দিয়েগো মারাদোনাঃ ছবিতে ছবিতে এক জীবন!
পোস্টটি ৮০০ বার পঠিত হয়েছেদিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা- ফুটবলারের চাইতে যিনি আপামর সমর্থকের কাছে বিশেষ কিছুই। মাঠ ও মাঠের বাইরে- সবখানে তিনি জন্ম দিয়েছিলেন আলোচনার। সেই আলোচনা কখনও ছিল সম্মহিত ফুটবল সমর্থকের, কখনও ছিল নিন্দুকের। ৩০ সেপ্টেম্বর মারাদোনার জন্মতিথিতে তাই ‘ছবিতে ছবিতে’ মারাদোনার জীবন দেখার এক প্রয়াস থাকবে আমাদের।
[১]
ষোলতম জন্মদিনের মাত্র ১০ দিন আগে আর্জেন্টাইন ক্লাব আর্জেন্টিনোস জুনিয়রের হয়ে দিয়েগো মারাদোনার অভিষেক হয়। ছবিতে দেখা যাচ্ছে দলের সতীর্থদের সাথে চা পানে ব্যাস্ত তিনি।
[২]
ফুটবলটা মারাদোনার থেকে যেন কখনওই দূরে সরতে চাইত না, এমনকি তিনি যখন পরিবার নিয়ে সামুদ্রিক বিচে সময় কাটাচ্ছেন ! ছবিতে তিনজনের মাঝে যাকে বসা অবস্থায় দেখতে পাচ্ছেন, তিনিই মারাদোনা!
[৩]
স্বাভাবিক ঢঙের তোয়াক্কা না করাটা যেন মারাদোনার রক্তেই ছিল। নাহলে কি আর কেউ এমন করে দেওয়ালে পা তুলে দিয়ে বই পড়ে?
[৪]
১৯৮২ সালের বিশ্বকাপ, যেটা কিনা আসলে ছিল দিয়েগোর প্রথম বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের লুদো কোয়েক মারাদোনাকে ফাউল করে বসেন। মারাদোনাকে থামানোর জন্যে তাঁর কাছে সম্ভবত এই একটা পথই জানা ছিল।
[৫]
মারাদোনা তখন খ্যাতির চূড়ায় উঠতে শুরু করেছেন। তবে চূড়ায় উঠলে কি হবে, নিজের শিকড়কে তিনি কখনোই ভুলে যাননি । আর তাই ১৯৮৩ সালে ছুটে আসেন বুয়েন্স এইরেসে, ঘুরে যান সেই মাঠটিতে যেখানে প্রথমবারের মত ফুটবল পায়ে নেমেছিলেন তিনি। ছবিতে আয়েশি ঢঙে মারাদোনাকে সেই মাঠেই দেখা যাচ্ছে।
[৬]
এটি নিতান্তই সাধারণ একটা ছবি। ওয়েম্বলির ফ্রেন্ডলি ম্যাচে বাঁ পায়ে জাদুকরি এক শট নিচ্ছেন তিনি। আর কে না জানে, এই বাঁ পায়ের জাদু দেখতেই তো দর্শকেরা স্টেডিয়ামে ছুটে আসত ।
[৭]
টটেনহাম হটস্পার- একমাত্র ইংলিশ ক্লাব যাদের ভাগ্যের শিঁকে ছিঁড়েছিল দিয়েগো মারাদোনাকে তাঁদের জার্সিতে খেলানোর। ১৯৮৬ সালের মে মাসের ঐ টেস্টিমোনিয়াল ম্যাচে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে মারাদোনা হোয়াইট হার্ট লেনের ৩০ হাজার দর্শককে দেখিয়েছিলেন, ঠিক কোন জিনিসটা তাদের চোখ কোনদিন দেখেনি!
[৮]
হ্যা, একবার ফুটবল মাঠে ঢুকলে চোখটা তাঁর শুধু ঐ ফুটবলের ওপরই থাকত!
[৯]
১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ‘হ্যান্ড অফ গড’। ইংলিশ গোলরক্ষক পিটার শিল্টনের চাইতে উঁচুতে লাফিয়ে হাত দিয়ে গোল করে তিনি যেটাকে বলেছিলেন ‘হ্যান্ড অফ গড’।
[১০]
মেক্সিকোর যে ফাইনালে মারাদোনা জাতীয় হিরো বনে গেলেন। এদিন পশ্চিম জার্মানীকে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে তিনি এনে দিয়েছিলেন বহু আরাধ্য সেই সোনালি ট্রফিটা- বিশ্বকাপ!
