• ফুটবল

ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের উত্থান-পতন

পোস্টটি ৮১৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সিজনের চূড়ান্ত দিনের খেলা চলছে। একইদিনে একই সময়ে চলছে দুই শিরোপা প্রত্যাশী দলের ম্যাচ। অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের মুখোমুখি হয়েছে টেবিলের শীর্ষে থাকা ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স, অন্যদিকে আপটন পার্কে হ্যামার্সদের সঙ্গে লড়ছে নীল-সাদাদের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলতে থাকা স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

শুরুতে পরিস্থিতি রোভার্সদের পক্ষেই ছিলো। অলরেডদের বিপক্ষে প্রথমার্ধ শেষে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিলো তারা, অন্যদিকে রেড ডেভিলরা তখন পিছিয়ে একই ব্যবধানে। কিন্তু হঠাৎ মূহুর্তের মধ্যে পরিস্থিতি পুরো পাল্টে যায়। সমতায় ফেরে লিভারপুল ও ইউনাইটেড। একটু পর পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে যায়। ২-১ গোলে পিছিয়ে পড়ে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। তৈরি হয় শঙ্কা। অবশেষে কি এত কাছে যেয়েও ফিরে আসতে হবে তাদের? লেখা হবেনা নতুন রূপকথা?

নাহ, অবশেষে তাদের খালি হাতে ফিরতে হয়নি। ইউনাইটেডের শিরোপা জয়ের জন্য দরকার ছিলো তাদের জয় ও রোভার্সদের ড্র অথবা হার। রোভার্সরা তাদের সমীকরণ সহজ করে দিয়েছিলো। কিন্তু বিপর্যস্ত ইউনাইটেড জয় নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেনি। ফলে হেরে গিয়েও সেদিন রূপকথা রচনা করেছিলো ল্যাঙ্কাশায়ারের দলটা। দীর্ঘ একাশি বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে জয় করেছিলো ইংলিশ ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কে বলা হয় বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম ও সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবল লিগ। এটি জয় করা যেমন কঠিন, তেমন সম্মানজনক। ইংল্যান্ডের প্রতিটি ক্লাবেরই স্বপ্ন থাকে প্রিমিয়ার লিগে খেলা, প্রিমিয়ার লিগ জয় করা। কিন্তু প্রতি সিজনে মাত্র একটি দলেরই সৌভাগ্য হয় প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি ঘরে তোলার।

এ ট্রফি ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য খুব বেশি দলের হয়নি। বেশ কিছু দল বরাবরই এক্ষেত্রে অগ্রগামী ছিলো। তারা বরাবরই আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং এখনো করছে। আবার কিছু দল হয়তো একসময় দাপট দেখিয়েছে, কিন্তু কালের অতলে হারিয়ে গেছে। আবার অন্যদিকে কিছু নতুন শক্তিরও আবির্ভাব ঘটেছে, যাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস না থাকলেও একবিংশ শতকে এসে প্রিমিয়ার লিগে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

এতসব "জায়ান্ট" দের ভীড়ে মাঝে মাঝে কিছু দল আবির্ভূত হয়েছে ক্ষণিকের জন্য। অল্প সময়ে তারা হঠাৎ চমকে দিয়েছে বিশ্বকে, রচনা করেছে রূপকথা, অতঃপর আবার হারিয়ে গেছে। প্রিমিয়ার লিগ সর্বশেষ এমন রূপকথার দেখা পেয়েছিলো এইতো ক'বছর আগে। সেবার সব জায়ান্টদের চমকে দিয়ে, বিশ্ববাসীকে অবাক করে প্রিমিয়ার লিগের রুপালি ট্রফিটা ঘরে তুলেছিলো লিস্টার সিটি।

