A COLD BLOODED PREDATOR- ওয়েন রুনির আদ্যোপান্ত
পোস্টটি ১৫৫৭ বার পঠিত হয়েছে
ওয়েন রুনির ইংলিশ ফুটবলে উজ্জ্বল তারকাদের মধ্যে অন্যতম এমনকি তার ইংলিশ ফুটবলে আগমন অনেকটা ধূমকেতুর মত, ২০০২ এ তৎকালীন অপ্রতিরোধ্য আর্সেনালে বিপক্ষে এভারটনের খেলা ১-১ সমতায় চলছে। আর্সেনাল তাদের উইনিং গোল খোঁজার পেছনে যখন ব্যস্ত তখন ডেভিড ময়েস এক ১৬ বছরের কিশোর কে মাঠে নামায়ে দেন! বিষয়টা অনেকটা পগলামি করার মত ছিল, এমনকি সেদিনের ম্যাচ কমেন্ট্রিতে থাকা Clive Tyldesley বিষয়টা পাগলাটে সিদ্ধান্ত বলেই ধরে নিয়েছিলেন।
কিন্তু এটা ছিল শুধু ট্রেলার আসল ঘটনা উঠে আসল এরপরে.. ঐ ম্যাচে ডি বক্সের প্রায় ২৪ ইয়ার্ড বাইরে থেকে দারুন থান্ডারবল শটে আর্সেনাল গোলকিপার ডেভিড সিম্যান কে পরাস্ত করেন ১৬ বছরের কিশোর রুনি যেটা ছিল এভারটনের জয়সূচক গোল। আর এ গোলের মাধ্যমে ভেঙ্গে যায় আর্সেনালের সিজনের আনডিফিটেড থাকার রেকর্ড। আর কমেন্ট্রিতে থাকা Clive Tyldesley এভাবে রুনির গোলে রিয়াক্ট করেছিলেন “Rooney, instant control oooh! brilliant goal, a brilliant goal, remember the name, Wayne Rooney,”
রুনির আর্সেনালের বিপক্ষে ডেব্যুগোল:
এ ঘটনার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নাই, ডেভিড ময়েসের দলে সেকেন্ড স্ট্রাইকার হিসেবে জায়গা পাকা করে ফেলেন টিনেজ বয়সেই।
১৬ বছর বয়স হলেও ওয়েন রুনি তখন থেকেই ছিলেন ফিজিকালি একটা বিস্ট, সাথে তার গতি,ক্ষিপ্রতা,আগ্রাসী মনোভাবের জন্যে ধরা হত সে যেকোন কিছু কারতে পারে। এভারটনের পর ইংল্যান্ড ন্যাশনাল টিমে জায়গা পেতেও খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি। ১৮ বছর বয়সে ২০০৪ ইউরোতে ইংল্যান্ডের মেইন একাদশের প্লেয়ার ছিলেন এমনকি পুরো টুর্নামেন্টে স্কোরশিটে ৪ বার নাম লিখিয়েছিলেন যেটা টিনএজ প্লেয়ার হিসেবে অসাধারণ বিষয়। ৪-৪-১-১ ফর্মেশনে ম্যাইকেল ওয়েনের পেছনে সেকেন্ড স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছেন ওয়েন রুনি। ইংলিশ মিড তখন পল স্কোলস, লাম্পার্ড, জেরার্ডের মত তারকায় ভরা, তখন তাকে ব্যবহার করা হয়েছিল মিডফিল্ডের সাথে ফরোয়ার্ড লাইন কানেক্ট করাতে।
২০০৪ ইউরোতে রুনি:
ইউরো শেষে গুঞ্জন চলছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসা নিয়ে। স্যার আলেক্স তাকে দলে নেওয়ার জন্য ব্যাপক আগ্রহী ছিলেন, এভারটনের দাবি করা ২৫ মিলিয়ন পাউন্ড পরিশোধে ইউনাইটেড বোর্ড প্রথমে রাজি ছিল না, একটা টিনেজ প্লেয়ারের পেছনে এতটাকা ঢেলেছে এমন রেকর্ড তখনও ছিল না। কিন্তু আলেক্সের জোরেই শেষ পর্যন্ত অর্থ পরিশোধ করে তাকে আনা হয় থিয়েটার অফ ড্রিমসে। ২৫ মিলিয়ন যে বোর্ড পানিতে ঢালে নাই তার প্রমাণ ও পাওয়া যায় রুনির চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ড্যেবু ম্যাচে, ফেরানবাচের বিপক্ষে ড্যেবুতেই করেন হ্যাট্রিক।
