নস্টালজিক জাফরুল্লাহ : শ্রুতিমধুর কাব্যিকতা
পোস্টটি ৫০৩০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
ব্লগের নীতিমালা
ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
তাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছুই নেই। বরং নিঃসন্দেহে বলা যায় তার নামটা বাঙ্গালী ক্রীড়ামোদী দর্শক'দের মনে গেঁথে আছে যুগ যুগ ধরে। বৃক্ষের পরিচয় যেমন ফলে, এই মানুষটার পরিচয় তেমন তার অনন্য ব্যক্তিত্বে৷ ভুল বললাম, তার পরিচয় তার কন্ঠে। চোখে সর্বাবস্থায় বেমানান বাহারি রঙ্গের চশমা, গায়ে স্যুট-কোট আর স্পাইক করা চুলওয়ালা কাউকে খুব ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হিসেবে মনে রাখে ক'জন! কিন্তু এই সমান মানুষ'টার বিশেষ আরেকটা গুন তাকে অনন্য করে রেখেছে বহুকাল ধরে। সেটি তার কন্ঠস্বর৷ নব্বইয়ের দশকে সাদাকালো টিভির যুগেও যার কন্ঠ দিগ্বিদিক পৌঁছেছে বিরামহীনভাবে; কিংবা বেতারে যার কন্ঠস্বর শুনা মাত্র আপনার মস্তিষ্ক ধরে ফেলে- এ তো সেই লোক বলে! তিনি চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফত।
সদা হাস্যোজ্জ্বলদীপ্ত এই মানুষটা একখানা প্যাকেজ। তাকে নিয়ে মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরের জগতেই বেশি আলোচনা- সমালোচনা। তবে তাতে তিনি খুব একটা কান দেন না বটে৷ দিন আসে দিন যায়, শারাফাত ভাই একই থেকে যায়। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে তার পদচারণ বহুদিনের। কি ক্রিকেট কি ফুটবল- সবখানেই তার অবাক ভ্রমণ। সে ভ্রমণে বহুবার সমালোচনার তীরে বিঁধেছেন, তবু তার আসন বারবার আগলে রেখেছেন অক্ষত। তার যখন ধারাভাষ্য ক্যারিয়ারের সূচনা, তখন এটাকে পেশা হিসেবে নেয়া ছিলো বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত। কিভাবে এই পেশায় নিজেকে নেশাগ্রস্ত করলেন চৌধুরী জাফরুল্লাহ শাফারাত; সে গল্পটা জেনে আসা যাক।
১৯৮০ সালের কথা। শারাফাত তখন ক্লাস নাইনের ছাত্র। তখন ওই একমাত্র সাদাকালো টেলিভিশন 'বাংলাদেশ টেলিভিশন'। তিনি সেখানে অডিশন দিলেন ধারাভাষ্যকার হিসেব । সুযোগ পেয়ে গেলেন। তারপর বাংলাদেশ বেতার। ৪০ বছর আগের কথা। তখন 'প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট' হতো। খেলাটি ছিলো রোমানিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মধ্যকার। ওই খেলাতে কমেন্ট্রির মাধ্যমেই চৌধুরী জাফরুল্লাহর ধারাভাষ্য দেয়া শুরু। সেই থেকে দেশ-বিদেশে ১৩ টা বিশ্বকাপের কমেন্ট্রি করা হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে । এটাই সম্ভবত বিশ্ব রেকর্ড। একজন ধারাভাষ্যকার এতোগুলো বিশ্বকাপে ধারাভাষ্য দিতে পারেন না। তিনি পেরেছেন, কারণ তিনি ক্লাস নাইনে পড়ার সময় শুরু করেছিলেন।