লিস্টার সিটির এ রুপকথার গল্প আলোচিত হয়েছিলো সারা বিশ্বব্যাপী। এখনও যেকোনো ফুটবল বিষয়ক আলোচনায় বারবার উঠে আসে সে প্রসঙ্গ। তবে লিস্টার সিটির আগে সর্বশেষ যারা এমন রুপকথার গল্প লিখেছিলো, সে দলের নাম ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। তাদের নিয়ে আজকাল আলোচনা হয়না বললেই চলে। অথচ তাদের উত্থান-পতনের গল্পটাও খুবই চমকপ্রদ।

image_search_1643635393545
১৯৯০ সাল। সময়টা একদমই ভালো যাচ্ছিলোনা ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের। ইংলিশ ফুটবলের সেকেন্ড ডিভিশনে ধুঁকছে তারা। শেষবার ফার্স্ট ডিভিশনে খেলার স্মৃতিতে ধুলো জমে গেছে। সে প্রায় পঁচিশ বছর আগের কথা। আজকের দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড় হয়তো তখন জন্মই নেয়নি। এরপর আর ফার্স্ট ডিভিশনে ওঠা তো হয়-ই নি, বরং তৃতীয় বিভাগে অবনমিত হতে হয়েছে একাধিকবার।

১৯৮৯-৯০ মৌসুমে বহু বছর পর সমর্থকদের কিছুটা আশার আলো দেখাতে সক্ষম হয় রোভার্সরা। প্রোমোশন প্লে অফে খেলার সুযোগ হয়েছিলো সেবার। কিন্তু সমর্থকদের সম্পূর্ণ হতাশ করে সেটাও হেরে বসে তারা।

অন্যান্য অনেক সমর্থকের মতো স্থানীয় বৃদ্ধ জ্যাক ওয়াকারও ছিলেন ক্লাবের একজন নিবেদিতপ্রাণ সমর্থক। ষাটের কোটা পার করা বৃদ্ধ সেদিন আর সেই পরাজয় মেনে নিতে পারেননি। কতদিন আর নিজের দলের এমন বিভীষিকা সহ্য করা যায়? ক্লাবের মালিকের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে তিনি ক্লাব টা কেই কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

যেই কথা সেই কাজ। বুড়োর টাকা পয়সার অভাব ছিলোনা। অঢেল সম্পত্তির মালিক ছিলেন তিনি। শেষ বয়সে এসে তার কিছু অংশ নিজের প্রাণের ক্লাবের পেছনে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিনে নিলেন ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের মালিকানা।

নতুন মালিকের আন্ডারে অবশ্য প্রথম সিজন ভালো কাটেনি নীল-সাদাদের। ১৯৯০-৯১ মৌসুম তারা শেষ করে ১৯তম হয়ে। তবে সেই সিজন শেষে ক্লাবের সুদিন ফেরানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করেন জ্যাক ওয়াকার। মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে বেশ কিছু নতুন খেলোয়াড় দলে ভেড়ান। সেই সাথে অক্টোবরে দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ দেন সাবেক লিভারপুল ম্যানেজার কেনি ডালগ্লিশ কে।

অবশেষে ফলাফল আসতে শুরু করে৷ ১৯৯১-৯২ সিজনে সেকেন্ড ডিভিশনের শীর্ষে পৌঁছে যায় তারা। কিন্তু হঠাৎ ফর্মে ব্যাঘাত ঘটে। লিগে টানা ছয়টি ম্যাচ হারে। ফলাফল ষষ্ঠ হয়ে লিগ শেষ করতে হয়।

এরপরও প্রোমোশন প্লে অফে জায়গা হয় তাদের। সেখানে প্রথম প্লে অফে প্লাইমাউথ কে ৩-১ গোলে হারায় ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। চূড়ান্ত প্লে অফে তাদের মুখোমুখি হয় লিস্টার সিটি। সে ম্যাচ ১-০ তে জিতে নেয় ডালগ্লিশের দল। আর সেই সাথে সুদীর্ঘ ২৬ বছর পর আবারও ইংলিশ ফুটবলের সর্বোচ্চ টায়ারে ফিরে আসে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। ফার্স্ট ডিভিশন কে সংস্কার করে তখন সবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রিমিয়ার লিগ। তাতে ফাউন্ডিং মেম্বার হিসেবে খেলার সুযোগ পেয়ে যায় রোভার্সরা।

image_search_1643635586427
১৯৯২ সালে সামার ট্রান্সফার উইন্ডোতে ইংলিশ ফুটবলে ট্রান্সফার ফির রেকর্ড গড়ে সাড়ে তিন মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে সাউদাম্পটন থেকে ২২ বছর বয়সী তরুণ সেন্টার ফরওয়ার্ড অ্যালান শিয়েরার কে দলে ভেড়ায় ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। এ ট্রান্সফারে তারা নজর কাড়ে সারা বিশ্বের। হেডলাইন হয় তৎকালীন সকল জনপ্রিয় পত্রিকায়।

