• ফুটবল

এমিলিয়ানো মার্টিনেজঃ আর্জেন্টিনার গোলবারের নয়া অতন্দ্র প্রহরী

পোস্টটি ১২৫৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ নামটা একটা গোষ্ঠীর নিকট খুব ভালো ভাবেই পরিচিত আবার এক গোষ্ঠীর কাছে একেবারেই নতুন। যারা টুকটাক খেলাধুলার খবর রাখেন তারা এমি মার্টিনেজকে বেশ ভালোভাবেই চেনেন, আর যারা ফ্যান্টাসি ম্যানেজার তাদের কাছে তো আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছুই নেই!
২০১০ সালে জীবিকার সন্ধানে আর্সেনালে জয়েন দেয়া ছোট্ট ছেলেটি ভেবেছিল একসময় আর্সেনালের গোলবার সামলাবেন। কিন্তু সবার ভাগ্যে হয়ত তা থাকে না, প্রায় দশ বছর আর্সেনালে খেলার পরেও কখনোই সুযোগ তো সেভাবে পানও নি, আবার হয়তবা ম্যানেজমেন্টও তাকে সুযোগ দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেন নি কেননা তার যে আহামরি তেমন কোন পারফরম্যান্স ছিল না। সেজন্য আর্সেনাল থেকে ধারে অক্সফোর্ড ইউনাইটেড, রিডিং, উলভারহ্যাম্পটন হয়ে স্প্যানিশ ক্লাব গেতাফে সহ আরো অনেক ক্লাবে খেলেছেন আবার আর্সেনালে ফিরেছেন এভাবেই চলছিল তার জীবন।
তবে এত ব্যর্থতার ভেতরেই সুযোগ একবার চলে আসে।
ভাগ্যদেবীর অসীম কৃপা কিনা অন্য কোন কারণেই হোক নিয়মিত গোলরক্ষক লেনোর ইঞ্জুরির কারণে এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে সুযোগ করে দেয় আর্টেটা। সেই সুযোগকে খুবই ভালোভাবে কাজে লাগালেন তিনি। ২০১৯-২০ মৌসুমের শেষের দিকে আর্সেনাল দলের মূল কিপার হিসাবে জায়গা পান মার্টিনেজ। এই শেষ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের ভেতর একটি ছিল আর্সেনাল বনাম চেলসির এফ এ কাপ ফাইনাল। তার দুর্দান্ত বডি রিফ্লেক্স এবং অতি মানবীয় সেভের কারণে সেই ম্যাচটি ২-১ এ জিতিয়ে ম্যাচ বের করতে সাহায্য করেন এমি। এভাবেই লাইম লাইটে আসতে থাকলেও এমি চাইছিলো নিজেকে প্রথম কিপার হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে।
এজন্য সে ছোটবেলার ক্লাব আর্সেনালকে বিদায় জানাতে চাইলো কারণ লেনো নিজেও ক্লাবের হয়ে অসাধারণ পারফর্ম করছিল এবং এমি জানত এই দলে সে প্রথম কিপার হিসেবে চান্স পাবে না। তাই ক্লাব তাকে বিক্রি করে দিলো এস্টন ভিলার কাছে। এস্টন ভিলায় জয়েন করায় অনেকে এটাকে এক ধাপ পেছানো বললেও মার্টিনেজ বলেন এটা অবশ্যই তার ক্যারিয়ারের জন্য এক ধাপ এগিয়া যাওয়া। তার প্রতিদান তিনি দিলেন খেলার মাঠেই, এস্টন ভিলার মত মিড টেবিল ক্লাবের হয়ে এই সিজনে পেয়েছেন ১৫ টি ক্লিনশিট। সিটির এডারসন, চেলসির মেন্দির পরেই সর্বোচ্চ ক্লিনশিট রাখতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। যদিও ক্লিনশিট দিয়ে তার সক্ষমতা যাচাই করা বোকামি, কারণ সিটির ডিফেন্স লাইন কিংবা চেলসির ডিফেন্স লাইনের সমান কোন অংশেই নয় এস্টন ভিলার। সেই ক্লাবে ১৫ টা ক্লিনশিট রাখা অতিমানবীয় বলা চলেই। এভাবেই ধীরে ধীরে নিজের সামর্থ্যের জানান দিতে থাকে মার্টিনেজ।
