বিশ্বকাপ ফুটবলের আদ্যপান্ত পর্ব-২
পোস্টটি ৬৩২২ বার পঠিত হয়েছে★ ফিফা বিশ্বকাপের দ্রুততম গোল-
বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ের গোল হয় মাত্র ১১ সেকেন্ডে। ২০০২ সালে জাপান-কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে তুরস্কের তারকা স্ট্রাইকার হাকান সুকুর খেলা শুরু হওয়ার মাত্র ১১ সেকেন্ডের মাথায় গোল করে হতভম্ব করে দিয়েছিলেন প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়ার খেলোয়াড়দের। তুরস্কের অন্যতম অভিজ্ঞ এই তারকা ফুটবলারের তাঁর ওই দ্রুততম গোলটির আগে ছয়টি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেললেও গোল পাননি তার একটিতেও। ওই ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৩-২ গোলে হারিয়ে তৃতীয় স্থানটি দখল করে নেয় তুর্কিরা। এযাবত্কালে বিশ্বকাপে তুরস্কের সেরা সাফল্য ছিল সেটি..
★ ১১ সেকেন্ডেঃ হাকান শুকুর, তুরস্ক।
★ ১৫ সেকেন্ডঃ ভ্যাকলাব মাসেক।
★ ২৩সেকেন্ডঃ পাক সিউং-জিন।
★ ২৪ সেকেন্ডঃ আর্নস্ট লেহনার।
★ ২৭ সেকেন্ডঃ ব্র্যায়ান রবসন, ইংল্যান্ড।
★ ৩৭ সেকেন্ডঃ বার্নার্ড লাকোম্বে ফ্রান্স।
★ ফুটবল বিশ্বকাপের যত রেকর্ড:
নিঃসন্দেহে ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ৯০ মিনিটের এই খেলায় খেলোয়াড় এবং দর্শকদের মধ্যে বেশ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আর খেলা মানেই রেকর্ড ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা। একজন খেলোয়াড়ের রেকর্ড আরেক খেলোয়াড় ভেঙ্গে দিয়ে নতুন রেকর্ড গড়বে, সৃষ্টি করবে নতুন এক ইতিহাস।আসুন জেনে নিই ফুটবল বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রেকর্ড সম্বন্ধেঃ
১। বিশ্বকাপ আসরে সর্বাধিক (৫ বার) অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড় এন্তনিয়ো কারবাজাল (মেক্সিকো), লোথার মাথায়ুস (জার্মানি), জিয়ানলুইজি বুফন (ইটালি)।
২। সর্বোচ্চ (২৯টি) ম্যাচ খেলেছেন মিরোস্লাভ ক্লোসা (জার্মানি)।
৩। ১৬ টি গোল করে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা মিরোস্লাভ ক্লোসা (জার্মানি)।
৪। সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ জয়ী দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল (৫ বার)।
৫। টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশিবার অংশগ্রহনকারী দল ব্রাজিল (২০ বার)।
৬। দল হিসেবে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছে জার্মানি (১০৬ টি)।
৭। দল হিসেবে সর্বোচ্চ কার্ড পেয়েছে আর্জেন্টিনা (১২০ টি)।
৮। মাত্র ১৫ বছর ৪ মাস ৪ দিন বয়সে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন জস ভ্যান ইনজেলজেম (বেলজিয়াম)।
৯। সর্বজ্যেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন ফারীদ মন্দ্রাগন (কলম্বিয়া), যার বয়স ছিল ৪৩ বছর ১৩ দিন।
১০। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫ টি গোল করেছেন অলেগ সালেঙ্কো (রাশিয়া)।
১১। সর্বোচ্চ ৬ টি কার্ড পেয়েছেন জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স), রাফায়েল মারকুয়েজ (মেক্সিকো), কাফু (ব্রাজিল)।
১২। ১৯৩০ সালে সর্বপ্রথম শীর্ষ গোলদাতার জন্য “গোল্ডেন বুট পুরস্কার” প্রদান করা হয়।
১৩। ১৯৯৪ সাল থেকে শ্রেষ্ঠ গোলরক্ষকের জন্যে “গোল্ডেন গ্লোবস পুরস্কার” প্রদান করা হয়।
১৪। দ্রুততম হ্যাট্রিক করেছেন হাঙ্গেরীর লাসলো কিস (৬৯’,৭২’,৭৬’)।
১৫। ৩ বার বিশ্বকাপ জয়ী খেলোয়াড় হিসেবে শীর্ষে রয়েছেন পেলে (ব্রাজিল)।
