ফুটবল বিশ্বে ক্রোয়েশিয়ার পুনরুত্থান : বিশ্বকাপ ২০১৮
পোস্টটি ১৫৩৩ বার পঠিত হয়েছে১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপে অভিষিক্ত হয়েই ক্রোয়েশিয়া যখন সেমি ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিলো, তখন অনেকেই ক্রোয়াটদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখে ফেলেছিল। অনেকেই ভেবেছিলো ইউরোপের অন্যান্য পরাশক্তি ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালির মতোই ফুটবলে দাপটের সঙ্গে বিচরণ অব্যাহত রাখবে ক্রোয়েশিয়া। আরোহন করবে সফলতার শীর্ষে।
কিন্তু এ ধারণাকে বাস্তব রূপ দিতে ব্যর্থ হয় ক্রোয়াটরা। অল্পকিছুদিনের মধ্যেই হারিয়ে যায় তাদের সোনালি প্রজন্ম। হয়ে পড়ে এক গড়পড়তা দল। বড় কোনো টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারাটাই তাদের জন্য হয়ে যায় বিরাট অ্যাচিভমেন্ট।
মাঝখানে কেটে যায় প্রায় দুই দশক। এ সময়ে আগমন ঘটে বেশ কিছু প্রজন্মের। চলেও যায় তারা। কিন্তু ক্রোয়েশিয়া আর তেমন লাইমলাইটে আসতে পারেনি। একে একে পার হয় চারটি বিশ্বকাপ। এর মধ্যে তিনটিতেই বিদায় নিতে হয় গ্রুপ পর্ব থেকে। অন্যটায় তো অংশ নিতেই পারেনি ক্রোয়াটরা।
অবশেষে আস্তে আস্তে ঘনিয়ে আসতে থাকে ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮। এর জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ক্রোয়েশিয়া।
বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার্স বেশ ভালোভাবেই শুরু করে লুকা মদ্রিচরা। গ্রুপ টা তেমন কঠিন ছিলোনা। সেখানে তাদের সঙ্গী হিসেবে ছিলো তুরস্ক, ফিনল্যান্ড, ইউক্রেন, আইসল্যান্ড ও কসোভো। প্রথম রাউন্ডে কোনো ম্যাচে হারের মুখ দেখতে হয়নি ক্রোয়াটদের। তবে দ্বিতীয় রাউন্ডে হোঁচট খেয়ে বসে আন্তে সাকিচের দল। আইসল্যান্ড ও তুরস্কের বিপক্ষে দুই ম্যাচ হারে তারা, সেই সাথে ড্র করে বসে দুর্বল ফিনল্যান্ডের সাথে। দলের বাজে পারফর্মেন্সে সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। কোচ আন্তে সাকিচের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। ফলাফল, সাকিচ বরখাস্ত।
ক্রোয়েশিয়ার নতুন কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন জ্লাটকো দালিচ। তার শুরুটা বেশ ভালোভাবেই হয়। ইউক্রেনের বিপক্ষে ক্রোয়াটরা জয়লাভ করে ২-০ গোলে। সেই সাথে জায়গা করে নেয় কোয়ালিফাইং প্লে অফে। প্লে অফে তাদের প্রতিপক্ষ ছিলো গ্রীস। গ্রীকদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করে ক্রোয়াটরা। দুই লেগ মিলিয়ে এগ্রিগেটে ৪-১ গোলে ২০০৪ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নদের বিধ্বস্ত করে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ফেলে ক্রোয়েশিয়া।