তবে এতসব কিছুর পরেও আর্জেন্টিনা দলের প্রথম কিপার তিনি হতে পারছিলেন না, রিভারপ্লেটের নিয়মিত কিপার ফ্রাংকো আরমানি কোচের প্রথম পছন্দ, সেইসাথে আর্জেন্টাইনদের কাছেও সে পছন্দের তাই মার্টিনেজের সুযোগ পাওয়ার প্রক্রিয়াটাও একটু জটিল হতে থাকে।
তবে এখানেও ভাগ্যের ছোয়া পেয়ে যান মার্টিনেজ। বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব এর ম্যাচের আগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন আরমানি। সেই সুযোগটি দুর্দান্তভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হন তিনি, চিলির বিপক্ষে পেনাল্টি সেইভ সহ অসাধারণ সব সেইভ দিয়ে কোচের প্রথম পছন্দের কিপার হয়ে নিজের জাত চেনাতে থাকেন মার্টিনেজ। সেই ফলশ্রুতিতে ডাক পেয়ে যান কোপা আমেরিকার মূল দলে, এবং তার শেষটা তো আমরা দেখতেই পেলাম কলম্বিয়ার সাথে। ২০১৪ সালের রোমেরোর পরে এই প্রথম একটা ভালো কিপার পেয়েছে আর্জেন্টিনা যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারে আর্জেন্টিনার ভক্ত সমর্থকরা।
মার্টিনেজের নৈপুণ্যে দল ওঠে কোপা আমেরিকার ফাইনালে। ফাইনালের প্রতিপক্ষ ছিল স্বাগতিক দল ব্রাজিল যারা ১৯১৬ সাল থেকে নিজের দেশে হওয়া কোনো ফাইনাল ম্যাচ হারে নাই, এমনকি ২০১৮ বিশ্বকাপের বেলজিয়ামের সাথে হারের পর তাদের হারানোর কারিগরদের একজনও এই এমি। এরকম একটি দলকে হারিয়ে তাদের মারাকানাতেই তাদের স্বপ্নের সলিল সমাধি করার কাজে রক্ষণভাগের প্লেয়ারদের সাপোর্ট দিয়েছেন এই আর্জেন্টাইন নয়া বাজপাখি। আটকে রাখতে পেরেছিলেন নেইমার, পাকুয়েতো, রিচার্লিসন, গাবিদের। ৫৫ মিনিটে রিচার্লিসনের শট, শেষ মুহুর্তে গাবির শট আটকে দিয়েছিলেন তিনি। অবশেষে মার্টিনেজ সফল, সফল করেছেন আর্জেন্টিনাসহ প্রত্যেকটি ভক্ত সমর্থককে।
লেনোর ইঞ্জুরি দিয়ে দলে প্রবেশ, আরমানির কোভিড পজিটিভের রেজাল্টে জাতীয় দলের অভিষেক এবং জাতীয় দলে থিতু হওয়া, সবকিছুই সেন রোমাঞ্চের মত। তিনি সফল, তিনি পেরেছেন মেসির জন্য একটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রফি জিততে, আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপাখরা ভেঙে নতুন ইতিহাসের সূচনা করতে। এক সময়ের নষ্ট হতে যাওয়া ট্যালেন্ট এখন পুরো দলের মধ্যমণি। সময় বোধহয় এভাবেই পালটায়, চেষ্টা এবং অধ্যবসায় মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে তার অনন্য দৃষ্টি তো স্থাপন করেই রাখলেন নয়া বাজপাখি এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।