খেলাধুলা বাদ দিয়ে ধারাভাষ্যে কেন? এ প্রশ্নটা সাধারণ পাঠক'দের মনে খেলে যেতেই পারে। সাধারণত দেখা যায় খেলোয়াড়'রা অবসরে যাওয়ার পর এই পেশায় ঝুঁকেন; শারাফাত ব্যতিক্রম কেন- উত্তর খুঁজতে হলে শুনতে হবে জাফরুল্লাহ'র নিজ ভাষ্য। তিনি বলেন-
'এক সময় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। ছোটবেলায় আন্তঃস্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল এবং ক্রিকেটও খেলতাম। কিন্তু একদিন খেলার সময় হঠাৎ করেই আমার পায়ের গোড়ালির হাড়টা ভেঙে যায়। তখন আমার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নটাও ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। যেহেতু আমি খেলাটাকে পছন্দ করি, তাই সারাজীবন এই খেলার সাথেই থাকতে চাইলাম। আর সেই চাওয়া থেকেই পথ চলা শুরু করি। সে সময় সিদ্ধান্ত নিলাম আমি ধারাভাষ্যকার হবো।
তাই আমি সে সময়ের বেশ কয়েকজন বিখ্যাত ধারাভাষ্যকারদের মধ্যে টনি গ্রেগ, হেনরি ব্লোফোর্ড, রিচি বেনো, ওমর কোরেশী, অজয় বসু, মঞ্জুর হাসান মিন্টু- এদের ধারাভাষ্য ফলো করার চেষ্টা করতাম। তবে টনি গ্রেগ আমার আদর্শ। মানুষ তো একটি স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকে। আমার যে বয়স কিংবা শারীরিক সক্ষমতা, আমি যদি আরও ২৫ বছর জীবিত থাকি, তবে দেশ কিংবা বিদেশের মাঠ থেকে ধারাভাষ্য দেওয়া অবশ্যই আমার দ্বারা সম্ভব।'
আমরাও চাই শারাফাত ভাইয়ের এই আশাটুকু পূর্ণ হোক। জাফরুল্লাহ শারাফাত যেহেতু এই লাইনের লোক এবং লেখাটি যেহেতু ধারাভাষ্যকার চৌধুরী জাফরুল্লাহ'র, সুতরাং তার স্মৃতি নিংড়ানো কিছু ঘটনার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো যেতে পারে।
নিটল টাটা জাতীয় ফুটবল লিগের কোন ম্যাচে রহমতগঞ্জের গোলরক্ষক হিমু ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হয়েছিলেন। তাকে পুরস্কার নিতে ডাকার আগে এবং পরেকার চৌধুরী জাফরুল্লাহ শাফারাতের একটি কথোপকথনের ঘটনাটি স্মরণ করা যাক।
“আজকের ম্যাচে জয় কোন দলের হয়নি, কিন্তু একজন ছিলেন মাঠে, দৃপ্ত অবিচল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ দুর্বার গোলরক্ষক হিমু। তিনি একের পর এক হা হয়ে যাওয়া গোলমুখ থেকে বলকে রক্ষা করেছেন। হিমু আপনি ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ।
(করতালি। হিমু পুরস্কার নিয়ে আসলেন শরাফতের দিকে)।
“হিমু আপনি কি আজকে প্রতিজ্ঞা করে নেমেছিলেন কোন বলকে জালে ঢুকতে দেবেন না?”
