• ক্রিকেট

সাকিব আল হাসান; আধখানা ভালো ছেলে, আধা মাস্তান

পোস্টটি ১৩৭৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

 

সাকিব আল হাসানের জন্মদিন আজকে। আমি এবং সাকিব আল হাসান, এই দুইয়ের বেশ সম্পর্ক ছিল আসলে। সাকিবকে আমি পছন্দ করতাম ভীষণ। করতাম এবং করি এখনো। প্রকাশভঙ্গি বদলে গেছে সেটা তো সত্যই। কত কি বদল হয় এখন! আগে আকাশসম আশা নিয়ে বাংলাদেশের খেলা দেখা। সেই খেলা দেখার মুহূর্তে সবকিছু নিয়েই রিয়্যাক্ট দেখানো। এখন তো এসবও বদলে গেছে। এখন খেলা দেখি। আরো বেশি বাস্তবতা মেপে দেখি। টেকনিক্যাল বিষয় মেনে নিয়ে দেখি। দেখা সহজ তাই। 

 

সাকিবে আসি। সাকিব-কে পছন্দ করি বেশ আগে থেকেই। বেশি বেশি প্রকাশ হইছে বোধহয় যখন হাইস্কুলে ছিলাম, তখন। সবকিছুর মধ্যে '৭৫' নাম্বার সংখ্যাটা ঢুকানোর একটা চেষ্টা থাকতো আমার।

সাকিবের পক্ষে কি তুমুল তর্ক করতাম। সাকিব একেকটা ইস্যুতে জড়িত হইতো, আর এদিকে আমার বা আমাদের দায়িত্ব থাকতো তাঁর পক্ষে লড়াই করা। এত এককেন্দ্রিক ভালোবাসা ছিল! সেসব মন্দ ছিল না আসলে। এককেন্দ্রিক হইলেও সেটা সলিড তো ছিল।

 

সাকিব-কে নিয়ে একটা বই বের হয়, দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের লেখা। ফেসবুকে দেখতেছিলাম। অনেকেই কিনতেছে এবং পড়তেছে বইটা। সোহাগ কাকা রকমারি থেকে বইটা অর্ডার করলেন। উনি পড়লেন। পরে আমিও পড়লাম। সে কি আগ্রহ পড়ায়! সেই বইটার বাইন্ডিং খুব একটা ভালো ছিল না। প্যাডের পাতার মতো ছিল। কিছু পাতা ছিঁড়েও গেছে মাঝখানে।

আমার বাসাতেই আছে বোধহয় এখনো বইটা কোনো জায়গায়। খুঁজলে পাওয়া যাবে।

খেলাধুলা নিয়ে যাদের আগ্রহ এবং ফেসবুক ছিল, তাদের কাছে রুশাদ রাসেল ভাই তখন বেশ জনপ্রিয়। ক্রিকেট নিয়ে যেমন। ফুটবল নিয়ে তো আরো বেশি। সবসময় দেখতাম, ফুটবল ফ্রিকে তার পোস্ট। রুশাদ রাসেল ভাইয়ের একটা মন্তব্য ছিল সেই বইয়ে। উনি আবার আমার বন্ধু তালিকায় ছিলেন। যার কারণে তার সেই মন্তব্য নিয়েও আমি বেশ এক্সাইটেড ছিলাম। তাকে ট্যাগ করে পোস্টও দিলাম একটা। আনন্দ! 

 

সাকিবের কথা যখনই আসে, ক্লাস টেনের একটা ঘটনা মনে পড়ে আমার। ক্লাস টেনে আমাদের রোল নাম্বারগুলি নতুন করে এন্ট্রি করে। যে যখন ভর্তি, সেই অনুযায়ী রোল হইতেছে। আমি ভর্তি হইতে একটু দেরিই করলাম কিনা, আশ্চর্যজনকভাবে আমার রোল নাম্বার হয়ে গেল ৭৫! তখন আমি সাকিব বলতেই ঝলমলিয়ে উঠি। এরকম একটা সময়ে, নিজের রোল নাম্বারের মতো একটা বিষয়, সেখানে ৭৫ নিয়ে ঘুরতেছি। না যেন উড়তেছি!

