• ক্রিকেট

বিবর্ণতায় লজ্জায় নিমজ্জিত...

পোস্টটি ৩০০০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

প্রতিদিনই আপনার টেস্ট খেলার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে, আরো ভয়াবহভাবে টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি নিবেদনটাই বড় আকারে প্রশ্নবিদ্ধ। এটা ব্লাডি টেস্ট ক্রিকেট, এটা কোন ফান গেইম না যে এত সহজে পার পেয়ে যাবেন। বাংলাদেশ শুধু বড় দলগুলোর সাথে বাইলেটারাল সিরিজ পাওয়ার জন্যই টেস্ট খেলে, বোর্ড কিংবা ক্রিকেটার কেউই টেস্টের গ্লোরি উপলব্ধি করতে চাননা।

আফগানিস্তানের মত দলের সাথে সাকিবকে নিয়েই ঘরের মাটিতে টেস্টে হারার পর এই ইন্ডিয়া সিরিজে প্রত্যাশা বলতে তেমন কিছুই ছিলনা। স্পোর্টসে লজ্জা শব্দটা ঠিক খাটে না, তবুও কোন প্রত্যাশা না থাকার পরেও যেই মানের ক্রিকেট একটা রেগুলার টেস্ট টিম খেলেছে, এটা টেস্টের জন্যই অপমানের, লজ্জার! তারপরেও চারটা ইনিংসেই কিভাবে তিন অংক ছুঁল দলের স্কোর, এটা বড্ড বিস্ময়ের! এই দলটা স্ট্যান্ডার্ড কতটা তলানীতে, সেটা তিন অংকের ঘরে স্কোর যাওয়াতে বিস্মিত হওয়ার মধ্যেই বোঝা যায়। টেস্ট ইতিহাসেই এতটা জঘন্য দল আর কোনোটা এসেছে কি না জানা নেই আমার, টেস্ট ক্রিকেটটাকে স্রেফ কলুষিত করে দিচ্ছে মুমিনুল হকের এই দলটা। আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর চারদিনের টুর্নামেন্টেও এই দল ক্রমাগত হারবে, এই মুহুর্তে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নেয়াটা আবশ্যক।

সামর্থ্য থাকার পরেও পারফর্ম না করতে পারাটা ক্রিকেটারের দোষ, কিন্তু সামর্থ্যহীনদের যখন দলে নেয়া হয়, সেটা অবশ্যই সেই ক্রিকেটারের দোষ নয়। আপনি যখন জানেনই এই ক্রিকেটার স্রেফ পঁচে যাওয়া মাল, তখন কেন তাকে দলে টানেন বারবার? আরো ভয়ানক পরিস্থিতি প্রকাশ পায় যখন আসলে সেই ক্রিকেটারের বিকল্প না থাকার ধোঁয়া তোলা হয়, সামগ্রিকভাবে এগুলো একটা দেশের ক্রিকেট মৌলিকভাবে ধংস হয়ে যাওয়ার সাক্ষ্যই দিবে।

গোলাপি বলের কথা তোলাটা স্রেফ অজুহাত! ইন্দোরে কি হয়েছে সবাই দেখেছে, ইডেনের প্রথম সেশনে দারুন ব্যাটিং উইকেটে কি হয়েছে সেটাও সবাইই দেখেছে। এই লেভেলে এত জঘন্য টেকনিকের ব্যাটিং লাইনআপ কিভাবে হয় একটা দলের, সেটাই আশ্চর্য!

সাদমান অনিক যে আরেক আরেক ইমরুল, কিংবা ইমরুলের থেকেও যাচ্ছেতাই, এ ব্যাপারে আমার সন্দেহ দিনদিন নাই হয়ে যাচ্ছে। রান করাটা এখানে ফ্যাক্টর না, তাঁর ব্যাটিংয়ের ভাষাটাইতো একটা লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানের মত। কালকে সন্ধ্যায়ও যেভাবে আউট হলেন, একটা টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান এভাবে বলের লাইন মিস করে? এলিগেন্সের ছিটেফোঁটাও নেই তার ব্যাটিংয়ে, এতটা শেকি টেকনিক নিয়ে কিভাবে এখানে টিকবে সে!

