• ফুটবল

ফুটবল বিশ্বে ক্রোয়েশিয়ার উত্থান : বিশ্বকাপ ১৯৯৮

পোস্টটি ২১৯৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বিশ্বব্যাপী ফুটবলের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। প্রতিটি দেশই চায় বিশ্ব ফুটবলের মঞ্চে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে। কিন্তু খুব কম দেশেরই সে সৌভাগ্য হয়। আর এদের মধ্যে বিশ্বমঞ্চে ডমিনেট করা দলের সংখ্যা তো হাতে গোণা কয়েকটা। বিশ্ব ফুটবলে তাদের গণ্য করা হয় জায়ান্ট হিসেবে। ফুটবলের মহাযজ্ঞে বরাবর তাদেরই আধিপত্য চোখে পড়ে।

কিন্তু মাঝে মাঝে এসব জায়ান্টদের বাইরেও কিছু কিছু দল আবির্ভূত হয় কিছু সময়ের জন্য। দমিয়ে দেয় চিরায়ত বড়শক্তিদের, চমকে দেয় সারা বিশ্বকে। হয়তো তারা আবার হারিয়ে যায় দ্রুতই, কিন্তু ফুটবল ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নাম খোদাই করে যায় সোনালী হরফে।

১৯৯১ সালে যুগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা লাভের আগেই প্রথম অনানুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলেছিলো ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯০ সালের সালের ১৭ অক্টোবর সে ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্র কে ২-১ গোলে হারায় ক্রোয়াটরা।

এরপর ১৯৯১ সালের শেষদিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে যুগোস্লাভিয়া থেকে আলাদা হয়ে গঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম ক্রোয়েশিয়া। তার আগেই আরও দুটি প্রীতি ম্যাচে জয় পায় ম্যানেজার দ্রাজান জার্কোভিচের দল, ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে রোমানিয়া ও ১৯৯১ সালের জুনে স্লোভেনিয়ার বিরুদ্ধে।

অবশেষে স্বাধীনতা আসে, আসে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ। ১৯৯২ সালে তারা প্রথম আনুষ্ঠানিক ম্যাচগুলো খেলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তবে তখনও ইউরোপীয় ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউয়েফার সদস্যপদ পায়নি। সেটা অর্জন করে আরও দুবছর পর।

image_search_1639566319852
১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ততদিনে শুরু হয়ে গেছে। তাই সেবার আর বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখার সুযোগ হয়নি ক্রোয়াটদের।

১৯৯৬ সালের ইউরোর বাছাইপর্ব ছিলো ক্রোয়াটদের নিজেদের মেলে ধরার প্রথম সুযোগ। সেটা যথার্থই কাজে লাগায় নতুন কোচ মিরোস্লাভ ব্লাজেভিচের দল। ১৯৯৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এস্তোনিয়ার বিপক্ষে প্রথম প্রতিযোগিতামূলক জয় পায় তারা। ভালোভাবেই সেবার বাছাইপর্ব পেরিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে জায়গা করে নেয় ইউরো ১৯৯৬ এর মূল মঞ্চে।

অতঃপর ইউরো মিশন শুরু হয় ক্রোয়াটদের। সেবার গ্রুপ বিভাজনে ভাগ্য সহায় হয়নি তাদের। টুর্নামেন্টের অন্যতম কঠিন গ্রুপে পায় তারা। তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিলো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ডেনমার্ক ও শক্তিশালী পর্তুগাল ও তুরস্ক। তাই টুর্নামেন্ট শুরু না হতেই ক্রোয়াটদের শেষ দেখে ফেলেছিলেন অনেকেই।

কিন্তু তারা তো ভেঙে পড়ার মতো দূর্বল মনোবল নিয়ে যায়নি। প্রথম ম্যাচেই ৮৬ মিনিটের মাথায় ভ্লাওভিচের গোলে জয় ছিনিয়ে নেয় ক্রোয়েশিয়া। দ্বিতীয় ম্যাচে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ডেনমার্ক কে হারায় ৩-০ তে, যেখানে জোড়া গোল করেন ডেভর সুকার। সেই সাথে নিশ্চিত হয় ক্রোয়াটদের কোয়ার্টার ফাইনাল।

