• অন্যান্য

হিটস্ট্রোক ও ক্রীড়াবিদদের মৃত্যু

পোস্টটি ১১৮৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

 

হিটস্ট্রোককের অপর নাম সানস্ট্রোক অর্থাৎ সূর্যের তাপদাহে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা যখন ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে চলে যায় ও অসুস্থ হয়ে পড়ে তাকেই বলা হয়। ইতিহাস ঘাঁটলে হিটস্ট্রোককের দ্বারা মানুষের মৃত্যুর তথ্য রোমান সাম্রাজ্য আমলে বা ২৪ বি, সি তেও পাওয়া যায়।

অতি সূর্য-তাপদাহের ফলে মানুষবাপ্লেয়ারদের শরীরের যে পরিবর্তনগুলো হয়, যথা- ১) আভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে চলে যায়; ২) প্রচুর পানি পিপাসা দেখা দেয়,; ৩) প্রছুর ঘাম ঝরে; ৪) পেটে অস্বাভাবিক অনুভুতি আসে ও বমি বমি লাগে; ৫) শরীরের চামড়া লাল বা লালচে হয়ে যায়; ৬) দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস হতে থাকে; ৭) হার্ট রেট ওপালস-রেট বেড়ে যায়; 8) মাথা ব্যাথা শুরু হয়, ৯) প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় ও হলুদ হয়ে আসে; ১০) ঘুম ঘুম ভাব আসে; ১১) মাংশপেশিতে ক্রাম্প বা টান লাগে ১২) জ্ঞান হারিয়ে যায়; ১৩) সময়মত ব্যাবস্থা না নিলে মৃত্যু ঘটে ইত্যাদি ।

বর্তমানে প্রফেশনাল ক্রীড়াজগত মিলিয়ন থেকে বিলিয়নডলার স্পোর্টস-ইন্ডাস্ট্রিতে পরিনত হয়েছে, যেখানে স্পোর্টসমানকে স্পোর্টসায়েন্সও স্পোর্টসমেডিসিনের জ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সুপার হিউম্যান বানানোর প্রতিযোগিতা চলে। ৯০ মিনিটের সকার বা ফুটবল প্লেয়ারের স্ট্যামিনাকে ৩০০ মিনিট খেলার মত উপযুক্ত করে তোলার প্রচেষ্টা চলে অথবা ২০ / ৫০ ওভারের ক্রিকেট প্লেয়ারের স্ট্যামিনাকে ৫ দিনের জন্য নিরবিচ্ছন্ন স্ট্যামিনাতে পরিণত করার প্রচেষ্টা চলে রদ-ঝড়-বৃষ্টি-বাদল যাই হোক না কেন ! কোটি টাকা বা ডলার সাইন করে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর কোটি টাকা বা ডলারের পারফরমান্স ফেরত দিতে হবে; নতুবা প্রথমে বেঞ্চ প্লেয়ার বা পরবর্তীতে টিম থেকে বাদ। স্পোর্টস অরগানাইজারের ভিতরে প্লেয়ারদের ব্যাপারে একটা অপ্রিয় খারাপ কথা প্রচলিত যা কেউ লিখিতভাবে খকনই স্বীকার করে না, সেটা হোল –“খোয়াব শক্ত আর বের করবো রক্ত”। আর খকনও খকনও এর প্রতিদান দিতে যেয়ে স্পোর্টসমান নিজে বা অরগানাইজারা মানুষের শরীরের সর্বোচ্চ ক্ষমতা সমদ্ধে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে আর তখনই স্পোর্টসমান “জোসে হুশ হারিয়ে” তার ভাগ্যের নির্মম পরিনতির শিকার হয়। আজ থেকে ৫০ বছর আগে সকারসহ বাকি খেলাধুলা সাধারনত হতো বিকেলে বা ক্রিকেট ছিল শীতকালীন খেলা, কিন্তু বর্তমান স্পোর্টস-ইন্ডাস্ট্রিতে সেই নিয়ম হারিয়ে গেছে; আজ আরবের মাটিতেও মধ্য-দুপুরে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলা চলে।