রেকর্ড সাইনিং টা পুরোপুরি কাজে দেয়। লীগে ২১ ম্যাচ খেলে ১৬ টি গোল করেন শিয়েরার। কিন্তু তার ভাগ্য ঠিক সহায় হয়নি। ডিসেম্বরে মারাত্নক ইঞ্জুরির কবলে পড়েন তিনি। সেই সিজন চতুর্থ হয়ে শেষ করে রোভার্সরা। মাত্র ১ পয়েন্টের জন্য উয়েফা কাপে খেলার সুযোগ হারায়। এরপরও ডমেস্টিক কাপে তাদের পারফর্মেন্স বেশ আশা যোগাচ্ছিলো। কিন্তু এফএ এ কাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়ার পর লিগ কাপ থেকে ছিটকে পড়ে সেমি ফাইনালে। সেই সাথে ইউরোপিয়ান কম্পিটিশনে খেলার স্বপ্ন সেবারের মতো ভঙ্গ হয়।

পরের সিজনে আরও বড় লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। শুরু থেকেই সেটা ফুটে উঠছিলো তাদের খেলায়। পুরো সিজনই নিজেদের ফর্ম বজায় রাখে তারা। একপর্যায়ে লিগ লিডার ম্যান ইউনাইটেডের সঙ্গে পয়েন্ট সমান করেও ফেলেছিলো। ইঞ্জুরি থেকে ফিরে অ্যালান শিয়েরার নিজের পূর্ণাঙ্গ আত্মপ্রকাশ ঘটান। সেবার লিগে ৩১ গোল করেন এ ইংলিশ ফরওয়ার্ড।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে সেবার ভালো মতো কম্পিটিশন করে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। কিন্তু শেষদিকে ইউনাইটেডের ধারাবাহিক ফর্ম ও রোভার্সের কিছু ম্যাচে পয়েন্ট ড্রপ করার ফলে লিগ জয়ের স্বপ্ন সেবার আর পূরণ হয়নি। অবশেষে সেবার লিগে রানার্সআপ হয় রোভার্স। সেই সাথে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান মঞ্চে জায়গা করে নেয়।

পরের সিজনের জন্য বেশ ভালোমতো প্রস্তুতি নেয় ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। সামারে আবারও ইংলিশ ফুটবলের ট্রান্সফার ফির রেকর্ড গড়ে তারা। আর্সেনাল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কে পেছনে ফেলে ৫ মিলিয়ন পাউন্ডে সাইন করায় নরউইচ সিটির ২১ বছর বয়সী স্ট্রাইকার ক্রিস সাটোন কে। সেই সাথে গঠন করে লীগের সবচেয়ে দামি স্ট্রাইকার-দ্বৈত। ক্লাবের ফ্যানরাও নতুন স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করে তাদের প্রিয় রিভারসাইডার্সদের নিয়ে।

image_search_1643635416562
অবশেষে শুরু হয় ১৯৯৪-৯৫ সিজন। ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের স্বপ্নের সিজন। সিজন শুরু হয় সাউদাম্পটনের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র দিয়ে। শুরুতে পিছিয়ে পড়েও দ্বিতীয়ার্ধে অ্যালান শিয়েরারের সমতাসূচক গোলে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে তারা। সিজনের প্রথম জয় আসে তিনদিন পর এউড পার্কে। সে ম্যাচে লিস্টার সিটিকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে রোভার্স। সেই সাথে নীল-সাদা জার্সিতে প্রথম গোল আদায় করে নেন ক্রিস সাটোন।