তখন কেউ আমার রোল জিজ্ঞেস করলেই আনন্দ হইতো। আমার রোল যে ৭৫, সেইটা বলায় আনন্দ।

 

আরেকটা, ঘটনাই হবে। এটাও ক্লাস টেনের কথা। সামনে তখন ১৫ এর ক্রিকেট বিশ্বকাপ সম্ভবত। অনলাইন শপিংয়ের মতো ব্যাপারটা তখনও ওতো পরিচিত না আমাদের মধ্যে। টুকটাক কিছু অনলাইন শপ দেখি ফেসবুকে। পরিচিত কাউকে দেখিনা কিছু কিনতে। তাই সাহসও করিনা। আবার কি দেয় না দেয় ভাবনা! কোনো একটা অনলাইন শপ। দিদারভাই ডট কম- এরকম কিছু একটা নাম সম্ভবত। একটা টি-শার্ট দেখলাম। যেখানে সাকিব আল হাসানের ছবি, সাথে #SAH75 হ্যাশট্যাগ দেওয়া। সেই টি-শার্ট দেখে মনে নাচন উঠলো। ভাবলাম অর্ডার দেই। দিয়েই দিলাম।

দুই বা তিন দিন পর সুন্দরবন কুরিয়ারে টি-শার্ট আসলো। কোচিং শেষ করে বোধহয় নিতে গেলাম। হাতে হলুদ প্যাকেট দেখে বন্ধুদের প্রত্যাশিত প্রশ্ন, কি জিনিস এইটা। আমিও বললাম, আসলে কি জিনিসটা!  বাসায় এসে সেই জিনিস পরলাম। ছবি তুললাম। বাইরে গেলেও পরতাম। সামনে সাকিবের ছবি নিয়ে কোচিং-মাঠ-ঘাট ঘুরে বেড়াইতেছি, আনন্দের ব্যাপার!

 

সাকিব-কে যে একটু আলাদাভাবেই পছন্দ করতাম, এইটা আব্বু-আম্মুও জানতো। একসাথে খেলা দেখতাম। আমি বলতাম নানা কিছু, তারা বুঝতো। আব্বু তো আর বেশি কিছু বলে না। আম্মু বুঝতো। সাকিব আউট হবার পর হয়তো খাবার টেবিলে গেছি, চেহারা দেখেই বুঝতো আম্মু। বলতো এটা-সেটা। সাকিবের খোঁজও নিতো, কয়টা বাচ্চা-কাচ্চা হইলো, কি নাম এসব খোঁজ আরকি।

আমার স্মরণশক্তি খুব বেশি ভালো না। সাকিব বিষয়ক অনেক কিছুই তো আছে জীবনে। অফলাইন বা অনলাইন। দুই জায়গাতেই। মনে থাকেনা সবকিছু। আমার সবসময় মনে হইতো এবং এখনো হয়, আমি সাকিব-কে বুঝতাম। ও কখন কোন কাজটা কোন সেন্স থেকে করার চেষ্টা করে বা চেষ্টা না করেও যে করে। এসব বুঝতাম। এটা আমার মনে হওয়া একরকমের।

 

চিন্তা করার পদ্ধতি দিনকে দিন বদলায়। আমার এখন মনেহয়, ভালোবাসতে হইলে সমালোচনা জানা জরুরী। সমালোচনা জানা, মানে কিভাবে সমালোচনা করতে হয়, সেইটা। এরপর সেই সমালোচনা করতে পারা।

ভালোবাসলে, সমালোচনা করা জরুরী।

 

আমরা যেহেতু মানুষ। আমাদের কাজগুলি সবসময় সবার আশা পূরণ করবেনা। সে যে জায়গাতেই থাকুক। আমরা কেউ বীর না আসলে। তো অনেক কাজ মানুষের আশাভঙ্গ করবে। আশাবাদী-কে কারণ দেখাবে। উচিত-অনুচিত, ভুল-সঠিক ধরনের যেসব শব্দ আছে, সেসব শব্দগুলি নিয়ে পাশাপাশি চলবে।

এভাবে চলতে চলতে, আমরা একসময় জানবো, এই সময়ের পৃথিবীতে জন্মানো মানুষ, আপেক্ষিক শব্দ ভুল-অনুচিত; এসবের মধ্যে দিয়েও, আমাদের কতটুকু দিলো। সেই পাওয়া নিয়ে আমাদের কি আনন্দ হয় না! যদি হয়, তবে- 

 

শুভ জন্মদিন সাকিব আল হাসান

আধখানা ভালো ছেলে, আধা মাস্তান!