অন্ধকারে আলোর রেখা
পোস্টটি ২৩৮৭ বার পঠিত হয়েছেবিশ্বকাপের ঠিক একশ দিন আগে প্রায় সিমিলার একটা কন্ডিশনে এতটা বাজেভাবে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়াটা বিশ্বকাপ ঘিরে আত্নবিশ্বাসটায় বড় একটা ধাক্কা হয়েই আসবে। বিশ্বকাপ দল ঘোষনার আগে আর কোন ওয়ানডে খেলার সম্ভাবনা নেই, পরের ওয়ানডেটা বিশ্বকাপের মাত্র একুশ দিন আগে, এখন থেকে প্রায় আশি দিন কোন ওয়ানডে নেই বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে তাই একটা ঘাটতি থেকেই যাবে, নিউজিল্যান্ডে এমন পারফরম্যান্সের পর বিশ্বাসের ঘাটতিটাও জন্মাতে সময় নিবেনা। কিন্তু এটাকে শিক্ষা হিসেবে নেয়া উচিত দলের, আমাদের কোথায় ল্যাকিন্স আছে সেটা বেশ ভালভাবেই ফুটে উঠেছে এই সিরিজটা, বিশ্বকাপে কোন ভুলগুলো করা যাবেনা সেটা অন্তত জানা হয়ে গেল আমাদের। সিরিজের বড় পাওয়া সাব্বিরের সেঞ্চুরির সাথে মিথুনের বিপদের মধ্যে দুটো দুর্দান্ত ফিফটি, আর সাইফুদ্দিনের আর মিরাজের ব্যাটিং সামর্থ্য যেভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে সেটা অসাধারনই।
সাব্বিরের দলে ঢোকা নিয়ে যেই বিতর্ক, সেটা সেঞ্চুরিতে জায়েজ হয়ে যাবেনা কখনোই। কিন্তু যেভাবে সেঞ্চুরিটা পেয়েছেন, ক্যারিয়ারের এত উত্থান পতনের পর, দলের যে অবস্থায় শতকটা এসেছে, তাতে বাধভাঙ্গা উদযাপনটা সাব্বির করতেই পারেন। ক্যারিয়ারের পঞ্চম বর্ষে এসে শতকে দেখা, পঞ্চপান্ডবের বাইরে কেউ যে এমন পরিস্থিতিতে সেঞ্চুরি করে ফেলতে পারেন সেটাওতো দারুন কিছুই। শূন্য রানেই অবশ্য ফিরে যেতে পারতেন, লকি ফার্গুসনের ক্যাচ মিসে জীবন তো পেয়েছেন, সেখানে ছয়টা রানও পেয়ে গিয়েছেন, আর বাকিটাতো সাব্বিরের জন্য স্বপ্নের মুহূর্তই! এইরকম একটা ইনিংস খেলার সামর্থ্য সাব্বিরের সবসময়ই ছিল, কিন্তু সামর্থ্যকে বাস্তব করে দেখানোর অপেক্ষাটা অবশেষে ফুরালো। বিশ্বকাপের আগে সাব্বিরের এমন একটা ইনিংস একটা জায়গা নিয়ে দুর্ভাবনার ইতি টানল অবশেষে, তবে আয়ারল্যান্ডে এই ধারাবাহিকতা কতটা ধরে রাখতে পারবে সেটাই এখন দেখার ব্যাপার। যেই টেম্পারামেন্ট নিয়ে খেলেছেন সেটা অসাধারণ, শূন্য রানে লাইফ পেয়েছেন যেমন সত্যি, তেমনি সেই শটের পরে দারুন ফ্লুয়েন্ট যে ছিলেন সেটাও সত্যি। সেন্সিবল একটা ইনিংস খেলেছেন বিপদের মুখে, নাম্বার সিক্স বা সেভেনের কাছ থেকে অনেকদিন পর এমন একটা ইনিংস দেখলাম।৯২.৭২ স্ট্রাইক রেটে ১১০ বলে ১০২;২০১১ সালে নাসির সেঞ্চুরি করেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে, তারপর এমন ইনিংস দেখেছি কিনা মনে পড়ছেনা। ভেরি ওয়েল ডান, সাব্বির!
সাইফুদ্দিনের ব্যাটিং এই সিরিজে অবিশ্বাস্য, আটে নেমে যেই দৃঢ়তা দেখিয়েছে সে সেটা দুর্দান্ত। টেকনিক, টেম্পারামেন্ট সবকিছুতেই দারুন এক ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠার ছাপ স্পষ্ট, কিউই পেসারদের ডাউন দ্যা উইকেটে এসে বাউন্ডারি মেরেছেন, দলের বাজে সময়ে সাব্বিরের সাথে আজকে শতরানের জুটি, প্রথম ম্যাচে মিথুনের সাথে জুটিটা, সাইফুদ্দিনের ব্যাট প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গিয়েছে এই সিরিজে।
ম্যাচের শুরুটা ছিল দারুনই, অবশেষ রুবেল ঢুকলেন দলে, পাঁচটা জেনুইন বোলার নিয়ে একটা পজেটিভ ভাইভ ছাড়ানোর চেস্টা। মাশরাফী সকালের শুরুতে কিছুটা সিম মুভমেন্ট পাচ্ছিলেন, শুরুর স্পেলে বেশ ভাল বল করেছেন। অবশেষে একটা উইকেটের দেখা পেয়েছেন, কলিন মানরোকে চিপলি ফিরিয়ে দারুন কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু তারপরেই উদারহস্তে রান বিলানোর উৎসবের শুরু, ব্যাটিংটা বাজে হলেও এই সিরিজে হারের দায়টা বোলারদেরই। এই ডিবলি ডবলি লাইন আপ নিয়ে SENA(সাউথ আফ্রিকা,ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াতে) ম্যাচ জেতার আশা করা উচিত না, ম্যাচ জেতার জন্য উইকেট নেয়ার মত বোলার কি কেউ আছে আদৌ! রুবেল ম্যাচ জেতাতে পারে, কিন্তু সেটা শয়ে দুয়েকবার! সাকিবকে ছাড়া ৩৩১ চেজ করা অসম্ভব আমাদের জন্য, একটা বোলার যখন বাড়ানো হয়েছে তখন এত রান তাড়া করার পরিকল্পনা নিশ্চয়ই থাকেনা!
টেস্ট সিরিজে কি হবে সেটা কি বলার প্রয়োজন আছে!
- 0 মন্তব্য