• ক্রিকেট

একটি স্বস্তির জয় ও অন্যান্য

পোস্টটি ১৬১৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ম্যাচ শুরুর আগে প্রি-ম্যাচ এনালাইসিসে ইয়ান বিশপ বলছিলেন, এই বিশ্বকাপে সবচেয়ে ব্যালেন্সড আর কন্সিসটেন্ট বোলিং লাইনআপ সাউথ আফ্রিকার। ইয়ান বিশপ আমাদের খাটো করেননি, যেটা বেশ কিছু জায়গায় অন্যদের করতে দেখেছি। 

 

ম্যাককালামের প্রেডিকশান এখন পুরনো অতীত৷ কচলাতে কচলাতে সে লেবু তেতোও বটে, ম্যাথু হেইডেনের কথাটি খুব বেশি লোক মনে হয় জানেননা৷ 'স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট এইচডি-১' এ ডাগআউট নামে একটা ব্যাপার প্রচলিত৷ ম্যাচ এর মধ্যেই স্পেশালিস্টরা সেখানে মত দিয়ে থাকেন। কাল সেখানে ম্যাথু হেইডেন বলছিলেন, বাংলাদেশ বিশ্বকাপ শেষ করবে ১০ এ থেকে! শুধু তাই নয়, ৩৭ ওভারের আগে ২০০ ছুয়ে ফেলা বাংলাদেশের রান ইনিংস শেষে হেইডেন দেখেছিলেন ২৮৩।   ইংলিশ কমেন্টেটর মার্ক নিকোলাসের কাছে সাকিবের ১ নম্বরে থাকাটাই একটি বিস্ময়! 

 

তা হোক, বিশ্ববরেণ্য এই ক্রিকেটাররা আমাদের কেন খাটো করতে চেয়েছেন আমি জানিনা ৷ ২০১৫ এর পর যে দলটির জয়ের হার পঞ্চশোর্ধ্ব,  সে দলটিকে এতটা খাটো করে দেখার কারণও আমি জানিনা। তবে কালকে সাকিব মাশরাফিরা এর জবাব ভালভাবেই মাঠে দিয়েছে। 

 

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলতে নিউজিল্যান্ড / সাউথ আফ্রিকা একটি বড় দলকে হারানোই লাগত। সেখানে জয়টা এত বড়ভাবে আসবে সেটাও আনন্দ আর স্বস্তির খোরাক জোগায়৷ তবুও কিছু কিছু জায়গাতে চোখ না দিলে চলছে না! 

 

ওপেনিং পেয়ারে আমি কোন সমস্যা দেখছি না। রাবাদা-এনগিডিকে যেভাবে সামলেছে, সেটি যথেষ্টই প্রশংসার দাবিদার৷ তবুও বড় ম্যাচে তামিমকে জ্বলে উঠতে হবে৷ আজ হয়ত হয়নি, সামনের ম্যাচে হবে! 

 

সৌম্য সরকারকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই৷ তবুও ৪০/৫০ রানের ইনিংস গুলো তিন অঙ্কে রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা তাকে নিতে হবে। সৌম্য সরকার ৩০ ওভারের বেশি টিকে থাকলে, সেদিন আমাদের জয়টা থামানো যাবেনা। ফ্লাইং স্টার্ট এনে দেওয়া সৌম্যকে তাই নিজের টিকে থাকা আর তিন অঙ্কের ইনিংস নিয়ে ভাবতে হবে, এটিই হয়ত আমাদের 'কী টু সাক্সেস'। 

 

তামিমকে দ্রুত না আউট হবার কথা বলছিলাম৷ যেটি কিনা ফ্রি স্ট্রোক খেলা সৌম্যকে চাপমুক্ত করতে পারে৷ এই সমস্যাটি আবার আমাদের বহুদিনের৷ স্ট্রাইক বোলারকে সামলে পরের স্পেলে বল করতে আসা কোন 'নামমাত্র বোলার" আমাদের উইকেট নিয়ে ফেলে। আগেরদিন  তামিম উইকেট দিয়েছেন আন্দিলে ফেলুকাওয়াকে,  নিউজিল্যান্ড সিরিজেও একটি ম্যাচে সৌম্য বোল্ট হেনরিকে সামলে উইকেট দিয়েছিলেন প্রায় ৪৫ এভারেজের গ্রান্ডহোমকে৷ 

খুজলে এমন উদাহরণ অহরহ পাওয়া যাবে। মাঝেরদিকে 'সহজ বোলার' এর কাছে উইকেট বিলানো নিয়ে তাই দলকে ভাবতে হবে, সমাধান বের করতে হবে৷ 