[১১]
বিশ্বকাপ জয়ের পর আবেগে ভেঙে পড়েন দিয়েগো মারাদোনা। গোটা একটা জাতি বিশ্বকাপ জিতে ফেললেও স্টেডিয়ামের সবার চোখ ঐদিন এই একজনের দিকেই ছিল- দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনা।
[১২]
শুধু আর্জেন্টিনাতেই নয়, নাপোলিকেও তিনি আনন্দে ভাসিয়েছেন। ইতালির এই শহরের মানুষকে তিনি বুঝতে শিখিয়েছিলেন, একটা ‘ডাবল’ এর স্বাদ কেমন হয়।
[১৩]
৭ নভেম্বর, ১৯৮৯। বুয়েন্স এইরেস। লুনা পার্ক স্টেডিয়ামে ক্লউদিয়া ভিলাফেনকে বিবাহোত্তর চুমু খাচ্ছেন দিয়েগো!
[১৪]
১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে ব্যার্থ যুবরাজের মত মাঠেই বসে পড়েন দিয়েগো!
[১৫]
১৯৯৪ বিশ্বকাপে গ্রীসের বিপক্ষে ৪-০ গোলে জয়ের ম্যাচে তৃতীয় গোলটি করে বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠেন দিয়েগো মারাদোনা। এই উদযাপন সম্ভবত মারাদোনা এরপর আরো অনেকবারই দেখে থাকবেন। কারণ এরপরই যে ড্রাগ কেলেঙ্কারিতে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যান তিনি।
[১৬]
শুধু বিশ্বকাপ নয়, মারাদোনা নেমেছিলেন বক্সিংয়ের মাঠেও। আর্জেন্টিনাতে ১৯৯৬ সালের এক এক্সিবিশন ম্যাচে তিনি বুট ছেড়ে নেমে পড়েন বক্সিং গ্লাভস হাতে জড়িয়ে।
[১৭]
বিতর্কতে জড়িয়ে ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছিলেন, তবে সেই বিতর্ক অবসরের পরও তাঁর পিছু ছাড়েনি। বরং অবসরের পর তাঁর জীবন যেন আরো বেশি করে অগোছালো হয়ে যায়। মারাদোনার স্বাস্থ্যও পড়তে থাকে ঝুঁকির মুখে। কিন্তু তিনি আর এসবে পাত্তা দিলেন কই। ২৮ মার্চ, ২০০০ এর যে ছবিটা এখানে দেখা যাচ্ছে , সিগার হাতে এই ছবিটা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার মাত্র কদিন পরেরই!
[১৮]
কোকেনের প্রতি মারাদোনার আসক্তি যখন তুঙ্গে উঠছে, সেইসাথে সেই আসক্তির প্রতি উদ্বেগ বাড়ছে সবার। সেরকম একটা সময়ে ২০০৪ সালে এক টেলিভিশন প্রোগ্রামে এসে মারাদোনা বলেন, তিনি এসবের ট্রিটমেন্ট নেবেন!
[১৯]
২০১০, অনেক বছর পর আবার আর্জেন্টাইন ফুটবলে ফিরেছিলেন মারাদোনা। তবে এবারের দান কোচ হয়ে! দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ মিশনে থাকার সময় সেবার একদিন বাচ্চাদের সাথে খুনশুটিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি!
[২০]
“ওয়ান আইকন টু এনাদার”- ২০১০ বিশ্বকাপ চলার সময় লিওনেল মেসির কোচ ছিলেন মারাদোনা। সম্ভবত নিজের মহত্ত্বের কোন উপায়ই বাতলে দিচ্ছিলেন মেসিকে। তবে তাতে অবশ্য লাভ হয়নি, এ ছবির ম্যাচটা আর্জেন্টিনা জার্মানীর কাছে হেরে যায় ৪-০ গোলের বিশাল ব্যাবধানে।
[২১]
কোচ থাকার সময় কখনওই কোচিংয়ের চূড়ায় উঠতে পারেননি তিনি। তবুও আজীবন সমর্থকদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। এই ছবিটা ২০২০ এর জানুয়ারির। জিমনেশিয়ার কোচ থাকার সময় সমর্থকদের হাত তুলে অভিবাদন জানাচ্ছেন মারাদোনা। ফুটবলের জাদুকরের এরপর আর মাঠে ফেরা হয়নি, চলে গেছেন না ফেরার দেশে!
তথ্যসূত্রঃ দ্যা অ্যাথলেটিক
- 0 মন্তব্য