ছোট্টভক্তের কথা রাখলেন স্যার আলেক্স:
ইউনাইটেডে প্রথম দিকে রুনি ছিলেন সেকেন্ড স্ট্রাইকার ডাচ ফরোয়ার্ড রুড ভ্যান নিলস্টারয়ের পেছনে তাকে ব্যবহার করেছিলেন স্যার আলেক্স। তবে তখনো রুনি পারর্ফমেন্স ঢাকা পড়ে ছিল, এর সাথে লীগেও আর্সেনাল চেলসি ইউনাইটেডকে টপকে ডমিনেট করা শুরু করে। চেলসি আর্সেনালের থেকে লীগ ছিনিয়ে নিতে ২০০৬ ভ্যান নিলস্টারয় কে ছড়ে দেন স্যার আলেক্স। সাথে খেলার ধরনে আনেন আরো গতিশীলতা। ফাস্ট ফ্লুইড এ্যাটাক গঠনে তেভেজ, রোনালদো আর রুনিকে ব্যবহার করেন, তিনি রুনিকে একটু লেফট সাইডে শিফট করে তাকে বানান ইনসাইড ফরোয়ার্ড । এ্যাটাকের পাশাপাশি স্যার আলেক্স বড় ম্যাচগুলোতে তার কাঁধে ডিফেন্সিভ ডিউটিও রাখতেন । রুনির পেস এবং ওয়ার্করেট ইউনাইটেড কে দিয়েছিল একই সাথে এ্যাটাক + ডিফেন্সিভ কাভার। রুনি একজন অসাধারণ টিম মেম্বার হলেও তখনও সে ইউনাইটেডের মেইন ম্যান হতে পারে নাই, তখন শো চালাচ্ছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ২০০৬ বিশ্বকাপের পর থেকে এক ভিন্ন রোনালদোকেই দেখেছিল ফুটবল বিশ্ব এই রুনি রোনালদো কাঁধে চড়ে শেষ বারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফিটে এসেছিল ওল্ড ট্রাফোর্ডে।
রুনি-রোনালদো:
২০০৯ এ রেকর্ড ট্রান্সফারে রোনালদো যখন মাদ্রিদে পাড়ি জমান এরপর থেকেই মূলত দলের মেইন ম্যান হিসেবে উঠে আসেন ওয়াজ্জা। আগে যেখানে ওয়াইড এরিয়া,হাফ স্পেস, দুই লাইনের মাঝখানে তাকে ব্যবহার করা হত আর রোনালদো হত পেনাল্টি বক্সের টার্গেট। সেখানে রন যাওয়ার পর এবার রুনিকে পেনাল্টি বক্সের ভেতরে ব্যবহার শুরু করেন স্যার আলেক্স। রেজাল্টও হাতেনাতে ধরা দেয়, ২০০৯/১০ মৌসুমের রুনির গোলের বড় একটি অংশ আসে তার দুর্দান্ত হেডারগুলো থেকে সাথে ঐ মৌসুমে প্রায় সব গোল তার এসেছিল পেনাল্টি বক্সের ভেতর থেকে। আগে যে মানুষটা দুই লাইনের মাঝখানে খেলত, নিজ দায়িত্বে অপনেন্ট ডিফেন্সের তালা খুলত, ডি বক্সের বাইরে থেকে এক একটা কামানের গোলা ছোঁড়া শট নিত, এমন কি দলের প্রয়োজনে ডিফেন্সের কাজেও নেমে যেত এবং সব শেষে সে তার পেনাল্টি বক্সের 18 ইয়ার্ডের ভেতরে নিজের জাত চিনিয়ে ছাড়লেন। এ সময়গুলোতে স্যার আলেক্স রুনির সাথে বারবাটভ , হাভিয়ে হার্নান্দেজ এবং অলরাউন্ডার রবিন ভ্যান পার্সিকে ব্যাবহার করেন।