ইমরুল কায়েস নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের হয়ে শেষ ম্যাচটা খেলে ফেললেন। এরপরেও যেকোন পরিস্থিতিতেই যদি তিনি ডাক পান, তাহলে আরো গভীরভাবে নিশ্চিত হয়ে যাব যে বাংলাদেশের লেভেলটা সাকিবকে ছাড়া জিম্বাবুয়ের থেকেও খারাপ! এই সিরিজের একটা পাওয়া এই সাদমান আর কায়েস জুটির আসল রূপটা বের হয়ে আসা, এই দুই ক্রিকেটারকে আরও সুযোগ কোন হিসেবে দেয়া হবে?

তৃতীয় যেই ব্যাক্তি যার টেস্ট কেন, কোন ধরনের ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা থাকতে পারে বলে আমি মনে করিনা। আশ্চর্য লাগে তখনই, যখন দেখি এই মিঠুনের মত ক্রিকেটার বিশ্বকাপেও খেলে ফেলে! ইন্দোরের শেষ ইনিংসে কিংবা গতকাল, একই ফ্যাশনে পুল খেলতে গিয়ে যেভাবে আউট হলেন, তাতে কিভাবে টেস্ট খেলার যোগ্যতা থাকবে? উমেশ-শামিদের ব্যাক অফ লেংথে টাইমিং করা আর দেশে ১১৫-১২৫ কি.মির পেসারদের পুল করা যে এক কথা না সেটাইবা বুঝবেন কিভাবে তিনি। তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি এখানেই হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক, সামর্থ্যহীনদের কেন টেনে আনা হয় বারবার!

হাতুরুসিংহে মুমিনুলকে বাদ দিতে চেয়ে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এখন সেই মুমিনুলকে কায়েস-সাদমান-মিঠুনদের দলেরই একজন মনে হচ্ছে। ক্যাপ্টেন ম্যাটেরিয়াল না তিনি, সেটা নিয়ে আলোচনাটা আপাতত তোলা থাক, কিন্তু মুমিনুলের ব্যাটসম্যানশিপের এতটা অবনতি, সেটার কারনটা কি! দেশের সেরা ব্যাটসম্যান ধরা হয় যাকে তাঁর গড়টা এবছর ১৪.৪০, একটা সময় ৮৩ থাকা গড়টা এখন ৩৯.৬৬! পা নড়ছেনা দেশের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যানের, এর থেকে বড় ভয়ানক কি হতে পারে? গতকাল যেভাবে ফুল লেংথের একটা বলে খোঁচা মেরে দিলেন, সেটাতেই স্পষ্ট মুমিনুলের হালটা! যখন এক ক্রিকেটার নিজের ব্যাটিং নিয়েই স্বস্তিতে নেই, তখন কিভাবে তিনি দলকে লিড দিবেন? মুমিনুলের মত ইন্ট্রোভার্ট ক্রিকেটার এমনিতেও নেতা হয়ে উঠতে পারার কথানা!
! সাকিব, মুশফিক নিজের ক্যাপ্টেন্সির প্রথম টেস্টেই যেভাবে নেতা বনে গিয়েছিলেন, মুমিনুল সেটা থেকে কত আলোকবর্ষ দূরেই পড়ে রইলেন! এখানে আসলে সময় সুযোগের কিছু নেই, মুমিনুলকে এই বোঝা থেকে মুক্তিই দেয়া উচিত!

আরো হতাশা এই সিরিজে মাহমুদুল্লাহ-মুশফিকের ভূমিকা নিয়ে! সাকিবের না থাকাটা তাদেরকে কোথায় তাতিয়ে দিয়ে যাবার কথা, তা না হয়ে দেখা গেল তারা নেতৃত্বের থেকে হাজারো মাইল দূরেই! এমন একটা ভঙ্গুর ব্যাটিংলাইনআপের পাঁচ আর ছয়ে তাঁরা, সেটা চার আর পাঁচ হলে কি হত জানিনা, কিন্তু দলের বিপদের সময়ে মহীরুহদের ছায়াটা অন্তত পেত বাংলাদেশ! মাহমুদউল্লাহর টেস্ট ক্যারিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ, মুশফিক প্রিয় কিপিং নিয়ে প্রশ্নবানে জর্জরিত - কিন্তু ব্যাক্তিগত এসব বিষয় চাপা দিতে সাহসিকতাটা দেখাতে পারলেন না, ব্যাপারটা লজ্জারই!

প্রায় জঘন্য, হতাশার এক ক্যালেন্ডার ইয়ার ২০১৯ পার করল বাংলাদেশ...
শেষটা যেখানে লজ্জা আর অবিশ্বাসে ভরাই থাকল!