নবম শিরোপার জন্য ব্রাজিলের ২৩; আসছে কোপা!
পোস্টটি ৬২৩১ বার পঠিত হয়েছেআসন্ন কোপা আমেরিকার জন্য ব্রাজিলের ২৩ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন কোচ টিটে। প্লেয়ারদের মধ্যে আছেন 'ইপিএল চ্যাম্পিয়ন, লীগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন, স্পেনিশ লা লীগা চ্যাম্পিয়ন' দলের সদস্য। দলটাকে নিয়ে একটু বিশদভাবে আলোচনা করা যাক।
★ গোলকিপারঃ
এলিসন- এডারসন- ক্যাসিও-
ব্রাজিলের নাম্বার ওয়ান গোলকিপার এলিসন অসাধারণভাবে সদ্য শেষ হওয়া ইংলিশ প্রিমিয়ারলীগ মৌসুম শেষ করেছেন। লিভারপুলের হয়ে নিজের প্রথম সিজনেই রেকর্ড পরিমান ২১ ক্লিনশিট রেখেছেন; পুরো মৌসুমে হেরেছেন মাত্র ১ টি ম্যাচ! কৃতিত্বস্বরুপ জিতে নিয়েছেন 'গ্লোল্ডেন গ্লাভস' এওয়ার্ড।
ব্রাজিলের ২য় গোলকিপার এডারসন মোরেইরা এবারের ইপিএল চ্যাম্পিয়ন ম্যাঞ্চেষ্টার সিটির নাম্বার ওয়ান গোলকিপার। সিজনের সর্বশেষ ম্যাচে ব্রাইটনের সাথে গোল হজম না করলে তিনিও রেকর্ড পরিমান ২১ ক্লিনশিটের দাবিদার হতে পারতেন। ইপিএল চ্যাম্পিয়ন'দের হয়ে অসাধারণ এক মৌসুম কেটেছে এডারসনের।
ব্রাজিলিয়ান ক্লাব করিন্থিয়ান্সের গোলকিপার ক্যাসিও রামোসকে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে নিয়মিতভাবে দেখার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে, ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে ২০১৭ সালে ১ টি ম্যাচ খেলেছে সে এবং ব্রাজিল অনুর্ধ-২০ দলের হয়ে ১০ ম্যাচ খেলেছে। ২০১৯ সালে ব্রাজিলিয়ান সিরিএ'তে ৪ ম্যাচের ২ টিতে ক্লিনশিট রাখলেও গোল হজম করেছে ৪ টি।
★ সেন্ট্রোল ডিফেন্সঃ
থিয়াগো সিলভা- মার্কুইনহোস- মিরিন্ডা- এডার মিলিটাও-
ব্রাজিলের হয়ে ২০১৩ কনফেডারেশন কাপ জয়ী ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা'র উপর আস্থা রাখতে ভুল করেন নি কোচ তিতে। শক্তিমত্তা, অভিজ্ঞতা এবং দল পরিচালনার অসম্ভব সুক্ষ কারিগর থিয়াগো সিলভা ব্রাজিলের হয়ে বারবার ই নিজের জাত চিনিয়েছেন। তার যোগ্য নেতৃত্বে ব্রাজিল প্রচুর ভালো খেলার সামর্থ্য রাখে। কোপা আমেরিকায় সিলভা নিশ্চিতভাবেই স্টার্টিং ইলেভেনে জায়গা করে নেবেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
পিএসজির ডিফেন্স কান্ডারি তরুণ তুর্কি মার্কুইনহোস ব্রাজিল দলের পরীক্ষিত সৈনিক। ডিফেন্সে থিয়াগো সিলভার কিংবা মিরিন্ডার সাথে তাকে দেখা যেতে পারে কোপায়।
ইতালিয়ান জায়ান্ট ইন্টার মিলানের ডিফেন্স দুর্গ মিরিন্ডা অনেকটা নিরবেই কাটিয়ে দিচ্ছেন। ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে ৫৫ ম্যাচ খেলা মিরান্ডা ২০১৮-১৯ মৌসুমে সকল প্রতিযোগিতা মিলিয়ে খেলেছেন ১৩ ম্যাচ। অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে বিবেচনা করলে কোপায় ব্রাজিল দলের সেন্টার-ব্যাক পজিশনে সিলভার সাথে মিরিন্ডা জুটি দেখা যেতেই পারে।
১৯৯৮ সালে জন্ম নেয়া ২১ বছর বয়েসী এডার মিলিটাওয়ের ব্রাজিলের কোপা দলে ডাক পাওয়া বিস্ময়কর হলেও যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। পর্তুগীজ লীগের ক্লাব এফসি পোর্তোর হয়ে ২০১৮-১৯ মৌসুমে সকল প্রতিযোগিতায় মোট ৪৫ ম্যাচ খেলেছেন এডার৷ সেন্টার-ব্যাক পজিশনে খেলেও মৌসুম শেষে স্কোরশিটে ৪ গোলের পাশাপাশি ৩ টি এসিস্টও আছে তার নামের পাশে। নিশ্চয়ই কোপা দলে এডারের অবস্থানটা হবে ব্যাকআপ প্লেয়ার হিসেবে৷ আশাকরি, সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা দিতে পারবে এই রাইজিং স্টার৷