বিশ্বকাপে মিশনের শুরুতেই একটা বাজে ঘটনার সম্মুখীন হয় ক্রোয়েশিয়া টিম। উল্লেখ্য, ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপ কোয়ালিফাই এ যে কজন খেলোয়াড়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি ছিলো, তাদের অন্যতম ছিলেন নিকোলা কালিনিচ। প্লে অফে গ্রিসের বিপক্ষে তিনি গোলও করেন। কিন্তু বিশ্বকাপের মূল পর্বে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ক্রোয়াটদের প্রথম ম্যাচে বদলি হিসেবে নামতে অস্বীকৃতি জানান কালিনিচ। আর এতে চরম ক্ষুব্ধ হন কোচ দালিচ। তিনি কালিনিচ কে ক্রোয়েশিয়া ক্যাম্প ত্যাগ করতে আদেশ করেন। ফলে দেশে ফিরে আসেন কালিনিচ। বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি তার।
কালিনিচ কে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম দূর্ভাগা প্লেয়ার হিসেবে ধরা হয়, যাকে এমন একটি বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে ফিরে আসতে বাধ্য করা হয়, যেখানে তার দল কিনা পোঁছে গিয়েছিলো ফাইনালে। তবে এর জন্য পুরোপুরি দায়ী ছিলেন কালিনিচ নিজেই।
যাই হোক, কালিনিচের প্রস্থানে দলের ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। প্রথম ম্যাচেই নাইজেরিয়ার বিপক্ষে দারুণ এক জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে ক্রোয়েশিয়া। সে ম্যাচে প্রথম মিনিটেই গোল প্রায় পেয়ে গিয়েছিলো ইভান পেরিসিচ। অল্পের জন্য সেবার রক্ষা পায় নাইজেরিয়া। অতঃপর ৩০ মিনিটের মাথায় মানজুকিচের হেডার থেকে গোলে শট করেন ক্রামারিচ, যা প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে জড়িয়ে যায় জালে। দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে ২-০ গোলে জয় এনে দেন লুকা মদ্রিচ।
দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রোয়াটদের মুখোমুখি হয় লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার হিসেবে খেলতে আসা আর্জেন্টিনা কে শুরু থেকেই সবাই অনেকখানি এগিয়ে রেখেছিলো। কিন্তু সব দর্শক ও বিশ্লেষকদের অবাক করে দিয়ে পরাক্রমশালী প্রতিপক্ষ কে পুরোপুরি পরাস্ত করে ফেলে ক্রোয়েশিয়া। লিওনেল মেসির ম্যাজিক্যাল পারফর্মেন্সও সেদিন আর্জেন্টিনা কে রক্ষা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়।
প্রথমার্ধে আর্জেন্টাইন গোলকিপার উইলি কাবায়েরোর ভুলে বল জালে জড়িয়ে দেন আন্তে রেবিচ। অতঃপর ম্যাচের শেষদিকে মদ্রিচ ও রাকিটিচের গোলে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে শোচনীয় ভাবে পরাজিত করে ক্রোয়েশিয়া।
পরের রাউন্ড আগেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় শেষ ম্যাচে দলে নয়টি পরিবর্তন আনেন কোচ দালিচ। মূল একাদশের প্রায় সবাইকেই বিশ্রাম দেওয়া হয়। এরপরও ক্রোয়েশিয়ার জয় রুখতে পারেনি আইসল্যান্ড।
গোলহীন প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধে মিলান বাদেলজির গোলে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু ৭৬ তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা ফেরান গিলফি সিগার্ডসন। কিন্তু ম্যাচের শেষদিকে নব্বই মিনিটের মাথায় আবার ক্রোয়াটদের এগিয়ে দেন ইভান পেরিসিচ। এবং সেই গোলে ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে "ভেত্রেনি" রা। সেই সাথে গ্রুপ পর্বের সবকটি ম্যাচে জয় নিয়ে শেষ ষোল নিশ্চিত করে তারা।
