়ে এত কিছু ভাবার কথা নয়! এর মাঝে লিটন যদি ক্লাসিক্যাল কোন ইনিংস খেলে দিতে পারে তবে আখেরে লাভটা হবে টিম বাংলাদেশেরই।

এই এশিয়া কাপে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে অনেকটাই। এর প্রধান কারণ বাংলাদেশ ওয়ানডে ফরম্যাটে পিচ ওরিয়েন্টেড ম্যাচ খেলে না। আবার উইন্ডিজ সফরের ওয়ানডে সিরিজ জয়ও কাজে দেবে বুস্ট আপ হিসেবে! মানসিকভাবে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশই, দলে নেই কোন ইঞ্জুরি সমস্যাও! বাংলাদেশ যদি এশিয়া কাপ জিততেই চায়, কালকের ম্যাচটি তাই মহাগুরুত্বপূর্ণ! এই ম্যাচটি জিতলেই পরের ম্যাচ জেতা সহজ হয়ে যাবে অনেকখানি। সেটাই তো আমরা চাই! নাকি?