সাহিত্যিক শরাফাত ভাইয়ের সাহিত্যিক প্রতিদান হিমু দিতে পারলেন না। তিনি বললেন, “না। তেমন কোন পরেতিজ্ঞা আছিল না। যাস্ট খেলার দরকার খেলছি। ভাল্লাগতাসে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হইছি।”
এমন বিব্রতকর পরিস্থির মুখোমুখি চৌধুরী সাহেব বহুবার হয়েছেন, বহু জনকে এমন অবস্থায় ফেলেছেনও। তাতে কিছু একটা যায় আসেনা। বাংলার ক্রীড়াঙ্গনে তার নাম অবিস্মরণীয়ই রয়ে যায়।
'মেঘমুক্ত মাঠ, কর্দমাক্ত আকাশ' কিংবা পিচের উপর দিয়ে গুরি গুরি বৃষ্টি বয়ে যেতে পারে"- এ সকল উক্তি শারাফাতের মুখে দিয়ে বের হয়ে যায় বিদ্যুৎ গতিতে। তবে একবার এই উক্তিটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়ে তিনি উচ্চমার্গীয় ফিলোসোফি ঝেড়ে বলেন-
''ধারাভাষ্যটা কী? এটি একটি শিল্প। আমাদেরকে কেউ বলে দেয় না, লিখে দেয় না, পড়ে শোনায় না। সম্পূর্ণ মোমোরি থেকে কথা বলতে হয়। সারাদিন কিংবা দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত একটা মানুষ কথা বলবে- তখন স্লিপ অব টাং হতেই পারে। মানুষ তো। ভুল হতেই পারে। তবে এটি ইনটেনশনালি করি না।''
শারাফাত ভাই ঠিক-ই বলেছেন। এগুলো তিনি ইনটেনশনালি করেন না। এগুলো আপনা আপনি হয়ে যায়। উপরের লেখাগুলো পড়তে পড়তে প্রিয় পাঠকেরা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বিরক্ত বোধ করছেন৷ যদি তা-ই হয়ে থাকে, তবে এবার একটু নড়েচড়ে বসুন; বিরক্তি বোধ শীগ্রই কেটে যাচ্ছে। কারণ আমি এখন আপনাদের নিয়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছি 'চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফাত' এর কাব্যিক মনের দুনিয়ায়! বাংলা সিনেমার চৌধুরী সাহেব'দের মতোই বাংলা ধারাভাষ্যের জগতে চৌধুরী জাফরুল্লাহ'র একচ্ছত্র আধিপত্য বিদ্যমান। তার কালজয়ী কিছু উক্তি নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ইচ্ছে জেগেছে আমার।
“আমাদের আজকের অতিথী এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, জীবন্ত কিংবদন্তী, বাংলাদেশেরে ক্রিকেটের এক অবিস্মরনীয় জাজ্জল্যমান তারকা, সবার জন্যে অনুকরনীয় উদাহরণ, যার পদচারনায় এই ক্রিকেট বিশ্ব উদ্ভাসিত হত, যিনি না থাকলে আজকের ক্রিকেট স্ব্য়ংসম্পূ্র্ণ হতো না, যার অবদান বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিয়ে গেছে এক অসাধারন উচ্চতায়, যার আত্বত্যাগ আমাদের কাছে চিরস্বরণীয় হয়ে থাকবে, যিনি আজকের ক্রিকেটারদের কাছে এক অভিভাবক, তিনি সেই জীবন্ত কিংবদন্তী, তিনি সেই দমকা হাওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য, তিনি সেই সেলিম শাহেদ।”
“বাংলাদেশের আশার ফুল আশরাফুল কিন্তু এখন ক্রিজে, সারা দেশের মানুষ তার ব্যাটের দিকে তাকিয়ে আছে।”
“মেঘমুক্ত মাঠ, কর্দমাক্ত আকাশ, মাঠ চলে গেল বলের বাইরে। দুঃখিত দর্শকমন্ডলি, আমি একটু আবেগে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম, বল চলে গেল সীমানার বাইরে।”
“ব্যাটসম্যান দেখে শুনে না খেলে ছেড়ে দিলেন এবং বোল্ড।”
“ব্যাটসম্যান অত্যন্ত আস্থার সাথে প্রতিটি বলের মেধা ও গুনাগুন বিচার করে খেলছেন।”
“আম্পায়ারকে অতিক্রম করে বোলার বল করলেন।”