হিটস্ট্রোককের কারণসমুহ- ১) গরম আবহাওয়াতে কন্ডিশনিং-এর অভাব; ২) হঠাৎ গরম আবহাওয়াআবির্ভূত হওয়া; ৩) মাত্রাতিরিক্ত ব্যায়াম বা ফিজিক্যাল একটিভিটি করা; ৪) শরীরে এলকোহলের উপস্থিত থাকলে; ৫) সিনথেটিক বা ভারী কাপড় পরা থাকলে; ৬) ইনডোর কোর্টে এয়ার-কন্ডিশন বা ভেনটিলেসনের (বাতাসের ইনফ্লো ও আউটফ্লোর) অভাবে; ৭) স্মোক কোরে ল্যাঙের ভাইটাল কাপাসিটি  কমে গেলে; 8) শরীরে বডি ফ্লুয়িডের সাথে ইলেক্ট্রোলাইটস (সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড, ফসফেট, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি) মাত্রাতিরিক্ত হ্রাস হোলে; ৯) ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোলের জন্য ডায়রুট্রিকস জাতীয় ওষুধ খেলে; ১০) নিয়মিত ফলমূল বা ইলেক্ট্রোলাইটসযুক্ত ড্রিংকস বা স্পোর্টস- ড্রিংকস পান না করলে।

হিটস্ট্রোককের আলামত দৃশমান হোলে প্লেয়ার বা রোগীকে বাঁচাতে হোলে করনীয়- ১) আইস-কোল্ড ওয়াটার বা পানি মাথা ও শরীরে ঢেলে দিতে হবে বা নিমজ্জিত করতে হবে; ২) রেকটাল (গুজ্ঝু-দার)  টেম্পারেচার দেখতে হবে; ৩) কোল্ড থার্মাল ব্ল্যাংকেট  শরীরে  জড়াতে হবে; ৪) ইলেক্ট্রোলাইটস আই/ ভি ফ্লুয়িড চালু করতে হবে; ৫) রোগীর চারিদিকে ফ্রেশ ভেনটিলেসনের  বাবস্থা করতে হবে; ৬) পা উঁচু করতে হবে যাতে বডির লোয়ার পোরসানের রক্ত হার্ট ও ব্রেনের রক্ত চলাচলকে স্বাভাবিক রাখতে পারে; ৭) অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে ধীরে ধীরে অক্সিজেন চালু করতে হবে; পরবর্তীতে হস্পিটালাইজড করে-- 8) ইউরিন এনালাইসিস করতে হবে কিডনি-কন্ডিশন জানতে; ৯)ব্লাড এনালাইসিস করতে হবে ইলেক্ট্রোলাইটস-কন্ডিশন জানতে; ১০) রামডোম্যাইওলাইসিস টেস্ট করতে হবে মাসেল-টিসু ড্যামেজ নিরুপনের জন্য; ১১) এমআরআই বা সিটি স্ক্যান করে বডির অন্যান্য অর্গানগুলোকে দেখতে হবে; ১২) সিম্পটোমাটিক ট্রিটমেন্ট-ইত্যাদি ।

হিটস্ট্রোককে এমারজেন্সি ট্রিটমেন্ট না করতেপারলে- ১)অক্সিজেনের অভাবে ব্রেন ড্যামেজ হয়, ২) কার্ডিয়াক আউটপুট কমে যেয়ে হার্ট ফাংশানবন্ধ হয়ে যায়, ৩) কিডনি ফাংশান ফেইল করে, ৪) লাং ফাংশান ফেইল করেসবগুলোর আল্টিমেট রেজাল্টই হচ্ছে মৃত্যু ।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর সর্বত্র উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বর্তমানে প্রতিবছর ৫ মিলিয়ন মানুষ হিটস্ট্রোকে মারা যায়, পৃথিবীতে-সময়মত প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে না পারলে ৮০% মারা যায়, আর পারলেও ১০% মারা যায়, অ্যামেরিকার সি-ডি-সির পরিসংখানানুযায়ী ২০০৬-২০১০ সাল পর্যন্ত ৩,৩৩২ জন হিটস্ট্রোকের শিকার হনতাই স্পোর্টস-ইন্ডাস্ট্রিকে এই বিষয়ে আরো সতর্ক হতে হবে। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের খেলায় মারিয়া শারাপোভা বাধ্য হয়েছিলেন হিটস্ট্রোককের ভয়ে মাথায়, ঘাড়ে ও শরীরে আইস প্যাক জড়াতে;  ২০২২ সালের ১৬ই মে পাকিস্তানী ক্রিকেটার উমার খান মারা গেলেন হিটস্ট্রোকে; ১৯৯৫-২০২০ সাল পর্যন্ত অ্যামেরিকার মত উন্নত দেশে ৫১ জন হাইস্কুল ফুটবল বা রাগবি প্লেয়ার হিটস্ট্রোকে মারা গেছে;পৃথিবীতে খেলার মাঠে বহু মৃত্যুর কারণ হিসাবে সাডেন কার্ডিয়াক এরেস্ট প্রাথমিকভাবে দায়ী করা হলেও-অটোপসির পর দেখা গেছে তার আসল কারণ ছিল-হিটস্ট্রোক

 

(ডাঃ গোলাম শওকত হোসেন-চিকিৎসক, গবেষক, শিক্ষক ওলেখক

 heat