• ফুটবল

জিদান মিয়ার লাইভ আড্ডা

পোস্টটি ১৭১৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ফুটবলার জিদান মিয়া ২০০১ সালের ৭ই মার্চ লন্ডনে এক বাংলাদেশি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জিদানের ফুটবলের হাতেখড়ি ডেভিড বেকহামের একাডেমিতে। সেখানে ২ বছর প্রশিক্ষণ নেয়ার পর জিদান খেলেছেন বেশ কয়েকটি যুবদলে। ইংল্যান্ড, ওয়েলস ছাড়াও খেলেছেন ডেনমার্ক, স্পেন, হংকং ও থাইল্যান্ডে। পেশাদার ফুটবলার হওয়ার লক্ষ্যে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে পারি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। বর্তমানে আছেন ইংলিশ ক্লাব ব্রমলি এফসিতে। সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে যুক্তরাজ্য থেকে সংযুক্ত হন জিদান মিয়া। লাইভটি সম্প্রচারিত হয় KICK OFF 2.0 ফেসবুক পেইজে এবং সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন রাইয়ান কবির রাজিন। লাইভ আড্ডায় জিদান মিয়া এবং তাঁর বাবা সুফিয়ান মিয়া জিদানকে নিয়ে ভক্তদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রশ্ন জিদানের নামের পেছনের গল্প বলেছেন জিদানের বাবা, "জিদান নামটি আমাদের পছন্দ ছিল, জিনেদিন জিদানকেও পছন্দ করতাম। সেখান থেকেই ছেলের নাম রাখা হয় জিদান।" যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ছয় বছর কাটিয়েছেন জিদান। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুক্তরাজ্যের ট্রেনিং সুবিধার পার্থক্যের বিষয়ে বলেছেন, "যুক্তরাজ্যে ফুটবলটা কিছুটা বেশি শারীরিক। শারীরিক সক্ষমতার উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এমনটা নয়, সেখানের ফুটবল ছকনির্ভর, তুলনামূলক কঠিন, অনেক বেশি প্রযুক্তিগত। সেখানের সুযোগ-সুবিধা অসাধারণ, খুব সম্ভবত বিশ্বেরই অন্যতম সেরা। একজন অ্যাথলেটের জন্য এটা অনেক বেশি দরকারি। মাঝের ছয় বছর জিদান ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে, তখনকার গল্পটা জানিয়েছেন জিদানের বাবা, "জিদান আর্সেনাল ডেভেলপমেন্ট একাডেমিতে থাকাকালীন মেন্টর তাফ রহমান জিদানের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পরামর্শ দেন। জিদানের গতি, স্কিল, ক্ষিপ্রতা, টেকনিকসহ নানান বিষয়ে উন্নতির জন্য তাফ জিদানের বাবা-মা কে এই পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ৩ সপ্তাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান জিদান। যুক্তরাষ্ট্রের মাইকেল জনসন ট্রেনিং সেন্টারের পরিচালক ব্রায়ান মেককল জিদানের খেলা দেখে বেশ পছন্দ করেন। জিদানের দ্রুত শিখে ফেলার ক্ষমতা, দক্ষতা, সামর্থ্য সবকিছুই মুগ্ধ করে মেককলকে। জিদানকে স্কলারশিপের প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং আমরা মুগ্ধ হয়ে যাই, কী দারুণ একটি সুযোগ!! সেই ৩ সপ্তাহে জিদান খুব দ্রুত উন্নতি করেছিল। সেখানকার কোচিংয়ের ধরণ, পরিবেশ, কৌশল, সবকিছুই ছিল মনে রাখার মত এবং অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা। ৩ মাস পরে আমরা ইংল্যান্ডে ফিরে আসি। ২০১৩ তে আবারো এক মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাই। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেই জিদানের মা এবং ছোট বোন যুক্তরাষ্ট্রে থাকবে এবং আমি ও তাঁর বড় বোন থাকব যুক্তরাজ্যে, কারণ আমাদের ব্যবসা, পরিবার সবকিছুই যুক্তরাজ্যে ছিল আবার সেই বয়সে জিদানকে আমরা একা ছাড়তেও চাচ্ছিলাম না। পরবর্তীতে জিদান আর যুক্তরাজ্যে ফিরতে চাচ্ছিল না এবং সেটাই ছিল উত্তম সিদ্ধান্ত। খুব অল্প সময়েই ওর মধ্যে অনেক পরিবর্তন দেখতে পেলাম আমরা। ট্রেনিং সুবিধা, কোচিং স্টাইল, জীবনযাপন সবকিছুতেই পরিবর্তন আসতে লাগল এবং খুব অল্প সময়েই সে দারুণ উন্নতি করতে শুরু করল, যেটা ছিল সত্যিই অসাধারণ। সেখানকার স্কলারশিপ পাওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়স ছিল জিদানের, তবুও সে যথেষ্ট ভালো করতে শুরু করল। পরবর্তীতে টেক্সাসের এফসি ডালাসে যাওয়ার পর সে পেশাদার অ্যাথলেটদের সাথে ট্রেনিং করত এবং আমরা জিদানের অগ্রগতিতে মুগ্ধ হয়ে যাই। সেখানে সে পড়ালেখার পাশাপাশি খেলা চালিয়ে যাচ্ছিল। এটা ছিল বেশ উপভোগ্য এবং অসাধারণ একটি অভিজ্ঞতা।" ডেভিড বেকহাম একাডেমিতে বেকহামের ভাতিজা ফ্রেডির সাথে খেলার সুযোগ হয়েছিল জিদানের, জানিয়েছেন সেই অভিজ্ঞতার কথাও। তবে সময় জটিলতাসহ নানা কারণে বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে তেমন একটা খোঁজখবর তেমন একটা রাখেন না। জানিয়েছেন ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার ইচ্ছা আছে। বাংলাদেশের হয়ে খেলার ব্যাপারে এখনো যোগাযোগ করা হয় নি, তবে করা হলে ইচ্ছা আছে দেশের হয়ে মাঠে নামার, জানিয়েছেন সেটাও। ভক্তদের করা অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন জিদান। জিদানের প্রিয় বাংলা খাবার আম, ঘুরতে পছন্দ করেন মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। যেকোনো ইউরোপিয়ান ক্লাবের হয়ে খেলার সুযোগ পেলে খেলতে চান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে। যেকোনো কোচের অধীনে খেলতে পারলে বেছে নিতেন পেপ গার্দিওলাকে। জিদানের সবচেয়ে পছন্দের ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। আধো বাংলায় বলেছেন বাংলায় বলেছেন আসতে চান বাংলাদেশে। জিদানের বাবা সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন জিদানের জন্য। হয়ত ভবিষ্যৎে কোন একদিন বাংলাদেশের জার্সিতে দেখা গেলেও যেতে পারে জিদান মিয়াকে। জিদানের ভবিষ্যৎের জন্য রইল অনেক শুভকামনা।