কোয়ার্টার ফাইনালে পরাক্রমশালী জার্মানদের মুখোমুখি হয় ক্রোয়েশিয়া। তবে হাল ছেড়ে দেয়নি একদমই। সর্বস্ব দিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে। প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে তাদের সমতায় ফেরান ডেভর সুকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারাভরা জার্মানির সাথে আর পেরে ওঠেনি ক্রোয়াটরা। ম্যাথিয়াস স্যামারের গোলে ২-১ গোলে জয় পায় জার্মানি। আর সেবারের মতো ফিরে আসতে হয় ক্রোয়েশিয়া কে।

image_search_1639566286264
ইউরো থেকে ফিরে আবার নতুন উদ্যমে নিজেদের প্রস্তুত করতে শুরু করে ক্রোয়াটরা। এবার লক্ষ্য আরও বড়। বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের যোগ্য করে তোলা। শুরু হয় বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার্স। এখানে আবার ডেনমার্কের সাথে একই গ্রুপে পড়ে তারা। ৮ ম্যাচে ৪ জয় ও ৩ ড্র নিয়ে গ্রুপ-১ এর রানার্সআপ হয় ডেভর সুকারের দল। ফলে খেলতে হয় প্লে অফ।

প্লে অফে তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে আসে ইউক্রেন। প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ২-০ তে জয়ের পর দ্বিতীয় লেগে প্রতিপক্ষের মাঠে ১-১ গোলে ড্র করে ক্রোয়েশিয়া। ফলে এগ্রিগেটে ৩-১ গোলে জয় লাভ করে স্বপ্নের বিশ্বকাপে পৌছে যায় ক'বছর আগেই স্বাধীনতা পাওয়া ক্রোয়েশিয়া।

ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ১৯৯৮ সালের সে বিশ্বকাপে গ্রুপ এইচ এ ক্রোয়াটদের সঙ্গী হয় আর্জেন্টিনা, জামাইকা ও জাপান। সে গ্রুপে শুধু ক্রোয়েশিয়ারই নয়, জামাইকারও ছিলো এটি প্রথম বিশ্বকাপ। তবে দু দলের অন্তর্নিহিত শক্তিতে ছিলো বিরাট পার্থক্য। সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হয় এ দু দল। স্ট্যানিক, প্রোসিনেকি ও সুকারের গোলে ৩-১ গোলে জামাইকাকে পুরোপুরি বিধ্বস্ত করে ক্রোয়াটরা।

এ ম্যাচে একটি বিশেষ রেকর্ড গড়েন রবার্ট প্রোসিনেকি। প্রথম ফুটবলার হিসেবে হিসেবে দুটি দেশের হয়ে বিশ্বকাপে গোল করার গৌরব অর্জন করেন তিনি। এর আগে ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে তিনি গোল করেছিলেন যুগোস্লাভিয়ার হয়ে।

দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের মুখোমুখি হয় আগের ম্যাচে শক্তিশালী আর্জেন্টিনাকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি করা জাপান। দুই দলের লড়াই টা এবার জমেছিলো বেশ। আক্রমণ পালটা আক্রমণে ভরপুর ছিলো পুরো ম্যাচ। কিন্তু গোলের দেখা পাচ্ছিলোনা কেউই। অবশেষে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ১৩ মিনিট পূর্বে দারুণ এক গোল করেন ডেভর সুকার। তার সেই গোলে জাপানকে ১-০ গোলে হারিয়ে পরের রাউন্ড নিশ্চিত করে ফেলে ক্রোয়াটরা।

image_search_1639566582239
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ তারা খেলেছিলো পরাক্রমশালী আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে। সে ম্যাচেও আলবিসেলেস্তেদের কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি করে ক্রোয়েশিয়া। সমানে সমানে চালিয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলো পুরো ম্যাচ জুড়ে। কিন্তু ৩৬ মিনিটে ডিফেন্সের ভুলে মরিসিও পিনেদার গোলে সে ম্যাচে পরাজয় বরণ করতে হয় ক্রোয়াটদের। তাতে অবশ্য তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি, পরের রাউন্ড তো আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো।

রাউন্ড অব সিক্সটিনে ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি হয় রোমানিয়ার। এ ম্যাচে অতিমানবীয় পারফর্ম করেন রোমানিয়া গোলকিপার বোগদান স্টিলিয়া। শুরুতেই সুকারের দুটি শট সেভ করার পর আসানোভিচের একটি অসাধারণ শট রুখে দেন। কিন্তু প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে ডি বক্সের মধ্যে সুকার কে ফাউল করে বসে এক রোমানিয়া ডিফেন্ডার। পেনাল্টি পায় ক্রোয়েশিয়া। স্পট কিক থেকে গোল করলেও সেটি বাতিল করে দেন রেফারি ও রিটেকের আদেশ দেন। এবারও একই জায়গায় শট করেন সুকার। গোলকিপার সঠিক দিকে লাফ দিলেও বলের নাগাল পাননি। ফলে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ক্রোয়াটরা।