পরের ম্যাচে কভেন্ট্রি সিটির বিপক্ষে হ্যাট্রিক করেন করেন সাটোন। সেই সাথে জেসন উইলকক্সের গোলে কভেন্ট্রি সিটিকে তারা উড়িয়ে দেয় ৪-০ গোলে। এরপরের ম্যাচে পয়েন্ট খোয়াতে হয় তাদের। আর্সেনালের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করে।

অবশ্য ফর্ম হারায়নি ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। পরের মাসে এভারটন, চেলসি ও অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে তিনটি ম্যাচেই জয়লাভ করে। কিন্তু এরপর অবশেষে তাদের সিজনের প্রথম হারের মুখ দেখতে হয়। নরউইচ সিটির বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে ২-১ গোলে পরাজিত হয় তারা। পরের ম্যাচেও নিউক্যাসলের সাথে ড্র করে খোয়াতে হয় পয়েন্ট।

টানা দুটি ম্যাচে পয়েন্ট ড্রপ করলেও লাইনচ্যুত হয়নি তারা। পরের ম্যাচে লিভারপুল কে ৩-২ গোলে হারিয়ে দ্রুতই আবার জয়ের ধারায় ফেরে।

নরউইচের বিপক্ষে হারলেও হোম ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড ধরে রেখেছিলো তারা। অবশেষে ম্যান ইউনাইটেডের বিপক্ষে ২-৪ গোলে হেরে সে রেকর্ড ক্ষুণ্ণ হয়।

কিন্তু সেবার পুরো সিজনে একবারও পুরোপুরি ফর্ম হারায়নি ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। কিছু ম্যাচ হেরেছে, কিন্তু তারপরই আবার ট্র‍্যাকে ফিরে এসেছে৷ তাদের এই ধারা অব্যাহত ছিলো সিজনব্যাপী। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগ জেতা মুখের কথা নয়। তাদের সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়েছে অন্যরাও, বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

ইউনাইটেডের সাথে তাদের লড়াই শেষদিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো। অবশেষে শেষ ম্যাচডের আগে তাদের মধ্যে পয়েন্ট ব্যবধান দাঁড়ায় দুই পয়েন্টে। সমীকরণ দাঁড়ায় এমন, ইউনাইটেড পয়েন্ট হারালেই শিরোপা জিতবে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। আর ইউনাইটেড কে শিরোপা জিততে হলে নিজেদের ম্যাচে তো জিততে হবেই, সেই সাথে রোভার্সের পয়েন্ট হারাতে হবে। আর এর পরের গল্পটা তো শুরুতেই বলেছি।

সেবার নতুন রূপকথার জন্ম দিয়ে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জয় করেছিলো ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। জ্যাক ওয়াকারের স্বপ্ন হয়েছিলো সত্যি। তিনি ব্ল্যাকবার্ন কে এনে দিতে পেরেছিলেন চূড়ান্ত সফলতা, যার স্বপ্ন দেখে ইংল্যান্ডের প্রতিটি ক্লাব।

image_search_1643635295985
এ সাফল্যের কারিগর কেনি ডালগ্লিশ জিতেছিলেন প্রিমিয়ার লিগ ম্যানেজার অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড। গোল্ডেন বুট ও প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার, দুটোই জিতেছিলেন অ্যালান শিয়েরার। দলের অন্যান্যদের মধ্যে টিম ফ্লাওয়ার্স, গ্রায়েম লে সো, কলিন হেন্ড্রি, টিম শেরউড ও ক্রিস সাটোন জায়গা করে নেন টিম অব দ্য ইয়ারে।

তবে এ সাফল্যে ধারা অব্যাহত রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয় ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। পরের সিজন থেকেই শুরু হয় তাদের পতন। সিজনের শুরুর দিক থেকেই বাজে পারফর্ম করছিলো তারা। মনেই হচ্ছিলোনা তারা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। খারাপ পারফর্মেন্সের দায়ভার নিয়ে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান কেনি ডালগ্লিশ।

