ক্লাব ডিপোর্তিভো প্যালেস্তিনো - ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রতিবাদী অন্য এক ভাষা!
পোস্টটি ১৪৪৬ বার পঠিত হয়েছেআঠারো শতকের মাঝামাঝি ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিশাল সংখ্যক ফিলিস্তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন লাতিন আমেরিকায়; উনিশ শতকের মাঝামাঝি ফিলিস্তিন যুদ্ধের পর আরও একবার দেশত্যাগী এই ফিলিস্তিনিদের বেশির ভাগই অভিবাসী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন চিলিতে। সেখানেই তাই গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচের বাইরে সবচেয়ে বড় ফিলিস্তিনি কমিউনিটি।
সেই ১৯২০ সালে ঘটনা; তখনকার একটি লোকাল টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার জন্য সেই অভিবাসীরাই একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম ছিলো - প্যালেস্তিনো!
১৯৫৫ সালে চিলি ফুটবল ফেডারেশন সর্বপ্রথম প্রফেশনাল লীগ চালু করলে দেপোর্তিভো প্যালেস্তিনো নামে এ ক্লাবটি দ্বিতীয় বিভাগে জায়গা পান, সেখান থেকেই ধীরে ধীরে যেটি নিজের জায়গা করে নিয়েছে চিলিয়ান ফুটবলে এবং লাতিন আমেরিকান ফুটবলেও।
তৎকালীন অভিবাসীরা এই ফুটবল ক্লাবের মাঝেই নিজেদের নতুন একটা পরিচয় খুঁজে পেয়েছিলেন; বাস্তুহারা জীবনের যেইটুকু উন্মাদনা তার সবই ঐ ছোট্ট ক্লাবটাকে ঘিরেই তখন শুরু তাদের। যে উন্মাদনা একটা সময় ছুঁয়ে যায় করে হাজার মাইল দূরের ফিলিস্তিনের জনগণকেও, ভিনদেশের ওই ক্লাবের মাঝেই আত্মিক সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন সবসময়। আর সময়ের ব্যবধানে প্যালেস্টিনো হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদী অন্য এক ভাষা!
আর সেই ভাষাতেই সর্বশেষ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের জন্য পূর্ব জেরুজালেমের বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার সম্ভাবনায় আল-আকসা মসজিদ ও এর পাশে যে সহিংসতার ঘটণা ঘটছে, ইজরাইলি সেই আগ্রাসনের প্রতিবাদে দেপোর্তিভো প্যালেস্তিনো মাঠেই করেছেন প্রতিবাদ! পরণে ফিলিস্তিনিদের কেফিয়েহ জড়িয়ে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থন!
একটা সময় কেবল আরব বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়েরাই খেলতেন প্যালেস্তিনোতে, কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে টিকে থাকার জন্য পরে সেই নীতি থেকে সরে আসে ক্লাবটি, এখন বেশির ভাগই চিলিয়ান ও আর্জেন্টাইন ফুটবলার। তবুও খেলোয়াড়েরা ফিলিস্তিনিদের আর্তনাদে কেঁপে উঠেন, হাজার মেইল দুরের মানুষগুলোর জন্যে সমব্যথিত হোন! হোক না তারা আর্জেন্টাইন, হোক না তারা চিলিয়ান, জার্সিতে তো সেই ফিলিস্তিনের কালো-লাল-সবুজ পতাকার রং, জার্সিতে তো সেই অনুভূতি, জার্সিতে তো সেই নির্যাতিত ফিলিস্তিনি অভিবাসীদের রক্ত আর ঘামের পরশ, যাদের উত্তরসুরিরা আজো নির্যাতিত হচ্ছেন, রক্ত দিচ্ছেন!
একবার জার্সিতে ফিলিস্তিনের ম্যাপ আঁকায়, লীগ থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলো ক্লাবটি; তবুও সেই পতাকার প্রতি ভালোবাসাই প্যালেস্তিনো ক্লাবের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের বেঁধে রেখেছে একই সুতোয়, যে ভালোবাসার বাঁধন খুব সহজে আলগা হবার নয়! আর তাই তো এই সমর্থন, এই প্রতিবাদ!
ক্লাবটির ওয়েবসাইটে বড় করে লেখা, "For us, free Palestine will always be historical Palestine, nothing less." ; জানান দেয় ফুটবল মাঝেমধ্যে কেবলই খেলা নয়; কখনো প্রতিবাদের ভাষা কখনো লাখো নির্যাতিত মানুষের হৃদস্পন্দন!
- 0 মন্তব্য