★ রাইটব্যাক- লেফটব্যাক-
দানি আলভেজ- ফগনার- আলেক্স সান্দ্রো- ফিলিপে লুইস-
আন্তর্জাতিক ফুটবলের সব ধরনের প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি ট্রফি জয়ের রেকর্ডটা দানি আলভেজের দখলে! পরিসংখ্যান অনুযায়ী কিছুটা হলেও অনুমান পাওয়া যায় আলভেজের ফুটবলীয় অভিজ্ঞতার। ৩৬ বছর বয়েসী এই ফুটবলার ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে ইতিমধ্যে ১০৭ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। ৭ গোলের পাশাপাশি নামের পাশে আছে ১৬ এসিস্ট। ২০১৮-১৯ মৌসুমে লীগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজির হয়ে ৩০ ম্যাচ খেলেছেন আলভেজ; ৩ গোলের পাশাপাশি আছে ৮ এসিস্ট। অভিজ্ঞতায় অবশ্যই ফগনারের চেয়ে বেশি চান্স ডিজার্ভ করেন আলভেজ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা৷
রাইটব্যাক পজিশনে আলভেজের পরে ব্রাজিল কোচ তিতের ২য় পছন্দ ফগনার, ব্রাজিলিয়ান সিরিএ'র দল করিন্থিয়ান্সের হয়ে খেলুড়ে এই ফুটবলার ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন মাত্র ৯ ম্যাচ। করিন্থিয়ান্সের হয়ে ২০১৯ সালে খেলেছেন ৫ ম্যাচ।
স্পেনিশ জায়ান্ট এতলেটিকো মাদ্রিদের ডিফেন্স দুর্গের ত্রাস কিংবা একজন অঘোষিত উইংগার বলা যেতে পারে ফিলিপে লুইস'কে। ব্রাজিলের জার্সিতে খেলেছেন ৩৮ ম্যাচ। লা-লীগা ২০১৮-১৯ সিজনে খেলেছেন ৩১ ম্যাচ। স্টার্টিং ইলেভেনে অভিজ্ঞতায় আলেক্স সান্দ্রোর চেয়ে লেফটব্যাক পজিশনে লুইস ই বেশি চান্স ডিজার্ভ করেন।
লেফটব্যাক পজিশনে কোচ তিতের আরেক চয়েজ আলেক্স সান্দ্রো ব্রাজিলের জার্সিতে খেলেছেন মাত্র ১৪ ম্যাচ। তবে লীগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন জুভেন্তাসের হয়ে অসাধারণ একটা সিজন কাটিয়েছেন ২৮ বছর বয়েসী এই লেফটব্যাক। সকল প্রতিযোগিতায় ২০১৮-১৯ সালে ক্লাবের জার্সিতে খেলেছেন ৪১ ম্যাচ!
★ সেন্টার মিড- ডিফেন্সিভ মিড- এটাকিং মিডঃ
বর্তমান ব্রাজিল দলের সবচেয়ে ভরসার জায়গা হলো মিডফিল্ড। কি নেই এই মিডফিল্ডে! ২০১৮ বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের বিপক্ষে একজন ক্যাসেরিমোর অভাব হাড়েহাড়ে টার পেয়েছে ব্রাজিল। এবার অবশ্য চিত্র ভিন্ন। ইঞ্জুরিতে নেই কোনো প্লেয়ার৷ আসুন দেখে নিই কোপার জন্য ডাক পাওয়া ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডারদের।
ক্যাসেমিরো- আর্থুর- ফার্নান্দিনহো- এল্যান- লুকাস পাকোয়েতা- ফিলিপে কৌটিনিয়ো-
ক্যাসেমিরো- আর্থুরকে নিয়ে কিছুই বলার নেই। জাস্ট টু মাষ্টারপিস। 'মোর দ্যান জেম'। মিডফিল্ডের দুজন দক্ষ কারিগর। ক্যাসেমিরোর প্লেয়ার পজিশনিং, মার্কিং সেন্স প্রবল। রাফ ট্যাকেলগুলো ঠান্ডা মাথায় নেয়ার মেন্টালিটি নিয়ে খেলতে পারে৷ আর্থুর একজন ম্যাজিশিয়ান। বডি ফেকিং করে বলের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন মুহুর্তেই। তার সুক্ষ পায়ের পাসগুলোকে জাভি-ইনিয়েন্তার কপি বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। কোপায় ব্রাজিলের স্টার্টিং ইলেভেনে এই দুজন থাকছেন তা এক প্রকার নিশ্চিতই বলা চলে।
সদ্য ইপিএল জেতা ফার্নান্দিনহো এবারের কোপা আমেরিকা দলের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্লেয়ার আমার মতে। ফার্নার মতো প্লেয়ার ব্রাজিল জাতীয় দলে খেলাও ডিজার্ভ করেনা বলে আমি মনে করি। লিভারপুলের হয়ে সদ্য অসাধারণ একটি মৌসুম পার করা ফ্যাভিনহো'কে ডাকেন নি কোচ শুধু ফার্নার কারণে!
ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলির হয়ে খেলুড়ে ব্রাজিলিয়ান মিডি এল্যান মিডফিল্ডের এক ফুল-প্যাকেজ স্বরুপ। অসাধারণ একজন ফুটবলার সে। ব্রাজিল জাতীয় দলে অভিষেকের পরেই তা বুঝতে পেরেছেন কোচ তিতে। তাই কোপায় এল্যানের উপর আস্থা রেখেছেন। বাকিটা মাঠেই প্রতিদান দেয়ার অপেক্ষায় থাকবেন তিনি তা বলাই বাহুল্য।
মিডিফিল্ডের আরেক বিস্ময় লুকাস পাকুয়েতা। ট্রান্সফার মৌসুমে বড়বড় সব দলের চাহিদার প্লেয়ার হয়ে উঠেছিলো সে। অবশেষে তার ঠিকানা হলো জায়ান্টন ক্লাব এসি মিলানে। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ড কিংবদন্তি রিকার্ডো কাকার অনুকরণে খেলার স্টাইল হওয়ায় অনেকেই তাকে ২য় কাকা বলে ডাকেন। কোপা দলে পাকুয়েতা সুযোগ পেলে ভালো করবে বলে আমার বিশ্বাস।
ফিলিপে কৌটিনিয়ো একটি হতাশার নাম। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন- কৌটার জাদু কি ফুরিয়ে গেছে? লিভারপুল থেকে বার্সায় নাম লেখানো কৌটার অর্জন এখনো হতাশাজনক। ব্রাজিলের জার্সিতে বরাবরের মতোই দ্যুতি ছড়ানো কৌটায় তাই আস্থা রেখেছেন তিতে। উইংয়ে কিংবা এটাকিং ফরোয়ার্ডিং ভুমিকায় নেইমারদের শিরোপা জয়ে সাহায্যে করবেন কৌটিনিয়ো এমনটাই আশা রাখি।
★ এট্যাকঃ
নেইমার- ফিরমিনো- এভারটন- জেসুস- রিচার্লিসন- ডেভিড নেরেস-
ব্রাজিলের এট্যাক মূলত নেইমার কেন্দ্রিক সাজানো হলেও অসাধারণ ফর্মে আছেন লিভারপুলের রবার্তো ফিরমিনো; পাশাপাশি অসাধারণ একটা সিজন পার করেছেন এভারটনের ইয়াংস্টার রিচার্লিসন। দল লীগ শিরোপা জিতলেও পর্যাপ্ত পরিমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। বিশ্বকাপে তার বাজে পার্ফমেন্সের পরেও কোপা দলে সুযোগ দিয়েছেন কোচ তিতে। সে আস্থার প্রতিদান অবশ্যই মাঠে দিতে হবে জেসুসকে। কোপা হলে ব্রাজিলের দুই বিস্ময় তারকা এভারটন ও ডেভিড নেরেসও আছেন। তবে আমাকে পীড়া দিয়েছে বিস্ময়বালক ভিনিসিয়াস জুনিয়রের দলে অন্তর্ভুক্তি না হওয়া।
এবার আলোচনা করা যাক কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের পার্ফমেন্স, ইতিহাস- রেকর্ড এবং শিরোপা জয়ের কীর্তি নিয়ে;
১৯১৬ সালে শুরু হওয়া ১০৩ বছরের পুরনো এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল দল উরুগুয়ে। প্রথমবারের মতো ১৯১৬ সালে খেললেও ৩য় স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ব্রাজিলকে। প্রথম শিরোপা আসে ১৯১৯ সালে। অত:পর ১৯২২, ১৯৪৯, ১৯৮৯, ১৯৯৭, ১৯৯৯, ২০০৪ এবং সর্বশেষ ২০০৭ সালে সর্বোমোট ৮ বার শিরোপা ঘরে তুলে ব্রাজিল। এছাড়াও মোট ১১ বার রানার্সআপ হয়েছে ব্রাজিল।
২০১৯ সালের ১৪ জুন থেকে অনুষ্টিত হতে যাওয়া কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল দলের জন্য অগ্রীম শুভকামনা রইলো। হয়তো এ আসরটি হতে যাচ্ছে ব্রাজিলের নবম শিরোপা জয়ের আসর৷ হয়তো..
© আহমদ আতিকুজ্জামান।
- 0 মন্তব্য