• ফুটবল

ম্যানসিটির হয়ে রুপকথা লিখতে পারবেন মাহরেজ?

পোস্টটি ১৪১৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

চ্যাম্পিয়ন্স  লীগের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো ফাইনালে উঠেছে ম্যানচেস্টার সিটি। এর পিছনে সবচেয়ে বড় ভুমিকাটা যাঁর। তিনি হচ্ছেন রিয়াদ করিম মাহরেজ। সেমিফাইনালে পিএসজিকে তো একাই হারিয়ে দিয়েছেন এই আলজেরিয়ান। দুই লেগ মিলিয়ে প্যারিসের ক্লাবটিকে ৪ গোল দিয়েছে সিটিজেনরা। চার গোলের তিনটাই যে রিয়াদ মাহরেজের করা! 

রিয়াদ মাহরেজের জন্ম ১৯৯১ সালে ফ্রান্সের সার্সেল  শহরে। তাঁর বাবা ও মা উভয়ই ছিলেন আলজেরিয়ান। ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করলেও,  মাহরেজ বড় হয়েছেন আলজেরিয়ায়। শৈশবে বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলেন বর্তমান  ফ্রেঞ্চ ও মোনাকো স্ট্রাইকার ভিসাম বিন ইয়েদেরকে। 

মাহরেজের বয়স যখন মাত্র ১৫ বছর, তখন তাঁর বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা যান! বাবা আলজেরিয়ার  জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন। জন্ম ফ্রান্সে হলেও, বাবার পথ অনুসরণ করতে হয়তো আলজেরিয়াকে বেছে নিয়েছিলেন।  

বা পায়ের এই ফুটবলার মূলত রাইট উইঙ্গার হিসেবে পরিচিত পেলেও,  মাঠে যেকোনো পজিশনে নিজের সামর্থ্যের জানান দিতে সক্ষম। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার,  সেন্টার ফরোয়ার্ড; 'ফলস ৯' যেকোনো পজিশনে তিঁনি দাপটের সাথে খেলতে পারেন।  গতি, বিচক্ষণতা, ভারসাম্য ও  ড্রিবলিং দক্ষতা তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। শুধু গোল করতে নয়, গোল বানিয়ে দিতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার।  

মাহরেজের ইয়ুথ ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে।  ফ্রেঞ্চ ক্লাব এএএস সার্সেলের  হয়ে। 

২০০৯ সালে তাঁর সিনিয়র ক্যারিয়ার শুরু হয়।ফ্রেঞ্চ ক্লাব  ক্যাম্পেই  যোগ দেন  তিঁনি। প্রথম সিজনে ২২ ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ২ গোল। ফ্রান্সের চতুর্থ ডিভিশনের  এই ক্লাবে বেশিদিন স্থায়ী হয়নি তাঁর ক্যারিয়ার।বছর খানেক পরে  যোগ দেন আরেক ক্লাব লু আভরেতে। এটি ফ্রান্সের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন ক্লাব গুলোর একটা। 

লু আভরেতে খেলার সময় ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপের ক্লাব লেস্টার সিটির স্কাউট স্টিভ ওয়ালশের নজরে পড়েন রিয়াদ মাহরেজ। রিয়াদ মাহরেজ এর আগে লেস্টার সিটির নামই শুনেননি! তাঁর না কি মনে হয়েছিল এটা রাগবি ক্লাব! রিয়াদের পরিবার ও বন্ধুরা  শারীরিক দিক ও সেখানের অবস্থা চিন্তা করে  ইংলিশ ফুটবলে তাঁর যাওয়া ঠিক হবে কি না এটা নিয়ে ছিল সন্দিহান। তাঁরা মনে করতো, ইংল্যান্ডের চেয়ে স্পেনেই বেশি মানিয়ে নিতে পারবে মাহরেজ।শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালে লেস্টারে নাম লেখান রিয়াদ মাহরেজ। 