শেষ ষোলোয় ডেনমার্কের মুখোমুখি হয় ক্রোয়েশিয়া। সে ম্যাচে প্রথম মিনিটেই গোল করেন ড্যানিশ সেন্টার-ব্যাক জাঙ্কা। সে গোলের রেশ না কাটতেই তিন মিনিট পর ক্রোয়াটদের সমতায় ফেরান মানজুকিচ। এরপর বাকি পুরোটা সময় উভয় দল আক্রমণ প্রতি আক্রমণ চালালেও আর গোলের দেখা পায়নি কোন দলই। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। তাতেও আর কোন গোল না হওয়ার পর শুরু হয় পেনাল্টি শুট আউট।
আর তাতে ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন ক্রোয়াট কিপার দানিয়েল সুবাসিচ। বিশ্বকাপের ইতিহাসে একমাত্র গোলকিপার হিসেবে পেনাল্টি শুট আউটে সেদিন ৩ টি পেনাল্টি সেভ করে রেকর্ড গড়েন তিনি। ক্রামারিচ, মদ্রিচ আর রাকিটিচের লক্ষ্যভেদে ৩-২ গোলে জয়লাভ করে ক্রোয়েশিয়া। সেই সাথে পৌঁছে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে।
কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিলো স্বাগতিক রাশিয়া। হাজার হাজার স্বাগতিক রাশিয়ান সমর্থকদের সামনে শুরুর দিকে একটু খেই হারিয়ে ফেলে ক্রোয়াটরা। আর সে সুযোগে ৩১ মিনিটে গোল করে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন ডেনিস চেরিশেভ। গোল খাওয়ার পরই টনক নড়ে ক্রোয়াটদের। ম্যাচে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে শুরু করে। অবশেষে হাফটাইমের পাঁচ মিনিট আগে গোল পেয়ে যান ক্রামারিচ। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-১ সমতায়।
দ্বিতীয়ার্ধে আর গোলের দেখা পায়নি কোন দল। ফলে আবারও খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অবশেষে ১০১ মিনিটে ভিদার গোলে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু সেই লিড বেশিক্ষণ টেকেনি। অতিরিক্ত সময় শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট পূর্বে স্বাগতিকদের সমতায় ফেরান মারিও ফার্নান্দেস। ফলে আবারও সমতায় খেলা শেষ, আবারও পেনাল্টি শুট আউট। শ্বাসরুদ্ধকর সেই পেনাল্টি শুট আউটে স্বাগতিদের ৩-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করে লুকা মদ্রিচের দল।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমি ফাইনালে সে ম্যাচ শুরুর আগেই বরাবরের মতো ইংল্যান্ড দলকে নিয়ে নাচানাচি শুরু করেছিলো ইংলিশ মিডিয়া। ফলে এ ম্যাচে একটু মানসিক চাপ নিয়েই খেলতে নামে উভয় দলই। ইংলিশ ফ্যানদের উন্মাদনা আরও বেড়ে যায় যখন পঞ্চম মিনিটেই ইংল্যান্ড কে এগিয়ে দেন কাইরন ট্রিপিয়ার। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝিতে হঠাৎ হেডার থেকে অসাধারণ এক গোল করেন ইভান পেরিসিচ। সমতায় ফেরে ক্রোয়েশিয়া।
বাকি সময়ে কোনো দল গোলের দেখা না পাওয়ায় আবারও ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অবশেষে অতিরিক্ত সময় শেষ হওয়ার ১১ মিনিট আগে গোল করেন মারিও মানজুকিচ। এর তার এ গোলে ইংল্যান্ড কে ২-১ গোলে পরাজিত করে স্বপ্নের বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছে যায় ক্রোয়াটরা।
