বড় হয়ে আমি ফুটবলার হতে চাই..
পোস্টটি ২৮৯৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
ব্লগের নীতিমালা
ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
রিজওয়ে পার্কের সাথে তার সখ্যতা বহুদিনের। চিংফুডের এই মাঠে কতশত স্মৃতি অম্লান হয়ে আছে যুগের পর যুগ ধরে৷ রিজওয়ে রোভার্স নামের যে ক্লাবটায় খেলে তার বেড়ে উঠা, তারা খেলতো এখানেই। সে সময়ে রিজওয়ে পার্ক-ই ছিলো তাদের খেলার কেন্দ্র। কিভাবে যেন দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলো জীবনের পয়তাল্লিশটি বসন্ত। ভেবে অবাক হতে হয়।
: ড্যাডি ড্যাডি, আমি এখন পিয়ানো বাজাবো; আমি চাই তুমি আমার সাথে এক্ষুনি নিচের ঘরটায় চলে আসো।
হার্পারের ডাকে যেন সম্বিত ফিরলো ডেভিডের।
তার হাতে ওয়াইনের গ্লাস। ডেক্সে রাখা বিশ্বের সবচেয়ে দামি ওয়াইন 'রোমানো ডি- কন্টি'র মুখখোলা বোতল। দিনের এই সময়টায় তিনি নিজের ঘরে বিশ্রাম নিতে পছন্দ করেন। যদিও সেটা সবসময় সম্ভব হয়না। প্রায় প্রতিদিনই আছে মিটিং; বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে সময় কাটানো, শপিং কিংবা ম্যচের শিডিউল! তবে তিনি এসবে একদমই বিরক্তবোধ করেন না। একবার এক সাক্ষাৎকারে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো তার জীবনের শ্রেষ্ট প্রাপ্তি কি? তিনি মৃদু হেসে বললেন, 'আমার সন্তানেরা। আমার পরিবার।'
কয়েক সেকেন্ডের জন্য প্রশ্নকর্তা যেন বিপাকে পড়ে গেলেন। তিনি নিশ্চয়ই এই উত্তর আশা করেন নি। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন ডেভিড বলবেন 'ববি চার্লটন স্কিল কম্পিটিশন জিতে ১১ বছর বয়সে তার বার্সায় ভ্রমনের কথা। কিংবা ম্যাঞ্চেষ্টারের জার্সি গায়ে জড়িয়ে ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ট সময়ের কোনো প্রাপ্তির কথা..
এসব ভাবতে ভাবতে নিচতলায় এলেন তিনি। মেয়েটা যা দুষ্টু হয়েছে। যা বলবে তার তা চাই-ই চাই৷ প্রাসাদসম এই বাড়িতে হার্পার সারাদিন কতসব কান্ডই না করে বেড়ায়। বাবা হিসেবে ডেভিড ভাগ্যবান। হার্পারের মতো ফুটফুটে কন্যা যার আছে সে নিজেকে ভাগ্যবান বলবে এটাই স্বাভাবিক। হার্পারকে ঘিরে আছে তার তিন ভাই, প্রিয়তমা মা। পিয়ানোর সুরে আবারো ভাবনার জগতে ঢুকেন ডেভিড। ভাবেন, সেদিনের সাক্ষাতকারে বলা কথাটা একটুও ভুল না; তার পরিবার, তার সন্তানেরাই তার জীবনের শ্রেষ্ট অর্জন।
ববি চার্লটন স্কিল কম্পিটিশন হয়েছিলো ১৯৮৩ সালে। তখন তার বয়স মাত্র ১১। পুরষ্কার স্বরুপ বার্সার একাডেমিতে ট্রেইনিং করার সুযোগ পেয়েছিলো। তবে সেখানে তার উপর চোখ পড়ে এক ম্যাঞ্চেষ্টার ইউনাইটেড স্কাউটের। তৎক্ষনাৎ তিনি খবরটা পাঠিয়ে দিলেন লাল শয়তানদের একাডেমিতে। তার উপর চোখ রাখতে থাকলো তারা। দেখা গেলো লেখাপড়ার চেয়ে ফুটবলেই তার বেশি আসক্তি। দু'বছর পর, তার বয়স তখন তের; রিজওয়ে পার্কের দল রিজওয়ে রোভার্সে খেলার জন্য বাবা তাকে দলে নিলেন। তিনি তাদের কোচ। সেখানে সে খেললো মাত্র ২ বছর৷ এরইমধ্যে হাইস্কুল থেকে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে নিতে হলো৷ তার বয়েসী ছেলেরা যখন পড়ালেখার ধকল সামলাতে ব্যস্ত, সে তখন তার জীবনের শ্রেষ্ট এক মূহুর্তের সামনে দাঁড়িয়ে। ১৯৯১ সালের ৮ জুলাই। ম্যাঞ্চেষ্টার ইউনাইটেডের ইয়ুথ ট্রেইনিং স্কিমের জন্য সাইন করলো সে।
অনবদ্য এক ইতিহাস রচনা হতে চলেছে আগামিতে, তা কজনই বা বলতে পেরেছিলো!