লেস্টারে যোগ দেওয়ার পর যেন মাহরেজের জীবনটাই বদলে গেল। রিয়াদ মাহরেজ তারকা হওয়ার পিছনে লেস্টারের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা। নিজেকে চিনিয়েছেন তো এই ক্লাবে খেলে। লেস্টার সিটিকে চ্যাম্পিয়নশীপ জিততে সহায়তা করেন। গত দশ বছরে লেস্টার প্রথম বারের মতো প্রিমিয়ার লীগে খেলার সুযোগ পায় রিয়াদ মাহরেজদের হাত ধরেই।  

১৬ আগস্ট, ২০১৪। প্রিমিয়ার লীগে অভিষেক হয় রিয়াদ মাহরেজের। তবে, তাঁকে প্রথম গোল পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৪ অক্টোবর পর্যন্ত।  প্রথম মৌসুমে ৩০ ম্যাচে  চার গোল ও তিন অ্যাসিস্ট করেন এই আলজেরিয়ান ফুটবলার। 

প্রথম মৌসুমে যেখানে ৩০ ম্যাচে করেছেন ৪ গোল, সেখানে পরের মৌসুমে প্রথম ৩ ম্যাচেই ৪ গোলের দেখা পেয়ে যান এই উইঙ্গার। পুরো মৌসুমে ১৭ গোল এবং ১১ অ্যাসিস্ট করে  নজর কাড়েন।

একটা দলের  দশ বছর পর প্রিমিয়ার লীগে সুযোগ পাওয়ার পর দ্বিতীয়  মৌসুমেই প্রিমিয়ার লীগ জয়! শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও, এটাই তো সত্য। আসল নায়ক তো রিয়াদ মাহরেজ। স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের বর্ষসেরা ফুটবলের পুরষ্কার। প্রথম বারের মতো লেস্টার সিটির হয়ে প্রিমিয়ার লীগ জিতে রুপকথার জন্ম দেন। প্রথম আলজেরিয়ান হিসেবে জিতে নেন প্রিমিয়ার লীগ। বছর চারেকের ক্যারিয়ারে লেস্টারের হয়ে ১৮৪ ম্যাচে করেছেন ৫০ গোল। 

১০ জুলাই, ২০১৮। লেস্টার সিটির সাথে দীর্ঘ সম্পর্কের ইতি টেনে পাড়ি জমান আরেক ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার সিটিতে। প্রথম মৌসুমে সিটিজেনদের হয়ে পেয়েছেন সাফল্য।জিতেছেন প্রিমিয়ার লীগ।

ম্যানসিটির হয়ে ২টা প্রিমিয়ার লীগ, ৩ টা লীগ কাপ, ১ টা এফএ কাপ; ১ টা কমিউনিটি শিল্ড জিতেছেন।  ম্যানসিটিকে নিয়ে গেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে। প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতার সুযোগ মাহরেজের সামনে।  

আলজেরিয়ার জার্সিতে ৪১ ম্যাচে করেছেন ১৯ গোল। ২০১৯ সালে জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন আফ্রিকা কাপ অব নেশন্স।  

রিয়াদ মাহরেজ যখন ফ্রান্সের চতুর্থ বিভাগের ক্লাব ক্যাম্পেইতে  ট্রায়াল দেওয়ার সুযোগ পায়। তাঁদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। ট্রেনের টিকেটের জন্য  তাঁর খরচ হয়েছিল ১৯৩ ডলারস। সে তাঁর মা'কে বলেছিল, " চিন্তা করো না।এটা আমি পরিশোধ করে দিবে।" সে সত্যি সত্যি মা'কে দেওয়া কথা রেখেছে। 

ম্যানসিটিকে ইউরোপের সেরা বানানোর সুযোগ মাহরেজের সামনে। লেস্টার সিটির হয়ে  প্রিমিয়ার লীগ জিতা যদি রুপকথার প্রথম অধ্যায় হয়। ম্যানসিটির হয়ে  চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিততে পারাটা হবে রুপকথার দ্বিতীয় অধ্যায়। পারবেন তো রিয়াদ মাহরেজ?