ততদিনে চারিদিকে শুরু হয়ে গেছে ক্রোয়েশিয়ার জয়জয়কার। মিডিয়া ক্রোয়েশিয়ার এ প্রজন্মের নাম দিয়েছে দ্বিতীয় সোনালি প্রজন্ম। সুকার-প্রোসিনেকিদের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে মদ্রিচ-রাকিটিচরা। সুন্দর ফুটবল দিয়ে জয় করে নিয়েছে কোটি কোটি ফুটবল প্রেমীর হৃদয়।
অবশেষে আসে ১৫ জুলাই। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে সেদিন আত্মবিশ্বাসী ক্রোয়েশিয়া ও তরুণ ফ্রান্সের মহারণ দেখতে হাজির হয়েছিলো প্রায় আশি হাজার দর্শক। দুই দলই ছিলো আপন আপন স্বপ্নে বিভোর।
এ ম্যাচটির গভীরতা একটু বেশিই ছিলো। কারণ এর সাথে জড়িয়ে ছিলো ইতিহাস। সেই ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের মাটিতে ফ্রেঞ্চদের কাছে পরাজিত হয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয় ক্রোয়েশিয়ার। আর ট্রফি ঘরে তোলে ফ্রান্স। এবার আবার ক্রোয়েশিয়ার সামনে বিশ্বজয়ের হাতছানি। এবার সুযোগ আরও নিকটে। কিন্তু এবারও বাধা সেই ফ্রান্স।
ম্যাচ টা ভালোভাবেই শুরু করেছিলো দুই দলই। কিন্তু ১৮ মিনিটের মাথায় মার্সেলো ব্রোজোভিচ ফ্রেঞ্চ ফরওয়ার্ড গ্রিজমান কে ফাউল করলে পোস্ট থেকে ৩০ গজ দূরে ফ্রি কিক পায় ফ্রান্স। সেখান থেকে গ্রিজমান শট নিলে তা ক্লিয়ার করতে যান ক্রোয়াট ফরওয়ার্ড মারিও মানজুকিচ। কিন্তু তার হেড থেকে বল জড়িয়ে যায় নিজেদের জালে।
বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো বড় ম্যাচে শুরুতেই আত্মঘাতী গোলে ক্রোয়েশিয়া বেশ চাপে পড়ে যায়। চেষ্টা করতে থাকে ঘুরে দাঁড়ানোর। দশ মিনিট পর সুযোগ আসে। পোস্ট থেকে ৪০ গজ দূরে ইভান পেরিসিচ ফাউলের শিকার হলে ফ্রি কিক পায় ক্রোয়াটরা। মদ্রিচ সেখান থেকে ফ্রি কিক নিলে গোলের সামনে বল পান সিমে ভরসালজকো। তার শটে গোল না হলেও ফিরতি শটে দারুণ এক গোল করে ক্রোয়াটদের সমতায় ফেরান ইভান পেরিসিচ।
ক্রোয়েশিয়ার গোলের তিন মিনিট পর কর্নার পায় ক্রোয়েশিয়া। সেখান থেকে গ্রিজমানের নেওয়া কিকে গোল করতে যান মাতুয়াদি। কিন্তু তাকে আটকাতে গিয়ে সম্ভবত হ্যান্ডবল করে বসেন ইভান পেরিসিচ। ফলে পেনাল্টি পেয়ে যায় ফ্রান্স। পেনাল্টি থেকে গোল করে আবারও ফ্রান্স কে লিড এনে দেন গ্রিজমান। এরপর গোলে দারুণ এক শট নেন পেরিসিচ, কিন্তু তা ব্লক করে দেন পল পগবা। মাত্র ৩৪% বল পজিশান ও একটা শট অন টার্গেট নিয়েও ২-১ গোলে এগিয়ে থেকে হাফ টাইমে যায় ফ্রান্স।
হাফ টাইমে অ্যালান শিয়েরার ও রিও ফার্ডিনান্ড ফ্রান্সের দুটি গোলের উৎস পেনাল্টি ও ফ্রি কিক কে রেফারির বাজে ডিসিশন বলে মন্তব্য করেন। তাদের মতে দুটোই ছিলো ভুল। অন্যান্য ফুটবল বিশ্লেষকরাও রেফারির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন।