১৭ বছরের এই তরুণ পরবর্তী ২০ বছর বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে বেড়িয়েছি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সব লীগে। একমাত্র ইংরেজ ফুটবলার হিসেবে চারটি ভিন্ন দেশের লীগ জেতার রেকর্ড একমাত্র তার। ম্যাঞ্চেষ্টার ইউনাইটেডের হয়ে ৬ প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা, ২ এফএ কাপ এবং চ্যাম্পিয়নস লীগ ছাড়াও ১৯৯৯ সালে ক্লাবের হয়ে জিতেছেন ট্রেবল। পুরো ক্যারিয়ারে জিতেছেন ১৯টি মেজর শিরোপা! ফুটবল মাঠে এবং মাঠের বাইরে সবসময় ছিলেন উজ্জ্বল প্রদীপের ন্যায়। ফ্যাশন দুনিয়ায় তার আবির্ভাব নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছিলো। ম্যাঞ্চেষ্টার কি মাদ্রিদ, মিলান কি পিএসজি কিংবা লা- গ্যালাক্সি! যেখানেই গেছেন সেখানেই কুঁড়িয়েছেন লাখো মানুষের ভালোবাসা। হাসি দিয়ে জয় করেছেন রাউভালদের হৃদয়ও। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ট ফুটবলারের স্বীকৃতি পেয়েছেন বহু পূর্বেই; তাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছুই নেই। তিনি 'ডেভিড রবার্ট জোসেফ বেকহ্যাম। তার পরিচয় তার নামেই।
১৯৯১ সালে ম্যাঞ্চেষ্টারে বেকহ্যামের সাথে যারা ট্রেইনি ছিলো তাদের কয়েকজনের নাম বলার লোভ সামলাতে পারছিনা। রায়ান গিগিস, গ্যারি নেভিল, ফিল নেভিল, পল স্কোলস কিংবা নিকি বাট! ডেভিড বেকহ্যামের ক্যারিয়ারের শুরুটা তাদের সাথেই। পরবর্তীতে এই ছেলেগুলো শাসন করেছে পুরো ইউরোপ। স্যার আলেক্স ফার্গুসন প্রতিভা চিনতে ভুল করেন না। বেকহ্যামকেও তিনি চিনতে দেরি করলেন না। ১৯৯২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এক লীগ কাপ ম্যাচে ম্যাঞ্চেষ্টার ইউনাইটেডের সিনিয়র দলে তার অভিষেক হয়ে গেলো। এবং বাকিটা ইতিহাস...। ৮ বছরের ক্যারিয়ারে ২৬২ ম্যাচে ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে জড়ান বেকহ্যাম।
১৯৯৭ সাল। ম্যাঞ্চেষ্টারের এক চ্যারিটি ম্যাচ দেখতে প্লেয়ার্স লাউঞ্জে উপস্থিত বিখ্যাত *দ্যা স্পাইস গার্লস* ব্যান্ডের *পশ স্পাইস* খ্যাত ভিক্টোরিয়া এডামস। ভিক্টোরিয়া ততোদিন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন; যদিও ততোটাও পরিপক্ব বেকহ্যাম নন। ম্যাচ শেষে তাকে দেখতে পেলেন বেক এবং সেটাই তাদের ভালোবাসার লাভ এট ফাস্ট সাইট! বেকহ্যাম সতীর্থদের কাছে গিয়ে জানালেন তার অনুভূতির কথা। ক'দিন পরে বন্ধুদের সাথে স্পাইস গার্লসদের একটা মিউজিক ভিডিও দেখছিলেন বেকহ্যাম। ভিক্টোরিয়ার দিকে আঙ্গুল তাক করে বললেন, মেয়েটার সাথে যদি তার একবার দেখা হয়ে যায়, তিনি মেয়েটার সাথে সারাটি জীবন থেকে যাবেন! তখনো তাদের মুখোমুখি দেখা হয়নি। যখন সে সুযোগ আসলো, এক রেস্টুরেন্টে তাকে প্রপোজ করে বসলেন তিনি! ভাগ্যিস, ভিক্টোরিয়া সেদিন মুখে হাত চেপে ইশারায় হ্যাঁ বলেছিলেন..
