• ফুটবল

জামাল ভুঁইয়ার আইএসএল ভাবনা

পোস্টটি ২০৯৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

এফসি কোপেনহেগেনের প্রতিভাবান তরুণ জামাল ভুঁইয়া ডেনমার্কে নিজের জাত চেনাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি বেড়ে উঠেছিলেন এক অপ্রীতিকর পরিবেশের মাঝে। ১৩ বারের ড্যানিশ চ্যাম্পিয়ন এফসি কোপেনহেগেনের সিনিয়র দলে খেলার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়মার করে দেয় ৪ টা গুলি। জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া সেই ঘটনা নিয়ে জামাল বলেন, "আমার জন্ম ডেনমার্কে, বেড়ে ওঠাও সেখানেই। আমি সত্যিই ডেনমার্ককে অনেক ভালোবাসি। আমার মনে হয় সব জায়গাতেই এমনকিছু মানুষ থাকে যাদের মন খুবই ছোট। আমাকে ৪টা গুলি খেতে হয়েছিল, তখন আমি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। তখন আমার বয়স মোটে ১৭, এফসি কোপেনহেগেনের হয়ে খেলি। তারা আমায় অনেক সহযোগিতা করেছে, কারণ তারা জানত আমি খুবই কঠিন একটি পরিবেশ থেকে এসেছি।"

২০১৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে প্রথম প্রবাসী বাংলাদেশি ফুটবলার হিসেবে অভিষেক হয় জামালের। শেকড়ের টানে বাংলায় ফিরে আসেন জামাল। নিকোলাস বেন্ডটনার এবং থমাস ডিলেনির মত বিখ্যাত ফুটবলারদের সাথেও খেলেছেন জামাল ভুঁইয়া। চাইলে ডেনমার্কের হয়ে পুরো ক্যারিয়ারটাই কাটিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু বেছে নিয়েছেন বাংলার লাল-সবুজ জার্সিটাকেই। এ বিষয়ে জামাল বলেন, "আমি বাংলাদেশকেই বেছে নিয়েছি কারণ আমার বাবা-মা সবসময় আমাকে বলতেন আমি যেন আমার শেকড়কে ভুলে না যাই। তখনই আমার মাথায় কাজ করত যে আমি একদিন বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। আমার কিছু সতীর্থ ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোয় খেলছে। কিন্তু আমি কখনোই আমার ক্যারিয়ার নিয়ে দুঃখ করি না।" জামালের এশিয়ান ঘরোয়া লীগে যাত্রা ২০১৪-১৫ মৌসুমে, শেখ জামাল ধানমন্ডিতে। অভিষেক মৌসুমেই জেতেন লীগ শিরোপা। দুই মৌসুম পর ধানমন্ডির ক্লাব ছেড়ে নাম লেখান সাইফ স্পোর্টিংয়ে। বাংলাদেশের হয়ে ৪৪ ম্যাচ খেলেই পরিণত হয়েছেন দলের ভিত্তিতে। ভক্তদের কাছেও পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। এশিয়া এবং ইউরোপ দুই জায়গাতেই ফুটবল খেলে দুই জায়গার পার্থক্যটাও ব্যাখ্যা করেছেন, "আমি যখন এখানে প্রথম খেলতে আসি, ইউরোপের সাথে এখানকার ফুটবলের মূল পার্থক্যটা হলো এখানের ফুটবল ফুটবলীয় তাল এবং কৌশলগত দিক থেকে কিছুটা নিম্নমানের।"

এছাড়াও অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর জামাল বলেছিলেন, "আমি সবসময়ই মাঠে ১০০% এর চেয়ে বেশি দেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ আমি জানি মানুষ আমাকে দেখছে। আমি সর্বদাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পছন্দ করি এবং জয়ের জন্য সবকিছু করতেই প্রস্তুত। কোনো সতীর্থকে যদি ম্যাচে বা প্র‍্যাকটিসে অমনোযোগী হতে দেখি, আমি মনে করি তাদের শুধরে দেওয়াটাও আমারই দায়িত্ব।"

জামাল নিবিড়ভাবে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ(আইএসএল) পর্যবেক্ষণ করছেন এবং এই লিগে খেলার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন। যেহেতু আইএসএলে এশিয়ান কোটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেক্ষেত্রে জামালের আইএসএলে খেলার সম্ভাবনা স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে। ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে দারুণ পারফরম্যান্সের পর আইএসএলের ক্লাবগুলোর নজরে জামালের থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। যদি সকল সম্ভাবনাকে সত্য করে শেষমেশ আইএসএলের কোনো দলে জামাল নাম লিখিয়েই ফেলেন, তবে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে আইএসএলে দল পাবেন জামাল ভুঁইয়া। এর আগে মামুনুল ইসলাম নাম লিখিয়েছিলেন অ্যাটলেটিকো ডি কোলকাতায়।

আইএসএল নিয়ে সম্প্রতি জামাল বলেন, "আইএসএল আমার চিন্তায় আছে। আমার ভালো একজন বন্ধু ডেভিড উইলিয়ামস এটিকে মোহনবাগানে খেলে। ওর সাথে আমি ডেনমার্কে খেলেছিলাম, আইএসএলের ব্যাপারে তার সাথে আমার কথা হয়েছে। আমি বেশ কয়েকবার ভারতে গিয়েছি। সেখানকার পরিবেশ, মানুষজন সবকিছুই দারুণ। আইএসএলের দলগুলোও বেশ গোছানো। আমার মনে হয় আমি যদি আইএসএলে খেলতে পারি সেটা বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য নিঃসন্দেহে বিরাট কিছু হবে। যদি ভারতীয় কোনো দল আমাকে সাইন করায় তারা অবশ্যই নতুন অনেক ভক্ত এবং টিভি দর্শক পাবে। কারণ দেশের মানুষ আমাকে অনুসরণ করার জন্য সবকিছুই করবে। এমনও হতে পারে আমি কিছু স্পন্সর প্রতিষ্ঠানকে আকৃষ্ট করতে পারব, যেহেতু সেখানে বাংলাদেশি অধিনায়ক থাকবে সেক্ষেত্রে মানুষের কৌতূহলও বাড়বে। আশা করছি কোনো ভারতীয় ক্লাবের সাথে শীঘ্রই চুক্তি করতে পারব। যদি আইএসএলে যোগ দেই, আমার লক্ষ্য হবে আইএসএল শিরোপা জয়।"

বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার আগামীর জন্য রইল অনেক শুভকামনা।