১৬। সর্বোচ্চ ৩ টি ফাইনাল খেলেছেন কাফু (ব্রাজিল)।
১৭। বিশ্বকাপ ফাইনালে ভিন্ন দুই দেশের হয়ে খেলেছেন লুইস মন্টি; ১৯৩০ (আর্জেন্টিনা) এবং ১৯৩৪ (ইটালি)।
১৮। খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে সর্বপ্রথম বিশ্বকাপ জয়ী মারিয়ো জরগে লোবো জাগাল্লো (ব্রাজিল)।
১৯। সর্বপ্রথম লাল কার্ড পেয়েছেন প্লাসিদো গালিন্দো (পেরু)।
২০। “ব্যাটল অফ নুরেমবার্গ” নামে পরিচিত নেদারল্যান্ড বনাম পর্তুগাল (২০০৬)-এর খেলায় এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ১৬ টি হলুদ কার্ড এবং ৪ টি লাল কার্ড দেখানো হয়েছে।
২১। দ্বিতীয়বারের মত কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ী করেছেন ইটালির ভিক্টোরিয়ো পোজ্জো (১৯৩৪,১৯৩৮)।
২২। সর্বকনিষ্ঠ ক্যাপ্টেন হিসেবে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছেন আমেরিকার টনি মেউলা (২১ বছর ৩ মাস ২০ দিন)।
২৩। ভিন্ন দুই দেশের হয়ে বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে ৩ টি গোল করেছেন রবার্ট প্রসিনেকি; যুগোস্লোভিয়া (১৯৯০) , ক্রোয়েশিয়া (১৯৯৮, ২০০২)।
২৪। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৬টি আত্নঘাতি গোল হয়েছে।
২৫। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২৭ টি গোল করেছে হাঙ্গেরী (১৯৫৪)।
২৬। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে দর্শকের উপস্থিতি সংখ্যা ছিল ৩৫,৮৭,৫৩৮ জন এবং প্রতি খেলায় ৬৮ হাজার ৯৯১ জন উপস্থিত ছিলেন।
২৭। এক ম্যাচে উপস্থিতি দর্শকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১, ৭৩,৮৫০ জন (১৯৫০, মারাকানা স্টেডিয়াম) এবং সর্বনিম্ন ২০০০ জন (১৯৩০, এস্টাদিও সেন্টেনারিও)।
★ সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপে অংশ নেয়া খেলোয়াড়-
- এন্টোনিও কালভাজাল : ৫ (১৯৫০, ৫৪, ৫৮, ৬২, ৬৬)
- - লোথার ম্যাথুয়েস : ৫ (১৯৮২, ৮৬, ৯০, ৯৪, ৯৮)
- - কার্লোস জোসে কাস্টিলো : ৪ (১৯৫০*, ৫৪, ৫৮*, ৬২*)
- - নিল্টন সান্তোস : ৪ (১৯৫০*, ৫৪, ৫৮, ৬২)
- - ডিলমা সান্তোস : ৪ (১৯৫৪, ৫৮, ৬২, ৬৬)
- - পেলে : ৪ (১৯৫৮, ৬২, ৬৬, ৭০)
- - ববি চার্লটন : ৪ (১৯৫৮*, ৬২, ৬৬, ৭০)
- - কার্ল হেইনঞ্জ স্লেইঞ্জার : ৪ (৫৮,৬২, ৬৬, ৭০)
- - ইউয়ি সিলার : ৪ (১৯৫৮, ৬২, ৬৬, ৭০)
- - লেভ ইয়াসিন : ৪ (১৯৫৮, ৬২, ৬৬, ৭০*)
- - পেদ্রো রোচা : ৪ (১৯৬২, ৬৬, ৭০, ৭৪)
- - এনরিকো আলবার্তোসি : ৪ (৬২, ৬৬, ৭০, ৭৪
- - জিয়ান্নি রিভেরা : ৪ (১৯৬২, ৬৬, ৭০, ৭৪)
- - ডব্রোমির জ্যাকেভ : ৪ (১৯৬২, ৬৬, ৭০, ৭৪*)
- - সেপ মাইয়ের : ৪ (১৯৬৬*, ৭০, ৭৪, ৭৮)
- - ডিনো জফ : ৪ (১৯৭০*, ৭৪, ৭৮, ৮২)
- - লেডাইস্লো যমোডা : ৪ (১৯৭৪, ৭৮, ৮২, ৮৬)
- - এমারসন লিয়াও : ৪ (১৯৭০*, ৭৪, ৭৮, ৮৬*)
- - ডিয়াগো ম্যারাডোনা : ৪ (১৯৮২, ৮৬, ৯০, ৯৪)
- - গুইসেপ বাইয়োমি : ৪ (১৯৮২, ৮৬, ৯০, ৯৮)
- - এনজো সাইফো : ৪ (১৯৮৬, ৯০, ৯৪, ৯৮)
- - পাউলো মালদিনি : ৪ (১৯৯০, ৯৪, ৯৮, ০২)
- - কাফু ৪ (১৯৯৪, ৯৮, ০২, ০৬)
- - রোনালদো ৪ (১৯৯৪*, ৯৮, ০২, ০৬)
- - ওলিভার কান : ৪ (১৯৯৪*, ৯৮*, ০২, ০৬)
- - কেইসি কিলে : ৪ (১৯৯০*, ৯৮, ০২*, ০৬)
- - ক্লাউডিও রেইনা : ৪ (১৯৯৪*, ৯৮, ০২, ০৬)।
★ ফিফা বিশ্বকাপ বিজয়ী অধিনায়ক ও ম্যানেজার-
- - ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার , পশ্চিম জার্মানি একমাত্র ব্যক্তি যিনি অধিনায়ক (১৯৭৪) ও কোচ (১৯৯০) হিসবে বিশ্বকাপ জিতেছেন।