কথা রেখেছেন বেকহ্যাম। দু'বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর ১৯৯৯ সালে আয়ারল্যান্ডে ভিক্টোরিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বেকহ্যাম। বিবাহে ফাস্টম্যান ছিলেন ইউনাইটেডের সতীর্থ গ্যারি নেভিল। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় খরচ হয়েছিলো আনুমানিক £৬২৮,০০০ ডলার। বিয়েতে ভিক্টোরিয়া হীরক-মুদ্রিত মুকুট পরিধান করেন এবং বেকহ্যামের গায়ে ছিলো আইবরি'র স্যুট! তারা রয়েল ফ্যামেলি ও তারকাদের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন 'Ok' এর কাছে বিয়ের ছবি বিক্রি করেন ১.৭৩ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে!
বেকহ্যামের দু'বোন, বাবা- মা সবাই ম্যাঞ্চেষ্টার ইউনাইটেডের কঠিন ভক্ত। তারা পুরো সিজন মাঠে বসে ম্যাঞ্চেষ্টারের খেলা দেখে। ম্যাঞ্চেষ্টারের প্রতি তাই তার গভীর ভালোবাসা ছোটকাল থেকেই। একবার বেকহ্যাম ঘোষণা দিয়েছিলেন, যদি কখনোও ম্যাঞ্চেষ্টার ইউনাইটেড থেকে বিদায় নেন তবে তাদের বিপক্ষে কখনোই খেলবেন না। প্রতিশ্রুতি রেখেছেন বেকহ্যাম। প্রিমিয়ারলীগের অনেক অফার-ই ফিরিয়ে দিয়েছেন কেবল ইউনাইটেডের বিপক্ষে খেলা লাগবে বলে। এমন লয়ালিটি সত্যিকার অর্থেই অপ্রতুল।
২০০৩ সালে ইউনাইটেড ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমালেন বেকহ্যাম, পুরো পরিবার নিয়েই। মাদ্রিদে বিশ্বের সেরা কয়েকজন ফুটবলারের সাথে ৪ সিজন খেলেন বেকহ্যাম; তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য- জিদান, ফিগো, রোনালদো, রবার্তো কার্লোসেরা! রিয়ালে আসার পর তাকে একটি জার্সি নাম্বার নিতে হয়, সে চেয়েছিলো ৭ নাম্বার জার্সি নিতে। কিন্তু ইইতিমধ্যেই সেটি রাউল নিয়ে নেয়৷ তাই সে ২৩ নাম্বার বেছে নেয়। কারণ ২৩ নাম্বার জার্সি পরতেন বাস্কেটবল মহাতারকা মাইকেল জর্ডান।
সে বছর বেকহ্যাম তার আত্মজীবনী 'Both Feet on the ground' লিখলেন। অবিশ্বাস্যভাবে বইটি সেবার নাম্বার ওয়ান ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট সেলার বই হয়ে গেলো! এতোটাই সাড়া এসেছিলো বিশ্বজুড়ে..