 

বোলিং লাইনআপ এ সমস্যা দেখছিনা৷ অনেকেই সাইফুদ্দিনের ইনক্লুশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, রুবেলকে দলে চেয়েছেন৷ প্রত্যেককেই মনে রাখতে হবে, দলের ম্যাচ বাই ম্যাচ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে। নিউজিল্যান্ডে আমরা কোন স্পিডস্টার খেলাইনি, ব্যার্থ হয়েছি। তবুও আয়ারল্যান্ডে একই পরিকল্পনায় দল আস্থা রেখেছে। তারমানে বুঝতে হবে, যারা খেলছে তাদের নিয়ে দলের পরিকল্পনা আছে, দল ভরসা রাখছে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমর্থকেরা দলের পরিকল্পনায় আস্থা রাখতে পারেনা, অথচ রাখাটাই সবচেয়ে জরুরী ছিল৷ এছাড়াও আপনি যদি খেয়াল করে থাকেন, একটা ব্যাপার স্বীকার করতে আপনি বাধ্য৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অতীতে আমরা দেখেছি, ৩৫ ওভার পর্যন্ত আমরা ম্যাচে থাকি৷ ৩৫-৪৫ এ আমরা ম্যাচ থেকে ছিটকে যাই৷ বোলিং এ এই সমস্যাটা প্রবল৷ দল এই সমস্যা নিয়ে ভেবেছে,  সমাধান বের করেছে৷ আর সেটি সাইফুদ্দিন৷ গতকালও আমরা দেখেছি, সাইফুদ্দিন এ সময় আমাদের ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন। 

 

মুশফিক সাকিবকে নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই৷ এই জুটির রসায়ন সম্ভবত আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসেরই হল অফ ফেইমে থাকবে। ২০১৪ এর সময়ে দ্রুত তামিম ফিরে গেলে এই জুটিই আমাদের ম্যাচে রাখত৷ কাল সেটির পুনর্মঞ্চায়ন হয়েছে মাত্র। তিনে সাকিব আর চারে মুশফিক থাকলে মিডল অর্ডার নিয়ে আশান্বিত হওয়াই যায়। 

 

স্পিন এটাক আপ টু দ্যা মার্ক ছিল। অফ স্পিন দিয়ে শুরু করা বাংলাদেশের পরিকল্পনা কাজে লেগেছে। সাউথ আফ্রিকার সাথে জিততে যেটি সবচেয়ে বেশি জরুরী ছিল। তবুও দলে সাব্বিরকে আমি মিস করেছি, কোথায় খেলানো যায় সেটি যদিও জানিনা!

 

এশিয়ার দলগুলোর একের পর এক ব্যার্থতাতে বেশিরভাগ ক্রিকেটবোদ্ধা ভেবেছিল, আমরা বুঝি একই পথের পথিক হব৷ সেটি হয়নি, তার একমাত্র কারণ আমাদের অভিজ্ঞতা। এশিয়ার দলগুলোর খেলা দেখে থাকলে অনুমান করতে পারবেন, ৩০০ রানের চাপই তাদের টি-২০ সুলভ শটস খেলতে চাপ প্র‍য়োগ করেছে৷ স্মার্ট ওয়ানডে স্টাইল থেকে সরে এসে প্রত্যেক দলই চেয়েছে, শুরুর থেকেই রানরেট উপরে রাখতে, শটস খেলেছে টি-২০ সুলভ । সেটি আমাদের ক্ষেত্রে হয়নি আমাদের অভিজ্ঞতার জোরে, সাকিব মুশির পার্টনারশিপে আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নতিটা চোখে পড়ে৷ মেরেকেটে না খেলেও, শুধু স্ট্রাইক রোটেট আর লুজ বলে বাউন্ডারির জোরে আমাদের রানরেট ঐ সময় ৬.৯৭ ছিল! 

 

সৌম্যর ক্ষেত্রে তিন অঙ্কের ইনিংসের কথা বলছি। যেটা সাকিব মুশির ক্ষেত্রেও ওভারলুক করা যাবেনা৷ জয় হয়েছে বলে ৩৫০ হতে পারত ব্যাপারটি ভুলে গেলে চলবে না। সাকিব কিংবা মুশি যেকোন একজনের উচিত ছিল ইনিংস শেষ করে আসা৷ দলের স্কোর ৩৫০ নিশ্চিত করা। এটি অসম্ভবও ছিলনা৷ দলকে এটি সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে, হতে হবে সিনিওর প্লেয়ারদেরও। 

 

আখেরি লাভ তো বাংলাদেশেরই এতে!