তবে তোমায় নিয়েই গল্প হোক...
পোস্টটি ৭৪৪২ বার পঠিত হয়েছেওয়েইন পারনেল যেন সব হারিয়ে ফেলেছেন। কী করে আগের ডেলিভারিটা অমন ফুললেংথে করলেন, হিসাবটা যেন মিলছেই না। মইন আলি এসে সান্ত্বনা দেন, চিয়ার-আপ করেন। পারনেলের হতাশা কমে না তাতে। ভাইটালিটি ব্লাস্ট ফাইনালে তখনও এক বল বাকি, এসেক্স ইগলসের প্রয়োজন ২ রান। আদতে ১ রান হলেই হবে, নিয়ম অনুযায়ী টাই হলে দেখা হবে উইকেটসংখ্যা, যেখানে এসেক্স এগিয়ে এক বল বাকি রেখে তিন উইকেটে। শেষ বলে স্ট্রাইকে সাইমন হারমার, ইগলসের অধিনায়ক।
উস্টারশায়ার র্যাপিডস অধিনায়ক মইন সবাইকে সামনে আনলেন, ছাতার মতো ঘিরে ধরলেন সবাই হারমারকে। পারনেলের বলে উইকেটকিপারও চলে এসেছেন উইকেটের ওপর। এদিন এই দৃশ্যটা নতুন নয়। ফাইনালস ডে-র প্রথম সেমিফাইনালে নটিংহ্যামশায়ার আউটলজ-এর বিপক্ষে ম্যাচটাও শেষ বলে গিয়েছিল র্যাপিডসের, শেষ বলে আউটলজ-এর প্রয়োজন ছিল ওই ২ রানই। আদতে ১ রান হলেই চলতো, তারাও এগিয়ে ছিল উইকেটসংখ্যায়।
আউটলজের সেই ম্যাচটা হারার আদতে কারণ ছিল না ‘স্বাভাবিক’ রীতিতে, ১২ বলে তাদের প্রয়োজন ছিল ১১ রান, ৮ উইকেট বাকি রেখে। তবে ইংল্যান্ডে এ গ্রীষ্ম কোনও রীতি-নীতি মানেনি, এ গ্রীষ্ম বাধ্য করেছে ক্রিকেট-দর্শকদের কল্পনার সীমারেখার শেষবিন্দুতে যেতে, এ গ্রীষ্ম নিয়েছে রোমাঞ্চ-প্যারামিটারে নিজের হৃদযন্ত্রের স্থিতিশীলতার চূড়ান্ত পরীক্ষা। সে কারণেই বোধহয় সেই ম্যাচটা এসেছে শেষ বলে- পারনেলের সামনে যেখানে বেন ডাকেট, ৪৯ রানে অপরাজিত। ডাকেট বলটা মিস করে গেলেন। পারনেল উল্লাসে মাতলেন, শিরোপা ধরে রাখার সুযোগ পেয়ে ফাইনালে গেল উল্লসিত র্যাপিডস।
তবে এবার যেন পারনেল আগেই বুঝে গেলেন, আর সম্ভব নয়। অথচ এজবাস্টনের পয়েন্ট ফাইভ-এক্স গতির এ উইকেটে অনেকটা সময় পর্যন্ত এগিয়ে ছিল উস্টারই- রভি বোপারা আসার আগ পর্যন্ত। সেই ২০০২ সাল থেকে বোপারা এসেক্সে, তাদের কেবিনেটে নেই শুধু টি-টোয়েন্টির এই ট্রফিটাই। এর আগে চারবার ফাইনালস ডে-তে এসেছে এসেক্স, চারবারই তারা ফিরেছে সেমিফাইনাল থেকেই, বোপারা চারবারই দেখেছেন তার দলের শূন্য হাতে ফিরে যাওয়া।