মুভির কথায় আসি। 'Bend it like Beckham' মুভিটা এক তরুণীকে ঘিরে, যে কিনা ইংলিশ ফুটবল দেখে প্রচুর অনুপ্রাণিত হয়৷ মুভিটিতে বেকহ্যামের একটা উক্তি ছিলো এরকম- 'আমি বিশ্বাস করি ছেলেরা ফুটবলে যতটুকু সুযোগ পায় মেয়েদেরও ততোটুকু সুযোগ পাওয়া উচিত।' 'Love Actually' মুভিতে ডেভিড বেকহ্যামের পা'কে গ্রেট ব্রিটেনের অন্যতম শ্রেষ্ট রত্ন হিসেবে ম্যানশন করা হয়েছে। ২০০৫ সালে রাউল- জিদানের সাথে তাকে দেখা যায় 'Goal: The Dream Beings' মুভিতে।
গুঞ্জন উঠে আমেরিকায় আসছেন বেকহ্যাম; খেলবেন লা-গ্যালাক্সির হয়ে! অবশেষে গুঞ্জন সত্যি করে ২০০৭ সালে ৫ বছরের চুক্তিতে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে আমেরিকান ক্লাব লস এঞ্জেলস গ্যালাক্সি 'তে যোগ দেন ডেভিড বেকহ্যাম। তবে কন্ট্রাক্ট কনফার্ম করার পূর্বেই লা- গ্যালাক্সির ২ লক্ষ ৫০ হাজার জার্সি বিক্রি হয়ে যায় মুহূর্তেই! এবং কন্ট্রাক্ট কনফার্ম হওয়ার পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার ভিতরে ৫০০০ সিজন টিকেট বিক্রয় হয় অনলাইনে।
তার আগমন উপলক্ষে টম ক্রুজ একটা পার্টির আয়োজন করেন! যেন আমেরিকায় তার গমন হয়েছে ফুটবল নামক অতি সুন্দর একটি খেলাকে আমেরিকায় নবজাগরণের সূচনা করার জন্য।
ক্যারিয়ারের এক পর্যায়ে ফরাসী ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেই'তে খেলার জন্য প্যারিসে চলে আসে বেকহ্যাম পরিবার। ভিক্টোরিয়া খুব বেশি আনন্দিত ছিলেন, কারণ তিনি মনে করতেন এখানে তাদের সম্পর্কটা আরোও বেশি রোমান্টিক হবে। পিএসজির সাথে তিনি যেদিন প্রথম ট্রেনিংয়ে আসলেন, প্রায় দেড়শো সাংবাদিক চলে এলো তার ছবি তুলতে। পিএসজিতে খেলার জন্য ৫ মাসে বেকহ্যাকমে ৫.৩ মিলিয়ন ইউরো দেয়া হয়েছিলো। তিনি তার স্যালারির পুরো অর্থই শিশুদের এক চ্যারিটি সংস্থায় দান করে দেন।
বেকহ্যামের ব্যাপারে ইন্টারেস্টিং একটা তথ্য দেই। তিনি যখন কোনো হোটেলে থাকেন, তার রুমের আসবাবপত্রের সেটিং বদলে ফেলেন। ফ্রিজে যদি ৭ টা ড্রিঙ্কসের ক্যান থাকে, তাহলে সেখান থেকে একটা ফেলে দিয়ে বলবেন- এবার ঠিকাছে! এবার কারণ বলি; বেকহ্যাম সবকিছু স্ট্রেইট লাইনে রাখতে পছন্দ করেন। আর বিজোড় সংখ্যা তার অপছন্দের। তাই যা কিছু কেনা হয় তা জোড় সংখ্যায় কেনা হয়। তার আরেকটি অভ্যাস হলো সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা। একটা নমুনা দেই; বেকহ্যাম প্রত্যেক মাসে ৩০ জোড়া ক্যালবিন ক্লাইন আন্ডারওয়্যার কিনেন এবং মাস শেষে সবগুলো ফেলে দেয়া হয়৷
ওয়ার্ল্ড এইড ডে'র এক গালা নাইটে বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তার এক পর্যায়ে উঠে আসলো আলেক্স ফার্গুসনের বুট নিক্ষেপের কাহিনি। বেকহ্যাম বললেন, 'ইউরোপীয় রাতগুলোতে বস পিচে আসতেন। আমাদেরকে পেনাল্টি- ফ্রিকিক সম্পর্কে ধারণা দিতেন এবং তার সময়ে তিনি কত গোল করেছিলেন, কত দুর্দান্ত ছিলেন- এইসব নিয়ে কথা বলতেন। তবে তিনি কতটা দুর্দান্ত ছিলেন তা জানতে পারলাম আর্সেনালের বিপক্ষের ওই ম্যাচের পর। আমি অনেকগুলো ভুল করেছিলাম ম্যাচে। ফার্গুসন যথারীতি ড্রেসিংরুমে আসলেন, তিনি ভয়ংকর রাগত্ব ছিলেন। আমার সাথে তার কিছু বাক্য বিনিময় হলো। তিনি রাগ করে কাপড়ের স্তুপে লাথি দিলেন আর সেখান থেকে এক জোড়া বুট এসে সোজা আমার মাথায় পড়লো। সেদিনের পর থেকে বুঝেছিলাম আসলেন তিনি কতটুকু পারদর্শী।'