- - ব্রাজিলের মারিও জাগালো একমাত্র ব্যক্তি যিনি চারবার বিশ্বকাপ জিতেছেন, দুইবার খেলোয়াড় হিসেবে (১৯৫৮ ও ১৯৬২), একবার কোচ (১৯৭০) এবং একবার সহকারী কোচ হিসেবে (১৯৯৪)।
এবার ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের কয়েকটি টুকিটাকি তথ্য জেনে নেয়া যাক-
★ বিশ্বকাপ জয়ী দেশঃ এ পর্যন্ত মোট ২০ বার বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আপনি কি জানেন, কতবার আয়োজক দেশ বিশ্বকাপ ট্রফি জিতেছে? উত্তরটি হলো ৬টি আয়োজক দেশ এ কৃতিত্বের অধিকারী।১৯৩০ সালে উরুগুয়ে, ১৯৩৪ সালে ইতালি, ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ড, ১৯৭৪ সালে জার্মানি, ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনা ও ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স নিজ দেশে আয়োজিত বিশ্বকাপের ট্রফি জিতেছিল।।
★ গড় গোলঃ ২০১০ সালে প্রতিটি ম্যাচে গড়ে ২ দশমিক ৩টি গোল হয়েছিল। ৬৪টি ম্যাচে মোট ১৪৫টি গোল হয়েছিল সেবার।।
★ সবচেয়ে বেশি গোলের ম্যাচঃ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোলের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচটি হয়েছিল অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে। ১৯৫৪ সালে ওই ম্যাচে মোট ১২টি গোল হয়েছিল। গোলবন্যায় ভেসে যাওয়া ওই ম্যাচে অস্ট্রিয়া ৭-৫ গোলে হারিয়েছিল সুইজারল্যান্ডকে । আর সবচেয়ে বেশি গোলের ফাইনালটি হয়েছিল ব্রাজিল ও আয়োজক দেশ সুইডেনের মধ্যে। ৫-২ গোলের ব্যবধানে সুইডেনকে হারিয়েছিল ব্রাজিল।
★ জার্সি নাম্বারঃএখন নম্বর ছাড়া জার্সি কল্পনাই করা যায় না। জার্সি নম্বরই যেন এখন খেলোয়াড়ের পরিচয় বাহক । এমনকি বড় বড় ক্লাব ও জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা বিশেষ কোন নম্বরের জার্সি পরার স্বপ্নও দেখেন। অথচ, একটা সময় ছিল যখন জার্সিতে কোন নম্বর লেখা থাকতো না। ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রথমবারের মতো জার্সিতে নম্বর লেখা হয়েছিল।।
★ সবচেয়ে বেশি বয়সে গোলঃ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সে গোল দিয়ে রেকর্ড অক্ষুণ রেখেছেন ক্যামেরুনের রজার মিলা। ১৯৯৪ সালে তিনি যখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন, তখন তার বয়স ছিল ৪২ বছর ৩৯ দিন।।
★ সবচেয়ে কম বয়সে গোলঃ বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম বয়সে গোল করার রেকর্ড ফুটবলের ‘গোল্ডেন প্লেয়ার’ ও কালো মানিকখ্যাত পেলের। ১৯৫৮ সালে ব্রাজিলের হয়ে পেলে যখন গোল করেছিলেন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর ২৩৯ দিন।।ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই এক ধরনের অতিরিক্ত উত্তজনা, আবেগ প্রকাশ আর প্রিয় দলের প্রতি ভালোবাসা অনেকখানি বেড়ে যায়। সারাবিশ্বে বিভিন্ন ধর্ম, দলের, মতের মানুষকে এই একটি ইভেন্ট একত্রিত করতে পারে।।আমি এখন বাংলাদেশ থেকে এই পোস্ট লিখেছি। বাংলাদেশ নামক একটা দেশ, দেশের মানুষ, মানুষদের মধ্যে আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের পাগল টাইপের সাপোর্টার কিংবা বিশ্বকাপ নিয়ে এই মানুষগুলোর পাগলামির কথা হয়তো জানতে পারবে না হাজার- লক্ষ্য মাইল দুরের দেশ আর্জেন্টিনা- ব্রাজিল। কিন্তু ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার বার্তা, গভীর অনুরাগ আর একনিষ্ঠ সাপোর্ট- হাজার লক্ষ্য মাইল দুরের দেশের আর্জেন্টিনা ব্রাজিলে পৌছাবে বলে আমার বিশ্বাস।।
বিশ্বকাপ ফুটবলের আদ্যপান্ত পর্ব-১
© আহমদ আতিকুজ্জামান
- 0 মন্তব্য