কিন্তু দলের অবস্থা ক্রমান্বয়ে আরও খারাপ হতে থাকে। সিজনের মাঝের সময়টায় রেলিগেশন জোনেও পৌঁছে গিয়েছিলো তারা। বিদায় নিতে হয় চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ স্টেজ থেকে। অবশ্য দ্বিতীয় হাফে আবার কিছুটা খেলায় ফেরে। তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। সেবার সপ্তম পজিশনে থেকে লিগ শেষ করে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। আর্থিক দিক থেকেও সংকটে পড়ে দল। ফলে সিজন শেষে দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা অ্যালান শিয়েরার কে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়।

ক্রমেই হারিয়ে যেতে থাকে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। হারাতে থাকে দলের অন্যান্য তারকাদেরও। পরের সিজনে আরও অধঃপতন ঘটে। সিজন শেষ করে ১৩ তম হয়ে। তারপরের সিজনে কিছুটা উন্নতি করেছিলো, কিন্তু সেটা সাময়িক। অবশেষে ১৯৯৮-৯৯ মৌসুম শেষে রেলিগেটেড হয়ে যায় তারা। প্রিমিয়ার লিগ জয়ের পর মাত্র চার বছরের ব্যবধানে অবনমিত হয়ে যায় ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স!

দুই মৌসুম দ্বিতীয় বিভাগে কাটিয়ে তারা অবশ্য আবার ফিরে এসেছিলো প্রিমিয়ার লীগে, কিন্তু আর কখনোই নিজেদের শিরোপার কন্টেন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। ২০০০ সালের আগস্টে মারা যান জ্যাক ওয়াকার। সে মৌসুম শেষেই প্রিমিয়ার লিগে ফিরে আসে রোভার্সরা। এরপর ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে টিকে ছিলো ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স, কিন্তু শুধুই এক গড়পড়তা মিডটেবিল ক্লাব হিসেবে। অতঃপর ২০১২ সালে আবারও অবনমিত হয়ে যায়। তারপর থেকে এখন অবধি আর প্রিমিয়ার লিগে ফেরা হয়নি।

image_search_1643635321985
ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের প্রিমিয়ার লিগ জয়ের গল্পটা রূপকথার মতোই, কিন্তু কখনোই এটা লিস্টার সিটির রূপকথার মতো আলোচ্য বিষয় হতে পারেনি। এর অবশ্য কারণ আছে। লিস্টার সিটির লিগ জয় আর ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের লিগ জয়ের ভিত্তিটাই আসলে আলাদা। লিস্টার সিটির লিগ জয়টা ছিলো পুরোপুরি অবিশ্বাস্য, নাম না জানা সব প্লেয়ারদের হাত ধরে অবিশ্বাস্য ভাবে লিগ জয়।

কিন্তু ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের গল্পটা তেমন ছিলোনা। কারণ এখানে লিগ জয়ে প্রধান ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে দামী দামী সব সাইনিং, বিরাট ইনভেস্টমেন্ট। তাই তাদের লিগ জয়ের গল্পটা অনেকের কাছে প্রশংসিত হলেও সমালোচিত হয়েছে। অনেক ফুটবল বিশ্লেষক এখনো তাদের টাইটেল জয় টা কে মনে প্রাণে গ্রহণ করতে পারেননা। অনেকে সেটাকে ফুটবলের পরাজয় ও অর্থের জয় হিসেবে গণ্য করেন। আর সেকারণেই ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের লিগ জয় কখনোই লিস্টার সিটির লিগ জয়ের মতো আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি।

তবে বড় বড় জায়ান্টদের ভীড়ে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স স্বল্প সময়ের জন্য হলেও একটু বৈচিত্র্য এনে দিয়েছিলো। এটির জন্যই মূলত তাদের লিগ জয় টা স্মরণীয় হয়ে আছে, স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ল্যাঙ্কাশায়ার এর ছোট্ট শহরতলীর দলটির উঠে আসা, একজন ডাই হার্ড লাইফলং সমর্থকের হাত ধরে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হওয়া, এগুলো সত্যি বিশেষ কিছু।