“উইকেটে আছেন আমাদের মারমুখী হার্ডহিটিং ব্যাটসম্যান জাভেদ ওমর বেলিম। প্রচুর শট আছে তার হাতে।”
“দৃষ্টিনন্দন মার, চোখে চেয়ে দেখার মতো শট, বল চলে গেল মাটি কামড়ে সোজা ফাইন লেগে, ফিল্ডারের হাতে - একটি রান।”
“আলফাজ চমতকার ভাবে ২ জন কে কাটিয়ে সুন্দর ভাবে বারে কিক নিলেন, কিন্তু না, ভুলপাস।”
“বল হাতে নিয়ে ছুটে আসছেন জয়ের মূল এনামুল, বল হাতে তার মতো ভয়ানক বোলার কিন্তু আমি খুব কমই দেখেছি, আজ কিন্তু যে
কোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। ”
“বোলার শ্রীনাথ তার ট্রাউজার খুলে আম্পায়ারের হাতে দিয়ে চলে যাচ্ছেন বোলিং রান আপের শেষ প্রান্তে।”
এ রকম কতশত আলোচিত সমালোচিত, বিভ্রান্তিকর- অপ্রাসঙ্গিক কিংবা অহেতুক মন্তব্য তিনি করেছেন ধারাভাষ্য দিতে দিতে তার ইয়ত্তা নাই৷
চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফত মাঝে মাঝে কমেন্ট্রি দিতে দিতে নস্টালজিক হয়ে যান। ফল- শ্রোতাদের বিভ্রান্তি আর রাগের কারণ। ১৯৯৯ সালে ধাকায় জিম্বাবুয়ের সাথে ম্যাচের একখন্ড ধারাভাষ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছিনা-
“সুপ্রিয় শ্রোতারা, দর্শকদের করতালি শুনে আপনারা বুঝতে পারছেন মাঠে নামছেন মোঃ রফিক। তার কথা বলতে গেলে মনে পড়ে যায় অনেক কথা। বাংলাদেশের প্রথম জয়ে ব্যাট হাতে কিন্তু রফিক ৭৭ রান করেছিলেন। সেদিন তিনি একটি বিশাল ছক্কা মেরেছিলেন। তাছাড়াও বোলার হিসাবে সেই সার্ক ক্রিকেট ১৯৯২ সালে– আউট আ–উ–ট, মোঃ রফিক আউট হয়ে গেলেন এইমাত্র, যাহোক যে কথা বলছিলাম…….”।
এরকম কতশত কালজয়ী ধারাভাষ্য জাফরুল্লাহর মুখ দিয়ে বেরিয়েছে, তার হিসেব কে রাখে? আপাতত হিসেবের চিন্তা বাদ দিয়ে একচিত্তে বাংলা ধারাভাষ্যের আরেকটি উজ্জ্বল নমুনা দেখা যাক;
এইতো ক'দিন আগের ঘটনা। বাংলাদেশ বনাম ভুটানের ফুটবল ম্যাচ ঘিরে যত না আলোচনা সমালোচনা হয়েছে, তারচেয়ে কয়েকগুন হয়েছে ম্যাচের ধারাভাষ্য নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চারণা৷ কয়েকটি উদাহরণ দিই-
“শেষ পর্যন্ত বাদশাহ বলটি কে পাহারা দিলো এবং পাহারা দিতে দিতে গোল লাইন এর বাহিরে পর্যন্ত নিয়ে গেলো।”
“জেমি ডে অফিশিয়াল কার্ড পরেছেন বেণিটি ব্যাগের মতো করে।”
“বদলি হিসেবে মাঠে নামছেন মামুনুল ইসলাম, বাংলাদেশ দলের সাবেক ফুটবলার।”
“বলটি সামনে বাড়িয়ে দিলো এবং মাহবুবুর রহমান এগিয়ে যাচ্ছে তার স্পিড যদি এম্বাপ্পের মতো হয় তাহলে মনে হয় বলটি ধরতে পারবে।”
“বাংলাদেশের দর্শকরা উপলব্ধি করার চেষ্টা করছেন কিভাবে তারা ম্যাচটি উপলব্ধি করবেন।”
“খেলার সময় অতিক্রান্ত হয়েছে বাইশ অর্থাৎ টুয়েন্টি টু মিনিট।”
“ভূটান পরেছে কমলা রঙের জার্সি, অপরদিকে বাংলাদেশ পরেছে সবুজ রঙের জার্সি, সাদা রঙের প্যান্ট, সাদা রঙের মোজা হলুদ রঙের মোজা, অর্থাৎ ইনি গোলকিপার।”
ধারাভাষ্যকার নিয়ে ক্ষেপেছেন দর্শকরা। ক্রীড়া সাংবাদিক বর্ষণ কবির তার ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, “চৌধুরী জাফরউল্লাহ শরাফাত কবে অবসর নেবেন? পেনাল্টি পেলেও বলেন না। গোল হলেও একই ‘টোন’! বেতার ও টিভি'র ধারাভাষ্যের পার্থক্যতো ভাই রাখবেন!”