ম্যাচে আরও গোল পেতে পারতো ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু স্টিলিয়া পুরো ম্যাচ জুড়ে অসাধারণ পারফর্মেন্স বজায় রাখেন, যার ফলে আর গোল পায়নি ক্রোয়াটরা। ১-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে তারা, সেই সাথে পৌঁছে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে।

ঠিক দুবছর আগে যাদের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বিদায় নিতে হয় ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসর থেকে, ঠিক দুবছর পর আবার তাদেরই সামনে এসে পড়ে ক্রোয়েশিয়া। আবার সেই একই ম্যাচ, কোয়ার্টার ফাইনাল। তবে উপলক্ষ টা এবার আরও বড়, এবার লড়াই বিশ্ব আসরে।

কিন্তু এবার প্রতিশোধের অঙ্গিকার নিয়েই জার্মানদের বিরুদ্ধে মাঠে নামে কোচ সিরো ব্লাজেভিচের দল। শুরু থেকেই মুহুর্মুহু আক্রমণ শুরু করে ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু আক্রমণে তো জার্মানরাও কম যায়না। উলটোদিক থেকে তারাও একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে। ইউরগেন ক্লিন্সম্যান দারুণ এক গোলের সুযোগ মিস করার পর অলিভার বায়ারহফের অসাধারণ হেডার ঠেকিয়ে দেয় ক্রোয়াট কিপার দ্রাজেন লাদিচ।

image_search_1639566589151
তবে ম্যাচের চিত্র মূহুর্তের মধ্যে পরিবর্তন হয়ে যায় হাফটাইমের পাঁচ মিনিট পূর্বে। সুকার কে এক মারাত্মক ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন জার্মান ডিফেন্ডার ক্রিশ্চিয়ান ওর্ন্স। দশ জনের দল হয়ে পড়ে জার্মানি। আর এই অ্যাডভান্টেজের পুরোপুরি সুযোগ নেয় ক্রোয়েশিয়া। মূহুর্তের মধ্যে ম্যাচ হয়ে যায় একদম একপেশে। হাফ টাইমের ঠিক আগের মূহুর্তে বাঁ পায়ের দারুণ শটে জার্মানদের জালে বল জড়ান জার্নি। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ক্রোয়াটরা।

দ্বিতীয়ার্ধে দশ জনের জার্মানি গোল শোধের জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে। খেলা দেখে মনেই হচ্ছিলোনা তাদের দলে একজন কম আছে। মুহুর্মুহু আক্রমণ করলেও ক্রোয়াটদের কঠিন দেওয়াল ভাঙতে পারছিলোনা জার্মানি৷ শেষদিকে গিয়ে তারা অনেকটাই হাল ছেড়ে দেয়। আর সে সুযোগটাই লুফে নেয় ক্রোয়েশিয়া। খেলার ১০ মিনিট বাকি থাকতে কাউন্টার থেকে মারাত্মক এক শটে গোল করেন গোরান ভ্লাওভিচ। পুরো গ্যালারি আতশবাজি দিয়ে ভরিয়ে দেয় ক্রোয়াট ফ্যান রা। পাঁচ মিনিট পর আরও এক মনোমুগ্ধকর গোল, অসাধারণ দক্ষতায় এবার স্কোরশিটে নাম তোলেন ডেভর সুকার। আর ৩-০ গোলে চমৎকারভাবে জার্মানদের ওপর প্রতিশোধ সম্পন্ন করে ক্রোয়েশিয়া।

সেমি ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিলো সেবারের স্বাগতিক দেশ জিনেদিন জিদানের ফ্রান্স। এই ম্যাচটিও যথেষ্ট থ্রিলিং ছিলো। ফ্রান্সের এ ম্যাচে হোম অ্যাডভান্টেজ ছিলো। হাজার হাজার দর্শক গলা ফাটাচ্ছিলো তাদের জন্য। ম্যাচের শুরু থেকে সমানে সমানে লড়াই চলতে থাকতে। তবে দুই দল একের পর এক আক্রমণ করলেও গোলের দেখা পাচ্ছিলোনা কেউই। প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য তেই।

তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই হাজার হাজার স্বাগতিক ফরাশি দর্শকদের চমকে দিয়ে গোল করেন ডেভর সুকার। মূহুর্তের মধ্যে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো গ্যালারি। চারিদিকে নেমে আসে কবরের মতো নিরবতা। কিন্তু সে চমক কাটতে না কাটতেই আরেক চমক। এবার চমকাবার পালা ক্রোয়াটদের। সুকারের গোল উদযাপন পুরোপুরি শেষ না হতেই গোল করে বসেন ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার লিলিয়ান থুরাম। সমতায় ফেরে ফ্রান্স। ম্যাচের ২০ মিনিট বাকি থাকতে আবার সেই থুরাম ম্যাজিক। আবার অসাধারণ এক গোল করে ফ্রান্স কে এগিয়ে দেন তিনি।

হতবাক ক্রোয়েশিয়া মরিয়া হয়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা চালাতে থাকে। সুকার দারুণ একটি সুযোগও পেয়ে যান। কিন্তু শট করার ঠিক আগের মূহুর্তে তাকে আটকে দেন মার্সেল দেসাইলি। পরের সুকারের আরও একটি দারুণ শট রুখে দেন ফাবিয়েন বার্থেজ। অবশেষে সেমিফাইনালে এসে শেষ হয় ক্রোয়াটদের রোমাঞ্চকর স্বপ্নযাত্রা।

image_search_1639565679604
এরপর সান্ত্বনাসূচক তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হয় ক্রোয়েশিয়া। সে ম্যাচে সুকার ও প্রসিনেকির দারুণ দুটি গোলে ২-১ গোলে জয়লাভ করে তারা। সেই সাথে টুর্নামেন্টের তৃতীয় সেরা দল নির্বাচিত হয়।

টুর্নামেন্ট জুড়ে দলের সেরা তারকা ছিলো ডেভর সুকার। ১৯৯৬ সালের ইউরোতে দারুণ পারফর্ম করার পর থেকে তার ধারাবাহিক পারফর্মেন্সে ভাটা পড়েনি একদমই। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৬ টি গোল করে গোল্ডেন বুট জিতে নেন তিনি।

তবে শুধু গোল সংখ্যা দিয়ে তাকে বিচার করা অসম্ভব। তার গোলের শুধু সংখ্যাটাই আকর্ষণীয় নয়, গোলের ধরণগুলোও ছিলো আকর্ষণীয়। তার ফার্স্ট টাচ ছিলো অবিশ্বাস্য। পজিশনিং ও ফিনিশিং এ তিনি ছিলেন অতুলনীয়। এমনকি কঠিন ম্যাচগুলোয়, যেখানে তার পুরো দল স্ট্রাগল করছে, এমন পরিস্থিতিতেও তিনি তার কাজ করে গেছেন পুরোদমে।

শুধু সুকার নয়, দলের সবাই ধারাবাহিক ভাবে ভালো পারফর্ম করে গেছেন। বোবান, প্রোসিনেকি, আসানোভিচ, স্ট্যানিচ, জার্নি, ভ্লাওভিচ সবাই পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই চোখ ধাঁধানো পারফর্ম করেছেন। আর তার ফলেই দল পেয়েছে সাফল্য।

image_search_1639565666233
এ বিশ্বকাপের পর থেকে ধীরে ধীরে অধঃপতন ঘটতে শুরু করে ক্রোয়েশিয়ার। অবসরে চলে যায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। দল হয়ে পড়ে অগোছালো। ফলাফল, দু বছর পরের ইউরোতে অংশ নিতেই পারেনি ক্রোয়েশিয়া। এর পর ২০০২ সালের বিশ্বকাপ ও ২০০৪ সালের ইউরোতে খেলার সুযোগ পায় ক্রোয়াটরা, কিন্তু দুইবারই ফিরে আসতে হয় গ্রুপ পর্ব থেকেই। এভাবেই অবসান ঘটে ক্রোয়েশিয়ার সেই সোনালি প্রজন্মের।

সুকার-প্রোসিনেকিদের সে দল ছিলো একটা চমক, পুরো পৃথিবীর জন্য এক ক্ষণিকের আশ্চর্য। যারা এসেছিলো, চমকে দিয়েছিলো, অতঃপর চলে গিয়েছিলো। তবে এটা কোনো কাকতালীয় বা অঘটন ছিলোনা। সে দলটি সত্যিকার অর্থেই ছিলো একদম পরিপূর্ণ বিশ্বমানের একটি দল। আর তারা সেটা প্রমাণ করে দিয়েছিলো বিশ্ববাসীর কাছে।