বেকহ্যামে ট্যাটুতে আসক্ত। তার প্রায় পুরো শরীর জুড়েই রয়েছে ট্যাটু। কষ্ট সহ্য করতে উপভোগ করেন বলেই নতুন নতুন সব ট্যাটু লাগান। শরীরে এখন পর্যন্ত ৬০ এরও অধিক ট্যাটু করিয়েছেন বেকহ্যাম! তার হাতের আঙ্গুলে '৯৯' লেখা একটা ট্যাটু রয়েছে। ৯৯ মানে ম্যাঞ্চেষ্টারকে ট্রেবল এনে দেয়ার বছর, ভিক্টোরিয়াকে বিয়ে করার বছর এবং তাদের প্রথম সন্তানের জন্মের বছর! সংস্কৃত ভাষায় একটা ট্যাটু আছে ভিক্টোরিয়ার নামে; দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে ভিক্টোরিয়ার নাম লেখা এভাবে 'Vihctoria'
একবার বেকহ্যামের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো ফুটবলার না হলে কি হতেন তিনি? উত্তর বেকহ্যাম বলেন, 'আমি যদি ফুটবলার হতে না পারতাম তবে হেয়ারড্রেসার হতাম। কিংবা ইকার্টুনিস্ট।' বেকহ্যাম ছোটবেলায় ভালো আঁকতে পারতেন। বাবা বেকহ্যাম অবশ্য তার সব ছেলে সন্তানকে ফুটবলার বানাচ্ছেন। তাদের তিনজনই আর্সেনালের একাডেমিতে ট্রেইনিং নিয়েছে।
১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় দলে অভিষেক হয় ডেভিড বেকহ্যামের। '৯৮ সালের বিশ্বকাপ তার জীবনের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট ছিলো। সেবার আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচ ২-২ গোলে শেষ হওয়ার পর সিমিওনেকে লাথি দেয়ায় লাল কার্ড দেখেন বেকহ্যাম। যদিও সে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালেই বিদায় নেয় ইংল্যান্ড। দেশে ফিরে জনগন ও মিডিয়ার প্রচন্ড রোষানলে পড়তে হয় বেকহ্যামকে। পরে বেকহ্যাম প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, 'আমি এজন্য সবসময় আফসোস করবো। আমি সত্যিই দুখিত এবং সকল ফ্যানদের বলতে চাই আমি কতটুকু গভীর থেকে দুঃখিত।'
২০০২ বিশ্বকাপে বেকহ্যাম জাতীয় দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন। বেকহ্যাম প্রথম ইংরেজ ফুটবলার যে কিনা টানা ৩ বিশ্বকাপে গোল করেছেন। পাশাপাশি বেকহাম-ই একমাত্র ইংলিশ ফুটবলার যে কিনা চ্যাম্পিয়নস লীগে ১০০ ম্যাচ খেলেছেন।
বেকহ্যাম যেখানে গিয়েছেন সেখানেই জিতেছেন। ম্যাঞ্চেষ্টারে ট্রেবলের পাশাপাশি ৬ লীগ টাইটেল জিতে চলে যান মাদ্রিদে। কিন্তু মাদ্রিদে প্রথম ৩ সিজনে লীগ জিততে না পারলেও শেষের সিজনে এসে তারা লা-লীগা জিতে নেয়। ২০১১-২০১২ সালে টানা দু'বার লীগ জিতে লা- গ্যালাক্সি। এবং ১৯৯৪ সালের পর প্রথমবারের মতো লীগ-ওয়ান জিতে পিসজি; বেকহ্যাম যোগ দেয়ার পরই! ২০১৩ সালে ফুটবলকে চিরতরে বিদায় জানান এই কিংবদন্তি। '১৪ তে কিনে নেন ইন্টার মিমামি ক্লাব; পাশাপাশি সল্টফোর্ড ক্লাবের ১০% মালিকানাও তার।
ফুটবল থেকে অবসর নিলেও বিশ্বের নামি-দামি শ'খানেক ব্রান্ডের এডভার্টাইনিংয়ের সাথে যুক্ত আছেন বেকহ্যাম। বলা হয়ে থাকে *পশ-বেক* দম্পতির মোট সম্পত্তি ইংল্যান্ডের কুইনের চেয়েও বেশি! তাই টাকাপয়সার ব্যাপারে না গেলাম। বেকহ্যাম বর্তমানে জাতিসংঘের 'নো ম্যালেরিয়া' তহবিলের সাথে কাজ করছেন; পাশাপাশি ইউনিসেফের দূত হিসেবেও কাজ করে যাচ্ছেন।
'তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও বেকহ্যাম? প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা প্রশ্ন করেন; বেকহ্যাম বলেন-
: বড় হয়ে আমি ফুটবলার হতে চাই;
নাহ, আমি বলছি জীবন ধারনের জন্য তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও?
: ফুটবলার হতে চাই, মিস...
বেকহামকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন ডেভিড বেকহ্যাম।
® আহমদ আতিকুজ্জামান।
- 0 মন্তব্য