ওদিকে সাবেক ফুটবলার গোলাম সারোয়ার টিপুর কন্ঠেও বিরক্তির ছাপ। টিপু বলেন- 'ব্যাকপাস দিলে শারাফাত বারবার বলেন 'মাইনাস' দিয়েছে। এটাকে মাইনাস বলা হলে প্লাস কোনটা?' তাছাড়া ফাস্ট বার, সেকেন্ড বার বলে আদৌ কিছু আছে কিনা সেটাও জানতে চেয়েছেন তিনি।
আগেই বলেছি, শারাফাত ভাই শরীফ আদমী; তিনি কারো সাত-পাঁচে নাই। তার কাজ ধারাভাষ্য দেয়া। 'কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরালেই পাজি'- কথাটাকে তিনি বোধহয় সিরিয়াসলি নিয়েছেন। তাইতো হাজারো ঝড়েও তিনি কুঁচকে যান না; বরং মাইক্রোফোন হাতে নিয়েই বলে উঠেন - 'আমি চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফত বলছি'।
ব্যাক্তিগত জীবনে শারাফাত ভাই খুবই ধর্মভীরু। যমজ দুই সন্তানের এই বাবা লেখার জগতেও মনোনিবেশ করেছেন। 'আমি চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফত বলছি' এবং 'নাম্বার ওয়ান সাকিব আল হাসান' নামে তার দুটি বই রয়েছে, ৩য় বইটির নাম স্মরণ করতে পারছিনা বলে দুঃখ প্রকাশ করছি। কিছু টিভি এডভার্টাইজের মডেলও হয়েছেন তিনি। তবে অনেক পরিচালকের অনুরোধেও নাটকের জগতে পা মাড়ানো হয়নি জাফরুল্লাহ শারাফাতের।
এই গল্পগুলো আমাদের সবার টুকটাক জানাশোনা। তবে অজানা যে গল্প তার রয়েছে, সেটি সত্যিই দুঃখজনক। গত ৪০ বছর ধরে বাংলার খেলাধুলায় জাফরুল্লাহ শারাফাতের নামটি ওতোপ্রোতভাবে মিশে থাকলেও, তাকে এখনো পার্কিং করতে হয় টিকেট কেটে। যেখানে ফুটবল বোর্ডের সাথে জড়িত কিংবা ম্যাচ অফিসিয়াল সবাই ভোগ করেন সুযোগ সুবিধা। তবুও এ নিয়ে আক্ষেপ নেই শারাফত ভাইয়ের কোমল মনে৷
ধারাভাষ্যের জগতে চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফাত একজন ব্র্যান্ড। তার কন্ঠস্বর দেশের গন্ডিয়ে ছড়িয়েছে, মিলিয়েছে দিকদিগন্তে। কখনোও হাস্যখোরাকের পাত্র বনেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে কতই না ট্রল হয় প্রতিনিয়ত; ভেবে দেখেছেন কি- বাংলাদেশ হারলে কিন্তু জাফরুল্লাহ জিতে যান না; তিনিও ব্যথিত হন। বাংলাদেশের সকল বিজয় নিজে উপস্থিত থেকে উপভোগ করেছেন। হেসেছেন, হাসিয়েছেন সকল বিজয়ে। তার ট্রেডমার্ক ধ্বনি দিনকে দিন আমাদের মাতিয়ে রেখেছে। তাকে নিয়ে যতটা সমালোচনা করতে পারি ততটুকু কি আমরা নিজেরা করে দেখাতে পারি?
© আহমদ আতিকুজ্জামান।
- 0 মন্তব্য