তবে বোপারা নন-স্ট্রাইকে, আপাতত তার কিছু করার নেই দৌড়ানো ছাড়া। ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে প্যাট ব্রাউনের বলে পল ওয়াল্টার বোল্ড হওয়ার পর নেমেছিলেন হারমার, বোপারার কাঁধ থেকে যেন সরে গেল সব চাপ। এ মৌসুমেই রায়ান টেন ডেসকাট ছেড়ে দিয়েছেন টি-টোয়েন্টি দল ইগলসের অধিনায়কত্ব, তা দেওয়া হয়েছে হারমারের ওপর। হারমার নেমে ব্রাউনকে মারলেন একটি চার, এরপর সিঙ্গেল নিয়ে রাখলেন স্ট্রাইক। এরপর তো পারনেলের করা পঞ্চম বলে ওই চার।
বোলিংয়ে দিনটা হারমারের গেছে অসাধারণ, সেমিফাইনালে ৪ উইকেটের পর ফাইনালে নিয়েছেন ৩ উইকেট। তবে সেসবের মূল্য নেই কোনও, পারনেলের শেষ এই বলে যদি এক রান বের করতে না পারেন, যদি ডাকেটের মতো কিছু করে বসেন।
২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে পাঁচ টেস্টের ক্যারিয়ার ফেলে কলপ্যাকে এসেক্সে খেলতে এসেছিলেন এই অফস্পিনার। বছর দুয়েকের মাথায় তিনি এসেক্সের ইতিহাসের দুয়ারে, এজবাস্টনের ২৫ হাজার দর্শকের মনযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। হারমার যেন ভুল করতে পারেন না।
পারনেল করলেন ফুললেংথে। ব্যাটটা মোমেন্টামের বাতাসে বেঁকে যাওয়া কুঠারের মতো করে চালালেন হারমার, ডেলিভারিটা খন্ডিত হলো তাতেই, বদলে গেল বলের গতিপথ। পয়েন্টে থাকা ফিল্ডার ডানদিকে ডাইভ দিলেন, শেষ একবার চেষ্টা করলেন নিয়তি বদলানোর। পারলেন না। বল তাকে বিট করে চলে গেছে। হারমার হয়ে পড়েছেন উল্লাসে দিশেহারা।
বোপারাকে এসে আলিঙ্গনে বেঁধেছেন সতীর্থরা। যেন অনন্তকাল ধরে এসেক্সে খেলা বোপারার একটা বড় শূন্যতা পূর্ণ হলো আজ। শূন্যতা পূর্ণ হলো টেন ডেসকাটের। হারমারের। এদিনের আগে মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি খেলা অ্যারন নিজ্জার পেলেন সারাজীবন গল্প করার মতো এক উপলক্ষ্য। আর প্যাট ব্রাউন একদিনের ব্যবধানেই দেখে ফেললেন ক্রিকেট-দেওয়ালের এপার-ওপার।
ওদিকে, আরও অসীম শূন্যতায় হারিয়ে গেলেন পারনেল। খ্যাপাটে এ ইংলিশ গ্রীষ্মের নখ-কামড়ানো-চুল-তুলে-ফেলা আরেকটি ম্যাচের অন্তিম মুহুর্তে উল্লাস-হতাশার সীমানা থেকে হতাশার দিকে মোড় নিল মইন আলির গতিপথ।
জুন-জুলাইয়ে যে খ্যাপাটেপনার শুরু হয়েছিল, সেপ্টেম্বরের শেষে এসে যেন সেটা শেষ হলো আপাতত। অবশ্য ঠিক শেষ বলা যাচ্ছে না, পরের সপ্তাহেই চ্যাম্পিয়নশিপ ও ব্লাস্ট শিরোপার ঐতিহাসিক ডাবলের পথে আছে এসেক্স। তবে এরই মাঝে এ গ্রীষ্ম রেখে গেছে গল্প। সেই ম্যাচের, ওই ম্যাচের, এই ম্যাচের- অনেক অনেক গল্প।
অনেকদিন পরও তাই হয়তো বলা হবে- তবে সে গ্রীষ্ম নিয়েই গল্প হোক।
- 0 মন্তব্য