লিটন, সৌম্য, কিংবা বাংলাদেশ- হাঁটুন আসিফ আলীর পথে
পোস্টটি ৯৩৩ বার পঠিত হয়েছেআসিফ আলী ছক্কা হাঁকাতে জানেন।
প্রতি ছয়ের মারে তার লেগেছে দশ বলেরও কম। ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে কমপক্ষে ৭৫০ বল খেলেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মাত্র ছয়জনই প্রতি ছয়ে বল নিয়েছেন ১০টির কম। তালিকার অন্যরা- আন্দ্রে রাসেল, কিয়েরন পোলার্ড, এভিন লুইস, নিকোলাস পুরান, রাহমানুল্লাহ গুরবাজ।
আসিফ আলী একজন বিগ হিটার।
ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ সয়লাব ক্রিকেটাঙ্গনের নানা পথে তারও বিচরণ ঘটে গেছে। সিপিএল, আফ্রিকার লিগ, নিজেদের পিএসএলসহ ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে তার স্ট্রাইক রেট ১৫৩.০৯। প্রতি ৪.৭৯ বলেই তার থেকে মিলেছে একেকটা বাউন্ডারি। পাকিস্তানের ঘরের ক্রিকেটে ‘পাওয়ার হিটার’ হিসেবে তার সুনাম বেশ!
কিন্ত সেই আসিফ যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার ছায়া হয়েই থাকলেন! বিশ্বকাপের আগে ২৭ ইনিংস খেলে পাকিস্তানের জার্সি গায়ে ১৬.৩৮ গড়ে রান ছিল ৩৪৪, এবং স্ট্রাইক রেট ১২৩.৭৪। সামর্থ্যের প্রতি সুবিচার করতে পারছিলেন না, তবু তার সামর্থ্যে বিশ্বাস রেখে পাকিস্তান তাকে সুযোগ দিয়ে গেছে। বিশেষ করে বলতে গেলে মিসবাহ উল হক। তবে একটা সময় তাকে বাদ পড়তেই হলো! বিশ্বকাপের আগে শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন এপ্রিলে, এরপর পাকিস্তানের ইংল্যান্ড সিরিজের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও ছিলেন না তিনি।
আসিফ আলীর হিটিং পাওয়ারে আরও একবার বিশ্বাস রাখতে চাইলো পাকিস্তান! বিশ্বকাপের দলে উঠে এলো তার নাম! সেই যে শুরু সমালোচনা। দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনেই একজন জিজ্ঞেস করে বসলেন, এই মাঝের সময়ে আসিফ কি করলেন যে তাকে আবার দলে নেওয়া হলো?
নির্বাচক মোহাম্মদ ওয়াসিমের কাছেও সেই একই কথাটা ছাড়া বলার মতো আর কিছু ছিল না, তার সক্ষমতায় আরও একবার আস্থা রাখতে চাইলেন।
পুরো ক্রিকেট মহলই এখন আসিফ আলীতে মুগ্ধ। সবচেয়ে খুশি বোধহয় এখন মোহাম্মদ ওয়াসিমই! কারো সামর্থ্যে ভরসা রাখলে সে পারফর্ম্যান্স দেখাতে ব্যর্থ হলে আক্ষেপ যেমন থাকে, সামর্থ্যের প্রমাণে খুশিরও যে তেমনই অন্ত থাকে না!
এই যে এতো সমালোচনা আসিফ আলীকে ঘিরে, সেসব কি তার কানে যায়নি? এখন তো ‘সোশ্যাল মিডিয়া’ নামের এক বস্ত আছে, যেখানে মত প্রকাশে কোন ধরাবাঁধা নেই। সেসব সমালোচনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি কি তার উপর?
উত্তর হলো, না! সোশ্যাল মিডিয়া যদি নাই দেখেন তাহলে তো আর প্রভাবের কোনও কথাই আসে না! আসীফ আলী সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই, তাই সমালোচনা তার পথে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে না। তিনি এগিয়ে যান তার পথে। তার ভুমিকা সম্পর্কে তিনি জানেন, শেষ পাঁচ ওভারের ‘ম্যাচ পরিস্থিতি’র মতো করে সাজিয়ে তিনি চালিয়ে যান অনুশীলন!
তাতে ফল এলো! পাকিস্থানের জার্সি পরিহিত আসিফ আলীতে তাই সামর্থ্যের ছাপ দেখা গেল। কিন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় যদি থাকতেন তিনি! সমালোচনা ক্রিকেট জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ জানা আছে ক্রিকেটারদের, তবু মাঝে মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার সমালোচনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনাই বেশি!
এদেশেও যেমন হয় ক্রিকেটারদের নিয়ে। কখনো এই কেউ, তো কখনো অন্য কেউ। ‘ট্রল’ চলতেই থাকে! এতে কি তাদের উপর কোন প্রভাব পড়ে না?
মাশরাফিও যেমন চান ক্রিকেটাররা সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই দূরেই থাকুক। এই যে চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল নিয়েই কত কিছুই না হলো! আর এতে যে প্রভাব পড়ছে তার প্রমাণ, ক্রিকেটাররাও এর বিরুদ্ধেই যেন খেলতে নেমে গেছেন! সংবাদ সম্মেলনে এসে কেউ শক্ত মুখে কঠিন উত্তর দিচ্ছেন, তো কেউ আয়নায় মুখ দেখতে বলছেন!
বাংলাদেশে সমালোচনার চিত্র এই অবস্থায় চলে গেছে- সাবেক অধিনায়ক স্ট্যাটাস দিয়ে সমালোচনা করেন। তবে ‘অদ্ভুত’ ব্যাপার, ওয়ানডে অধিনায়ক থাকা অবস্থায়ই একজন করছেন একটা ‘শো’, সেখানেও হচ্ছে আলোচনা! কোন ক্রিকেটারের বউ স্ট্যাটাস দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন তো অন্য কারো ভাই স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতিক্রিয়াও জানাতে ভুলছেন না।
সে যাই হোক, সেসব থেকে ক্রিকেটারদের দূরে থাকাটাই প্রয়োজন। মাশরাফিও তাই ওয়ানডে অধিনায়ককে জানালেন, কোন টুর্নামেন্টের আগে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকার নিয়ম করা উচিত। এবং বর্তমানে যা অবস্থা, এটা তো অতীব জরুরিই হয়ে পড়েছে!
যদি সমালোচনা হজম না করতে পেরে এর নেতিবাচক প্রভাবে ভুগেন, তবে বাংলাদেশের লিটন কিংবা সৌম্য বা যে কেউই সোশ্যাল মিডিয়াকে ‘না’ বলে দিয়ে তাদের পথেই চলা উচিত। আসিফ আলীর মতো তবেই যদি তাদের সামর্থ্য অনূদিত হয় পারফর্ম্যান্সে!
- 0 মন্তব্য