আইকনিক ওভারহেড কিক/বাইসাইকেল কিক:
সবকিছুর যেমন শুরু থাকে তেমন শেষও থাকে হয়ত রুনির বেলায় বিষয়টা একটু দ্রুতই হয়ে গেছিল! রুনীর বয়স যখন ৩০ ছুঁইছুঁই আবস্থা তখন থেকেই তার আথলেটিক কার্যক্রম ধিরে ধিরে কমতে শুরু করে এবং আরো একটা বড় সমস্যা দাড়ায় তার ইঞ্জুরি। তরুণ বয়সে রুনি ফিজিকালি বিস্ট হলেও ত্রিশের দিকে এসে সেটা হারাতে শুরু করে। ইঞ্জুরির কারণ হিসেবে ধরা হয় তার বডি শেপ এবং চওড়া পা! স্যার আলেক্স তার অটোবায়োগ্রাফিতে সে সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন "রুনি সে সময় ইঞ্জুরি থেকে ফেরার পর প্রায় ৪/৫ টা ম্যাচ লেগে যেত তার পূর্বের ফর্মে ফিরে আসতে" ।
স্যার আলেক্স যাবার পর রুনির এই সমস্যাগুলো আরো বাড়তে থাকে, স্পিড আর স্টামিনা কমার জন্য ফন হাল তাকে অ্যাটাক থেকে নিচে নামিয়ে মিডফিল্ডে ব্যবহার শুরু করেন। স্পিড, ফিজিকাল বিষয়গুলো পড়ন্ত অবস্থায় থাকলেও রুনির পাস / লং রেঞ্জশট তখনো দলের একটা পার্থক্য সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট ছিল। রুনির ইউনাইটেডের ফাইনাল বছরে তাকে মিডফিল্ডের ব্যবহার করা হয়েছে। ইংল্যান্ডের ২০১৬ ইউরো এবং এভারটনে সে একজন সেন্টার মিডফিল্ডার হিসেবেই খেলেছে। সর্বশেষ ২০২০ এ ফুটবল থেকে রিটায়মেন্টের আগে ডার্বি কাউন্ট্রির জার্সিতে তাকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে ব্যাবহার করতে দেখা গিয়েছে অর্থাৎ মিডফিল্ড+ফরোয়ার্ড এই দুই জায়গার প্রতিটা পজিশনেই তাকে ব্যবহার করেছে ম্যানেজাররা।
রুনির ব্যাপারে একটা মাজার তথ্য হচ্ছে সে লিভারপুল শহরের ছেলে যারা কিনা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডিরেক্ট রাইভাল! এই রাইভাল শহরের এক ছেলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড অসংখ্য ম্যাচ জেতানোর নায়ক।বিষয়টা ইউনাইটেড ফ্যান হিসেবে আমার কাছে বেশ মজার লাগে।
ডার্বি কাউন্ট্রির ম্যানেজার রুনি:
কিছুদিন আগে ৩৫ বছর বয়সে ফুটবল কে বিদাই জানিয়ে দেন এই কিংবদন্তি এবং যোগ দেন ফুটবলের কোচিং পেশায়। ডার্বি কাউন্ট্রির দুঃসময়ে তাদের ম্যানেজার পদের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন। খেলোয়াড়ি জীবনে যেমন সফলতার ছাপ রেখেছেন আশাকরি ম্যানেজার হিসেবে সেটাও ছাপিয়ে যাবেন। আমার মত অসংখ্য ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ভক্তের পক্ষ থেকে ভালোবাসা আর শুভকামনা রইল ওয়াজ্জা।
- 0 মন্তব্য