দ্বিতীয় হাফের শুরুতে রাকিটিচের পাস থেকে গোলে দারুণ এক শট নেন রেবিচ। কিন্তু অসাধারণ দক্ষতায় এক হাত দিয়ে সেই শট রুখে দেন ফ্রান্স গোলরক্ষক হুগো লরিস। প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও ডমিনেট করছিলো ক্রোয়েশিয়াই। ৫২ মিনিটে এমবাপ্পের গোলমুখি শট রুখে দেন ক্রোয়াট কিপার সুবাসিচ। কিন্তু ৫৯ মিনিটের মাথায় গ্রিজমান-এমবাপ্পে-পগবা কম্বিনেশনে আবার গোল হজম করে ক্রোয়েশিয়া। পগবার প্রথম শট সুবাসিচ রুখে দিলেও রিবাউন্ডে আর আটকাতে পারেন নি। ফলে ৩-১ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স।
এর ছয় মিনিট পরেই ২৫ গজ দূর থেকে গোলার মতো এক শট নেন এমবাপ্পে। বল জড়িয়ে যায় ক্রোয়াটদের জালে। ফলে ফ্রান্সের জয় ততক্ষণে নিশ্চিত হয়ে যায়। ঊনসত্তর মিনিটে অবশ্য মানজুকিচ একটা গোল শোধ করেন, তবে তা শুধুই ব্যবধান কমায়। বাকি সময় ক্রোয়েশিয়া প্রাণপণে চেষ্টা করেও আর কোনো গোল পায়নি। ফলে ৪-২ গোলে হেরে বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ হয় ক্রোয়াটদের।
আরও একবার স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি আসা, আরও একবার ফ্রেঞ্চদের বিপক্ষে স্বপ্নভঙ্গ। ঠিক যেন ১৯৯৮ এর পুনরাবৃত্তি। আরও একবার কাছে গিয়ে শিরোপা ছুঁয়ে না দেখার বেদনা নিয়ে ঘরে ফিরতে হয় ক্রোয়াটদের।
তবে যোগ্য দল হিসেবেই বিশ্বকাপ জেতে ফ্রান্স এবং যোগ্য দল হিসেবেই রানার্সআপ হয় ক্রোয়েশিয়া। যদিও কাগজে কলমে অন্য অনেক দলের চেয়ে পিছিয়ে ছিলো ক্রোয়াটরা। কিন্তু তারা প্রমাণ করে দেয় ফুটবল কাগজ কলমের খেলা না। ফুটবল খেলতে হয় মাঠে। এর সেখানেই বিচার হয় কার দৌড় কতদূর। আর এজন্য ফুটবল ইজ দ্য বিউটিফুল গেইম।
বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জিতে নেন ক্রোয়াট ক্যাপ্টেন লুকা মদ্রিচ। বিশ্বকাপ জয় করতে না পারলেও ক্রোয়েশিয়ার অর্জন ছিলো অসামান্য। তাদের সুন্দর ফুটবল জয় করে নিয়েছিলো বিশ্ববাসীর মন।
পরেরদিন ১৬ জুলাই ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেবে সাড়ে পাঁচ লক্ষেরও বেশি ফ্যান ক্রোয়াট টিম কে সাদরে বরণ করে নিতে জমায়েত হয়। ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাসে আর কখনো কোথাও এত লোক একসঙ্গে জমায়েত হয়নি। সবাই স্লোগানে স্লোগানে স্বাগত জানায় ক্রোয়াট ফুটবলারদের।
বিশ্বকাপ শেষে আবারও ক্রোয়েশিয়া দলে ভাঙাগড়া উত্থান পতন শুরু হয়। সেই সাথে ফর্মও ওঠানামা শুরু করে। এবছর অনুষ্ঠিত ইউরো ২০২০ এর আসরে স্থান করে নিয়েছিলো ক্রোয়াটরা, কিন্তু তেমন সাফল্য আসেনি। গ্রুপ পর্ব পার হতে পেরেছিলো অবশ্য। কিন্তু স্পেনের কাছে হেরে শেষ ষোল থেকে বিদায় নিতে হয়।
২০২২ সাল শুরু হয়ে গেলো। এ বছরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আরও একটি "গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ" ফিফা বিশ্বকাপ। আবারও হয়তো মাঠে নামতে দেখা যাবে মদ্রিচ-রাকিটিচদের। তাদের এ সোনালী প্রজন্মের সম্ভবত এটাই হতে যাচ্ছে শেষ বিশ্বকাপ। তাই তারা তাদের সবটা দিয়েই চেষ্টা করবে কিছু করে দেখানোর, বিশ্ববাসীকে আরও একবার চমকে দেওয়ার। আর আমরাও আছি সেটারই অপেক্ষায়।
- 0 মন্তব্য